মনোবিজ্ঞানী: কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং।
উনিশ শতকের চল্লিশের দশকের গোড়ায় কলকাতার জাহাজে চড়ে বসেছিলেন শার্ল বোদল্যের। জাহাজ খারাপ হওয়ায় ভারত মহাসাগরে মরিশাস ও বুরবঁ দ্বীপে নেমে যেতে হয় তাঁকে। কলকাতায় জন্মেছিলেন ইংরেজ ঔপন্যাসিক উইলিয়াম মেকপিস থ্যাকারে, এসেছেন মার্ক টোয়েন, ওকাকুরা, পাবলো নেরুদা, আঁরি মিশো, গুন্টার গ্রাস, জাক দেরিদা, নোম চমস্কি, চলচ্চিত্রকার জাঁ রনোয়ার, মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিয়োনি, গায়ক পিট সিগার। হয়তো আরও কেউ কেউ। কিন্তু কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং?
১৯৩৮ সালে বিজ্ঞান কংগ্রেসে অংশগ্রহণ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্মানিক ডক্টরেট গ্রহণ করতে কলকাতায় আসেন আধুনিক মনস্তত্ত্বের এক কিংবদন্তি, স্বয়ং সিগমুন্ড ফ্রয়েডের সঙ্গে যাঁর নাম এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হয়, কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং (১৮৭৫-১৯৬১)।
সেটি ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছরের সমাবর্তন। সুইস জার্মান মনস্তত্ত্ববিদ ইয়ুং সেটিকে রজতজয়ন্তীর উৎসব বলে ভুল করেছেন। আসলে রজতজয়ন্তী ছিল ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের (১৯১৩-১৯৩৮)। দেশে ফিরে তিনি দু’টি নিবন্ধ লেখেন— ১) ‘ভারতের স্বপ্নপ্রতিম জগৎ’ এবং ২) ‘ভারত যা শেখাতে পারে’, যা নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘এশিয়া’ জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই দু’টি রচনা পরে তাঁর ‘পরিবর্তমান সভ্যতা’ গ্রন্থে, এবং পরে তাঁর রচনাবলির দশম খণ্ডে প্রকাশিত হয়।
ফ্রয়েডের মানসপুত্র (ইয়ুং তাঁর স্মৃতিকথায় দাবি করেছেন, ‘নিজে নিউরোসিসে ভোগা’ ফ্রয়েড তাঁকে উত্তরসূরি হিসেবে মনস্থ করে নিয়েছিলেন; পিতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ফ্রয়েডীয় অর্থে ভালবাসা ও ঘৃণার) এবং ‘কালেকটিভ আনকনশাস’ বা ‘সমষ্টিগত অচেতন’-এর ভাবনার উপস্থাপক ইয়ুং ভারতে আসার আগে গভীর অভিনিবেশে পাঠ করেছিলেন ভারতীয় দর্শন ও ধর্মীয় ইতিহাস।
প্রাচ্যের প্রজ্ঞায় তাঁর বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। ইয়ুং এ দেশে এসেছিলেন তাঁর সিদ্ধান্তগুলি যাচাই করে নিতে এবং তিনি দেশে ফিরে যান ‘সেগুলিকে গভীরে প্রোথিত করে’। ইয়ুং-এর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ভারতবর্ষ “আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল একটি স্বপ্নের মতো, কারণ আমি নিজেকে এবং আমার বিশেষ সত্যকে খুঁজে চলেছিলাম।”
ইয়ুং তাঁর স্মৃতিচারণে বলেছেন, তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট উপাধি দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করেছিলেন স্বয়ং ব্রিটিশ সরকার। এতে সম্ভবত উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়েরও বিশেষ ভূমিকা ছিল। নথি বলছে, অন্যান্য সম্মান প্রাপকদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারে ইয়ুং নামের পাশে স্বাক্ষর করেননি, অর্থাৎ তিনি আকস্মিক অসুস্থতার কারণে ‘ইন অ্যাবসেনশিয়া’ উপাধি গ্রহণ করেন।
বিজ্ঞান কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ইয়ুং ও অন্য ডেলিগেটরা দার্জিলিং থেকে কলকাতায় পৌঁছন ১৯৩৮-এর ২ জানুয়ারি। তিনি মুম্বই পৌঁছেছিলেন ১৯৩৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর। ট্রেনে ও গাড়িতে তিনি হায়দরাবাদ, ঔরঙ্গাবাদ, অজন্তা, দিল্লি, বেনারস, সাঁচী, এলাহাবাদ, দার্জিলিং, হিমালয়ের পাদদেশ ও কলকাতা-সহ প্রায় ছ’হাজার কিলোমিটার চষে ফেলেন। বিজ্ঞান কংগ্রেসের পর ওড়িশা, মাদ্রাজ, মহীশূর, ত্রিচুর, তিরুঅনন্তপুরম, মাদুরাই হয়ে কলম্বো চলে যান।
ভারত প্রথম তাঁকে দিয়েছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা। এই পর্যটনে তিনি কথা বলেছেন মহীশূরের মহারাজার ‘গুরু’ সুব্রহ্মণ্যম আয়ার ও অন্য চিন্তাশীলদের সঙ্গে। তিনি ভারতে ‘অশুভের মনস্তাত্বিক প্রকৃতি’ (সাইকোলজিক্যাল নেচার অব ইভিল) বোঝার চেষ্টা করছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, এ দেশে নৈতিকতার ঊর্ধ্বে, ভাল ও মন্দ যেন এক সঙ্গে বিরাজমান। ভারতীয় চিন্তা শুভ-অশুভের ঊর্ধ্বে, যোগের মাধ্যমে সেই স্তরে পৌঁছতে চায়। ইয়ুং-এর মতে, এতে ভাল ও মন্দ কোনও বাস্তব রূপরেখা পায় না, বরং এক ধরনের স্থির, শান্ত ভাব আসে। তাঁর মতে, এখানে ‘নৈতিক পূর্ণতা’র প্রশ্ন প্রধান নয়, উত্তরণ বা নির্বাণই লক্ষ্য।
তিনি নিজে অবশ্য এ পথের পথিক নন। “আমি মানুষের থেকে, আমার আত্ম কিংবা প্রকৃতি থেকে একেবারেই মুক্তি চাই না, কারণ আমার কাছে এগুলিই সবচেয়ে অলৌকিক। আমার কাছে, প্রকৃতি, মন, এবং জীবন ঈশ্বরত্বের উন্মীলিত রূপ— এ ছাড়া আর কী চাইতে পারি আমি?... একটি বিশেষ অভিজ্ঞতায় নিমজ্জিত হওয়ার ব্যাপারে এক দিকে যেমন আমি আমার অক্ষমতার কথা কবুল করছি, সেইসঙ্গে এটাও বোঝবার চেষ্টা করছি যে আমি হয়তো এক অসীম গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে অবহেলা করে বসলাম। এক্ষেত্রে আমার অযোগ্যতা স্বীকার করছি। তবে এও ভাবছি, আবেগের নরকের ভেতর দিয়ে না গেলে কি তাকে অতিক্রম করা যায়?”
অর্থাৎ ভিন্ন সভ্যতার ভিন্নতাকে অসম্মান করছেন না তিনি, বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে বোঝার চেষ্টা চলছে। ইয়ুং-এর সুগভীর উক্তিগুলি আমাদের মনে পড়বে। “যে বাইরে তাকায়, সে স্বপ্ন দেখে; যে অন্তরের দিকে তাকায়, সে জেগে ওঠে।” “নিজের হৃদয়ের দিকে তাকালে চিন্তা স্বচ্ছ হয়।” বা “যেখানে ভালবাসা আছে সেখানে ক্ষমতাপ্রীতি নেই, যেখানে ক্ষমতার প্রাধান্য সেখানে ভালবাসার স্থান নেই।”
তাঁর মতো এক ব্যতিক্রমী মনস্তত্ত্ববিদ ও নৃতাত্ত্বিকের পক্ষে তো ভারতের চিরকালীন দর্শনের দিকে আকৃষ্ট হওয়া অনিবার্য। ইয়ুং তাঁর ব্যক্তিগত কথনে গ্যোটের ‘ফাউস্ট’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, এমন ‘অজানা, না-হাঁটা রাস্তা’ আছে, যেখানে জোর করে ঢোকা যায় না, এক ভবিতব্য যেখানে মানুষের হস্তক্ষেপ চলে না।
ইয়ুং-এর মনে হয়েছে যে সাঁচীতে গিয়ে বুদ্ধধর্মের কেন্দ্রীয় সত্যকে তিনি অনুধাবন করতে পেরেছেন। বুদ্ধের কাছে, ‘আত্ম’ বা ‘সেলফ’ সব দেবতার চেয়ে বড়, মানবের অস্তিত্ব ও সমগ্র বিশ্বের সারাৎসারকে তুলে ধরে। বুদ্ধ মানবচৈতন্যের মহাবৈশ্বিক মর্যাদাকে অনুধাবন করেছিলেন। ইয়ুং বুদ্ধধর্ম আর খ্রিস্টধর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ তুলনা করেছেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ইয়ুং ইলাহাবাদ এবং বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ডক্টরেট পান। এই ভ্রমণে অনবরত এক রাশ নতুন মনস্তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতা যেন স্নায়ুর পক্ষে বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছিল বলে তাঁর মনে হচ্ছিল। প্রয়োজন ছিল বিশ্রামের। কলকাতায় তিনি প্রবল আমাশয়ে আক্রান্ত হন। এর সূত্রপাত সম্ভবত বারাণসীতে, অথবা দার্জিলিং থেকে ফেরার পথে শিলিগুড়িতে। কলকাতায় দশ দিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক সৌমিত্র সরকার প্রদত্ত নথি থেকে জানতে পারছি, তিনি উঠেছিলেন গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে, এবং অসুস্থ অবস্থায় ২ জানুয়ারি ভর্তি হন কলকাতার পিজি হাসপাতালে। হাসপাতালে থাকাকালীনই তিনি কিছু ক্ষণের জন্য ইন্ডিয়ান সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির আলোচনায় অংশ নেন। ৭ জানুয়ারি ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগো স্বয়ং পিজি হাসপাতালে এসে ইয়ুং-এর সঙ্গে দেখা করেন, এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএসসি ডিগ্রি অর্পণ করেন। ৯ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ হলে মানুষের আদিম প্রবৃত্তি ও ‘কালেকটিভ আনকনশাস’ নিয়ে ইয়ুং বক্তৃতা দেন। বিজ্ঞান কংগ্রেসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানেও ইয়ুং উপস্থিত ছিলেন।
ইয়ুংকে আমন্ত্রণের সময় সম্ভবত তাঁকে বোঝানো হয়েছিল, এখানকার মনস্তত্ত্ববিদরা তাঁর অবদান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। বিজ্ঞান কংগ্রেসে দেখা গেল, সেখানে কেউ তাঁর কাজ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না। ফ্রয়েডপন্থীরা তাঁকে একঘরে করার চেষ্টা করেন, ফ্রয়েড-বিশেষজ্ঞ গিরীন্দ্রশেখর বসু তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় ইয়ুং-এর নামোল্লেখ পর্যন্ত করেননি। সুহৃৎচন্দ্র মিত্র-সহ অন্য মনস্তত্ত্ববিদরাও নয়। ইয়ুং বিস্মিত হলেও কিছু বলেননি। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে ৯ জানুয়ারি তাঁর ভাবনায় প্রভাবিত মনোবিদ ইন্দ্র মিত্রের সঙ্গে কথা বলে তিনি কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে থাকবেন। পরে দক্ষিণ ভারতে, বিশেষত তিরুঅনন্তপুরমে বক্তৃতা দেওয়ার সময় কলকাতার উল্টো অভিজ্ঞতা হয়।
আধুনিক মনস্তত্ত্বের প্রাণপুরুষ ইয়ুং এ দেশে এসে খুঁজতে চেয়েছিলেন এক ‘ভিন্ন’ সভ্যতার আদিকল্পগুলি। পিজি হাসপাতাল তাঁকে ‘হাজার নতুন জিনিস’ ও ‘বিভ্রান্তিকর গোলমাল’-এর মধ্যে একটু ভাববার সুযোগ দিয়েছিল। সুদীর্ঘ পাখার নীচে শুয়ে ইয়ুং কী ভাবছিলেন তার কোনও চিহ্ন তিনি রাখেননি। কিন্তু আমরা জানতে পারছি যে, মোটামুটি সুস্থ হয়ে হোটেলে ফিরে তিনি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেন। দেখেন, তিনি জুরিখের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের সঙ্গে এক অজানা দ্বীপে রয়েছেন, যা দক্ষিণ ইংল্যান্ডের তীরভূমি থেকে বেশি দূরে নয়। দ্বীপটি ছোট, প্রায় জনমানুষ নেই। মাত্র কুড়ি মাইল বিস্তৃত একটি জমি, যা উত্তর-দক্ষিণে চলে গেছে। দ্বীপের দক্ষিণ দিকের পাথুরে উপকূলে এক মধ্যযুগীয় দুর্গ, সেখানে বেশ কিছু পর্যটক এসেছেন। সামনে চওড়া পাথরের সিঁড়ি দিয়ে উঠে গিয়ে শেষ হচ্ছে এক থামওয়ালা হলঘরে। সেখানে মোমবাতির মৃদু আলো। তিনি বুঝলেন, সেটি ‘গ্রেল’-এর (শেষ নৈশভোজে জিশু যে পাত্র ব্যবহার করেছিলেন) দুর্গ, আর এই সন্ধ্যায় সেই পাত্র পুনরুদ্ধারের উৎসব হবে। সব কিছুই গোপন, কারণ বিস্ময়কর ভাবে জার্মান ঐতিহাসিক থিয়োডোর মমসেনের মতো দেখতে এক অধ্যাপক জানালেন যে, তিনি এর বিন্দুবিসর্গ জানতেন না। ইয়ুং উত্তেজিত ভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন, আর ভদ্রলোক বলে যাচ্ছিলেন এক মৃত অতীত আর ‘গ্রেল’ কিংবদন্তির কথা (মানুষ যে অপ্রাপনীয় পূর্ণতা খুঁজছে, তার প্রতীক)। বর্তমানের কোনও মূল্য যেন তাঁর কাছে নেই। তিনি যেন ক্লাসরুমে ছাত্রদের বক্তৃতা দিচ্ছেন। সিঁড়ি বা উৎসবের হলঘরটি পর্যন্ত তিনি দেখতে পাচ্ছেন না!
অধ্যাপক হঠাৎ অদৃশ্য, ইয়ুং অসহায় ভাবে দেখছেন দুর্গের বাইরে দ্রাক্ষাক্ষেত্র, গাছপালা, পাখির বাসার মতো খুদে খুদে বাড়িঘর। তিনি বলছেন, ‘অধ্যাপক, দেখুন, ওদিকে দেখুন।’ পরিবেশ বদলে যাচ্ছে, কিন্তু বন্ধুরা আছেন। বৃক্ষহীন, পাথুরে পরিবেশ। খ্রিস্টের পানপাত্র তখনও পৌঁছয়নি। শোনা গেল সেটি দ্বীপের উত্তর প্রান্তে এক পরিত্যক্ত বাড়িতে রাখা আছে। সুতরাং বহু কষ্টে ছ’জন চলেছেন সেটির সন্ধানে। সূর্য ডুবে গেছে, গাছপালা নেই, শুধু পাথর আর ঘাস। সেতু নেই, নৌকো নেই। ভীষণ শীত, সঙ্গীরা ঘুমিয়ে পড়ল। ইয়ুং বুঝলেন তাঁকেই একা সাঁতরে জিশুর হারিয়ে যাওয়া পানপাত্র নিয়ে আসতে হবে। জামা খুলছেন, এমন সময় ঘুম ভেঙে গেল।
ইয়ুং নিজেকে প্রশ্ন করেছেন, ভারতে ও কলকাতায় এত বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভিতর এই ‘ইউরোপীয়’ স্বপ্নের অর্থ কী? এ কি কবিতার মিথ ও অ্যালকেমির চিত্রকল্প? দিনে যে মিথ হারিয়ে গেছে, রাতে তা পুনরুক্ত হয়, এবং শক্তিশালী মূর্তিরা, যারা চৈতন্যের চাপে তুচ্ছ ও অকিঞ্চিৎকর হয়ে গিয়েছিল, কবিদের অভিজ্ঞানে পরিবর্তিত আঙ্গিকে নাম বদলে ফিরে আসে, জীবন্ত হয়ে ওঠে। “ক্ষুদ্র ও সাধারণ, কিন্তু প্রবলভাবে শক্তিশালী,” বিড়বিড় করছেন ইয়ুং, “যেন আবরণে মুখ ঢেকে কবি প্রবেশ করছেন এক নতুন বাড়িতে।”
ইয়ুং চিরদিনই ফ্রয়েডের চেয়ে জটিল। এই স্বপ্ন মুছে দিল তাঁর যাবতীয় উৎকণ্ঠা। হারিয়ে যাওয়া পানপাত্র সেই পরশপাথর, যাকে খুঁজতে পশ্চিমে আপন দেশে ফিরে যেতে হবে তাঁকে। এই স্বপ্ন তাঁকে ইঙ্গিত দিল ভারতবর্ষ তাঁর পথ নয়, পথের একটি অংশ শুধু, ‘যদিও তা অসীম তাৎপর্যময়’, তাঁকে লক্ষ্যের দিকে এগোতে সাহায্য করবে।
যখন ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাহাজে চাপলেন দেশে ফিরে ল্যাটিন অ্যালকেমি আবিষ্কারে নতুন করে মনোনিবেশ করার জন্য, তাঁর মনে হল— “ভারতবর্ষ চিহ্ন রেখে গেছে আমার মনে, বড় বড় পথরেখা যা এক অনন্ত থেকে অন্য এক অনন্তে পৌঁছে দিতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy