Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প
Short Story

পূর্বাশ্রম

বছর একত্রিশ আগের কথা। উত্তরবঙ্গের এক ডেন্টাল কলেজ। সবে দন্ত-চিকিৎসার পাঠ শেষ করে ওই কলেজেই হাউস স্টাফ-এর কাজ নিয়েছে ডেন্টিস্ট সুরঙ্গমা মুখার্জি।

ছবি: শুভম দে সরকার

ছবি: শুভম দে সরকার

দেবকীনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০০:১৫
Share: Save:

চশমা খুলে চোখ দু’টো ভাল করে রগড়ে নিলেন সুরঙ্গমা, লোকটাকে ভাল করে দেখবেন বলে। সেই একই রকম টিকোলো নাক, প্রশস্ত কপাল, উজ্বল বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। শুধু একমাথা কোঁকড়ানো চুলের বদলে মুণ্ডিত মস্তক। ইনিই কি কলেজের সেই চিত্তসখা সান্যাল? না নিতান্তই তাঁর চোখের ভুল? পাহাড়ি পাকদণ্ডী পথ বেয়ে গাড়িতে আসতে গিয়ে সুরঙ্গমার আবার সেই মাথা ঘোরা শুরু হয়েছে, গাড়ি থেকে নেমেও মাথার ভিতরের কষ্ট, গা-বমি ভাব এখনও যায়নি। কিন্তু তা বলে তাঁর এতটা মনের ভুল হবে?

শ্রীমন্ত মহারাজ বলেই সবাই ওঁকে এই আশ্রমে চেনে, এখানকার সর্বময় কর্তা উনি। উত্তরাখণ্ড হিমালয়ের কোলে ছোট্ট সুন্দর গোছানো এক আশ্রম। আশ্রম সংলগ্ন অতিথিনিবাস। সেই সঙ্গে উপাসনালয়, স্কুল, লাইব্রেরি, বাগান, খামার, স্থায়ী আশ্রমিকদের বাসস্থান আর একটা ডিসপেনসারি। সারা বছর ধরে ভক্তদের আসা-যাওয়া দেশের নানা প্রান্ত থেকে। কিন্তু সেই অর্থে সুরঙ্গমা এখানকার ভক্তদের দলে পড়েন না। সুরঙ্গমা ডেন্টিস্ট, এক ডেন্টাল কলেজের প্রোফেসর, অবসর থেকে ঠিক তিন বছরের দূরত্বে দাঁড়িয়ে। তাঁর কলেজেরই এক কর্মচারী দীপকবাবু তাঁকে এই আশ্রমের খবর দেন। তিনি এখানকার দীক্ষিত। সুরঙ্গমাকে বলেছিলেন, ‘‘ম্যাডাম, আপনি তো প্রতি বছর প্রচুর পয়সা খরচ করে নানা রিসর্টে থাকতে যান, এ বারে আমাদের আশ্রম এক বার ঘুরে দেখুন না।’’

অতীন, মানে সুরঙ্গমার স্বামী যেন হাতে চাঁদ পেলেন। যদিও অতীন ব্যাঙ্কে বেশ উচ্চপদে আসীন, কিন্তু কর্মজীবনের আর কয়েক মাস মাত্র বাকি, বেড়ানোর খরচে তাই এখন থেকেই রাশ টানতে চাইছেন। তার উপর একমাত্র ছেলেকে গত বছর বেঙ্গালুরুতে প্রাইভেট ডেন্টাল কলেজে ভর্তি করতে গিয়ে ভাল রকম টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। সুলভে হিমালয় ভ্রমণের সন্ধান পেয়ে অতীন আর দ্বিমত করলেন না। হিমালয় বরাবরই ওঁদের খুব টানে। সব যোগাযোগ, বন্দোবস্ত দীপকবাবুই করে দিলেন ওঁদের আশ্রমে।

সুরঙ্গমারা অতিথিনিবাসের যে ঘরে আছেন, তার জানলা খুললেই দেখা যায় হিমালয়ের কোনও চূড়া, যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অন্য দিকে পাহাড়ি অরণ্যের মায়াবী আবরণ, সব মিলিয়ে অনন্য পরিবেশ। কিন্তু এখানে আসা অবধি সুরঙ্গমার মাথায় ঘুরপাক খেয়ে চলেছে আশ্রমের শ্রীমন্ত মহারাজ। মনের দেওয়ালে ল্যামিনেট করে রাখা এক প্রাণবন্ত মেধাবী তরুণের ছবি, ডা. চিত্তসখা সান্যাল। প্রাণপণে চেষ্টা করছেন সুরঙ্গমা তাঁর স্মৃতি থেকে সময়ের আস্তরণ মুছে ফেলে অতীতকে উদ্ধার করার।

বছর একত্রিশ আগের কথা। উত্তরবঙ্গের এক ডেন্টাল কলেজ। সবে দন্ত-চিকিৎসার পাঠ শেষ করে ওই কলেজেই হাউস স্টাফ-এর কাজ নিয়েছে ডেন্টিস্ট সুরঙ্গমা মুখার্জি। কিছুটা দূরেই নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ, উত্তরবঙ্গের সবেধন নীলমণি একমাত্র মেডিকেল কলেজ। হঠাৎ ডাক এল সেখান থেকে। উত্তরবঙ্গের কোনও দুর্গম গ্রামে এক মেডিক্যাল ক্যাম্প করার আয়োজন করছে ওই কলেজের স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, সেই ক্যাম্পে এক জন ডেন্টিস্টও দরকার। পাহাড়ি গ্রাম দেখার লোভে এক পায়ে খাড়া চিরকালের পর্বতপ্রেমী সুরঙ্গমা। এক রবিবার সকালে সব মিলিয়ে পাঁচ জন ডাক্তার চলল জিপে করে ওষুধপত্র সঙ্গে নিয়ে। ওদের দলে মহিলা ডাক্তার আরও এক জন এসেছেন মেডিক্যাল কলেজ থেকে। তার সঙ্গে গল্প করতে করতে অনেকটা পাহাড়ি পথ অতিক্রান্ত হল। মাথার ভিতর যদিও অস্বস্তি হচ্ছিল, কিন্তু গন্তব্যের প্রায় কাছাকাছি এসে গিয়ে আর পারল না সুরঙ্গমা। প্রবল মাথা ঘোরা, বমিও করে ফেলল জিপের মধ্যে। ভীষণ অপ্রস্তুত লাগছিল। পথের ধারের এক হোটেলে জিপ দাঁড় করিয়ে ওকে নিয়ে যাওয়া হল ভিতরে। সবাই ওর শুশ্রূষা করল, কিন্তু সুরঙ্গমা বিস্মিত হয়ে দেখল, এক ডাক্তার নির্দ্বিধায় জল দিয়ে জিপ থেকে ওর বমি মুছে দিল। পরে জেনেছিল, ওই সুদর্শন তরুণই ডা. চিত্তসখা। চোখেমুখে একটুও বিরক্তি ছিল না ওর। সে যাত্রায় কোনও রকমে ক্যাম্প শেষ করে ফেরা হল বেশ রাত করে। বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন এক নব্য অতিবিপ্লবী আন্দোলনে উত্তাল। চার দিকে কেমন বারুদ বারুদ গন্ধ, বড্ড অস্থির সময়।

অত রাতে ওকে একা ছাড়ল না সঙ্গীরা, ওর হাউস স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে অবধি পৌঁছে দিল। সবাইকে শুভরাত্রি জানিয়ে নিজের ঘরের দিকে এগনোর আগে সেই ডাক্তারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে গেল সুরঙ্গমা। উত্তরে ঠোঁটে অদ্ভুত সুন্দর একটা হাসি হেসে সেই তরুণটি বলল, ‘‘আমি চিত্তসখা সান্যাল, মেডিসিনে হাউস স্টাফ। কাল সকালে আবার ডিউটি আছে। এখন যাই, পরে কথা হবে। ভাল থাকবেন।’’

কিন্তু সুরঙ্গমার আর ভাল থাকা হল কোথায়! সেই রাতেই নাকি তার কষ্ট এত বেড়েছিল যে, সাতসকালে তাকে নিয়ে যাওয়া হল অনতিদূরের মেডিক্যাল কলেজে, যেখানে তখন ডিউটি করছে সদ্যস্নাত ডা. চিত্তসখা। সুরঙ্গমার বন্ধুরা বলছিল, ওটা নাকি ওর নকল অসুখ। ডাক্তার দেখানো নয়, ডাক্তার দেখার ছল। সুরঙ্গমা কোনও প্রতিবাদ করেনি। যাই হোক সে বার পরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল তাকে, কিন্তু সুরঙ্গমার চিত্তে তখন নতুন সখার উদ্বেল পদধ্বনি। কিছু দিনের মধ্যেই এল সেই বহু প্রতীক্ষিত আমন্ত্রণ। সুন্দর হস্তাক্ষরে সবুজ কালিতে লেখা একটা চিরকুট পেল সুরঙ্গমা চিত্তসখার কাছ থেকে। আর সেই চিরকুট-বাহিকা বান্ধবীর সাহায্যেই দেখা করার জায়গা ঠিক হল। মেডিক্যাল কলেজের ক্যান্টিন, সময় বিকেল পাঁচটা। ঠিক সময়ে পৌঁছে গিয়েছিল সুরঙ্গমা। কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল সে দিন। পুরো চত্বর সে সময় পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। পুরো উত্তরবঙ্গের পুলিশ যেন সে দিন মেডিক্যাল কলেজের প্রাঙ্গণে এসে হাজির। সারা কলেজের হস্টেল জুড়ে পুলিশের খানাতল্লাশি চলছে। কোনও নেতা নাকি খুন হয়েছে ছাত্রবিপ্লবীদের হাতে। সন্দেহভাজনদের তালিকায় স্থানীয় কলেজের বেশ কিছু ছাত্রের সঙ্গে ওই মেডিক্যাল কলেজের কেউ কেউও নাকি যুক্ত আছে। চিরুনি তল্লাশি শেষে দেখা গেল, কাছাকাছি কলেজের অনেক ছাত্র নিরুদ্দেশ, সেই তালিকায় তিন জন ডাক্তারও আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়-উদ্রেককারী নাম হল চিত্তসখা সান্যাল। শুধু সুরঙ্গমার কাছেই নয়, এ রকম নিষ্পাপ মুখের, সদালাপী, পরোপকারী ডাক্তার এ রকম চরমপন্থী দলে যুক্ত, তা সকলেরই কল্পনার অতীত ছিল। দিনকতক অনেক খানাতল্লাশি, জেরা চলল, কিন্তু সন্ধান পাওয়া গেল না হারিয়ে যাওয়া ছাত্রদের। পরে শোনা গেল, চিত্তসখা আদৌ উগ্রপন্থী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আসলে ইংরেজি, বাংলা দু’টি ভাষাতেই ওর লেখার হাত ছিল দারুণ। তাই হয়তো কোনও বন্ধুর অনুরোধে রাজি হয়েছিল ওদের বিপ্লবী দলের প্রচার কাজের জন্য কিছু লেখা লিখে দিতে, সেটাই বোধহয় ওর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

উত্তরবঙ্গের পর্ব সমাপ্ত হল সুরঙ্গমার। হাউস স্টাফের মেয়াদ শেষে সুরঙ্গমা ফিরে এল কলকাতায়, ডেন্টাল কলেজে চাকরি পেল। যথাসময়ে বিয়ে হল ব্যাঙ্ক অফিসার অতীনের সঙ্গে। কালের নিয়মে সুরঙ্গমার মন থেকেও চিরতরে হারিয়ে গেল ডা. চিত্তসখা, পুলিশের খাতায় এক ফেরার দাগি আসামি। সেই কালো দিনগুলোয় বহু মেধাবী ছেলেমেয়ের এমনই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছিল, যাদের শেষ অধ্যায়ের কথা কেউই সঠিক জানত না।

এ বারে অনেক দিন পর সুরঙ্গমা আর অতীন, শুধু দু’জন এক সঙ্গে বেড়াতে এসেছেন। ছেলের বেঙ্গালুরুতে এ সময়ে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা। আশ্রমে আসার পর দিনই সকালে আশ্রম দেখতে বেরোলেন সুরঙ্গমা আর অতীন। ছেলের সঙ্গে সকালেই মোবাইলে কথা হয়ে গিয়েছে। ফুরফুরে মনে দু’জনে পাশাপাশি হাঁটছেন, সঙ্গে আশ্রমের কর্মচারী বিনোদ। ভারী মিশুকে পাহাড়ি ছেলে। কাছের গ্রামেই পরিবার থাকে তার। সকাল সকাল আশ্রমে চলে আসে, আর থাকে সেই সন্ধে অবধি। পাহাড়ি চড়াই-উতরাই পথে সুরঙ্গমার খুব খেয়াল রেখে আশ্রম দেখাচ্ছিল বিনোদ। আশ্রমের ঠিক নীচ দিয়েই বয়ে চলেছে শীর্ণ, খরস্রোতা পাহাড়ি নদী। পাহাড়ি ফুলের বাগান, চোখ জুড়োনো প্রাকৃতিক দৃশ্য সবার মন ভুলিয়ে দিলেও সুরঙ্গমার মাথায় অন্য কথা ঘুরছে। ইচ্ছে করে কথায় কথায় তিনি শ্রীমন্ত মহারাজের প্রসঙ্গ তুললেন। বিনোদ বলল, ‘‘মহারাজ অনেক কাল ধরেই এই আশ্রমে আছেন। আগেকার অধ্যক্ষ দেহ রাখার আগে শ্রীমন্ত মহারাজকে দায়িত্ব দিয়ে যান।’’

সুরঙ্গমা জিজ্ঞেস করলেন মহারাজ কখনও আশ্রমের ডিসপেনসারিতে আসেন কি না। বিনোদ জানাল, ‘‘মহারাজ রক্ত দেখলে খুব ভয় পান, তাই আশ্রমের সব জায়গায় কঠোর নজর দিলেও পারতপক্ষে ডিসপেনসারির ধারকাছ ঘেঁষেন না। কিন্তু মাঝে মাঝে উনি রাতের অন্ধকারে শুধু একটা লাঠি হাতে নিয়ে চলে যান জঙ্গলের অনেক ভিতরে এক স্থানে উপাসনা করার জন্য। তখন কিন্তু ওঁর একদম ভয়ডর লাগে না!’’ হেসে হেসে বলল বিনোদ।

ভ্রমণ-পর্ব মিটতেই বিনোদকে নিয়ে সুরঙ্গমা আশ্রমের অফিসে গেলেন শ্রীমন্ত মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে। চোখের ঠিক সামনে ওঁর চেহারাটা দেখে কেমন যেন সব গুলিয়ে যাচ্ছে। তবু এক বার শেষ চেষ্টা করলেন সুরঙ্গমা সত্যিটা জানার। সরাসরি প্রস্তাব দিলেন শ্রীমন্ত মহারাজকে, ‘‘আমি তো ডেন্টিস্ট, যদি বছরে তিন-চার বার এখানে এসে বিনা পারিশ্রমিকে এখানকার লোকেদের দাঁতের চিকিৎসা করি? অনুমতি দেবেন আপনি?’’

‘‘ডেন্টাল চেয়ার, সরঞ্জামের অনেক খরচ ম্যাডাম। অত সামর্থ্য নেই আমাদের।’’ একদম বিশুদ্ধ হিন্দিতে সংক্ষিপ্ত, কাঠ-কাঠ উত্তর। উত্তরে লেশমাত্র সংশয় নেই, তেমনই নেই হিন্দি উচ্চারণে কোনও বাঙালিসুলভ টান। সুরঙ্গমা তবু অনুরোধ করলেন আর এক বার ভেবে দেখার জন্য, কিন্তু স্পষ্ট বোঝা গেল এখানে ডেন্টিস্ট আনার ব্যাপারে ওঁর আগ্রহ নেই। যা-ই হোক, সুরঙ্গমা একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হলেন যে, চেহারায় যতই সাদৃশ্য থাকুক, ইনি ডা. চিত্তসখা কখনওই নন। সেই লোক কখনওই এত রূঢ়ভাষী হয়ে যেতে পারেন না। মন থেকে সব সংশয় চলে যাওয়ায় বেশ ভারমুক্ত লাগছিল তাঁর। বাকি ক’টা দিন ভালই কাটল প্রকৃতির নিবিড় সাহচর্যে। ছুটির মেয়াদ দেখতে দেখতে শেষ হল, সুরঙ্গমা মন দিলেন গোছগাছে। কাল আশ্রম থেকে ওঁদের প্রস্থান সকাল-সকাল, সমতলে নেমে দুপুরের ট্রেনে কলকাতার টিকিট।

বেরনোর দিন সকালে সুরঙ্গমার খেয়াল হল সেই পাহাড়ি রাস্তায় আবার নামতে হবে। সেই মাথা ঘোরা না শুরু হয়! শুধু অসহ্য নয়, অত্যন্ত বিরক্তিকর এই রোগ। মাঝের বেশ কয়েক বছর ভাল থাকলেও এ বার ফের ফিরে এসেছে সেই মাথা ঘোরা। তাই ঠিক করেছেন, আগেভাগেই ওষুধ খেয়ে জিপে উঠবেন, যাতে আসার সময়ের মতো বিপত্তি না হয়। অতিথিনিবাসের কাছেই ডিসপেনসারি, সেই দিকেই রওনা দিলেন সুরঙ্গমা ওষুধ নেওয়ার জন্য।

মাঝরাস্তায় হঠাৎ বিনোদের সঙ্গে দেখা। হাঁপাতে হাঁপাতে দ্রুতপায়ে আসছে। সুরঙ্গমার হাতে একটা ছোট প্যাকেট দিয়ে বলল, ‘‘মহারাজ পাঠিয়ে দিলেন আপনার জন্য।’’

প্যাকেট খুলতেই দেখলেন মাথা ঘোরা বন্ধ করার চারটে ট্যাবলেট, যেটা এখানকার ডিসপেনসারিতে পাওয়া যাবে কি না ভাবছিলেন তিনি। ট্যাবলেটের সঙ্গে ছোট চিরকুটে সবুজ কালিতে সেই চেনা সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা, ‘পাহাড়ি রাস্তায় অনেকের মাথা ঘোরে জানি, তাই ভবিষ্যতে এখানে না আসাই ভাল। আর সন্ন্যাসীদের পূর্বাশ্রমের কোনও স্মৃতি রাখতে নেই।’

সুরঙ্গমার মনের ভিতর সুনামি শুরু হয়ে গেল। সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে তাঁর। নিজের হৃৎস্পন্দন যেন নিয়ন্ত্রণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কী করবেন কিছু বুঝতে পারছেন না। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করলেন। একটু শান্ত হওয়ার পর ওষুধটা মুখে দিতে গিয়েও পারলেন না। ওই চিরকুটেই ট্যাবলেট চারটে মুড়ে রেখে দিলেন নিজের হাতব্যাগে, পরম যত্নে, চিত্তসখার উপহার মনে করে। মাথা যদি তাঁর ঘোরে আজ, ঘুরুক। সেই সঙ্গে মনের মধ্যে ঘুরতে থাকুক ফেলে আসা পূর্বাশ্রমের কিছু নিষ্ঠুর, মধুর স্মৃতি।

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story Literature
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy