পিনাকী ভট্টাচার্য
নতুন বছর এসে গেছে— এখন শপথ নেওয়ার সময়। কোমরের বেল্টকে এক ঘর পেছনে ঠেলতে হবে, সোডা কাপড় কাচাতেই ব্যবহার করতে হবে— খাবার হজম করতে না। খানাতল্লাশিরও ফুর্তি একটু মেপে করতে হবে— এক বছর ধরে পোলাও হুইস্কি তল্লাশ করে তাই এ বার স্যালাডের গপ্প।
স্যালাড যে ঠিক কবে থেকে খাওয়ার থালায় উঠেছে তা বলা মুশকিল— তবে গ্রিকরাও কাঁচা সবজি খেত; স্যালাড নামটা ছিল না যদিও। স্যালাড নামটা এসেছে লাতিন শব্দ ‘হার্বা সালাতা’ থেকে, এর আক্ষরিক মানে ‘নোনতা সবজি’। সেই জমানায় গ্রিক দার্শনিক হিপক্রিতিস মূল ভোজের আগে কাঁচা সবজি খাওয়ার ব্যাপারে জোর সওয়াল করেছেন, কারণ তাঁর মতে, কাঁচা সবজি খাদ্যনালী দিয়ে যাওয়ার সময় সহজে গলে যায়, আর তাতে পরবর্তী খাবারের পথ সুগম হয়ে যায়। গ্রিক ও রোমানরা সেই যুগে প্রচুর পরিমাণে স্যালাডও খেত। কিন্তু তার পর প্রায় দু’হাজার বছর স্যালাডের ভূমিকা ছিল চলচ্চিত্রের এক্সট্রার মতো— থেকেও নেই টাইপ। মাঝে এক বার ১৬৯৯ সালে লেখা ‘আকাতেরিয়া: আ ডিস্কোর্স অব সালেতস’ বইয়ে জন ইভলিন ব্রিটিশদের স্যালাড খাওয়ার উপকারিতা বোঝানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু তখন ইংল্যান্ড নোনা মাছ আর বাসি মাংসকে ভারত থেকে নিয়ে আসা মশলা দিয়ে সুস্বাদু করতে শিখেছে, কাজেই কেউ কান দিল না! ইংল্যান্ডের রাজা চতুর্থ হেনরি বা স্কটল্যান্ডের রানি মেরি যদিও স্যালাড-ভক্ত ছিলেন, কিন্তু তাঁরা ছিলেন নিতান্তই সংখ্যালঘুদের দলে।
তবে কি সেই যুগের মানুষ শাক-সবজি খেত না? অবশ্যই খেত, কিন্তু নিতান্ত খাপছাড়া আর অসংগঠিত ভাবে। খেতে হবে বলে খাওয়া আর কী! শিল্প বিপ্লবের শেষের দিকে যখন প্রকৃতির সর্বনাশের ব্যাপারটা অনেকেরই মাথাব্যথার কারণ হল, বাইরে রব উঠল ‘দাও ফিরে সেই অরণ্য’ আর অন্দরমহলে ‘যাও ফিরে সেই অরণ্যে’। শাক-সবজিতে ভরে উঠল হেঁশেল। কিন্তু অভ্যাস চলে গেছে যে! আমেরিকায় শাক-সবজিকে সংগঠিত আর আকর্ষক এক রূপ দেওয়ার চেষ্টা শুরু হল উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে, দরকার মতো মাছ মাংস সেদ্ধ করে অবধি সবজির সঙ্গে সহাবস্থানের ব্যবস্থা হল। চেখে দেখা গেল মন্দ হয়নি ব্যাপারটা, বরঞ্চ স্বাদ বেশ খোলতাই হয়েছে। শুরু হল স্যালাড-বিপ্লব। ক্রমে সমস্ত পদের সঙ্গেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হল, কেক-পেস্ট্রি বাদে।
স্যালাডের আদি যুগ থেকেই স্যালাড-ড্রেসিং স্যালাড পরিবেশনের অঙ্গ। আগে, যখন পরিবেশনের ছিরিছাঁদ ছিল না, তখন সুস্বাদু আর আকর্ষণীয় করতে রকমারি জিনিসের পোশাকের আস্তরণে স্যালাড পরিবেশন করা হত— কখনও ভিনিগার আবার কখনও বিভিন্ন গুল্মের, ফুলের পাপড়ির, সঙ্গে দেওয়া হত সরষে, মেয়োনিজ ইত্যাদি। স্যালাড-বিপ্লব এসে স্যালাড-ড্রেসিং’কে ঘরে-ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করল। ১৮৯৬ সালে মারজেত্তি কলম্বাস শহরে এক রেস্তরাঁ চালু করলেন, যেখান থেকে বিভিন্ন স্যালাড-ড্রেসিং বিক্রি হতে লাগল। ১৯১২ সালে রিচার্ড হেইলম্যান আর ১৯২৫ সালে ক্রাফ্ট চিজ কোম্পানি মেয়োনিজকে সবার সাধ্যের মধ্যে নিয়ে এল। স্যালাড আর শুধু বাড়ির চার দেওয়ালে সীমাবদ্ধ রইল না— সুস্বাস্থ্যের তাগিদে তৈরি হল স্যালাড বার, জনপ্রিয় হল স্যালাড লাঞ্চ, এমনকী কোনও অনুষ্ঠানের মেনু তৈরি করার সময় আমাদের দেশে আজকাল কর্তা জেনে নিচ্ছেন ক’রকম স্যালাড পরিবেশন করা হবে।
pinakee.bhattacharya@gmail.com
১৮৯৪-এর ২১ এপ্রিল। লন্ডনের অ্যাভিনিউ থিয়েটার সে দিন সরগরম, জর্জ বার্নার্ড শ-এর নতুন নাটক ‘আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান’-এর পয়লা অভিনয় মঞ্চে। দর্শকদের টগবগানির আরও কারণ, নাটক দেখতে এসেছেন স্বয়ং নাট্যকার, অভিনয়-শেষে কলাকুশলীদের উৎসাহ দিতে মঞ্চে উঠবেন বলেও শোনা গেছে। আলোটালো নিভে শো শুরু হল, যথাসময়ে শেষও। তুমুল হাততালি আর স্ট্যান্ডিং ওভেশন-এর মধ্যে জর্জ বানার্ড শ উঠলেন স্টেজে। হঠাৎ ভিড়ে ঠাসা হল-এর কোথাও একটা থেকে কে যেন চেঁচিয়ে উঠল, ‘দুয়ো! দুয়ো!’ জর্জ বার্নার্ড শ সঙ্গে সঙ্গে সেই দিকে তাকিয়ে, মাইক-হাতে বলে উঠলেন, ‘আপনার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু গোটা হল-ভর্তি বিরুদ্ধ মতের সঙ্গে আমরা দুজন কী করে এঁটে উঠব বলুন দেখি!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy