জটাধারী: গঙ্গাসাগর মেলায় নাগা সাধুর আখড়া
সকাল থেকে সন্ধে মিটিংয়ে বোঝা গেল, ৯০টা কাঠের লঞ্চ, ৩০টা ভেসেল, ১১০০ বাস, ২০০ টেলিফোন, ৫০০০ সিভিক ভলান্টিয়ার, ৪০০০ পুলিশ, ১২ হাজার অস্থায়ী টয়লেট, ৫৪টা স্পিডবোট, ৬০০ স্বাস্থ্যকর্মী, ৫টা সাময়িক হাসপাতাল, ১৫০ সিসিটিভি, পানীয় জল, আলো, ওষুধ, ক্যান্টিন, এ সব নিয়ে সাগরদ্বীপ অভিযান। মেলার ঢের আগেই বানাতে হবে অস্থায়ী ঘর, টয়লেট, নানান অফিস।
কলকাতা থেকে গাড়িতে কাকদ্বীপ। তার ঠিক আগেই ডান দিকের বাঁক। রাস্তা যেখানে শেষ, সেটাই ‘লট এইট’। পোশাকি নাম হারউড পয়েন্ট। সদ্য করা বালি-সিমেন্টের রাস্তার পাশে কন্ট্রোল রুম। টেবিলের উপরে সারি সারি সাজানো ম্যানপ্যাক, তাতে ঘ্যাসঘ্যাস করে বেজে চলেছে ‘কচু কলিং লট এইট’... লট এইট কলিং কচু।’ সামনে চওড়া নদী-মোহনা। জানুয়ারি মাসের শীতের হাওয়ায় জল লাফিয়ে উঠছে। জেটিতে অনেকগুলো লঞ্চ বাঁধা। প্রকাণ্ড সব বার্জ। এম ভি পথবাহী, মেঘমল্লার, জাকির হোসেন, ভি ভি গিরি, রাজা গোপালাচারী। ব্যাজ পরা ভলান্টিয়াররা গম্ভীর মুখে জানালেন, এখন কোনও লঞ্চ চলবে না। ভাটা চলছে। নদীগর্ভে পলি। ড্রেজিং ভাল করে করার সময় পাওয়া যায়নি। লঞ্চ এক বার চড়ায় আটকালে দু’-তিন ঘণ্টার ধাক্কা। দূরের জেটিতে একটা প্রকাণ্ড বার্জে অজস্র মানুষের জনসমুদ্র! বিরাট বাঁশের ডগায় লম্বা চোঙাওয়ালা মাইকে নানান ঘোষণা। হর্ন দিচ্ছে চাল-ডাল-আলু-তেল-মশলাপাতি বোঝাই স্বেচ্ছাসেবকদের গাড়ি। ধুপধাপ করে মাল তুলে দিল একটা ডিঙি নৌকোয়। চিৎকার করে ঝগড়া করছে এক লঞ্চের সারেং আর ডিঙির মাঝি। আমাদের কাজ মেলা অফিসের কন্ট্রোল রুমে। অন্য দেশ ও রাজ্যের বিশেষ অতিথিদের দেখাশোনা, তাঁদের যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা।
ঘণ্টাদুয়েক রোদে পোড়ার পর উঠে পড়লাম সরকারি এক লঞ্চে। পাশে ধুতি পরা এক মাঝবয়েসি ভদ্রলোক। বেশ আমুদে, আগ বাড়িয়ে সাগরদ্বীপের ইতিহাস জানাতে আগ্রহী। জানালেন, সাগরদ্বীপে নাকি প্রতাপাদিত্যের একটি দুর্গ ছিল। রাজার নৌবহর এই সাগরের ঘাঁটি রক্ষা করত। সাগরদ্বীপ থেকে ধুমঘাট, জলপথে ছিল জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা। রাজার অনেক ফিরিঙ্গি কর্মচারী থাকার জন্য এই জলপথের নাম ছিল ফিরিঙ্গি ফাঁড়ি। প্রতাপাদিত্যই নাকি সাগরদ্বীপের শেষ রাজা। আমাদের চুপ থাকতে দেখে ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন, ‘‘চ্যান্ডিক্যানের রাজার নাম শুনেছেন? চ্যান্ডিক্যান বা চাঁদখাঁ চক সুন্দরবনের এই সাগরদ্বীপেই ছিল।’’ এই রাজার গল্প আমাদের অজানা। ভদ্রলোক বলে চললেন: ‘‘গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির আশ্রম আসলে গুপ্ত ছিল। শোনা যায়, আশ্রমটিকে উদ্ধার করেন বৈষ্ণবপ্রধান রামানন্দ জিউ। বহু বছর আগে সাগরদ্বীপে বাঘ ছিল। এখনও দেখবেন উত্তরে ঘন জঙ্গল...’’
গল্পে বিভোর হয়ে গিয়েছিলাম। নদী পেরিয়ে লট এইট থেকে কচুবেড়িয়া, আধঘণ্টা। কখন যে কচু, মানে কচুবেড়িয়া এসে পৌঁছেছি, খেয়াল করিনি। নামার জন্য হুড়োহুড়ি। লঞ্চঘাটের মাইকে তীর্থযাত্রীদের সাদর আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। কানে এল— বামুনখালি, চন্দনপিঁড়ি, মায়া গোয়ালিনির ঘাট, ভাঙা মন্দির... নরম কাদায় পা ডুবে গেল। সেই ভদ্রলোকও মিলিয়ে গেলেন সাধু, ব্যবসায়ী, টাক, টিকি, কতশত লোকের ভিড়ে।
কচুবেড়িয়া থেকে মেলা গ্রাউন্ড। ঢোকার মুখেই বিরাট বাসস্ট্যান্ড। হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি অজস্র তিনকোনা ছাউনি। পোশাকি নাম ‘পিলগ্রিম শেড’। চারপাশে অসংখ্য শিবির— বড়বাজার জমাদার সঙ্ঘ, শ্রী দধীচী পরিষদ, লোকনাথ মিশন, বড়বাজার ব্যাপারী অখিল ভারতীয় সঙ্ঘ, কলকাতা বস্ত্র ব্যবসায়ী সেবা সমিতি, চেতনা পরিষদ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। কাজ নানাবিধ। বাসস্ট্যান্ডে জেটিঘাটে ভিড় সামলানো, তীর্থযাত্রীদের সঠিক রাস্তা দেখানো, স্নানের ঘাটের নজরদারি।
খাট-বিছানা বালিশ-কম্বলের বন্দোবস্ত আর অতিথিদের তিনবেলা খাবারের তত্ত্বাবধান করছি দিন-রাত জেগে। ব্যবস্থা অস্থায়ী হোটেলের মতো। জল নেই, খাবার আসতে দেরি, রাতের খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, মশারির দড়ি ছিঁড়ে যাচ্ছে, চাদর চাই, একস্ট্রা খাট লাগবে, মশা মারার ধূপের প্লাগে কানেকশন নেই, ট্রেনের টিকিট কনফার্ম করে দেওয়া যাবে কি না— অজস্র প্রশ্ন। শেষরাতে এসে দাঁড়াতাম তারাভরা আকাশের নীচে। মন্দিরে মৃদু আলো। লাখো মানুষ যেন জাদুমন্ত্রে ঘুমিয়ে আছে। এক গভীর রাতে দেখি, জলের ধারে উবু হয়ে বসে আছেন এক বৃদ্ধা। ঠিকানা বলতে পারছেন না। ছেলেমেয়েরা মেলায় ফেলে চলে গিয়েছে। পুলিশ ফাঁড়িতে রেখে এলাম। তার পর কী হয়েছে তাঁর, জানা নেই। লোকে যাতে হারিয়ে না যায়, মেলা প্রাঙ্গণে তাই রাতে পাঁচ রাস্তায় পাঁচ রকমের আলো। যদিও দিনের আলোতেই মানুষ হারিয়ে যায় বেশি। আর হতদরিদ্র সংসারের বোঝা যাঁরা, তাঁরা যেন হারিয়ে যেতেই আসেন এই মেলায়।
গঙ্গাসাগর মেলা সকলের। বিনে পয়সায় খাবার জোগান দেওয়ার জন্য রয়েছে বড়বাজার ব্যাপারী সঙ্ঘ, চেতনা পরিষদ, ইসকন, আরও অনেকে। অসুস্থ মানুষের সেবায় ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প খুলেছে সেন্ট জন’স অ্যাম্বুল্যান্স, ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটি। সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার ভয় নেই, পাহারায় ভারতীয় তটরক্ষক। সহযোগিতায় রয়্যাল লাইফ সেভিং সোসাইটি অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান লাইফ সেভিং সোসাইটি। মেলার ভিড়ে অকস্মাৎ কারও মৃত্যু হলে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বীর অভিমন্যু স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্যরা। ভিড় সামলানোর দায়িত্ব ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের।
সব আওয়াজ ছাপিয়ে মাইকে ভেসে আসে তীব্র ঘোষণা। শেষের ক’টি শব্দ একই। ‘আপ জঁহা ভি হো, বজরং পরিষদ মে চলা আইয়ে।’ মেলা হয়তো তখনও ভাল করে জমেনি, অথচ হারিয়ে গিয়েছে অনেক লোক।
সরকারি অতিথিদের মন্দির দেখানো আর নির্বিঘ্নে স্নান করানোর দায়িত্বও পালন করতে হত। এক বার এক অতিথি এসেছেন ভেনেজুয়েলা থেকে। ভাষার সমস্যা। ভোররাতে পুণ্যলগ্নে স্নান করবেন তিনি। একহাঁটু জলে দাঁড়িয়ে কী করে বুঝবেন পুণ্যসময়, আমরা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সাদা রুমাল ফেলে দিলাম বালিতে। তিনিও ডুব দিলেন। একমুখ হাসি নিয়ে উঠলেন জল থেকে।
কপিলমুনির মন্দিরের দরজার ওপরে লেখা ‘অখিল ভারতীয় শ্রী পঞ্চ রাম নন্দীয় নির্বাণী আখড়া। শ্রী হনুমানগড়ী অযোধ্যা, শাখা কপিলমুনি মন্দির, গংগাসাগর’ (বানান অপরিবর্তিত)। মন্দিরে তিন আশ্চর্য মূর্তি। মাঝখানে কপিলমুনি, বাঁ দিকে রাজা সগর, ডান দিকে ভগীরথ। কপিলমুনির মূর্তিতে লাল রঙ মাখানো। শুধু চোখদুটো স্পষ্ট...
সকাল-সন্ধে কাজের ফাঁকে চলে আসতাম নাগা সন্ন্যাসীদের আখড়ায়। উলঙ্গ, ছাই মাখা দেহ। মাথার চুলের জটা হলদেটে। প্রতিটি আখড়ার সামনে ধুনি। মাটিতে পোঁতা বিশাল ত্রিশূল। সামনে কমণ্ডলু। পুণ্যার্থী, ফোটোগ্রাফারদের ভিড় এখানে বেশি। এক বার মেলায় এক নাগা সাধুকে দেখেছিলাম— চোখে সানগ্লাস, হাতে দামি ঘড়ি, বাঁ হাতে মোবাইল, আঙুলের ফাঁকে সিগারেট। এ সব কোত্থেকে, জিজ্ঞেস করায় ভাঙা ভাঙা শব্দে, উদাস ভাবে বললেন, এক ভক্ত দিয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলায় কোনও পান্ডা নেই। নাগা সাধুদের দক্ষিণা দিতে হবে, এমন কোনও মানে নেই। মূল মন্দিরের পুজোও সাধারণ। ডালায় নকুলদানা, নারকেল, ধূপকাঠি, সিঁদুর, হলুদ সুতোর তলায় ঝোলা গোলাপি ঝুমকোর তাগা। হাত বাড়িয়ে তুলে দিতে হয় ডালা। ভিড়ের মধ্য থেকে কোনও পূজারি পুজো দিয়ে ডালা ফেরত দেয়। মন্দিরের বেদি উঁচু হওয়ায় দূর থেকেও দেখা যায় কপিলমুনিকে। সে দিকে তাকিয়ে সাগরের পারে পুজো সেরে বাছুরের লেজ ধরে বৈতরণী পার হতে চান কেউ কেউ।
যখন মোবাইল ছিল না, ভ্যানরিকশায় সমুদ্রতটে ঘুরে বেড়াত এসটিডি আইএসডি পিসিও। হোগলার ছোট শেড, উপরে বিজ্ঞাপন: এখানে বিনামূল্যে হাঁপানি সারানো হয়। দুই থেকে কুড়ি লিটারের প্লাস্টিক জারিকেন সাজানো। সাগরের মাহেন্দ্রক্ষণের পবিত্র জল। পৌঁছে যাবে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। এমনকি বিদেশেও।
সাগরমেলা এখন গ্রিন মেলা, ক্লিন মেলা। এক বার এক এফ এম চ্যানেল থেকে সকাল সাতটায় ফোন, লাইভ ফিড চলছে। উপস্থাপিকা জিজ্ঞেস করলেন, এই মুহূর্তে কী দেখছেন মেলায়? দেখছি, ঘন কুয়াশা সাগরের পাড় ঘেঁষে। দূরে দূরে সারি সারি অজস্র বায়ো টয়লেট। অথচ, এক বুড়ো সাধু উন্মুক্ত প্রকৃতিতে কাদাজলে প্রাতঃকৃত্য সারছেন। কয়েক ফুট দূরে বেলচা-ঝুড়ি নিয়ে সরকারি কর্মচারীর তত্ত্বাবধানে ‘নাইট সয়েল রিমুভাল’-এর কাজে কর্তব্যরত এক স্বেচ্ছাসেবী। মনে হল, এই তো আসল মানুষের মেলা। সহজ, সরল, স্বাভাবিক জীবনের কাজের প্রতিফলন।
মেলার প্রায় এক মাস আগে শুরু হয় জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাজ। জেলাশাসক, মেলা অফিসার, লিয়াজ়োঁ অফিসারদের তত্ত্বাবধানে কর্মযজ্ঞ। মেলার লক্ষ লোকের পানীয় জল জোগাতে ভরসা পিএইচই। জেটি মেরামতে ইরিগেশন ওয়াটারওয়েজ় ডিপার্টমেন্ট। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট সারাতে পিডব্লিউডি। জলপথে যাত্রী পরিবহনে ট্রান্সপোর্ট (ওয়াটারওয়েজ়), বেঙ্গল লঞ্চ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। গাড়ির রাস্তায় ট্রান্সপোর্ট (রোডওয়েজ়), আগুন নেভাতে ফায়ার এমার্জেন্সি সার্ভিসেস। সাগরতটের সুরক্ষায় ইন্ডিয়ান নেভি। দুর্যোগ মোকাবিলায় ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার্স রেসপন্স ফোর্স। নদীর পলি ড্রেজিংয়ে ফিশারিজ় ডিপার্টমেন্ট। শৌচাগারের দায়িত্বে সুলভ ইন্টারন্যাশনাল। নদীতে লঞ্চ চলাচলের সুবিধায় কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট। চোলাই ও নকল মদ প্রতিরোধে রাজ্য আবগারি দফতর। অন্যান্য তত্ত্বাবধানে সুন্দরবন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। রাস্তায়, মেলার মাঠে পুলিশের দিন-রাতের পাহারা।
কাজের জন্য সাগরমেলা গিয়েছি সাত-আট বার। এক বার প্রস্তুতি দেখতে বেশ কিছু দিন আগেই গিয়েছি, চাঁদনি রাতে ফাঁকা সাগরতটে এক বিদেশি সাধু শোনালেন রাজা সগরের সন্তানদের মুক্তি আর গঙ্গার মর্ত্যে নামার ইতিহাস: ইক্ষ্বাকু বংশীয় রাজা সগর স্বর্গলাভের আশায় অশ্বমেধ মহাযজ্ঞ করলেন। যজ্ঞের ঘোড়া চুরি করে দেবরাজ ইন্দ্র লুকিয়ে রাখলেন পাতালে কপিলমুনির আশ্রমে। মহামুনি কপিল বসুন্ধরা ও পৃথিবীকে ধারণ করে ধ্যানমগ্ন, টের পেলেন না লুকিয়ে রাখা ঘোড়ার খবর। সগরপুত্ররা পাতালে কপিলরূপী বাসুদেবের আশ্রমে ঘোড়াকে দেখে মুনিকে মারতে উদ্যত হলে মুনির রাগে ও অভিশাপে ভস্মীভূত হলেন। তখন রাজার শ্যালক বিনতানন্দন গরুড় পরামর্শ দিলেন, স্বর্গের গঙ্গাকে মর্ত্যে নামিয়ে আনার। সগরের কয়েক প্রজন্ম পরে ভগীরথ তপস্যায় ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করলে ব্রহ্মার কমণ্ডলুবাসিনী গঙ্গা বিপুল বেগে মহাদেবের জটায় এসে পড়লেন, ভগীরথের প্রার্থনায় পরে জটামুক্ত হয়ে মিলিত হলেন সাগরসঙ্গমে। পবিত্র জলে সগর-সন্তানদের মুক্তিলাভ হল। গঙ্গাসাগর হল পরম মুক্তিতীর্থ।
মকরসংক্রান্তি পেরিয়ে গেলে ভিড় কমে যায়। কাজের ফাঁকে তখন খুঁজছি পুরনো ইতিহাস। ১৯১৪ সালের ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার ঘাঁটতে গিয়ে পেয়েছি উইলসন সাহেবের লেখা— বাঁশের বেড়া ঘেরা কপিলমুনির মন্দির ছিল অস্থায়ী। সামনে ছিল এক প্রকাণ্ড বটগাছ, তার নীচে রাম ও হনুমানজির মূর্তি। সে মন্দির আজ সমুদ্রগর্ভে। তরুণদেব ভট্টাচার্যের ‘গঙ্গাসাগর মেলা ও প্রাচীন ঐতিহ্য’ গ্রন্থের ছবির সূত্র ধরে জানা যায়, ১৯৬৪ সাল থেকে পাকা বাড়ির মন্দিরটি ’৭৪-এ পরিণত মন্দিরের আকার নিয়েছে। ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে শ্রীযুক্ত মাধবচন্দ্র বর্মণ কর্তৃক প্রকাশিত ‘ভারতের তীর্থযাত্রা’য় লেখা ছিল, গঙ্গাসাগরে পৌষ বা মাঘ মাসে মকরসংক্রান্তির সময়ে তিন দিনের স্নান হয়, মেলা পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকে। ১৯৪০ সালে পূর্ববঙ্গ রেলপথের প্রচার বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘বাংলায় ভ্রমণ’ প্রথম খণ্ডে লেখা, ‘পূর্বকালে সন্তানহীনা বহু নারী পুত্রলাভেচ্ছায় মানসিক করিয়া প্রথম সন্তানটি গঙ্গাসাগরে অর্ঘ্য দিয়া আসিতেন’। ১৯৭৮-এ প্রকাশিত ‘পশ্চিমবঙ্গের পূজাপার্বণ ও মেলা’য় পাচ্ছি, ‘হাওড়া স্টেশন থেকে ছিল সরকারি বাস। একটানা কাকদ্বীপ অবধি। একসঙ্গে আসা-যাওয়ার টিকিট। ভাড়া আট টাকা।’
সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার— এ প্রবাদ এখনও ফেরে লোকমুখে। প্রতি বার মেলায় কিছু না কিছু পরিবর্তন আসে। এ বার শোনা যাচ্ছে, হোগলাপাতার শেডেও আসছে শিল্পের ছোঁয়া। জিপিএস কাজে লাগিয়ে আরও উন্নত হবে বন্দোবস্ত।
প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে এই পাঁচ দিন। তার পর আস্তে আস্তে নিভে আসে মেলার মাঠের আলো। মেলার শেষ দিনের সূর্য ডুবে গেলে সন্ধ্যায় প্রস্তুতি ক্যাম্প ফায়ারের। রাত বারোটায় মেলার ইনফর্মেশন টাওয়ার থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলায় বেজে ওঠে, যখন ভাঙল মিলনমেলা...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy