Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ছুটির দিনের মাংসের ঝোল এ বার আরও সুস্বাদু! কিন্তু কী ভাবে?

তেলতেলে মাংসের পদ নয়, বরং ভরসা থাকুক হাল্কা ঝোলে। খেতে সুস্বাদু, অথচ শরীরও থাকবে ভাল।

মৌমিতা কুণ্ডু মল্ল
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০০:৫৩
Share: Save:

সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে বাঙালি বাড়ির খাবারে কয়েক দিন মাংস থাকবেই। আর তার বেশির ভাগটাই মুরগির মাংস। পাঁঠার মাংস বলতে মূলত মনে পড়ে রবিবারের কথা। কিন্তু প্রত্যেক সপ্তাহে মাংসের একঘেয়ে পদ কারই বা ভাল লাগে? তাই স্বাদে নতুনত্ব আনতে ভরসা নানা উপকরণই। ভ্যাপসা গরমে তেলতেলে মাংসের পদ নয়, বরং ভরসা থাকুক হাল্কা ঝোলে। খেতে সুস্বাদু, অথচ শরীরও থাকবে ভাল।

ডাবের জলে মুরগি

গরমে পেট ঠান্ডা রাখতে ডাবের জলের মতো উপকারী কিছু নেই। সেই জলে মাংস রান্না হলে ঝোল পাতলা হয় ঠিকই, কিন্তু ডাবের শাঁস শরীর তরতাজা করে।

উপকরণ: মুরগির মাংস ৫০০ গ্রাম, আদা বাটা ২ চা চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১/৩ কাপ, ডাবের শাঁস আধ কাপ, ডাবের জল ১ গ্লাস, ঘি ৪ চা চামচ, তেজপাতা ২টি, ছোট এলাচ ৪টি, দারচিনি আধ ইঞ্চি, ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, জিরে গুঁড়ো আধ চা চামচ, নুন স্বাদ মতো, চিনি আধ চা চামচ।

প্রণালী: আদা, রসুন বাটা দিয়ে মাংস মেখে রাখুন। ডাবের শাঁস মিহি করে বেটে নিন। কড়াইয়ে ঘি গরম করে তেজপাতা, ছোট এলাচ, দারচিনি ফোড়ন দিন। পেঁয়াজ বাটা দিয়ে ভাজুন। তাতে মাংস দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। একটি বাটিতে ধনে ও জিরে গুঁড়ো জলে গুলে দিয়ে দিন। নুন ও চিনি দিয়ে কষতে থাকুন। তেল ছাড়লে শাঁস বাটা ও ডাবের জল দিন। ফুটে উঠলে নামিয়ে নিন।

কাঁচা আমে টক-ঝাল মুরগি

গরমকাল মানেই কাঁচা আমের ছড়াছড়ি। মরসুমি আম খেলে শরীর ভাল থাকে। আর মুরগির মাংসের সঙ্গে আমের দোসর খাঁটি। স্বাদে সামান্য টক-ঝাল হয় ঠিকই, তবে গরমে পেট থাকে ঠান্ডা।

উপকরণ: কাঁচা আম ২টি, মুরগির মাংস ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি আধ কাপ, আদা বাটা ২ চা চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, সরষে ১ চা চামচ, তেজপাতা ২টি, শুকনো লঙ্কা ৪টি, ধনে ১ চা চামচ, জিরে ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো অল্প, চিনি এক চিমটি, সরষের তেল ১/৪ কাপ।

প্রণালী: একটি আম কুরিয়ে বেটে নিন। মুরগির মাংসের মধ্যে আম বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা, তেল মেখে রাখুন। শুকনো খোলায় ধনে, জিরে ও দু’টি শুকনো লঙ্কা ভেজে গুঁড়িয়ে নিন। তেল গরম করে সরষে, তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। তাতে পেঁয়াজ কুচি ও ফালি করে কাটা আম দিন। ভাজা ভাজা হলে মাংস দিন। মাঝারি আঁচে কষতে কষতে হলুদ গুঁড়ো, ভাজা মশলার গুঁড়ো, নুন ও চিনি দিন। তেল ছাড়লে গরম জল দিন। মাংস সুসিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে উপর থেকে আর একটু ভাজা মশলার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন।

গোয়ালন্দ স্টিমার কারি

আঠেরোশো শতকের শেষের দিকে কলকাতা থেকে ঢাকা পৌঁছতে চড়তে হত ট্রেনে। সেই ট্রেন থামত বাংলাদেশে পদ্মার তীরে গোয়ালন্দে। সারা রাত নদী পেরিয়ে পরদিন পৌঁছনো যেত নারায়ণগঞ্জ বা চাঁদপুর। গোয়ালন্দ ঘাটের স্টিমারের মাঝি-মাল্লাদের হাতে সেই সময়ে থাকত না এমন কিছু মূল্যবান উপকরণ। অনেকক্ষণ ধরে রান্নার সময়ও পাওয়া যেত না। তাই হাতে গোনা কয়েকটা মশলা একসঙ্গে মাংসে মাখিয়ে নেওয়া হত। স্বাদ বাড়াতে দেওয়া হত নদী থেকে সদ্য তুলে আনা টাটকা চিংড়ি বাটা। নিভু আঁচে অনেকক্ষণ ধরে মজে উঠত মাংস। অনেকে বলেন, বাড়িতে এই স্টিমার কারি বা ঘাটের মাংস এখন রান্না হলেও তার স্বাদ কিন্তু স্টিমারের রান্নার মতো হয় না!

উপকরণ: মুরগির মাংস ৫০০ গ্রাম, চিংড়ি ১০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ২টি, ছাঁচি পেঁয়াজ ২টি, রসুন ১টি, আদা ১ ইঞ্চি, কাঁচা লঙ্কা ৫টি, টম্যাটো ২টি, শুকনো লঙ্কা ২টি, হলুদ অল্প, সরষের তেল ১/৪ কাপ, নুন অল্প।

প্রণালী: বড় পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচা লঙ্কা ও শুকনো লঙ্কা কুচিয়ে নিন। চিংড়ি ধুয়ে বেটে নিন। মাংসের জল ঝরিয়ে একটি পাত্রে রাখুন। তাতে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, লঙ্কা কুচি, হলুদ, চিংড়ি বাটা ও সরষের তেল মেখে রাখুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে মশলা মাখা মাংস দিন। তাতে ছাঁচি পেঁয়াজ, গোটা টম্যাটো দিন। স্বাদ মতো নুন দিন। ঢাকা দিয়ে অল্প আঁচে রান্না করুন। মাংস সিদ্ধ হলে তেল ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।

লেবু-লঙ্কা মুরগি

গন্ধরাজকে সাধে লেবুর রাজা বলে! যে কোনও পদে গন্ধরাজ লেবুর কয়েক ফোঁটা রস বদলে দিতে পারে স্বাদ। আর মাংসে? মাংস রান্নায় এই লেবুর সঙ্গে লঙ্কা গুঁড়ো নৈব নৈব চ। বরং যোগ্য দোসর কাঁচা লঙ্কা।

উপকরণ: মুরগির মাংস ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজের রস ৫ চা চামচ, আদা ও রসুনের রস ১ চা চামচ করে, আদা কুচি ১ চা চামচ, রসুন কুচি ১ চা চামচ, কাঁচা লঙ্কা বাটা ২ চা চামচ, গন্ধরাজ লেবুর রস ২ চা চামচ, গন্ধরাজ লেবুপাতা ৪টি, গন্ধরাজ লেবু ১টি, কাঁচা লঙ্কা ৬টি, সাদা তেল ১/৪ কাপ, নুন স্বাদ মতো।

প্রণালী: একটি বাটিতে মুরগির মাংসের সঙ্গে পেঁয়াজের রস, আদার রস, রসুনের রস, কাঁচা লঙ্কা বাটা, অর্ধেক গন্ধরাজ লেবুর রস ও সামান্য সাদা তেল দিয়ে মাখিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে দিন। কড়াইয়ে তেল গরম করে অল্প আদা ও রসুন কুচি দিন। ভাজা ভাজা হয়ে এলে মাংস ঢেলে দিন। গোটা কাঁচা লঙ্কা দিেয় দিন। মিনিট পাঁচেক পরে এক কাপ গরম জল ও নুন দিয়ে আঁচ বাড়ান। মাংস ফুটলে আঁচ কমিয়ে গোল করে কাটা লেবু, লেবু পাতার কুচি ছড়ান। মিনিট পাঁচেক পরে বাকি লেবুর রস ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।

পাঁঠার মাংসের বেরেস্তা ঝোল

পাঁঠার মাংস মানেই একেবারে রগরগে তেল-ঝাল হবে, এমনটা মোটেও নয়। পাঁঠার মাংসের হাল্কা ঝোলও খাদ্যরসিকদের কাছে অমৃতসমান। বেরেস্তা দেওয়া ঝোলে আলুও দিতে পারেন স্বচ্ছন্দে।

উপকরণ: পাঁঠার মাংস ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ৩টি, আদা বাটা ২ চা চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, তেজপাতা ২টি, ছোট এলাচ ২টি, দারচিনি আধ ইঞ্চি, সাদা তেল ২ চা চামচ, টম্যাটো ১টি, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, জায়ফল অল্প,

ঘি ৪ চা চামচ, নুন স্বাদ মতো।

প্রণালী: কড়াইয়ে তেল গরম করে ঝিরিঝিরি করে কাটা পেঁয়াজ ভেজে তুলে নিন। অর্ধেক বেরেস্তা জল দিয়ে বেটে নিন। ওই তেলেই ঘি দিয়ে রসুন বাটা, আদা বাটা ও মাংস দিন। ভাজা হয়ে গেলে টম্যাটো কুচি ও পেঁয়াজ বাটা দিন। অল্প জলে ধনে গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো গুলে দিন। নুন ও জায়ফল গুঁড়ো ছড়িয়ে কষতে থাকুন। ঘি ভেসে উঠলে গরম জল দিন। ঝোল ফুটলে নামিয়ে প্রেশার কুকারে ঢালুন। চার-পাঁচটি হুইসল বাজলে নামিয়ে নিন। বেরেস্তা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

অনুলিখন: রূম্পা দাস

ছবি: অভিজিৎ দে

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy