পৌষে এ বার পাতে পড়ুক অন্য রকম পিঠে। ছবি: সংগৃহীত।
শীতের আমেজ তেমন নেই। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা বলছে পৌষ এসে গিয়েছে। যদিও বছরশেষে কিংবা নতুন বছরের শুরুতে শীত ‘কামব্যাক’ করতে পারে বলে আশা দেখিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তবে সে খবরে বিশেষ উৎসাহ নেই আমবাঙালির। কবির কথা ধার করে যদি একটু সাজিয়ে-গুছিয়ে নেওয়া যায়, তা হলে বলতে হবে ‘ঠান্ডা পড়ুক না পড়ুক/ আজ পৌষ’।
পৌষ মানেই পার্বণ আছে। আর আছে পিঠেপুলি। যদিও সংক্রান্তি, অর্থাৎ পৌষমাসের শেষ দিনটিতেই গেরস্তবাড়িতে পিঠে খাওয়ার চল, তবে বাংলাদেশ, আসাম, ত্রিপুরা সংলগ্ন বহু অঞ্চলেই বর্ষবরণের দিনে পিঠে খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। চালের গুঁড়ো, গুড় কিংবা ক্ষীর দিয়ে তৈরি হলেও সে সব পিঠের আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। প্রায় হারিয়ে যাওয়া তিন ধরনের পিঠের খোঁজ দিচ্ছেন শহরেরই এক ক্লাউড কিচেনের কর্ণধার শ্যামশ্রী চাকী।
যশোরের ছিটা পিঠা
মণ্ড তৈরি করার ঝামেলা নেই। এই পিঠের ভিতর পুরও দিতে লাগে না। চালের মিশ্রণ ছিটিয়েই তৈরি করা যায় ছিটা পিঠা। যশোরে এই পিঠের উৎপত্তি হলেও এখন গোটা দেশেই সকালের জলখাবারে এই পিঠে তৈরি করা হয়।
উপকরণ
৫০০ গ্রাম: আতপ চাল
১ টেবিল চামচ: মৌরি
৩ টেবিল চামচ: সাদা তেল
প্রণালী
সারা রাত আতপ চাল ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন একটু মৌরি দিয়ে শিলে বেটে নিতে হবে। মিশ্রণ যেন একটু পাতলা হয়। এর পর মাটির সরায় তেল মাখিয়ে চাল বাটার ওই মিশ্রণ আঙুলের ডগায় নিয়ে সরার উপর ছিটিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। দেখতে অনেকটা জালের মতো হবে। খুব বেশি ক্ষণ সরায় রাখা যাবে না। যত নরম হবে এই পিঠের স্বাদ তত বাড়বে। তার পর দোসা তোলার মতো জালের এক প্রান্ত থেকে ধীরে ধীরে পিঠে ‘রোল’ করে তুলে নিতে হবে। এ পারে পিঠে সাধারণত নলেন গুড় দিয়েই খাওয়া হয়। তবে ও পারে সবুজ মটরশুঁটির ঘুগনি দিয়ে ছিটা পিঠে খাওয়ার চল বেশি।
ত্রিপুরার বিখ্যাত আওয়ান বাঙ্গোই:
ত্রিপুরার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আওয়ান বাঙ্গোই খাওয়ার চল রয়েছে। বিশেষ করে বর্ষবরণের দিন প্রায় প্রতিটি ঘরেই এই পিঠে বানানো হয়। ‘বাঙ্গোই’ আসলে এক ধরনের গাছ। তারই পাতায় মোড়া পিঠে। বাঙ্গোই পাতা এখানে পাওয়া যায় না। তাই বিকল্প কলাপাতা।
উপকরণ
১ কিলো: বিন্নি ধানের চাল
আধ কাপ: আদা কুচি
৪টি: বাঙ্গোইপাতা/ কলাপাতা
১ কাপ: পেঁয়াজ কুচি
দু’টেবিল চামচ: লঙ্কা কুচি
১টি: পাকা কলা
প্রয়োজন মতো নুন
প্রণালী
চাল প্রথমে আধবাটা করে নিন।
ও পারে এই পিঠে সাধারণত বিন্নি ধানের চাল দিয়ে তৈরি হয়। তবে হাতের কাছে তা না পেলে যে কোনও ধরনের ‘স্টিকি রাইস’ ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ বার চাল বাটার মধ্যে প্রথমে আদা, পেঁয়াজ, লঙ্কা কুচি, নুন, পাকা কলা দিয়ে ভাল করে চটকে মেখে নিতে হবে।
কলাপাতা পরিষ্কার করে, কেটে নিতে হবে। তার মধ্যে ওই মিশ্রণ দিয়ে ভাল করে মুখ মুড়ে নিতে হবে। বড় হাঁড়ির মুখে খড় বেঁধে গরম ভাপে ঘণ্টাখানেক রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে আওয়ান বাঙ্গোই পিঠে।
এই পিঠে কিন্তু মাংসের ভর্তা দিয়ে খেতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে। রসুন, লঙ্কা, পেঁয়াজ কুচি, ধনেপাতার চাটনি দিয়ে সেদ্ধ মাংসের কিমা ভাল করে মেখে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ভর্তা।
বাংলার বিখ্যাত বর্গি পিঠে
বর্গি শব্দটির উৎপত্তি ফারসি শব্দ ‘বারগির’ থেকে। যার আভিধানিক অর্থ হল প্রাচীন মরাঠা অশ্বারোহী। বাংলায় এই বর্গি আক্রমণের সময়েই তাঁদের হাত ধরে এই পিঠের আগমন হয়। বাঙালি হেঁশেলে যা আজও বর্গি পিঠে নামেই পরিচিত।
উপকরণ:
২০০ গ্রাম: গুড়
২০০গ্রাম: ছোলার ডাল গুঁড়ো
১০০ গ্রাম: ময়দা
১৫০ গ্রাম: ক্ষীর
এক কাপ: নারকোল কোরা
৫০০ গ্রাম: ঘি
২০০ গ্রাম: চিনি
প্রণালী:
প্রথমে একটি পাত্রে গুড়, ছোলার ডাল, ময়দা এবং ঘি দিয়ে একটি মণ্ড বানিয়ে নিতে হবে।
সেখান থেকে লেচি কেটে নিয়ে তার মধ্যে ভরে দিতে হবে ক্ষীরের পুর। গোল বাটির মতো দেখতে পিঠের ধারগুলো মুড়ে দিতে হবে। এ বার ঘিয়ে ভেজে চিনির ঘন রসে ডুবিয়ে নিলেই কাজ শেষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy