E-Paper

স্বাদের আনন্দ কিংবা স্বাস্থ্য ফেরানো, পায়েসের বিকল্প মেলেনি সারা বিশ্বে

পায়েসকে বিশ্বের প্রাচীনতম মিষ্টি পদগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। কিন্তু ঠিক কবে, কোথায় এবং কী ভাবে পায়েসের উদ্ভব, সেটা নিয়ে রহস্য কাটেনি আজও।

পায়েস।

পায়েস।

স্বয়ংদীপ্ত বাগ

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:১৬
Share
Save

জন্মদিন হোক বা শীতকালে নতুন গুড় ওঠার মরসুম, বাড়িতে অতিথিসমাগম কিংবা কোনও শুভ অনুষ্ঠান অথবা পুজো-আচ্চায় ঠাকুরকে ভোগ দেওয়া, পরমান্ন বা পায়েস ছাড়া বাঙালির খাদ্যতালিকা কিছুতেই সম্পূর্ণ হয় না। এ এক আশ্চর্য পদ। সাদা চোখে দেখলে মুখ্যত দুধ, চাল আর চিনি নয়তো গুড়, সঙ্গে কাজু, কিসমিস, এলাচ, তেজপাতার মতো আরও কিছু উপকরণে তৈরি একটা মিষ্টি, আরও ভাল করে বললে মিষ্টান্ন। কিন্তু এর স্বাদের নানা সূক্ষ্ম বৈচিত্র আমাদের অভিজ্ঞতায় বার বার ধরা পড়ে। দুধের ঘনত্ব, আতপচালের সুবাস, সাদা চিনির রং কিংবা একটু ক্যারামেলাইজ়ড লালচে— নানা কারণে বদলে যায় পায়েসের স্বাদ। অনেকে আবার গুঁড়ো দুধ বা কনডেন্সড মিল্কের মতো রেডিমেড উপকরণ সহযোগে পায়েসের স্বাদে ভেল্কি দেখাতে পারেন। মোট কথা, খাবারের শেষ পাতে এই ডেজ়ার্টটি বাঙালির বড় প্রিয়।

শুধু কি বাঙালির? আসব সেই কথাতেই।

পরমান্ন বা চলতি কথায় পায়েস, প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনির আশ্চর্য জগৎ থেকে আধুনিক রান্নার বইয়ের পাতা— এর উজ্জ্বল উপস্থিতি সত্যি তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো! দেশ-কালের সীমা পেরিয়ে এক প্রকার কিংবদন্তি হয়ে ওঠা পায়েস ও তার দুর্দান্ত সব সংস্করণ আজ ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি মহাদেশে। মজার বিষয় হল, পৃথিবীর নানা প্রান্ত, নানা সময়ে দাবি করে, পরমান্ন নাকি তাদেরই নিজস্ব উদ্ভাবন! পায়েসের শেকড়টা অনেকটা যেন তাই কবিগুরুর সেই লেখা, ‘দেশে দেশে মোর দেশ আছে’-র মতো! অসামান্য এই আন্তর্জাতিক মিষ্টান্নটির পরতে পরতে তাই জড়িয়ে রয়েছে জমজমাট সব আখ্যান।

পায়েসকে বিশ্বের প্রাচীনতম মিষ্টি পদগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। কিন্তু ঠিক কবে, কোথায় এবং কী ভাবে পায়েসের উদ্ভব, সেটা নিয়ে রহস্য কাটেনি আজও। এর জয়যাত্রার ইতিহাস অন্তত আট সহস্রাব্দের পুরনো বলে গবেষকদের অনুমান। বহু সংস্কৃতিতে রয়েছে এর সন্ধান। যেমন প্রাচীন ভারত, চিন ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে চালের তৈরি খাদ্যের সঙ্গে পায়েসের প্রচলন ছিল। তবে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা এবং অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে পায়েস বা ক্ষীরকে প্রধানত একটি দক্ষিণ এশীয় ডেজ়ার্ট বলা হয়েছে। ফলে এটির উৎপত্তি, তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের কোথাও হতে পারে বলেও একটা ধারণা তৈরি হয়। ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণ, নানা প্রাচীন পৌরাণিক উপাখ্যান ও কিংবদন্তিতে ছড়িয়ে রয়েছে পায়েসের আদিকালের গল্প। এক সময় ভগবান শ্রীবিষ্ণুর নৈবেদ্য হিসেবে নাকি চাল, দুধ দিয়ে তৈরি পবিত্র ‘পরমান্নম্’, পরম্পরাগত ভাবে নিবেদন করা হত। তবে পায়েসের আরও ব্যাপক উল্লেখ ‘ক্ষীর’ বা ‘ক্ষীরিকা’ হিসেবে প্রথম পাওয়া যায় মহাভারত ও রামায়ণে। পরবর্তী কালে কৃত্তিবাসী রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ডে পায়েসের স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় এই ভাবে, “সুগন্ধি কোমল অন্ন পায়স পিষ্টক… ভোজন করিল সুখে রামের কটক”।

চিকিৎসার পথ্য হিসেবেও পায়েসের গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ রয়েছে প্রাচীন আয়ুর্বেদে। আসলে চাল, দুধ ও মিষ্টি দিয়ে তৈরি একটি পদ হিসেবে, পায়েসের নাকি প্রথম নির্দিষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় ভারতীয় সাহিত্যে এবং তৎকালীন সময়ে পদটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল বলেও মনে করেন বিখ্যাত রসায়নবিদ ও খাদ্য-ইতিহাসবিদ কে টি আচায়া। ‘দ্য ফার্মা ইনোভেশন জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, দুধে চাল দিয়ে তৈরি একটি উন্নত পদ, ‘পায়স’-এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে বিভিন্ন বৌদ্ধ এবং জৈন লেখায়। একাদশ শতকে লোককাহিনির বিখ্যাত সঙ্কলন, সোমদেবের ‘কথাসরিৎসাগর’-এও পায়সম্-এর উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখ রয়েছে, চতুর্দশ শতকে সুফি কবি মালিক মোহম্মদ জায়সির ‘পদ্মাবত’-এও।

পায়েসের একটি গাঢ়, মানে, চাল-বেশি-দুধ-কম সংস্করণ (ফিরনি) মোগলদের সঙ্গে ভারতে এসেছিল এবং পরবর্তী কালে তা থেকে আরও কিছু নতুন পদ তৈরি হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে শুধু ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়া নয়, চিন ও পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলেও পায়েসের প্রাচীন রন্ধনপ্রণালীর সন্ধান মিলেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই সমস্ত অঞ্চলে প্রাচীন কাল থেকেই ধান চাষ হয়ে আসছে। যেমন, আমেরিকার ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, চিনে নাকি প্রায় দশ হাজার বছর আগে ধানের চাষ শুরু হয়েছিল। আবার, ভারতে নাকি প্রায় সাড়ে আট হাজার বছর আগে ধান চাষের প্রমাণ মিলেছে বলে জানা যাচ্ছে ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডন সূত্রে।

অন্য দিকে, রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে ইরানে প্রধান খাদ্যফসল হিসাবে ধান চাষ হয়ে আসছে। ইরানে পায়েস-সহ বিভিন্ন পেস্ট্রি, রুটি ইত্যাদি তৈরির প্রধান উপকরণ হিসেবে চালের যে ব্যবহার, তার দীর্ঘ ঐতিহাসিক পটভূমি আছে বলে জানাচ্ছে ‘জার্নাল অব এথনিক ফুডস’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র। আসলে, ভারত, চিন, ইরান ইত্যাদি দেশগুলিতে সুপ্রাচীন কাল থেকেই প্রধান খাদ্য হিসেবে চালজাত খাদ্য বা ভাতের প্রচলন ছিল। সেখানে সময়ান্তরে চালের সঙ্গে দুধ, মিষ্টি ইত্যাদি মিশিয়ে পায়েসের মতো মিষ্টান্নের উদ্ভব অস্বাভাবিক নয়। সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এটাও বলা প্রয়োজন, দীর্ঘ ইতিহাসে পায়েস তৈরির প্রক্রিয়ায় সব সময় যে চাল এবং মিষ্টি অপরিহার্য ছিল, তা কিন্তু নয়। ভারতে চতুর্দশ শতকের ‘পদ্মাবত’-এ যেমন জোয়ারের তৈরি পায়েসের উল্লেখ পাওয়া যায়, তেমনই পঞ্চদশ শতকের ‘অস্টিন ম্যানাস্ক্রিপ্টস’ থেকে জানা যায়, অনেক দিন ধরে ইউরোপে পায়েসের চল ছিল। এক সময় রোমানরা পেট ঠান্ডা করতে এবং ‘ডিটক্স ডায়েট’ হিসেবে এর ব্যবহার করত। পায়েসে মধু, চিনি ইত্যাদি দেওয়া শুরু হয় পঞ্চদশ শতক থেকে।

অতীতে রেশমপথ-সহ অন্য বাণিজ্যপথগুলির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে রন্ধন সম্পর্কিত ঐতিহ্যেরও বিনিময় ঘটে। ধীরে ধীরে গোটা ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে পায়েসের সুঘ্রাণ। মধ্যযুগীয় ইউরোপে, বিশেষত অভিজাত ও ধনী সম্প্রদায়ের মধ্যে আমদানি করা মহার্ঘ চাল দিয়ে তৈরি পায়েস দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ঔপনিবেশিক আমেরিকায়, ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা পায়েসের রন্ধনপ্রণালী নিয়ে যায়। উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ উপনিবেশগুলোয় তখন ধানের চাষ হত। পরবর্তী কালে অবশ্য কোনও দেশে ধানের চাষ বা সেখানে চাল আমদানির সঙ্গে পায়েসের যোগসূত্র ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকে এবং এক সময় বিশ্বায়নের হাত ধরে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে পায়েসের নানা সংস্করণ।

বৈচিত্রের মধ্যে থাকা ও সময়োপযোগী হয়ে ওঠা বরাবরই পায়েসের অন্যতম ‘ইউএসপি’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চালভিত্তিক পায়েসের ধারণা বদলে গেছে। চালের জায়গা নিয়েছে ডাল, গমজাতীয় শস্য, সাবুজাতীয় কন্দ ফসল, আমের মতো ফল, পোস্তর মতো বীজ, সেমাই, লাচ্ছা সেমাইয়ের মতো নানা উপাদান। আবার পায়েসের পাশ্চাত্য-ঘেঁষা রন্ধনপ্রণালীতে দীর্ঘ দিন ডিম-সহ বিভিন্ন আমিষ উপাদানের জনপ্রিয়তাও লক্ষণীয় ছিল। এমনটাই জানা যাচ্ছে রন্ধন-সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্বের অন্যতম নামী লেখক অ্যালান ডেভিডসনের লেখা থেকে।

তবে বিশ্ব জুড়ে পায়েসের যে কত রকমের রূপ আর নাম, তা জানলে সত্যি বিস্মিত হতে হয়। শুরু করা যাক আমাদের দেশ দিয়ে। এখানে পায়েসের মূল উপকরণ চাল, দুধ এবং চিনি বা গুড়। স্বাদে ও গন্ধে কামাল করতে ব্যবহার করা হয় এলাচ, দারচিনি, জাফরান ইত্যাদি মশলা এবং কাজু, কাঠবাদাম, কিসমিসের মতো শুকনো ফল। কিন্তু উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে নানা নামে পায়েসের পরিচিতি। অঞ্চলভেদে প্রকৃতিও আলাদা। যেমন, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা ইত্যাদি রাজ্যে এটি ক্ষীর, জম্মু-কাশ্মীরে ফিরনি, বাংলায় পায়েস এবং দেশের পূর্ব অংশে কিছু জায়গায় ‘পায়াস’ বা ‘পেওক্স’ নামে পরিচিত। তবে এর আঞ্চলিক নানা প্রকারও লক্ষ করা যায়। যেমন, ওড়িশায় গরম দুধে চালের ছোট ছোট বল ব্যবহার করে তৈরি ‘গোইন্তা গদি ক্ষীর’, খেজুরগুড় বা পাটালি ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গীয় ‘নলেন গুড়ের পায়েস’, কমলালেবুর অংশ ব্যবহার করে অসমে ‘কমলার ক্ষীর’, মণিপুরে কালো চালের তৈরি সুস্বাদু ‘চক হাও ক্ষীর’ ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়। দক্ষিণ ভারতে পায়েস সাধারণ ভাবে ‘পায়সম্’ নামে পরিচিত। ‘পায়সম্’ শব্দটি মালয়ালম শব্দ ‘পীয়ূসম্’ (পীযূষম্) থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়, যার অর্থ হল ‘অমৃত’।

দক্ষিণ ভারতে পায়েসের নানা আঞ্চলিক প্রকারভেদ ও নাম রয়েছে। জাফরান দেওয়া ঘন পায়েসকে অন্ধ্রপ্রদেশে ‘ক্ষীরান্নম্’ বলা হয়। বৈদিক যুগ থেকে চলে আসা কেরল ও তামিলনাড়ুর ঐতিহ্যবাহী ‘পাল পায়সম্’ তৈরি হয় চাল, দুধ, চিনি বা গুড়, এলাচ এবং বিভিন্ন শুকনো ফল, বাদাম ইত্যাদি দিয়ে। ঘি-সহযোগে প্রায় একই উপকরণ দিয়ে তৈরি হয় অন্ধ্রপ্রদেশের ‘বেল্লম পরমান্নম্’। আবার দুধের পরিবর্তে নারকেলের দুধ দিয়ে কেরলে তৈরি হয় ‘অরি পায়সম্’। অন্য দিকে, তেলঙ্গানার ঐতিহাসিক শহর হায়দরাবাদের সিগনেচার ডেজ়ার্ট, ‘গিল-ই-ফিরদৌস’ তৈরি হয় দুধ, লাউ, আমন্ড, কনডেন্সড মিল্ক, সাবু, বাসমতী চাল ইত্যাদি দিয়ে। পশ্চিম ভারতে মহারাষ্ট্রের পায়েস, ‘তান্ডালাচি ক্ষীর’ তৈরি হয় নারকেলকোরা, ঘি, জায়ফলগুঁড়ো, শুকনো ফল, এলাচ ইত্যাদি সহযোগে। আর রাজস্থানের ‘ক্ষীরানন্দ’ তৈরি হয় পেস্তা, কাঠবাদাম, এলাচ, জাফরান, ঘি ইত্যাদি দিয়ে। প্রায় একই রকম উপকরণ সহযোগে গুজরাতে মানুষের মন মাতায় ‘দুধপাক’ নামের পায়েস।

সত্যি, কত রকমেরই না পায়েস, কত রকমের আঞ্চলিক প্রভাব, কত রকমের রন্ধনপ্রণালী, উপকরণ-বৈচিত্র! কোনও পায়েস ঠান্ডা, কোনওটা আবার গরম গরম পরিবেশন করা হয়, কিন্তু স্বাদ, উৎকর্ষ ও জনপ্রিয়তার নিরিখে কেউ কারও চেয়ে কম যায় না! খাদ্যবিজ্ঞানের বিশিষ্ট লেখক হ্যারল্ড ম্যাকগি যথার্থ বলেছেন যে, প্রাথমিক উপাদান হিসেবে দুধের সঙ্গে সমন্বয় করে, নানা রকম নিখুঁত পদ উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে, পৃথিবীর কোনও দেশ ভারতের সমকক্ষ হতে পারবে না। পারস্যে ঘন পায়েস বা ফিরনি এক সময় নাকি ফেরেশতা বা দেবদূতদের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং এর নাম ছিল ‘শির বিরিনজ’। এমনটাই জানা যাচ্ছে অ্যালান ডেভিডসনের বিখ্যাত বই, ‘দ্য অক্সফোর্ড কম্প্যানিয়ন টু ফুড’ সূত্রে। বর্তমানে এই শাহি মিষ্টান্ন, ইরানে ‘ফেরেনি’ এবং মিশর ও তুরস্কে ‘মুহাল্লাবিয়া’ নামে পরিচিত। নানা রকম বাদাম, শুকনো ফল, জাফরান, গোলাপজল ইত্যাদি দিয়ে পরিবেশিত আফগানিস্তানের রাজকীয় মিষ্টান্ন ‘শোলা-ই-জারদ’, আমাদের পায়েসের কথাই মনে করায়।

অন্য দিকে, ন্যাশনাল ডেয়ারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর এক গবেষণামতে পায়েস, আমেরিকা ও ইউরোপে ‘রাইস পুডিং’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। চিন মজেছে আট রকমের শুকনো ফল দিয়ে তৈরি, ‘এইট ট্রেজার রাইস পুডিং’ অথবা ‘বা বাও ফ্যান’-এ। পায়েসের এই চৈনিক সংস্করণটি সুন্দর ও উজ্জ্বল রঙের হওয়ার জন্য এটিকে চিনা নববর্ষে সৌভাগ্যের প্রতীকরূপে ধরা হয়, জানা যাচ্ছে, ‘চায়না ডেলি’ সূত্রে। ভাবতে অবাক লাগে, এ ভাবে পায়েসের বিভিন্ন সংস্করণ কত ভাবেই না পরিচিত নানা দেশের মানুষের কাছে! যেমন, মালয়েশিয়ানদের কাছে ‘পুলুট হিটাম’, গ্রিকদের কাছে ‘রিজোগালো’, ইটালিয়ানদের কাছে ‘বুডিনো ডি রিনো’, স্প্যানিয়ার্ডদের কাছে ‘আরোজ কন লেচে’ এবং জার্মানদের কাছে ‘মিলচরেইস’ নামে ঝড় তোলে বিশ্বের বিস্ময়-ডেজ়ার্টটি। আবার অস্ট্রেলিয়ায় ‘রাইস পুডিং’ নামেই মন জিতেছে পায়েস। দুধ, চাল, চিনি, লেবুর খোসা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি প্যারাগুয়ের ‘কাম্বি আরো’, চাল, জল, চিনি, নারকেলের দুধ ও নুন সহযোগে প্রস্তুত সেনেগালের ‘সোম্বি’ এবং চাল, দুধ, চিনি ও কোকো পাউডার দিয়ে তৈরি গুয়াম দ্বীপের সুস্বাদু ‘চাম্পুলাডো’র কথা উল্লেখ না করলে বিশ্ব-মানচিত্র জুড়ে পায়েসের প্রাণবন্ত উপস্থিতির কথা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

ইতিহাসের সুদীর্ঘ ও বৈচিত্রপূর্ণ যাত্রাপথে, পায়েস নামক আবেগটি মুছে দিয়েছে প্রায় সমস্ত সাংস্কৃতিক সীমারেখা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, সাধারণ সব উপকরণের ব্যবহার, সহজ সরল রন্ধনপ্রণালী অথচ স্বাদ-গন্ধ ও স্বাস্থ্যগুণে সমৃদ্ধ হওয়া এবং বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে এর আশ্চর্য অভিযোজন ক্ষমতা, পায়েসকে বিশ্বজোড়া রন্ধন-ঐতিহ্যের একটি বহুমুখী ও স্থায়ী অংশ করে তুলেছে। খাদ্যশিল্পের অগ্রগতির কারণে, একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন থেকে পরমান্ন আজ একটি বহুমুখী, এমনকি স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক খাদ্যেও রূপান্তরিত হয়েছে। পায়েসের মধ্যে যেন এক সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের বার্তাও মেলে। দীর্ঘ দিন ধরে দুর্গাপুজো, ইদ বা বড়দিন, ভারতবাসীর সমস্ত বড় উৎসবেই, পায়েস বা এর তুতো-ডেজ়ার্টের সমাদরের ছবিটা সত্যি মন ভাল করে দেয়।

Porridge

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়।

  • সঙ্গে পান রোজ আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই -পেপার পড়ার সুযোগ।

  • এখন না পড়তে পারলে পরে পড়ুন, 'সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে।

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

SAVE 1%*
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।