ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল
ই স্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস সংলগ্ন পাঁচতারা নার্সিং হোমের ইনটেনসিভ থেরাপি ইউনিট ওরফে আইটিইউ থেকে বেরিয়ে স্নায়ুশল্যবিদ কল্লোল মুখোপাধ্যায় যখন বললেন, ‘‘মিস্টার মিত্র, আপনি আমার চেম্বারে আসুন,’’ তখনই বাষট্টি বছরের সুদীপ্ত মিত্র যা বোঝার বুঝে গেলেন। সুদীপ্তর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর বাল্যবন্ধু মানস সেনগুপ্ত। তিনি সুদীপ্তর হাত ধরে বললেন,
‘‘শক্ত হ।’’
কল্লোল চেম্বারে ঢুকে চেয়ার দেখিয়ে বললেন, ‘‘আপনারা বসুন।’’ তার পর চেম্বার সংলগ্ন বাথরুমে ঢুকে গেলেন।
চেয়ারে বসে চার তলার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন সুদীপ্ত। রাত দেড়টার সময়ও পূর্ব কলকাতার মহাসড়ক দিয়ে অজস্র চারচাকা ছুটে যাচ্ছে। ওখানেই চার দিন আগে রাত দশটার সময়ে তাঁর ছেলে সুমিত্রর গাড়িতে ধাক্কা মেরেছিল একটি ট্রাক। ছেলের বউ প্রিয়া এবং নাতি ঋজু স্পট ডেড, সুমিত্র অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। কয়েক জন পথচারী এবং দোকানদার মিলে ওদের তিন জনকে এখানে নিয়ে আসে। সুদীপ্ত তখন ডোভার লেনের পৈতৃক বাড়িতে মানসের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। সুদীপ্তর স্ত্রী নীলিমা আর মানসের বউ পূরবীও উপস্থিত ছিলেন।
মানস আর সুদীপ্ত এক পাড়ার ছেলে, স্কুলের ক্লাসমেট। পরে অবশ্য কলেজ আলাদা, পেশা আলাদা, কর্মক্ষেত্র আলাদা হয়ে গিয়েছিল। পুরনো বন্ধুত্বটা তবুও রয়ে গিয়েছে। অবসর নেওয়ার পরে দু’জনেই থিতু হয়েছেন পুরনো পাড়ার পৈতৃক বাড়িতে। দুই বন্ধুরই টাকাপয়সার কোনও অভাব নেই, সন্তানরাও কৃতী। মানসের ছেলে আমেরিকায় থাকে, সুদীপ্তর ছেলে কলকাতায়। দুই ছেলেই বিবাহিত। সুদীপ্ত এবং মানস দুজনেই, যাকে বলে, হ্যাপিলি রিটায়ার্ড।
সেই রাতে সুদীপ্তর মোবাইলে নার্সিং হোম থেকে ফোন আসার পরে ছবিটা একেবারে বদলে গেল।
নার্সিং হোম থেকে সোজা সরকারি হাসপাতালের মর্গ। ময়না তদন্তের পরে ডোভার লেনের বাড়ি হয়ে শ্মশান। অপঘাতে মৃত্যুর জন্য তিন দিনের মাথায় পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম হয়েছে। সব সামলেছেন মানস আর পূরবী। সুদীপ্ত বসে থেকেছেন আইটিইউ-এর করিডরে রাখা চেয়ারে।
গত কাল প্রিয়া আর ঋজুর ‘কাজ’ ছিল। সুদীপ্ত এক বেলার জন্য বাড়ি গিয়েছিলেন। এই ক’দিন স্নান করেননি, দাড়ি কামাননি। খাওয়া বলতে নার্সিং হোমের ক্যাফেটেরিয়ার চা-কফি-বার্গার। সময় কেটেছে খবরের কাগজ পড়ে, মোবাইলে নীলিমা আর মানসের সঙ্গে কথা বলে।
প্রতি দিন সকাল এগারোটা আর রাত ন’টা নাগাদ পেশেন্ট দেখা শেষ করে কল্লোল রোগীর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন। আজ রাত ন’টার বদলে দেড়টা বাজল। সুমিত্রর মাথায় আজ আর একটা অপারেশন হল।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিজের চেয়ারে বসে কল্লোল বললেন, ‘‘হাত আর পায়ে ফ্র্যাকচার, রিব ফ্র্যাকচার, হিউজ ব্লাড লস— এই সবই সামলে দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু সুমিত্রর আসল সমস্যা হল হেড ইনজুরি। ব্রেনে অনেকটা ব্লাড জমে ছিল। বের করে দিয়েছি। রেজাল্ট কিন্তু আশাপ্রদ নয়। ওর কিডনি আর লিভার ফেল করছে। মাল্টি-অর্গান ফেলিওরে আমাদের কিছু করার থাকে না। ইট’স আ ম্যাটার অব টাইম। আজ বা কাল...’’
সুদীপ্ত কল্লোলের দিকে তাকালেন। কল্লোলের চোখ মেঝের দিকে। ডাক্তার কখন রোগীর বাড়ির লোকের চোখের দিকে তাকাতে পারেন না, সেটা সুদীপ্ত জানেন।
দুই বন্ধু চেম্বার থেকে বেরোলেন।
******
বাড়ি ফিরে স্নান করে, দাড়ি কামিয়ে, সামান্য কিছু মুখে দিয়ে বিছানায় শরীর ছেড়ে দিয়েছিলেন সুদীপ্ত। ঘুম ভাঙল দুপুর দু’টোর সময়। শার্টপ্যান্ট পরে নীলিমাকে বললেন, ‘‘আমি বেরোচ্ছি। হাসপাতাল হয়ে ফিরব।’’
নীলিমা শোক লুকোতে শিখে গিয়েছেন। শান্ত গলায় বললেন, ‘‘আচ্ছা।’’
গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে মানসকে বাড়ি থেকে তুললেন সুদীপ্ত। মানস বললেন, ‘‘ভরদুপুরে নার্সিং হোম যাবি? সন্ধেবেলায় গেলে হত না?’’
সুদীপ্ত বললেন, ‘‘অন্য জায়গায় যাচ্ছি। উঠে পড়।’’
কথা না বাড়িয়ে মানস গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি চালাতে চালাতে সুদীপ্ত বললেন, ‘‘নার্সিং হোমে বসে থাকার সময়ে আমি অনেক কাগজ পড়তাম। দেখতাম, কলকাতায় রোজই নতুন শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, বুটিক, রেস্তরাঁ, পাব, ডান্স অ্যাকাডেমির উদ্বোধন হচ্ছে। এই সবের মধ্যে একটা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখে বেজায় অবাক লেগেছে। আজ সকালে ফোন করেছিলাম।’’
‘‘কী প্রতিষ্ঠান?’’ জিজ্ঞেস করলেন মানস।
বেকবাগান রো ধরে সুদীপ্ত চলে এসেছেন এজেসি বোস রোডে। মল্লিকবাজারের দিকে যেতে যেতে বললেন, ‘‘প্রতিষ্ঠানটার নাম ‘চ্যাপ্টার টু’। আমরা সেখানেই যাচ্ছি।’’
‘‘দ্বিতীয় অধ্যায়? কোনও বইয়ের দোকান?’’
‘‘একদমই না,’’ মল্লিকবাজারের ক্রসিং পেরিয়ে এলিয়ট রোডে ঢুকে রাস্তার বাঁ দিকে গাড়ি পার্ক করলেন সুদীপ্ত। ‘‘এটা একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এরা আফটারলাইফ সার্ভিস নিয়ে ডিল করে।’’
‘‘আফটারলাইফ সার্ভিস? সেটা আবার কী?’’
‘‘মানে ডেথ! মৃত্যু! ’
গাড়ি থেকে নেমে দুই বন্ধু দেখলেন, সামনেই একটি নতুন শো-রুম। ঘষা কাচের ধূসর আর সমুদ্র-নীল দেওয়ালের রং মিলিয়ে স্নিগ্ধ বহিরঙ্গ। দেওয়ালে ঝোলানো বোর্ডে সূর্যাস্তের কমলা রং দিয়ে ইংরিজিতে লেখা রয়েছে, ‘চ্যাপ্টার টু। আফটারলাইফ সার্ভিস।’
দরজা ঠেলে দুই বন্ধু ভিতরে ঢুকলেন। দুধসাদা দেওয়ালে বাঁধানো ফ্রেমে শোভা পাচ্ছে রবি ঠাকুরের ক্যালিগ্রাফি, ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যামসমান।’ সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজছে, ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার হতে কী সঙ্গীত ভেসে আসে...’
বছর পঁচিশের একটি মেয়ে ডেস্কটপে কাজ করছিল। ক্লায়েন্ট দেখে হাত জোড় করে বলল, ‘‘নমস্কার। বসুন।’’
‘‘আপনিই অদিতি?’’ চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করলেন সুদীপ্ত।
মেয়েটি ঘাড় নেড়ে বলল, ‘‘আপনিই মিস্টার মিত্র? সকালে ফোন করেছিলেন?’’
‘‘হ্যাঁ। আপনারা কী রকমের সার্ভিস প্রোভাইড করেন সেটা জানতে চাই। খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন পড়ে আইডিয়া করা
যায় না।’’
অদিতি মানসের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘আফটারলাইফ সার্ভিস প্রোভাইড করার কনসেপ্ট বিদেশে খুব কমন। আমাদের দেশে দিল্লি আর মুম্বইতে আছে। কলকাতায় এই
শুরু হল।’’
অদিতি বলল, ‘‘জন্ম বা বিয়ের মতোই মৃত্যুও একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কেউ মারা যাওয়ার পরে তার বাড়ির লোকের অনেক কাজ থাকে। চ্যাপটার টু সেই কাজগুলো উতরে দেয়। বোঝা গেল?’’
‘‘হ্যাঁ,’’ জবাব দিলেন মানস। তাঁর মনে হচ্ছে, সুদীপ্ত এত তাড়াহুড়ো না করলেও পারত। কল্লোল মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ইট’স আ ম্যাটার অব টাইম। আজ বা কাল...’’ সেটাকে ধ্রুবসত্য ধরে নিয়ে ছেলের অন্ত্যেষ্টির অগ্রিম ব্যবস্থা করা কি ঠিক? তিনি সুদীপ্তকে হাঁটু দিয়ে ঠেলে নিচু গলায় বললেন, ‘‘ডক্টর মুখার্জি এখনও ডেথ ডিক্লেয়ার করেননি।’’
‘‘আপনার বন্ধু ঠিক ডিসিশন নিয়েছেন স্যর,’’ মানসকে থামায় অদিতি, ‘‘অ্যাডভান্স বুকিং করা থাকলে আমরা বেটার সার্ভিস দিতে পারি। আমরা এই ডেথ শপ খুলেছি দেড় মাস আগে। এর মধ্যে সতেরোটা অ্যাডভান্স বুকিং পেয়েছি। তিন জন ক্লায়েন্টের ছেলেমেয়ে বিদেশে থাকে। ছুটি ম্যানেজ করে, প্লেনের টিকিট কেটে আসতে তাদের তিন দিন সময় লাগল। আমরা ডেডবডি এমবামিং করে পিস হ্যাভেনে রেখে দিলাম। এমবামিং কাকে বলে জানেন তো?’’
‘‘কেমিক্যাল ইনজেক্ট করে বডি প্রিজার্ভ করার পদ্ধতি।’’
‘‘ঠিক বলেছেন,’’ বুড়ো আঙুল তুলে থামস আপ করে অদিতি। সুদীপ্তর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘‘আপনি কী রকম ক্রিমেশান চাইছেন? হিন্দু, মুসলিম না ক্রিস্টান?’’
সুদীপ্ত বললেন, ‘‘হিন্দু বাঙালির অন্ত্যেষ্টি। আপনারা কী কী করতে পারবেন খুলে বলুন। ফি কত?’’
******
‘‘দেখুন স্যর, আমাদের তিনটে স্কিম আছে। চিপ অ্যান্ড বেস্ট হল ‘যাত্রিক স্কিম’। এতে পাবেন শ্মশানযাত্রার জন্য গাড়ি, রজনীগন্ধার ডেকরেশন, ইলেকট্রিক চুল্লিতে দাহকার্য, গঙ্গায় অস্থি বিসর্জন দেওয়া। খরচ পড়বে দশ
হাজার টাকা।’’
হাত নেড়ে মাছি তাড়িয়ে সুদীপ্ত বললেন, ‘‘এর পরে?’’
‘‘নেক্সট লেভেলে আছে তিরিশ হাজার টাকার ‘মুসাফির স্কিম’। এই স্কিমে শ্মশানযাত্রার গাড়িটা এসি হবে, ডেকরেশন হবে আপনার পছন্দের ফুল দিয়ে। দাহকার্যে চুল্লি এবং কাঠ দু’টোরই অপশন আছে। অস্থি কোথায় বিসর্জন দেওয়া হবে, এই বিষয়েও ক্লায়েন্টের মতামতই ফাইনাল।’’
‘‘অস্থি আবার অন্য কোথাও বিসর্জন দেওয়া যায় না কি?’’ জিজ্ঞেস করলেন মানস।
‘‘আমাদের এক নন-রেসিডেন্ট বেঙ্গলি ক্লায়েন্ট চেয়েছিলেন, তাঁর মায়ের মৃত্যুর পরে যেন অস্থি কলকাতার বাড়ির বাগানে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আমরা সেটাই করেছি। এবং সেটার ভিডিয়ো তুলে ক্লায়েন্টকে পাঠিয়েও দিয়েছি।’’
‘‘আর কী স্কিম আছে?’’ জিজ্ঞেস করলেন সুদীপ্ত।
‘‘আমাদের এক্সক্লুসিভ স্কিমের নাম ‘পরিযায়ী’। এক লাখ টাকার প্যাকেজ,’’ রিমোট টিপে দেওয়ালে মাউন্ট করা টিভি অন করে অদিতি। টিভির পরদায় মুম্বইয়ের এক বৃদ্ধা নায়িকার শেষযাত্রার ভিডিয়ো। অদিতি বলল, ‘‘স্পেশাল ডিজাইনের গাড়ি। দেখতে রথের মতো। আপনি চাইলে অন্য ডিজাইনের গাড়ির ব্যবস্থা করা হবে। ফুলের ক্ষেত্রেও আমরা এক্সক্লুসিভ। ড্যাফোডিল, টিউলিপ, ক্রিসানথিমাম, অর্কিড ছাড়া অন্য ফুল ব্যবহার করা হয় না। দাহ করা হয় চন্দনকাঠের চিতায়। অবশ্য কেউ চাইলে ইলেকট্রিক চুল্লির
অপশনও রয়েছে।’’
‘‘এত টাকা খরচা করার কোনও মানে হয় না। দু’নম্বর স্কিমটাই ঠিক আছে।’’ বললেন সুদীপ্ত।
‘‘গুড! তা হলে ডিটেলগুলো ঠিক করে নেওয়া যাক। শ্রাদ্ধ চাইছেন, না কি স্মরণসভা?’’
সামান্য ভেবে সুদীপ্ত বললেন, ‘‘স্মরণসভা।’’
‘‘কোন কোন অতিথিকে চাইছেন?’’
পরবর্তী আধ ঘণ্টা ধরে অতিথিদের নাম-ঠিকানা-মোবাইল নম্বর এবং মেল-আইডির তালিকা তৈরি হল। সুদীপ্ত স্মার্টফোন ঘেঁটে তথ্য সরবরাহ করলেন। স্মরণসভার পরে জলযোগের আয়োজন করা হবে। তাতে কী কী পদ থাকবে তার লিস্ট ফাইনাল করা হল। আলোচনা শেষ হওয়ার পরে অদিতি বলল, ‘‘এগ্রিমেন্ট ঠিকঠাক ফলো করা হল কি না দেখার জন্য আপনি উকিল রাখতে পারেন।’’
‘‘আমি ফোনেই আপনাকে বলেছিলাম যে উকিলের কোনও প্রয়োজন নেই। আমার এই বন্ধু সব দেখবেন,’’ মানসকে দেখিয়ে বললেন সুদীপ্ত।
‘‘ফেয়ার এনাফ।’’ কি-বোর্ডে আঙুল রেখেছে অদিতি, ‘‘এ বার ক্লায়েন্টের নাম বলুন।’’
নিজের এবং স্ত্রীর নাম বলে সুদীপ্ত জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আপনারা কার্ডে পেমেন্ট নেন তো?’’
‘‘অবশ্যই।’’ সুদীপ্তর কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে সোয়াইপ করে ফেরত দিল অদিতি। ফড়ফড় করে এগ্রিমেন্টের প্রিন্টআউট বেরোচ্ছে। প্রিন্টআউটের শেষ পাতাটা দেখিয়ে অদিতি মানসকে বলল, ‘‘এখানে সই করুন। চারটে কপিতে সই করতে হবে।’’
সই হয়ে যাওয়ার পরে এগ্রিমেন্টের কপি খামে ভরে তিনটে মুখ-আঁটা খাম সুদীপ্ত এবং মানসের হাতে তুলে দিল অদিতি। মানসকে বলল, ‘‘একটা কপি আমাদের কাছে থাকবে। একটা আপনার কাছে, বাকি দু’টো ওঁদের কাছে।’’
‘চ্যাপ্টার টু’ থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠেছেন দুই বন্ধু। মল্লিকবাজার থেকে পার্ক সার্কাস কানেক্টর ধরে গাড়ি এগোচ্ছে বাইপাসের দিকে। মানস বললেন, ‘‘এগ্রিমেন্টটা এখনই না করলে চলছিল না? সুমিত্র কিন্তু এখনও বেঁচে।’’
সুদীপ্ত গিয়ার বদলে শান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘‘ছেলের জন্য তো আমি আছি। আমিই ওর স্বর্গরথের ব্যবস্থা করব, আমিই ওর শরীরে ঘি মাখাব, আমিই ওর মুখাগ্নি করব, আমিই গঙ্গায় ওর অস্থি বিসর্জন দেব। ছেলের বউ আর নাতির পারলৌকিক কাজ যখন করতে পেরেছি, তখন ছেলেরটাও পারব।’’
‘‘তা হলে?’’ মানস অবাক।
‘‘এদের সঙ্গে এগ্রিমেন্ট করলাম আমার আর নীলিমার জন্য। আমাদের মধ্যে এক জন মরে গেলে তো অন্য জন খুব অসুবিধেয় পড়ব। বাড়িতে বডি পড়ে থাকবে, মুখে মাছি ভনভন করবে, খাটিয়া বয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও লোক পাওয়া যাবে না... সে খুব প্যাথেটিক ব্যাপার।’’
মানস চুপ। ড্যাশবোর্ডে রাখা সুদীপ্তর মোবাইলে রিং হচ্ছে। স্ক্রিনে লেখা, ‘‘কল্লোল মুখার্জি কলিং...’’
ফোন ধরে সুদীপ্ত বললেন, ‘‘আচ্ছা। আমরা আসছি।’’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মানসের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘ছেলেটা চলেই গেল।’’
বাইপাসে গাড়ি দাঁড় করিয়ে স্টিয়ারিঙে মাথা রেখে হাউহাউ করে কাঁদছেন সুদীপ্ত। মানসকে বলছেন, ‘‘আমার নাহয় বংশে বাতি দেওয়ার জন্য কেউ রইল না। কিন্তু তোর এনআরআই ছেলে তো থেকেও নেই। তুইও একটা এগ্রিমেন্ট করিয়ে নে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy