Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
History

পুরুলিয়ার গ্রামে শিব হিসেবেই পুজো পান পার্শ্বনাথ, ঋষভনাথরা

কোথাও দ্বিভুজ তীর্থঙ্করের মূর্তিতে আরও দু’টি হাত জুড়ে তৈরি হয়েছে বিষ্ণুমূর্তি। বদলে গিয়েছে তাদের উপাসনার ধরনধারন।

পুরানিদর্শন: পাকবিড়রা গ্রামের জৈন দেউল স্থাপত্য।

পুরানিদর্শন: পাকবিড়রা গ্রামের জৈন দেউল স্থাপত্য।

শুভাশিস চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১ ০৭:০৮
Share: Save:

সন্তানহীনা রমণীরা মানত করেন ‘ন্যাংটা ঠাকুর’-এর কাছে। সন্তান জন্মের পর ঘটা করে পুজোও দেন মানসপূরণের সন্তুষ্টিতে। দরিদ্র, হয়তো বা নিরক্ষর মা জানেনও না, যে দেবতার বরে তিনি মাতৃত্বের স্বাদ পেলেন, সেই মূর্তি কোনও হিন্দু দেবতার নয়, ওটি আসলে দিগম্বর জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি। বাঁকুড়া জেলার দ্বারকেশ্বর নদের গতিপথে দেখতে পাওয়া যায় সোনাতোপল, বহুলাড়া, ধরাপাটের বিখ্যাত জৈন মন্দিরগুলি। এই ধরাপাটের মন্দিরেই ‘ন্যাংটা ঠাকুর’-এর অবস্থান। আবার জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের মূর্তিতে সর্পলাঞ্ছনচিহ্ন আছে বলে, পুরুষসঙ্কেত থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় মানুষের কাছে তিনি মনসারূপে পূজা পান! সনাতন হিন্দুধর্মে যে এখনও সমন্বয়ী ধর্মচেতনাই মূল শক্তি, তার প্রমাণ বহুলাড়ার জৈন মন্দিরে পরবর্তী কালে শিব-দুর্গা-গণেশের অধিষ্ঠান হলেও জৈন তীর্থঙ্কর মূর্তি নিত্যপুজো থেকে বঞ্চিত হননি। হিন্দু পুরোহিত তাঁকে আজও সমান মর্যাদায় অর্চনা করেন।

বাঁকুড়ার শালতোড়া গ্রামের কাছে দামোদর নদের কাছে বিহারীনাথ পাহাড়। এটি এক সময় জৈন সংস্কৃতির উজ্জ্বল কেন্দ্র ছিল। এখানে নানা স্থানে নাগছত্রচিহ্নিত পার্শ্বনাথের প্রস্তরমূর্তি দেখা যেত এই সে দিনও। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আর মানুষের উদাসীনতায় কিছু নষ্ট হয়েছে, কিছু বা চোরাকারবারির বদান্যতায় বিদেশ পাড়ি দিয়েছে। এই জেলার শিলাবতী নদীর কাছে হাড়মাসরা গ্রামের মন্দিরেও আছে জৈন তীর্থঙ্করদের নিদর্শন। আবার যেখানে কুমারী নদী মিশেছে কংসাবতীর সঙ্গে, তার একটু দূরেই আছে পরেশনাথ নামের এক প্রাচীন গ্রাম। জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের নাম থেকেই এই গ্রামের নাম, এখানে ছ’ফুট উচ্চতার পার্শ্বনাথের প্রস্তরমূর্তি পাওয়া গিয়েছিল বহু দিন আগে।

পুরুলিয়ার দেউলি গ্রামের এক প্রান্তে প্রাচীন মন্দিরের ভগ্নস্তূপের গর্ভগৃহে অপূর্বদর্শন এক জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি স্থানীয় মানুষের কাছে ‘ইড়গুনাথ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। আশপাশে আছে অন্য জৈন তীর্থঙ্করদের ছোট ছোট মূর্তি। কর্নেল ডালটন ১৮৬৪-৬৫ সালে কাঁসাই নদীর তীরবর্তী মানভূম-পুরুলিয়ার পুরাকীর্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই বিস্ময়ের রেশ থেকে প্রবন্ধ লিখেছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে। এর আট বছর পর, ১৮৭২ সাল নাগাদ আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে বিভাগে পদাসীন জে ডি বেগলার এই এলাকার দুর্গম অঞ্চলগুলিতে হাতির পিঠে চড়ে জৈন মন্দির-স্থাপত্য ও অন্যান্য পুরাকীর্তি দেখে সরকার বাহাদুরকে উচ্চ প্রশংসিত প্রতিবেদন পাঠান।

পাকবিড়রাকে এক কথায় ‘পুরুলিয়ার জাদুঘর’ বললে অত্যুক্তি হবে না। জেলায় যত জৈন তীর্থকেন্দ্র আছে, এটি সর্ববৃহৎ। একই স্থানে এত অজস্র মূর্তি পুরুলিয়ার অন্যত্র দেখা যায় না। বেগলার সাহেব মানভূম পরিদর্শনকালে এখানে একুশটি দেউল দেখেছিলেন, যার মধ্যে উনিশটি ছিল পাথরের। খুব সম্ভবত এখানে চব্বিশ জৈন তীর্থঙ্করের চব্বিশটি দেউল ছিল। কুপল্যান্ড সাহেবের গেজেটিয়ারেও পাকবিড়রার উল্লেখ আছে। ‘পাক’ শব্দের অর্থ পাখি, আর ‘বিড়রা’ শব্দার্থ বাসা— অর্থাৎ ‘পাখির বাসা’। অরণ্যবেষ্টিত এই নির্জন স্থানটিতে জৈন স্থাপত্যশিল্পীরা গড়ে তুলেছিলেন সুবিশাল এক শিল্পক্ষেত্র। একটি বৃহৎ কালো প্রস্তরখণ্ডে জৈন তীর্থঙ্কর শীতলনাথের মূর্তি পাকবিড়রার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ। পদ্মফুলের ওপর কায়োৎসর্গ মুদ্রায় দণ্ডায়মান মূর্তিটিকে কুপল্যান্ড সাহেব মহাবীর তীর্থঙ্করের বলে উল্লেখ করেছেন। গ্রামের মানুষের কাছে ইনি ‘শিব’ হয়ে উঠেছেন, এখানকার রায় পরিবারের সদস্যেরা নিয়মিত ফুল, বেলপাতা, সিঁদুর ও চন্দন দিয়ে মূর্তিটিকে শিবজ্ঞানে পূজা করে থাকেন। এ ছাড়াও আছে মহাবীর, শাসনদেবী অম্বিকা, পার্শ্বনাথ, চন্দ্রপ্রভ, আদিনাথ, ঋষভনাথ, এবং শিশু কোলে নারী ও পুরুষমূর্তি। কল্পবৃক্ষের নীচে একই আঙ্গিকের মূর্তিগুলিতে উপবিষ্ট প্রত্যেকের কোলে একটি করে ছোট ছোট শিশু— মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের আবেদন ফুটে উঠেছে যেন। পাকবিড়রা পুরাক্ষেত্রের অন্যতম নিদর্শন চারটি চৈত্য। আড়াই থেকে তিন ফুট উচ্চতার এমন চৈত্য পুরুলিয়ার অন্যত্র, ছড়রা, বারমাস্যা, বড়রা প্রভৃতি অঞ্চলেও দেখতে পাওয়া যায়। জে ডি বাগলার পাকবিড়রাতে যে চৈত্য দেখেছিলেন, তার চার পাশে খোদিত ছিল মহাবীরের মূর্তি। স্থানীয় ‘দাঁদড়’ পত্রিকা গোষ্ঠী ও সচেতন মানুষজন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন বলেই অবহেলার পাকবিড়রা এখন জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্র।

সুপণ্ডিত বিনয় ঘোষ পুরুলিয়ায় ক্ষেত্রসমীক্ষা করেছিলেন, সঙ্গী ছিলেন পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের বাংলার শিক্ষক শান্তি সিংহ। শান্তিবাবু জানাচ্ছেন, “পুরুলিয়ার আনাই জামবাদ, লৌলাড়া থেকে বড়াম প্রভৃতি গ্রামে সরেজমিন সমীক্ষায় গিয়ে দেখেছি অনেক জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি। সে সব প্রস্তর মূর্তি নির্জন বৃক্ষচ্ছায়ায় কিংবা গ্রামের মাঝে কোনও খোলামেলা জায়গায় ভক্তিসহ রেখেছেন গ্রামবাসীরা। তবে জৈন মন্দিরের ভগ্নাবশেষ বিশেষত আমলক, বেঁকি কিংবা চৌকা পাথরখণ্ড গ্রামের কেউ কেউ গৃহপ্রাঙ্গণে কিংবা খড়ের পালইয়ে তলার পাটাতন হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে চলেছেন।” তিনি পাকবিড়রাতে দেখেছিলেন জৈন তীর্থঙ্কর মূর্তিগুলিকে গ্রামবাসীরা ‘কালভৈরব’ নামে পূজা করেন, এমনকি দেবতাকে প্রসন্ন করতে বলিদান পর্যন্ত চলে। অহিংসার পথ অনুসরণ ও সর্বপ্রকার জীবসত্তার প্রতি করুণা প্রদর্শন যে জৈন ধর্মের মূল কথা, তার তীর্থঙ্করদের মূর্তি পূজিত হচ্ছেন বলির রক্তপাতে— ইতিহাস তার কাল পরিক্রমণে চোরাপথের নানা বাঁকে কোন ইশারা রেখে দেবে, তার আন্দাজ দেবেন কোন দেবতা!

চব্বিশতম তীর্থঙ্কর মহাবীর ও তাঁর অনুগামীরা জৈন ধর্ম প্রচারের জন্য প্রাচীন বঙ্গদেশ থেকে ক্রমশ পশ্চিম ভারতে যাবার চেষ্টা করেছিলেন। তাই রাঢ়ভূমি সমেত প্রাচীন বঙ্গের বহু স্থানে জৈন ধর্মের প্রসার ঘটে। বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় খ্রিস্টজন্মের তিনশো বছর আগে জৈন মতাবলম্বীদের বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল, তখন তার নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন। হাজারিবাগের পরেশনাথ পাহাড়কে জৈন ধর্মগ্রন্থে ‘সমেতশিখর’ বলা হয়েছে। এই পবিত্র শিখরে চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে কুড়ি জন (কারও মতে উনিশ জন) সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। একে কেন্দ্র করে মানভূম-পুরুলিয়ার বড়াম, সুইসা, দেউলি, শীতলপুর, দেউলঘাট, আনাই, বুধপুর, পাকবিড়রা, লৌলাড়া, ছড়রা, পারা, কাশীপুর, মৌতড়-বান্দা প্রভৃতি অঞ্চলে জৈন সংস্কৃতির অনিন্দ্য চিহ্ন আজও অবহেলার ও ঐতিহ্য ধ্বংসের সাক্ষী। জৈন ধর্মাবলম্বী শ্রাবক সম্প্রদায় পুরুলিয়ায় ‘শরাক’ নামে পরিচিত। শরাকেরা বাণিজ্য ও মহাজনি ব্যবসা করতেন। প্রচুর বিত্তসম্পদের একটা বড় অংশ তারা জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠায় ব্যয় করেছিলেন। জৈন ধর্মগ্রন্থ ‘আচারাঙ্গসূত্ত’ থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে তীর্থঙ্কর মহাবীর ঘন জঙ্গলে পরিবৃত ‘রাধা’ অঞ্চলের অসভ্য জাতিকে নবজ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করতে সেই অঞ্চল পরিভ্রমণ করেছিলেন। তখন স্থানীয় মানুষেরা মহাবীরের পিছনে কুকুর লেলিয়ে দেয়। রাধাঞ্চল সে কালে বজ্রভূমি ও সূম্ভভূমি, এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। রুখা প্রকৃতির পুরুলিয়া ছিল বজ্রভূমির অন্তর্গত। অধ্যাপক দীনেশচন্দ্র সরকার মনে করেন: মহাবীরের পিছনে কুকুর লেলিয়ে দেবার কাহিনি হয়তো অপপ্রচার। রাধা অঞ্চলের মানুষ জৈন ধর্মের দ্বারা সুসভ্য হয়েছিল, এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার্থে কুকুর-কাহিনির উদ্ভব।

জৈনমূর্তি চেনার সহজ উপায়, এই মূর্তির মাথায় জটা থাকে। আবার তন্ত্রের প্রবক্তা শিব, জৈন ও বৌদ্ধ— সকলেরই উপাস্য। প্রাচীন নামে ‘ঈশ্বর’ যুক্ত থাকলে বুঝতে হবে তা জৈন শিব (‘নাথ’ থাকলে বৌদ্ধ শিব)। জৈন মন্দিরগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল দু’টি পাথরকে অনড় ভাবে আটকে রাখার জন্য লোহার আংটার ব্যবহার হত, বাইরে থেকে তা দেখা যায় না। পুরুলিয়ার প্রাচীন প্রত্নভূমি ক্রোশজুড়ি গ্রামের সিদ্ধেশ্বর শিবমন্দিরটি নিয়ে বিতর্ক আছে। নামের কারণে অনেকেই মনে করেন এটি জৈন মন্দির ছিল। ক্রোশজুড়ির আশপাশে জৈন ধর্মপন্থীরা বসবাসও করত। অস্তিত্ব রক্ষার দায়ে তারা কেউ অঞ্চল পরিত্যাগ করেছেন, কেউ আবার জৈন ধর্ম ত্যাগ করে গ্রামেই রয়ে গেছেন। কৌতূহলের বিষয় হল, সিদ্ধেশ্বর মন্দিরের বারো কিমি দক্ষিণে পাবড়া-পাহাড়ীতে প্রথম তীর্থঙ্কর আদিনাথের মূর্তি আছে। পাশের ধবনী গ্রামে জৈন স্থাপত্যের স্তম্ভগুলো অযত্নে পড়ে ছিল বহু বছর। অথচ এই সব গ্রামে এখন এক ঘর জৈনও থাকেন না।

২০০১-এর সেপ্টেম্বরে একটি বাংলা দৈনিকপত্রে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামে অনেকেই আকৃষ্ট হয়েছিলেন: ‘পুরাতত্ত্বের হদিস দিল এক কিশোরের স্বপ্ন’। পুরুলিয়ার গজপুরের ঘটনা। পাশের কুশটাঁড় গ্রামের বছর সতেরোর তারাপদ থাকত পিসির বাড়িতে। গুয়াই নদীর ধারে তারাপদর সঙ্গে এক সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎ হয়। সেই সন্ন্যাসী তারাপদকে নদীর ধারে বসতে বলে চলে যান। কিশোরটি সম্মোহিতের মতো বসে থাকে, উঠে চলে যাবার শক্তিও হারিয়ে ফেলে। অনেক ক্ষণ পর সেই সন্ন্যাসী ফিরে এসে তারাপদকে প্রসাদ দেয় এবং গজপুরের দেবস্থানে যাবার নির্দেশ দিয়ে চলে যান।

তারাপদ রায় কুশটাঁড়ের বাড়িতে ফিরে এসে কিছু ক্ষণ মনমরা হয়ে থাকলেও সেই দিনই গজপুরের দেবস্থানে চলে যায়। জঙ্গলাকীর্ণ পাথরের ঢিবিতে কাটিয়ে দেয় সারা রাত। ছেলের উপর ঠাকুরের ভর হয়েছে— এ সব ভেবে সেই ঢিবিতেই টালির চাল দিয়ে ঘর তৈরির ব্যবস্থা করলেন তারাপদর বাবা। মাটি খোঁড়াখুঁড়িতে বেরিয়ে এল একটা ছোট মূর্তি। একে একে পাওয়া গেল আরও অনেক কিছু। ৬ সেপ্টেম্বর ‘মানভূম সংবাদ’-এ লেখা হল: ‘কুশটাঁড়ের স্বপ্নে পাওয়া খনন করা মন্দিরে ভক্তদের ভীড়।’ সে সময়ে পুরুলিয়ার জেলাশাসক ছিলেন দেবপ্রসাদ জানা। তাঁর সম্পাদনায় ‘অহল্যাভূমি পুরুলিয়া’ একটি আকরগ্রন্থ। দেবপ্রসাদবাবুর সচেতন ও আন্তরিক উদ্যোগে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গজপুর থেকে উদ্ধার করল জৈন তীর্থঙ্করের মস্তকহীন দু’টি বড় দিগম্বর মূর্তি, জৈনদেবী অম্বিকার মূর্তি, কারুকার্যময় চারপল্লব যুক্ত একটি বড় ঘট এবং আটটি ছোট ঘট। এই ন’টি ঘট প্রমাণ করে এখানে অন্তত ন’টি জৈনমন্দির ছিল। এ ছাড়া তিনটি লিপিও পাওয়া গেছে এখানে। ২০০২-এ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরুলিয়ার ‘হরিপদ সাহিত্য মন্দির’-এ ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক কর্মশালা চলাকালে জেলা সংগ্রহশালায় এগুলি দান করা হয়।

তীর্থঙ্করের বিগ্রহ।

তীর্থঙ্করের বিগ্রহ।

“মনে আছে, দামোদর নদের পাঞ্চেত জলাধারে— তেলকুপির বেশ কিছু জৈন মন্দির ১৯৬৯ সালে জলমগ্নপ্রায় দেখেছিলাম। নীল জলরাশির মাঝে কয়েকটি মন্দির তখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল।” শান্তি সিংহের এই স্মৃতিচারণে তেলকুপির মন্দিরকে ‘জৈন মন্দির’ বলা হলেও সুভাষচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কিন্তু লিখেছেন: “বিশালত্বের দিক থেকে জৈনধর্মের যেমন পাকবিড়রা, হিন্দু ব্রাহ্মণ্য ধর্মের সেইরূপ তৈলকুপি।… পশ্চিমবঙ্গে তৈলকুপির মতো এত বিশাল হিন্দু ব্রাহ্মণ্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বোধহয় আর কোথাও ছিল না।” তেলকুপি বিষয়ে দু’জন দু’রকম বলছেন কেন? আসলে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বহু জৈন মন্দির পাল ও সেন রাজাদের আমলে বৌদ্ধ তান্ত্রিক দেবদেবী কিংবা হিন্দু দেবদেবীদের দ্বারা দখল হয়ে যায়। তাই এই প্রত্নমন্দিরগুলিতে মিশ্র ধর্মীয় সংস্কৃতির নিদর্শন বর্তমান। যেমন ধরাপাটের সর্পলাঞ্ছনযুক্ত দ্বিভুজ পার্শ্বনাথের মূর্তিতে পরে আরও দুটি হাত প্রস্তরখণ্ডে উৎকীর্ণ করা হয়েছে, যাতে তিনি হয়ে ওঠেন বিষ্ণুবিগ্রহ এবং হিন্দুপূজ্য। এ সব ঘটনা প্রমাণ করে ধর্মের মতি কোনও কালে স্থির ছিল না, গায়ের জোর চিরকাল তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে। মানুষ কখনও ফাঁদে পা দিয়েছে, কখনও বা ‘ন্যাংটা ঠাকুর’-এর উপরেই আস্থা রেখেছে।

কৃতজ্ঞতা: অমিত মুখোপাধ্যায়, দয়াময় মাহাতো, অজয় মাহাতো

অন্য বিষয়গুলি:

History Jainism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy