Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata During WWII

আশি বছর আগেই ধ্বংস হয়ে যেত কলকাতা

সময়টা ছিল ডিসেম্বরেরই শুরুর দিক। প্রকাশ্য দিবালোকে নীচে নেমে এল জাপানি বোমারু বিমান। বিনা প্রতিরোধে বোমা ফেলল যথেচ্ছ। কয়েক মিনিটের মধ্যে ডক ও বন্দর এলাকা অগ্নিকুণ্ড। চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল আগুন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের রিপোর্ট বলল, জাপানি হানায় আতঙ্ক ছড়ায়নি তেমন, শহরের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক।

ধ্বংসলীলা: জাপানি বোমায় ক্ষতিগ্রস্থ ট্রামডিপো।

ধ্বংসলীলা: জাপানি বোমায় ক্ষতিগ্রস্থ ট্রামডিপো। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

নিখিল সুর
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:০৩
Share: Save:

সে  দিনও ছিল রবিবার। ১৯৪৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। বেলা এগারোটা পনেরো মিনিটে বিমান হানার সঙ্কেত দিয়ে কলকাতায় বেজে উঠল সাইরেন। এগারোটা সাতাশ মিনিটে বাজল লাল সাবধানী সাইরেন, মানে রেড অ্যালার্ট। ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকার বিশিষ্ট সম্পাদক আয়ান স্টিফেন্স লিখেছেন, “ঠিক কুড়ি মিনিট পরে আকাশ থেকে ভেসে এল গুড়গুড় শব্দ। আড়াইশো জাপানি বোমারু বিমান তিন ঝাঁকে বিভক্ত হয়ে হানা দিল কলকাতার উপর। কুড়ি হাজার ফুট উপর থেকে তারা নেমে এল কলকাতার ডক অঞ্চলে।”

তার পর কী হল, সে বর্ণনায় পরে আসছি।

ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অশুভ সূচনা হয়েছিল ১৯৩৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। খবরটা ভারতে এলেও যুদ্ধের আঁচ সেই মুহূর্তে লাগেনি ভারতের গায়ে। ১৯২৭ সাল থেকেই ভারতের প্রতিরক্ষা নিয়ে ভারত সরকারের দুশ্চিন্তা ছিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্তকে কেন্দ্র করে। পূর্ব সীমান্ত, বিশেষ করে কলকাতার নিরাপত্তা নিয়ে আদৌ কোনও শঙ্কা ছিল না। তবে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিপদ ঘনিয়ে এল ১৯৪০-এর ২৭ সেপ্টেম্বর, জাপান অক্ষশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইউরোপীয় যুদ্ধের বারুদের গন্ধ এশিয়া ভূখণ্ডে টেনে আনল।

জাপান যুদ্ধে যোগ দিলেও ভারতের সামরিক কর্তৃপক্ষ মনে করল, জাপান যত ক্ষণ না পর্যন্ত সিঙ্গাপুর দখল করতে পারছে, তাদের পক্ষে ভারত বা শ্রীলঙ্কায় অভিযান চালানো অসম্ভব। আর ব্রিটিশ-অধিকৃত সিঙ্গাপুরের পতন ঘটানো জাপানিদের পক্ষে সহজ হবে না। কেন্দ্রের সামরিক কর্তৃপক্ষ এক অদ্ভুত আত্মতুষ্টির শিকার হয়েছিল ভারতের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে। ফলে ১৯৩৯-এর আগে পূর্ব-সীমান্তের প্রতিরক্ষা নিয়ে গড়ে তোলা হয়নি কোনও রকম নিখুঁত পরিকল্পনা। সরকারি নথিতে দেখা যায়, ১৯৪২-এর ২০ ডিসেম্বর জাপানিরা যখন প্রথম বোমা ফেলে কলকাতায়, তখনও কলকাতার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একেবারে নড়বড়ে। সে সময় পশ্চিম এশিয়া থেকে আধুনিক ‘বিউফাইটার’ পাঠানো হয় মাত্র কয়েক স্কোয়াড্রন ‘হ্যারিকেন’-এর সঙ্গে যোগ দিতে। ১৯৪৩-এর নভেম্বরে তিন স্কোয়াড্রন অত্যন্ত কার্যকর ‘স্পিটফায়ার’ এসে হাজির হলেও, তাদের কলকাতার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য না রেখে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে। তা না করলে পরের মাসে জাপানি বিমান হানাকে অন্তত কিছুটা সামাল দেওয়া যেত। কলকাতার প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ছিল প্রায় ব্যবহার-অযোগ্য কয়েকটা ‘হ্যারিকেন’-এর হাতে। খানকয়েক বিমান-বিধ্বংসী কামান শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হলেও সেগুলির পরমায়ু তখন শেষ হওয়ার মুখে। ১৯৪১-এর আগে কলকাতায় ছিল না কোনও রাডার, বিমান-বিধ্বংসী কামান। রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের হাতে ছিল মাত্র আটখানা ‘মোহক’ বিমান। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এমন হীন অবস্থার জন্য বঙ্গীয় সরকারের মুখ্য সচিব তর্জনী তুলেছিলেন ভারত সরকারের নির্লিপ্তির দিকে।

অথচ ভারত সরকার ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক বছর আগেই টের পেয়েছিল, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে একটা ভয়ঙ্কর বিশ্বযুদ্ধের দিকে। আর সেই জন্যই ১৯৩৯-এর এপ্রিলে ছুটিতে থাকা আইসিএস এবং ইন্ডিয়ান পুলিশের অফিসারদের অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়ার ফরমান জারি করা হয়, বাতিল করা হয় ছুটি। অগস্টে আর এক ধাপ এগিয়ে খারিজ করে দেওয়া হয় সমর বিভাগ, স্বাস্থ্য দফতর এবং পুলিশ বিভাগের কর্মচারীদের ছুটি। ছাড় দেওয়া হয় কেবল যাঁরা ছিলেন চিকিৎসাধীন এবং অবসর গ্রহণের মুখে। ১৯৪০-এর জুন মাসে সরকার গড়ে তোলে যুদ্ধ তহবিল। সাধারণ মানুষজনের কাছে আবেদন রাখা হয় তহবিলে দান করতে। আর সরকারি কর্মচারীদের বাধ্য করা হয় প্রতি মাসে বেতনের এক থেকে দেড় শতাংশ অর্থ তহবিলে জমা দিতে।

বিমান হানার প্রাক্কালে জনগণকে জানান দেওয়ার জন্য যে সাইরেনের ব্যবস্থা ছিল, তা-ও ছিল গোলমেলে। সরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, প্রেসিডেন্সি ডিভিশনের কমিশনার বঙ্গীয় সরকারকে লিখেছেন, জনগণকে বিমানহানার পূর্বে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য শক্তিশালী সাইরেনের অভাব। অর্থের কথা না ভেবে উচ্চশক্তিসম্পন্ন সাইরেন অবিলম্বে বসানো উচিত শহরের বিভিন্ন স্থানে। অন্তত পঞ্চাশটা কেইসি কোম্পানির বিদ্যুতের সাইরেন প্রয়োজন, যার শব্দ ছড়িয়ে পড়ে আড়াই মাইল ব্যাসার্ধ জুড়ে। কিন্তু অনুমোদন দেওয়া হল মাত্র দশটার। অন্য সাইরেনের শব্দ এত কমজোরি যে, তাদের শব্দ ছাপিয়ে যেতে পারে না শহরের যানবাহন, ডক, রেল, কারখানা ও মিলের যান্ত্রিক শব্দকে। বিমান হানার মহড়া বা এআরপি-দের মহড়ার সময় সর্বত্র শোনা যেত না সাইরেন বাজানো হলেও। কাজ চালানো হত মিল ও কারখানার ‘বাজ়ার’ টিপে। বেঙ্গল টেলিফোন কোম্পানির কর্মী জে এইচ স্পিলার পরামর্শ দিয়েছিলেন অন্তত দু’শো সাইরেন বসানোর। প্রতিরক্ষা দফতর আমল দেয়নি সেই পরামর্শে।

জাপান যুদ্ধ শুরু করেছিল ১৯৪১-এর ডিসেম্বরে। তারা দ্রুতগতিতে ঢুকে যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। তিন মাসের মধ্যে ভারতের পূর্ব সীমান্ত জাপানি আক্রমণের বলয়ে এসে পড়ে। ১৯৪২-এ জাপান মালয় দখল করে নিলে সিঙ্গাপুরের বিপদ ঘনিয়ে আসে। ১৫ ফেব্রুয়ারি পতন ঘটে সিঙ্গাপুরের। ব্রিটিশ সেনাপতি বাধ্য হন আত্মসমর্পণ করতে। এর পরই জাপান অভিযান চালিয়ে ব্রহ্মদেশ, জাভা, বালি ও সুমাত্রা দখল করে নিলে তাদের কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায় ভারত মহাসাগরের পথ। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া আক্রমণের আর কোনও বাধাই রইল না জাপানিদের কাছে। এটা খুব স্বাভাবিক যে, জাপানের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য ছিল কলকাতা। কারণ কলকাতার স্থানিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। কলকাতার সংলগ্ন শিল্পাঞ্চল তখন ব্যস্ত প্রয়োজনীয় যুদ্ধ-সামগ্রী উৎপাদনে। তা ছাড়া কলকাতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিত্রশক্তির প্রধান ঘাঁটি। এখান থেকে সেনা সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন ফ্রন্টে। তাই ভাইসরয় লিনলিথগো বলেছিলেন, কলকাতার পতন ভারতের পতনের সমার্থক।

কিন্তু তখনও সামরিক কর্তৃপক্ষ বিভ্রান্ত, জাপান জলপথ না আকাশপথে আক্রমণ করতে পারে, সেই প্রশ্ন নিয়ে। ফলে কলকাতার প্রতিরক্ষার কোনও সুনির্দিষ্ট ও উপযুক্ত পরিকল্পনা নেওয়া হল না। অনেক আগেই পূর্বাঞ্চলের সামরিক কর্তৃপক্ষ সমর দফতরকে অনুরোধ করেছিলেন পূর্বসীমান্তে সেনা পাঠাতে। খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল সেই প্রস্তাব। জাপানিরা কখনও ভারত আক্রমণ করবে না— এই ভ্রান্ত ধারণার শিকার হয়ে তারা অব্যাহত রেখেছিল পশ্চিম এশিয়ায় সেনা সরবরাহ।

সুতরাং বোঝা গিয়েছিল, সেনাবল বৃদ্ধির জন্য আরও সেনা সরবরাহের আগেই যদি জাপান আক্রমণ করে, তা হলে দুটো বিকল্পের মধ্যে বেছে নিতে হবে একটাকে— হয় রক্ষা করতে হবে কলকাতা বন্দর এবং বিমান ঘাঁটি, কিংবা সেনা পাঠাতে হবে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিগুলিতে। কিন্তু সমস্যা ছিল, সেনা আনিয়ে সেনাবল বৃদ্ধি করলেও আকাশপথ ছিল জাপানিদের কাছে অবারিত। ভারতে ব্রিটিশের নৌ-শক্তিও ছিল তেমনই দুর্বল। আফ্রিকার পূর্ব উপকূল ছাড়া ব্রিটিশদের কোনও নৌবহর ছিল না কাছেপিঠে। ওয়াভেল তখন প্রধান সেনাপতি। তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন, আগামী দু’মাসের মধ্যে মাদ্রাজ, বিশাখাপত্তনম বা কলকাতায় জাপানিরা নৌ-অভিযান চালালে তা প্রতিরোধ করা যাবে না কোনও মতেই। ওয়াভেল জানতেন, ভারতে অবস্থিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনী খুবই দুর্বল, কারণ উচ্চমানের প্রশিক্ষিত সেনারা তখন লড়াই করছে বিদেশের মাটিতে যুদ্ধক্ষেত্রে।

মজার ব্যাপার হল, ব্রিটিশ সরকার জাপানি বিমান হানা প্রতিরোধ করতে কতটা প্রস্তুত, সেটা সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্য আশ্রয় নিয়েছিল ছলনার। ১৯৪২-এর ডিসেম্বরে জাতীয় কংগ্রেস কমিটির নিউজ় বুলেটিনে খবর বেরিয়েছিল, সরকার দশ হাজার নকল বিমান তৈরির বায়না দিয়েছে, সেগুলিকে বিমানবন্দরে রাখা হবে মানুষকে দেখানোর জন্য যে, ব্রিটিশের বিমানের অভাব নেই।

সরকারি সুরক্ষা না পেয়ে দলে দলে শহরত্যাগী কলকাতাবাসীরা।

সরকারি সুরক্ষা না পেয়ে দলে দলে শহরত্যাগী কলকাতাবাসীরা। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

সরকার বাইরের শত্রুকে সামাল দেওয়ার জন্য পূর্ণ উদ্যমে উপযুক্ত সামরিক প্রস্তুতি নিতে না পারলেও কলকাতায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় যুদ্ধের কারণে অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। বিদেশিদের উপর কড়া নজর রাখতে শুরু করল গোয়েন্দা বিভাগ। জার্মান, আমেরিকা, লাটভিয়া, ব্রাজিল, রোমানিয়া, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইটালি প্রভৃতি দেশের মানুষকে এ দেশে স্বাধীন ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেওয়া নিরাপদ মনে হল না সরকারের। ১৯৪০-এর ১১ জুন ভারত সরকার টেলিগ্রাম করে বাংলার গভর্নরকে জানাল, ইটালি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হল, কলকাতার প্রাপ্তবয়স্ক ইটালীয় এবং মিশনারির লোকজনকে গ্রেফতার করে বন্দিশিবিরে রেখে দিতে। কলকাতা বন্দরে নোঙর করেছিল ইটালির ‘কোলাবারিয়া’ জাহাজ। জাহাজের আশি জন কর্মীকেও তুলে দেওয়া হল ফোর্ট উইলিয়ামের হাতে। কলকাতার সব জাপানিকে আটকে রাখা হয় বন্দিশিবিরে, বাদ যান কেবল জাপানি কনসাল। নজরদারি থেকে রেহাই পায়নি হোটেলের বিদেশি ক্যাবারে নর্তকীরাও।

জাপানি বিমান হানা প্রায় অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে কলকাতার মানুষের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হল যথাসম্ভব। ১৯৪২-এর মাঝামাঝি সময় কলকাতার প্রধান রাস্তাগুলির পাশে ট্রেঞ্চ খোঁড়া হল, বোমা পড়লে যাতে সেখানে আশ্রয় নেওয়া যায়। যুদ্ধে শত্রুর আক্রমণে কর্পোরেশনের জল সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় বসানো হল দু’হাজার গভীর এবং পাঁচশো অগভীর নলকূপ। মণীন্দ্র গুপ্তের জন্ম ১৯২৬-এ। যুদ্ধের সময় ছিলেন কলকাতায়। তিনি তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অক্ষয় মালবেরি’-তে লিখেছেন, “পার্কে, পথের পাশের ফাঁকা জমিতে সোজা বা জিগজ্যাগ ট্রেঞ্চ কাটা হয়েছে। দোকান আর অফিসের বড় বড় কাঁচের জানালায় কাগজের পট্টি সাঁটা, ঢুকবার দরজার সামনে ইটের ব্যাফল দেয়াল, লাল রঙের বালতিগুলিতে ভর্তি বালি— এ সবই বিমান হানার জন্য সতর্কতা।”

কলকাতার আকাশে উঁচুতে ভাসিয়ে রাখা হত অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি বিশাল আকারের ৯৭৮টা গ্যাস-ভর্তি বেলুন, যাতে বোমারু বিমান নীচে নেমে লক্ষ্যভেদ করতে না পারে। লক্ষ্যবস্তুর উপর নির্ভুল ভাবে বোমা ফেলতে গেলে বোমারু বিমানকে দিনের বেলায় অন্তত পনেরো থেকে আঠারো হাজার, এবং রাতে ছয় থেকে আট হাজার ফুট নীচে নেমে আসতে হত। সেটা সম্ভব হত না তার নীচে বেলুনের চাদর ভেসে থাকলে। বেলুনগুলো সরু তার দিয়ে বাঁধা থাকত মাটির সঙ্গে। যুদ্ধের সময় আমি ছিলাম জামশেদপুরে। বয়স তখন ছয় কি সাত। মনে আছে, এমন বেলুন ভেসে থাকতে দেখতাম টাটার লোহা-ইস্পাত কারখানার উপর, কারখানার নিরাপত্তার জন্য। নীচে থেকে দেখে মনে হত, অজস্র রুপোলি পাখি ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশে।

এআরপি অর্থাৎ এয়ার রেড প্রিকশন-এর কর্মীদের দায়িত্ব ছিল বোমা পড়লে নাগরিকরা কী ভাবে আত্মরক্ষা করবে, কী ভাবে, কোথায় আশ্রয় নেবে, কেমন আচরণ করবে, তার তালিম দেওয়া। সে জন্য মাঝে মাঝে মহড়া হত কৃত্রিম বিমান হানার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। কিন্তু কাল হল এই মহড়া করতে গিয়ে। উল্টো বুঝল কলকাতার মানুষ। ভাবল, যুদ্ধ সত্যি সত্যি ঘাড়ে এসে পড়েছে। এই ভ্রান্ত ভাবনার মূলে ছিল মহড়া সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের অভাব। ফলে কলকাতা ফাঁকা করে শুরু হল গণপলায়ন বা ইভ্যাকুয়েশন। বিমল করের ‘দেওয়াল’-এ চায়ের দোকানের মালিক গুপী বলেছিল, “যা লোক পালাবার হিড়িক লেগেছে… ক’দিন পরে আর দোকানে খদ্দেরের পা পড়বে না।” মণীন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন, “কলকাতা ফাঁকা হয়ে গেছে— অনেক বাড়ির গায়েই ‘টু লেট’ টাঙানো, কিছু কিছু বাড়ির গায়ে ‘ফর সেল’। পাঁচ টাকা, দশ টাকা, তিরিশ টাকা, চল্লিশ টাকায় আস্ত আস্ত বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়।”

বস্তুত, ১৯৪২-এর এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় জাপানি বিমান হানার খবর এসে পৌঁছলে সকলেই বুঝতে পেরেছিল, যুদ্ধ এসে গেছে একবারে দোরগোড়ায়। আতঙ্ক কেবল কলকাতায় ছড়ায়নি। বোম্বে শহর থেকেও লোক পালাতে শুরু করে এপ্রিলেই। প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ উত্তরপ্রদেশের পূর্ব থেকে চলে যায় পশ্চিমে। ফলে কানপুরের জনসংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমন জনশূন্য হয়ে পড়ে বারাণসী। কলকাতা থেকে বিপুল সংখ্যায় মানুষ শহর ত্যাগ করলে গভর্নর খুশি হয়ে লেখেন, এত মানুষ বোমা পড়ার ভয়ে শহর ত্যাগ করলে বরং সুবিধে। বোমা পড়ার পরে মানুষ যখন আতঙ্কিত হয়ে শহর ত্যাগ করতে চাইবে, তখন তেমন বিশৃঙ্খলা হবে না। বেশ বোঝা যায়, বাংলা সরকারের কৌশল ছিল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা করে মানুষের মনোবল না বাড়িয়ে তাদের আতঙ্কিত করে শহরছাড়া করা।

আপৎকালীন: রাতের অন্ধকারে যাতে না দেখা যায়, তাই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের রং কালো করে দেওয়া হয়েছিল।

আপৎকালীন: রাতের অন্ধকারে যাতে না দেখা যায়, তাই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের রং কালো করে দেওয়া হয়েছিল। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

শেষ পর্যন্ত আতঙ্কিত কলকাতার বুকে জাপানি বিমান সত্যি সত্যি প্রথম হানা দিল ১৯৪২-এর ২০ ডিসেম্বর রাতে। ঠিক তার আগের দিন ভাইসরয় কলকাতায় এসে এআরপি-র মহড়া পরিদর্শন করে গিয়েছিলেন। গোটা কলকাতায় ও কলকাতা সংলগ্ন শিল্পাঞ্চলে সাইরেন বেজে উঠল। কিন্তু গুরুত্ব দিল না কলকাতার মানুষ, কারণ তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল মহড়ার নকল সাইরেনে। ঘণ্টাখানেক পরে আকাশে দেখা দিল জাপানি বোমারু বিমান। তারা বোমা ফেলল কলকাতার বিভিন্ন স্থানে এবং মফস্সলের শিল্পাঞ্চলে। বোমার আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করতে দেওয়া হল না সেন্সর করে। ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকা ২২ ডিসেম্বর বিমানহানার ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখল, বোমার আঘাতে নিহত ও আহতের সংখ্যা খুবই কম। বিমানহানা হল প্রায় পর পর পাঁচ রাত— ২০, ২১, ২৩, ২৪ ও ২৮ ডিসেম্বর— বড়দিনের আগের রাতে বোমা পড়ল শহরের মাঝখানে। সে রাতের বিমান হানার ব্যাপকতা ছিল পাঁচ রাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

পরের দিন থেকে শহর ছেড়ে পালাতে থাকল কাতারে কাতারে মানুষ। বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স-এর হিসেব মতো কলকাতা ত্যাগ করেছিল ছয় থেকে সাত লক্ষ মানুষ। আর ভাইসরয়ের শাসন পরিষদের সদস্য স্যর এডওয়ার্ড বেনথাল-এর মতে তিন লক্ষ। অথচ দিল্লি থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ২৩ ডিসেম্বর জানানো হল, কলকাতা থেকে ইভ্যাকুয়েশন একেবারেই হয়নি। তাই ভাইসরয় লিনলিথগো কলকাতবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখলেন, ‘ওয়েল ডান ক্যালকাটা’।

এর পর এগারোটা মাস কাটল নির্বিঘ্নে। কলকাতায় ঘটল না কোনও বিমানহানা। যারা শহর ছেড়েছিল, ক্রমশ ফিরে এল তারা। আতঙ্ক কেটে গেল প্রায় সবটাই। কিন্তু ১৯৪৩ -এর ৫ ডিসেম্বর জাপানি বোমারু বিমান উড়ে এসে ব্যাপক ভাবে বোমা ফেলল কলকাতায়। এ বার আক্রমণের তীব্রতা অনেক বেশি এবং সেটা হল দিনের বেলায়, যা আগে কখনও হয়নি। বোমারু বিমানগুলির মূল লক্ষ্য ছিল প্রধানত কলকাতা বন্দর ও ডক অঞ্চল। কোনও রকম প্রতিরোধের মুখে না পড়ে বিমানগুলি যতটা সম্ভব নীচে নেমে এসে লক্ষ্যবস্তুতে বোমা ফেলল ইচ্ছেমতো। কয়েক মিনিটের মধ্যে ডক পরিণত হল অগ্নিকুণ্ডে। পর পর বোমা পড়ল ডকের দক্ষিণে কয়লা মজুত রাখার জায়গায়। মুহূর্তে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ল চার দিকে। উড়ে গেল বৈদ্যুতিক তার। কয়লার আগুন গ্রাস করল পাশের গুদামঘরকে। আক্রমণের দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে বা বিএনআর-এর ডিপো। বোমার আঘাতে ইস্পাতের রেল টুকরো টুকরো হয়ে উড়ে গেল তিরিশ ফুট উচ্চতায়। ধ্বংস হল রেললাইন। সম্পূর্ণ বিনষ্ট হল পঞ্চাশটা ওয়াগন ও একটা ইঞ্জিন। বোমা পড়ল বার্ড কোম্পানির অফিসে। এগারোটা মালবাহী বড় নৌকো জ্বলতে থাকল গঙ্গার বুকে। বোমাগুলি এত শক্তিশালী ছিল যে, যেখানে পড়ল, সৃষ্টি হল বারো ফুট চওড়া ও ছ’ফুট গভীর গর্ত। বোমা পড়ার স্থান থেকে ৩০০ গজ ব্যাসার্ধের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। তার বাইরে দোকানপাট, ঘরবাড়ি, ছোটখাটো কারখানা এড়াতে পারেনি বিপর্যয়।

জাপানি বোমার আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ ঘরবাড়ি।

জাপানি বোমার আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ ঘরবাড়ি। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

বিএনআর ইয়ার্ডের কুলিরা আশ্রয় নিয়েছিল ওয়াগনের নীচে, শৌচালয়েও। বোমার টুকরো রেহাই দেয়নি তাদের। শ্রমিকদের নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। সরকারি তথ্য থেকে জানা যায়, মানুষ যদি যথাসম্ভব নিজেদের আড়াল করতে পারত, এত প্রাণহানি ঘটত না। ব্রিটিশ সেনারাও কাজ করেছিল অবিবেচকের মতো। তারা পোর্টের এআরপি-দের যানবাহন দখল করে এমন ভাবে রাস্তা আটকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল যে, এআরপি-রা তাদের কাজ করতে পারেনি। তাদের উপর সেনাবাহিনীর খবরদারি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটিয়েছিল ভীষণ ভাবে। অথচ মিলিটারি কন্ট্রোলার অভিযোগ করেন, প্রথম বোমা পড়ার পর অল ক্লিয়ার সঙ্কেত দেওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে তাঁর চোখে পড়েনি সিভিল ডিফেন্স বিভাগের কর্মীদের উপস্থিতি। আসলে সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ঘটেছিল এই বিশৃঙ্খলা।

ডক অঞ্চলের বাইরের ছবিটা বিন্দুমাত্র পাল্টায়নি ১৯৩৯-এর থেকে। অনেক জায়গাতেই সাইরেন শোনা যায়নি স্পষ্ট ভাবে। তবে সরকারি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ফাঁকফোকরকে একতরফা দোষারোপ করে লাভ নেই। কলকাতার মানুষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে তৎপর ছিল না মোটেই। তারা এআরপি-র নির্দেশ না মেনে বোমা পড়ার সময়ও আড়াল করেনি নিজেদের। অনেকে বোমা পড়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে উঠে গিয়েছিল ছাদে। ভবানীপুরে অনেক মানুষ একেবারে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে ছিল জাপানি বোমারু বিমান দেখবে বলে।

বেলা একটার সময় দু’বার বিমান হানার পর বেজে ওঠে অল ক্লিয়ার সঙ্কেত। ডক এলাকা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল বিমানহানায়। পুড়েছিল এগারোটা বড় নৌকো, তিনটে জাহাজ, একটা ড্রেজার এবং চারটে টানা-নৌকো। সেগুলো জ্বলছিল ধিকধিক করে। প্রায় শ’খানেক মানুষ ও পশুর মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিল ডক এলাকায়।

পরদিন সকালেও মৃতদেহগুলি পড়েছিল যথাস্থানে। আর ইংরেজি কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় ভারত সরকারের বিবৃতি প্রকাশিত হল, “কতগুলি বোমা পড়েছিল, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি সামান্যই।” লেখা হল আরও নির্জলা মিথ্যে কথা, “আমাদের ফাইটাররা শত্রুর বিমানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল যথাযথ বাধা সৃষ্টি করে।” প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করার জন্য অনেক আগেই ১৯৪৩-এর এপ্রিলে প্রাদেশিক সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রতিরক্ষা দফতরের একটা গোপন বিজ্ঞপ্তি। সেই বিজ্ঞপ্তিতে ছিল বিমান হানার পরিণামে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনের খসড়া। ভারত সরকারের সচিব নির্দেশ দেন, বিমান হানার পরে প্রতিবেদন লেখার সময় শব্দ চয়ন করতে হবে সতর্ক ভাবে। বোমা পড়ার স্থানটি সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা চলবে না। ‘কলকাতা ডক’ না লিখে লিখতে হবে ‘কলকাতা এলাকা’। ক্ষয়ক্ষতির নির্দিষ্ট হিসেব অলিখিত থাকবে। ব্যবহার করতে হবে ‘সামান্য’, ‘তেমন নয়’, বা ‘যথেষ্ট’ ইত্যাদি শব্দ। নিহত ও আহতদের সংখ্যা কম করে দেখানোই অভিপ্রেত।

কিন্তু এ ভাবে ধামাচাপা দিতে গিয়ে দেখা দিল আর এক বিপত্তি। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিবেদনের মধ্যে অস্বাভাবিক অমিল মানুষের মনে সৃষ্টি করল ক্ষোভ এবং সেই সঙ্গে উদ্বেগ। উল্টে গুজব ছড়াল বিপুল ক্ষয়ক্ষতির, যে গুজবের কোনও ভিত্তি ছিল না। ডক এলাকায় যে সব শ্রমিক প্রত্যক্ষ করেছিল বোমাবর্ষণ ও তার বিধ্বংসী রূপ, তারাই প্রকাশ করল আসল তথ্য। তা ছাড়া, ডকের গেট খোলা থাকায় বিমান হানার পর বহু মানুষ ঢুকে পড়েছিল ডকের ভিতর। তাদের চোখে পড়েছিল ধ্বংসের চেহারাটা। ফলে, সরকারি সাফাই ফিরিয়ে আনতে পারল না শ্রমিকদের মনোবল।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, জাপানিদের বিমান হানা ব্যর্থ করে দেয় রয়্যাল এয়ারফোর্স এবং বিমান-বিধ্বংসী কামান। এটা যে বানানো গল্প, তার প্রমাণ, এআরপি-র রিপোর্টে তার কোনও উল্লেখ ছিল না। বরং বিএনআর থেকে যে রিপোর্ট দাখিল করা হয়, তাতে বলা হয়েছিল, অসংখ্য জাপানি বোমারু বিমানকে বিনা বাধায় নীচে নামতে দিয়ে নির্ভুল ভাবে বোমা ফেলার সুযোগ করে দেওয়া হয় লক্ষ্যবস্তুর উপর। কলকাতার এআরপি রিপোর্ট বলা হয়, সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর সাফল্যকে সরকার প্রকাশ করেছে রং চড়িয়ে। ব্রিটিশ জনমতও কড়া সমালোচনা করেছিল কলকাতা শহর ও ডকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে অরক্ষিত অবস্থায় রেখে দেওয়ার জন্য।

বিমান হানার পর ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, বিশেষ করে শ্রমিকদের মধ্যে। ফলে শ্রমিকের অভাবে কলকারখানা ও মিলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কিছু দিন। বন্দর এলাকার সিভিল ডিফেন্সের ১২৬ জনের মধ্যে পালিয়ে যান ৫৯ জন। তথাপি এই বিমান হানার প্রতিবেদনে অমৃতবাজার পত্রিকা ৭ ডিসেম্বর যা লিখেছিল, তা বিস্ময় সৃষ্টি না করে পারে না। লিখেছিল, “প্রায় ৫০০ নাগরিক বোমার আঘাতে আহত হয়েছে। তাদের মধ্যেএক তৃতীয়াংশের অবস্থা সংকটজনক।” অথচ সরকারি নথি বলে মৃত্যু হয়েছিল ১৮৭ জনের, আহত হয় ৪৩৫ জন। সরকারি পত্রিকাটি আরও বলে, বিমান হানায় তেমন আতঙ্ক ছড়ায়নি, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক।

তবে, ১৯৪২-এ সদ্যনির্মিত হাওড়া ব্রিজ বা বর্তমান রবীন্দ্র সেতু কেন জাপানি বিমানের টার্গেট না হয়ে রক্ষা পেয়েছিল, সে কথা ভাবলে অবাক হতে হয়। ১৯৪৩-এর ৫ ডিসেম্বরের পরে ১৯৪৪-এর ১৯ নভেম্বর শেষ বারের মতো বিমান হানা হয়। তবে সে আক্রমণের তেমন ধার ছিল না। তেমন ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। এর পর জাপানি বিমানবাহিনী ব্রহ্মদেশ থেকে চলে যায় অন্যত্র, সঙ্গে নিয়ে যায় কলকাতাবাসীর আতঙ্ক। কিন্তু সৃষ্টি করে যায় এই ধারণা, জাপান যদি সে দিন সত্যি সত্যি সর্বাত্মক যুদ্ধকৌশল নিয়ে হানা দিত কলকাতায়, ব্রিটিশের কোনও ক্ষমতা ছিল না কলকাতাকে রক্ষা করার। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হত গোটা কলকাতা, অথবা তার একটা বড় অংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

World War II Kolkata East India Company
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE