Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৭

অচেনা স্রোত

হৃষিতা রৌনককে ফোন করে ওর ফ্ল্যাটে আসে। অফিসের কাজে সে গত এক মাস মুম্বইতে ছিল, এখন ফিরে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে রৌনকের কাছে মিউজিক শিখবে। রৌনক ভিতরের ঘর থেকে গিটারটা নিয়ে এসে হৃষিতাকে শেখাতে বসে।

ছবি: পিয়ালী বালা

ছবি: পিয়ালী বালা

কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:০০
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: নীলেশ-শ্রীতমা জানায়, তারা বিবাহিত দম্পতি নয়, লিভ-ইন করছে। ওরা চলে যাওয়ার পর উদাস প্রিয়তোষ এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে ফোন করেন কস্তুরীকে। হৃষিতা রৌনককে ফোন করে ওর ফ্ল্যাটে আসে। অফিসের কাজে সে গত এক মাস মুম্বইতে ছিল, এখন ফিরে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে রৌনকের কাছে মিউজিক শিখবে। রৌনক ভিতরের ঘর থেকে গিটারটা নিয়ে এসে হৃষিতাকে শেখাতে বসে।

হৃষিতা রৌনককে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘‘দাঁড়াও দাঁড়াও, এত ফাস্ট নয়। মনে রাখব কী করে?’’

‘‘ভ্যালিড পয়েন্ট। আচ্ছা, ই, বি, জি, ডি, এফ... আপাতত এ ভাবে মনে রাখতে পারো, এভরি গুড বয় ডিজার্ভস ফেভার...’’

‘‘হুম! মুডি ব্লুজ।’’

‘‘আরেব্বাস, ওয়েস্টার্ন অ্যালবাম তো প্রচুর শোনো!’’

‘‘শুনি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। লেট’স গো ব্যাক টু ট্রেনিং।’’

রৌনক গিটারটাকে দেখিয়ে বলল, ‘‘আর এই যে গিটারের প্লেটটার ওপর ঘাটগুলো দেখছ, এগুলোকে ফ্রেট বলে। সব থেকে নীচের তারটায় তর্জনি দিয়ে প্রথম ফ্রেটটা চেপে ডান হাত দিয়ে তারটার নীচের দিকে একটা স্ট্রোক দাও।’’

টুং!

‘‘ফ্রেটের ওপরে আঙুল নয়, একটু পেছনে, দ্যাখো আওয়াজটা কত বদলে যাবে…’’

কয়েকটা নোট, আর তিন আঙুল দিয়ে সেই নোটগুলো একসঙ্গে হয়ে একটা কর্ড কী ভাবে বাজাতে হয় মোটামুটি আয়ত্ত করিয়ে দিয়ে রৌনক নিজের গিটারটা নামিয়ে রেখে বলল, ‘‘আজ এই পর্যন্তই। এই কর্ডটা এক সপ্তাহ মন দিয়ে প্র্যাকটিস করে নেক্সট রবিবার আবার এস।’’

‘‘এইটুকু! কী বোরিং!’ হৃষিতা ঠোঁট উলটে বলল।

‘‘আরে, তুমি কি নেক্সট টাইম মুম্বই গিয়ে প্রীতমের সঙ্গে দেখা করতে যাবে না কি? অনেক ধৈর্য, প্র্যাকটিস দরকার। আমি যদি তোমার আঙুলগুলো এখন এক বার ধরে দেখতে চাই তা হলে হয়তো মনে করবে যে তোমার আঙুল ধরার একটা বাহানা খুঁজছি। না হলে এক বার ধরে দেখতাম।’’

হৃষিতা দু’হাত রৌনকের সামনে পেতে বলল, ‘‘ধরো। হোয়াট্‌স দ্য বিগ ডিল? কী দেখবে? আর্টিস্টিক ফিঙ্গার কি না?’’

রৌনক অবশ্য হৃষিতার আঙুলগুলো ছুঁল না। স্রাগ করে বলল, ‘‘আর্টিস্টিক ফিঙ্গার তো দেখতেই পাচ্ছি। নখ কিন্তু ছোট করতে হবে। আর আঙুলগুলো ধরে দেখলে নেক্সট উইকে আবার আঙুলগুলো ধরে কম্পেয়ার করতে পারতাম, গিটারের স্ট্রিং চেপে চেপে কতটা প্র্যাকটিস করেছ।’’

আঙুলগুলো গুটিয়ে নিয়ে হৃষিতা বলল, ‘‘কিছুই চেঞ্জ হবে না। কারণ আমি প্র্যাকটিস করব কী ভাবে? তুমি হেল্প না করলে গিটারটা কিনব কী ভাবে? আজ কি দোকান খোলা থাকবে?’’

রৌনক মাথা ঝাঁকাল, ‘‘রবিবার। আমার জানাশোনা দোকান তো সব বন্ধ আজ।’’

হৃষিতা ফোনটা বার করে বলল, ‘‘অনলাইনও তো কেনা যায়। আজ অর্ডার করে এক্সপ্রেস ডেলিভারি বলে দিলে মঙ্গল বা বুধবারের মধ্যে ডেলিভারি দেবে। তা হলেও দিন তিনেক প্র্যাকটিস করে পরের রবিবার আসতে পারব।’’

‘‘আজ যা শিখলে, তিন দিন পর থেকে যদি সেটা প্র্যাকটিস শুরু করতে যাও, দেখবে সব ভুলে গিয়েছ। তার ওপর অনলাইন কেনা যে গিটারটার ডেলিভারি পাবে, অনেক সময়ই সেটায় স্ট্যান্ডার্ড টিউনিং করা থাকে না। তুমি একটা কাজ করো। এই গিটারটা আপাতত নিয়ে যাও। এটা আমার স্পেয়ার গিটার।’’

‘‘এ মা! না, না...’’ হৃষিতা লজ্জা পেয়ে বলে উঠল।

‘‘নিয়ে যাও। কারণ এই ক’টা নোট আর একটা কর্ড প্র্যাকটিস করতে করতে দু’দিন পর বোরিং মনে হলে, তোমার গিটার কেনাই সার হবে। ঘরের কোণে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার আর ট্রেডমিলের ওপর আর একটা জঞ্জাল হয়ে পড়ে থাকবে। তার চেয়ে ট্রাই বিফোর বাই। আমার কোনও প্রবলেম নেই।’’

একটু ইতস্তত করে হৃষিতা বলল, ‘‘আমার দু’একটা জিনিস আরও জানার ছিল।’’

‘‘বলো।’’

‘‘তোমাকে কত রেমুনারেশন দেব?’’

‘‘নেক্সট কোয়েশ্চেন?’’

‘‘সিরিয়াসলি। আমি কোনও অবলিগেশন চাই না। এভরি গুড বয় ডিজার্ভস...’’

হোহো করে হেসে উঠল রৌনক, ‘‘ঠিক আছে। ভেবে বলব। আর কিছু?’’

হৃষিতা অল্প হেসে বলল, ‘খুব বোকা বোকা প্রশ্ন। কর্ডের সঙ্গে গান কী ভাবে গায়? মানে আমি গিটার বাজিয়ে গান করতে চাই।’

‘‘কার গান?’’

‘‘এই যেমন ধরো...’’ একটু চিন্তা করে হৃষিতা বলল, ‘‘টেলর সুইফ্ট।’’

‘‘টেলর সুইফ্ট! মানে লাভ স্টোরি?’’ রৌনক আবার দু’লাইন খালি গলায় গেয়ে উঠল, ‘‘উই ওয়্যার বোথ ইয়ং হোয়েন আই ফার্স্ট স ইউ... কি, মাস্টারমশাই নিজে পরীক্ষায় পাস করতে পারছে?’’

হৃষিতা মৃদু হাততালি দিয়ে উঠল, ‘‘অলমোস্ট। রবীন্দ্রনাথ থেকে টেলর সুইফ্ট হয়ে গিয়েছে। হিন্দিটা শুধু বাকি রয়েছে।’’

‘‘ওটাই তো আমার রুটিরুজি,’’ রৌনক মুচকি হেসে আবার গিটারটা কোলে তুলে নিল। হালকা করে কয়েকটা কর্ড বাজাতে বাজাতে বাইরের দিকে তাকাল। বৃষ্টির তোড়টা একটু কমেছে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে বৃষ্টিটা এক অপূর্ব ছন্দে পড়ছে। গিটারের তারের ওপর আঙুলগুলো দ্রুত হল। বৃষ্টির ছন্দে গমগম করে উঠল গিটারের মূর্ছনা। তার মধ্যে গেয়ে উঠল, রিমঝিম গিরে সাওন... সুলগ সুলগ যায়ে মন... ভিগে আজ ইস মৌসম মে... লাগি ক্যায়সা ইয়ে অগন...

মুখ তুলে হৃষিতার দিকে তাকাল রৌনক। মুগ্ধতার আবেশ মেয়েটার চোখে, একটা বিস্ময়ও ফুটে আছে। রৌনক গানটা থামিয়ে কর্ডগুলো বাজাতে বাজাতে বলল, ‘‘যদি মন দিয়ে প্র্যাকটিস করো, তিন মাস পর এক রবিবার গিটার বাজিয়ে আমরা একসঙ্গে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, যে কোনও গান গাইতে পারব।’’

‘‘আপাতত তুমি যেটা গাইছিলে, সেটাই গাও... দারুণ লাগছে...’’

‘‘গুড মর্নিং।’’

রবিবার সকালে এই ‘সুপ্রভাত’ শোনার অপেক্ষাতেই যেন বারান্দায় বসে ছিলেন প্রিয়তোষ। ফোন অবশ্য প্রিয়তোষ নিজেও করতে পারেন, কিন্তু এখনও নিজে থেকে ফোন করতে কী রকম বাধো বাধো ঠেকে। অবশ্য গত রবিবার শ্রীতমারা চলে যাওয়ার পর ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে তো ফোনটা তিনিই করেছিলেন। সে দিন তাও একটা অজুহাত ছিল। শ্রীতমারা ছিল বলে কস্তুরীর ফোনটা ধরেননি। আজ কোনও অজুহাত নেই। শুধুই অপেক্ষা ছিল। সে দিনের মতো আজও ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। কস্তুরীর কথাগুলো যেন বৃষ্টির মতো বেজে উঠছে ফোনের ও পার থেকে।

‘‘তোমাদের ওখানে বৃষ্টি হচ্ছে, কস্তুরী?’’ লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে প্রিয়তোষ জিজ্ঞেস করলেন।

‘‘কাল রাতে জোর ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। এখন ধরেছে। রাস্তায় এখনও কাদা-প্যাচপ্যাচে জল জমে আছে। ব্যানার্জিপাড়ার ও দিকে শুনলাম, বড় একটা গাছ পড়ে একটা দোকান ভেঙেছে। আপনার ও দিকে?’’

কথা বলতে বলতে বারান্দায় এলেন প্রিয়তোষ। মাটি-ভেজা গন্ধ ছড়িয়ে বৃষ্টিটা যেন ধুয়ে দিচ্ছে পৃথিবীকে। হালকা বৃষ্টির ছাঁট এসে ঝাপটা মারল। ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ভয়ে এ রকম বৃষ্টিতে কখনওই সুতপা বারান্দায় দাঁড়াতে দিত না। প্রিয়তোষ অন্য হাতটা বাড়িয়ে দিলেন বৃষ্টির জলে। সেই সঙ্গে বুক ভরে ভেজা মাটির গন্ধে শ্বাস নিয়ে বললেন, ‘‘কী আশ্চর্য দেখো, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি তোমার ওখানে বৃষ্টি হচ্ছে কি না, অথচ তুমি কোথায় থাকো, সেটাই জিজ্ঞেস করা হয়নি।’’

‘‘কাটোয়ায়। মানে ঠিক প্রপার কাটোয়ায় নয়, একটু ভেতরের দিকে। কাটোয়া থেকে বাসে আধ ঘণ্টা লাগে।’’

একটু চুপ করে থেকে প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘বাহ্‌!’’

‘‘আপনি নিশ্চয়ই কলকাতায় থাকেন?’’

‘‘কী করে বুঝলে?’’

‘‘আপনার কথা শুনে আর আপনার গল্প পড়ে। আপনার গল্পটা তো কলকাতার। একটা বৃষ্টির দিনে ছেলেটা আর মেয়েটা ছাতার তলায় অপেক্ষা করছে চার নম্বর রুটের সেই ফাঁকা ট্রামটা আসার জন্য। ট্রামটা আর আসছেই না। ছাতার তলায় ওরা স্বপ্ন বুনছে। ট্রাম তো কলকাতা ছাড়া কোথাও নেই।’’

প্রিয়তোষ মুগ্ধ হয়ে পুরোটা শোনার পর বললেন, ‘‘সেটা হয়তো ঘটনাচক্রে ঠিকই। তবে এক জন লেখক তো যে কোনও জায়গা নিয়েই গল্প লিখতে পারেন।’’

‘‘তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু আমার মনে হয়েছে আপনি কলকাতায় থাকেন।’’

গলাটা অল্প পরিষ্কার করে নিয়ে প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘এখন যেখানে থাকি, পিন নম্বর ধরলে সেটাও কলকাতা। কিন্তু এটাকে আমার ঠিক কলকাতা মনে হয় না। কলকাতা শহরটার একটা নিজস্ব চরিত্র আছে। ওই তুমি যেমন বললে ট্রাম। ট্রামের ঘণ্টির আওয়াজ। এ সব নিয়ে কলকাতা শহরের একটা নিজস্ব কোলাহল আছে। একটা গন্ধ আছে। আমি এখন যেখানে থাকি, সেখানে সেগুলো অন্য রকম।’’

‘‘খুব সুন্দর বললেন তো! কী রকম শব্দ?’’

‘‘একটা শহর গড়ে ওঠার শব্দ। পাইলিং-এর আওয়াজ, ক্রেনের আওয়াজ। আচ্ছা কস্তুরী, বৃষ্টির আগে তুমি ব্যাং ডাকার আওয়াজ শুনতে পাও? নিশুতি রাতে ঝিঁঝির ডাক? সেই ডাকগুলো তোমার লেখার আবহ তৈরি করে, কস্তুরী?’’

‘‘শুনি। কিন্তু আজ আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আওয়াজগুলো শুধু শুনেছি, অনুভব করিনি। আপনার কাছে প্রতিটা মুহূর্তে আমি শিখছি। জানেন, কাল রাতে যখন লিখতে লিখতে এক জায়গায় আটকে গিয়েছিলাম, বাইরে ঝড় উঠেছিল। ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়েছিল। হ্যারিকেনের আলোয় লিখছিলাম। বাইরে শোঁ-শোঁ ঝড় হচ্ছিল। জানলার পাল্লাদু’টো দুলছিল। আমার খাতার সাদা পাতার ওপর হ্যারিকেনের কাঁপা আলো কী সুন্দর একটা হলদেটে আবহ তৈরি করেছিল। অথচ আমি আটকেই থাকলাম। আর লিখতে পারলাম না। হ্যারিকেন নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম।’’

বর্ণনা শুনতে শুনতে প্রিয়তোষ নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলেন। কস্তুরীর সম্পর্কে জানার একটা আগ্রহ ছিলই। বৃষ্টির ছাঁট মাখতে মাখতে আজ আর প্রশ্নগুলো মনের মধ্যে আটকে রাখলেন না প্রিয়তোষ।

‘‘তুমি এমনিতে কী করো কস্তুরী?’’

‘‘ একটা স্কুলে পড়াই। একাই বাড়ি ভাড়া করে থাকি।’’

‘‘একা?’’

‘‘স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে এখানেই স্কুলটা জুটল। তবে জায়গাটা বেশ ভাল। শান্তিপূর্ণ। প্রথম প্রথম ভাবতাম মিউচুয়াল ট্রান্সফার নিয়ে বাড়ির কাছাকাছি চলে যাব। অনেক চেষ্টা করেছি, কাউকে পাইনি। এখন এই জায়গাটাকেই খুব ভালবেসে ফেলেছি। স্কুল, আর সন্ধেবেলায় কয়েক জন ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে সারা সপ্তাহটা কেটে যায়। ওই রাতের দিকেই একটু লেখালিখির চেষ্টা করি। আপনি কখন লেখেন?’’

প্রিয়তোষ চুপ করলেন। লেখালিখির জন্য সারা দিন অখণ্ড সময়। যে গল্পটা কাগজে বেরিয়েছে, সেটা নিছক খেয়ালের বশে লিখেছিলেন, খেয়ালের বশেই খবরের কাগজে পাঠিয়েছিলেন। গল্পটা ছেপে বেরোবার পর প্রবল বাসনা হয়েছিল, আরও অনেক গল্প লিখবেন, কিন্তু লিখে উঠতে পারছেন কই? সব গল্পই আধ পাতা এক পাতার পর আটকে যাচ্ছে। হয়তো লেখার জন্য কস্তুরীর মতো দুর্দান্ত পরিবেশ নেই। প্রিয়তোষের দিক থেকে সাড়া না পেয়ে কস্তুরী মৃদু গলায় বলল, ‘‘হ্যালো।’’

‘‘হ্যালো, হ্যাঁ… লাইনটা যে মাঝে মাঝে কী হয়! কী যেন জিজ্ঞেস করছিলে?’’

‘‘নতুন কিছু লিখছেন?’’

‘‘লিখছি একটা, কিন্তু শেষ হয়নি এখনও।’’

‘‘বাহ্‌! কোথায় বেরোবে, বলবেন। পড়ব।’’

‘‘তুমি কাল রাতে কী লিখছিলে?’’

কস্তুরী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, ‘‘লিখছিলাম। কিন্তু ওই যে বললাম, আটকে গেলাম। সাদা পাতার ওপর হ্যারিকেনের আলোটা মায়াবী হয়ে গেল, আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম।’’

একই অবস্থা। অথচ কস্তুরী কী অনায়াসে বলল। প্রিয়তোষ বলতে পারলেন না। একমাত্র গুণমুগ্ধ পাঠিকাকে কি বলা যায়, নিজের কলম থমকে আছে? তীব্র বাসনা নিয়ে আরও গল্প লেখার চেষ্টা করেও কিছুতেই লেখাটাকে শেষ করতে পারছেন না। উদাস গলায় বললেন, ‘‘রাইটার্স ব্লক!’’

কস্তুরী লজ্জা পেল, ‘‘কী যে বলেন! যার একটাও লেখা কোথাও বেরোল না, সে আবার রাইটার? তার আবার ব্লক!’’

‘‘ছেপে বের হওয়া তো পরের কথা, কস্তুরী। আগে তো লেখাটা শেষ হওয়া দরকার। আটকে যাওয়া নিয়ে ভেবো না। আমার কী হয় জানো? একটা প্লট ভেবে হয়তো লিখতে আরম্ভ করলাম। তার পর চরিত্ররা এক সময় কলমের দখল নিয়ে নিল। সেখানেই আমি আটকে গেলাম। চরিত্ররা গল্পটাকে টেনে নিয়ে গিয়ে শেষ করে দিল। যেন লেখা শেষ করার দায় আমার নয়, ওদের।’’ কথাটা বলে প্রিয়তোষ নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেলেন। একটা মাত্র প্রকাশিত গল্পের মালিক হয়ে কেমন প্রাজ্ঞ লেখকের মতো কথা বললেন!

ক্রমশ

অন্য বিষয়গুলি:

Novel Series অচেনা স্রোত
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy