Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৮

অচেনা স্রোত

আজ ঘুমটা বেশ ভোরে ভেঙে গিয়েছে প্রিয়তোষের। ঘুম ভাঙার পর বিছানায় কিছু ক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে উঠে পড়েছেন। শীতটা ভালই পড়তে শুরু করেছে।

ছবি: পিয়ালী বালা

ছবি: পিয়ালী বালা

কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৭:২০
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: রৌনক হৃষিতার কাছে স্বীকার করে, সে তার মা’কে বোঝাতে চেয়েছিল সে ভাল আছে, তার জীবনে একটা সম্পর্কের সূচনা হচ্ছে। হৃষিতা রৌনককে বোঝায়, রৌনক আসলে নিজেকে নিয়ে বিভ্রান্ত। আজকের পর সে তাদের মেলামেশাটা কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখতে বলে। বাজার থেকে ফিরে মলয় সেবন্তীকে জানায়, সোসাইটি কমিটির দু’পক্ষই এখন নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নিতে চায়, কারণ এর মধ্যে আরও ঘটনা ঘটে গিয়েছে।

দ্রুত চুমুকে ডিশের চা শেষ করে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে মলয় আবার শুরু করল, ‘‘তবে তোমার জিজুবাবু, মাস্টারপিস একখানা। দশটা তীর্থময় গাঙ্গুলিকে ডান পকেটে ঢুকিয়ে বাঁ পকেট থেকে বের করে দশ পার্সেন্ট প্রফিটে বিক্রি করবে। যা একখানা দিয়েছে না ঝিঙ্কু কেস!’’

‘‘কী দিয়েছে?’’ সেবন্তী অধৈর্য হয়ে বলল, ‘‘একটু খোলসা করে বলো না!’’

‘‘সিসিটিভির একটা ফুটেজ দেখিয়েছে। চিন্তা করে দেখো, সিকিয়োরিটির লোকগুলো ওদের, কিন্তু সিসিটিভির ফুটেজ নীহারদার পকেটে!’’

‘‘তুমি যে বলেছিলে সিসিটিভি চালু হয়নি! তাই নিয়ে মিটিং হবে!’’

‘‘হয়নি তো। দু’টো রবিবার এ-টাওয়ারে নতুন সফটওয়্যারটা ট্রায়ালে চালিয়ে দেখা হচ্ছিল। তার মধ্যেই যে নীহারদা ছিপ ফেলে কেউটে ধরে নেবে, কেউ ভেবেছিল? প্রদীপ বর্মন আর তীর্থময় গাঙ্গুলি কী করবে? ঘুঘু দেখেছে, ঘুলঘুলি তো দেখেনি। সিন্ডিকেটের ছেলেগুলোকে কেমন ভেতরে ভেতরে হাত করে নিয়েছে দেখো। হুঁ হুঁ বাবা শিবাজি, এ পানিপথ নয়।’’

‘‘আহ্‌! আবার শিবাজি আর পানিপথ? পানিপথের প্রথম যুদ্ধ হয়েছিল বাবরের সঙ্গে ইব্রাহিম লোদির। এই জন্য মেয়েটা হিস্ট্রিতে ফার্স্ট টার্মে ফেল করেছে।’’

‘‘এই যুদ্ধে তোমার জিজুবাবু বাবরকেও চার গোল দিত।’’

‘‘উফ! সোজা করে টু দ্য পয়েন্ট বলো না, সিসিটিভির ফুটেজে কী দেখেছে?’’

মলয় নাটকীয়ভাবে বলতে শুরু করল, ‘‘ঢিসক্যাও ঢিসক্যাও। চারটে ফুটেজ। দু’টোই পর পর দু’টো রবিবারের। ফুটেজ নাম্বার ওয়ান, টাওয়ার এ। সময় সকাল আটটা পাঁচ। টপমোস্ট ফ্লোরে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা। সিকিয়োরিটির একটা ছেলে গিয়ে ছাদের দরজার চাবিটা খুলে দিল। ফুটেজ নাম্বার টু, সময় সকাল দশটা দশ। চারিদিক শুনশান। লিফটের দরজাটা খুলল। একটা মেয়ে নেমে দৌড়ে ছাদে চলে গেল। ফুটেজ নাম্বার থ্রি অ্যান্ড ফোর, পরের রবিবারও একই কেস।’’

সেবন্তী মগ্ন গলায় বলল, ‘‘প্রত্যেক রবিবার? একই সময়? কী রকম ভৌতিক মনে হচ্ছে না!’’

‘‘কিছুই ভৌতিক নয়। ভূত ইজ মাই পুত অ্যান্ড পেতনি ইজ মাই ঝি। মেয়েটা কে, শুনলে আশ্চর্য হয়ে যাবে।’’

একটু ভেবে সেবন্তী বলল, ‘‘কে? ওই ডাক্তারের মেয়েটা? যে গিটার শেখার নাম করে প্রেম করতে যায়?’’

‘‘না ডার্লিং। মেয়েটা হচ্ছে তীর্থময় গাঙ্গুলির মেয়ে। এক রবিবারে আবার ওদের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান ছিল। বাড়িতে লোক গিজগিজ, কেটারার ডেকে মোচ্ছব চলছে, মেয়েটা তাও গিয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, সিকিয়োরিটি কেন ছাদের দরজার তালা খুলে দেয়? তীর্থময় গাঙ্গুলি বি-টাওয়ারে থাকে। তার মেয়ে প্রতি রবিবার কেন এ-টাওয়ারের ছাদে যায়? তা হলে আমাদের আর সিকিয়োরিটি কী?’’

‘‘তোমাকে এত সব কে বলল?’’

‘‘আছে আছে, বলার লোক আছে। এ সব কথা কি চাপা থাকে? যে বলেছে সে এটাও বলেছে, সব প্রশ্নের উত্তর নীহারদার কাছে আছে। সাধে কি আর বলছি, বাবরকেও চার গোল দেবে! জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি, আবার ছিপটাকে ফেলবে। আরও অনেক কিছু ধরা পড়বে। এখন শুধু ফাতনার তলায় বঁড়শিটাকে একটু একটু করে খেলাচ্ছে।’’

‘‘ও মা! ওইটুকু মেয়ে!’’ সেবন্তী গালে হাত দিয়ে বলল, ‘‘এত সব কাণ্ড হয়েছে? দিদিভাইটা কেমন যেন পালটে গিয়েছে। আমাকে কিচ্ছু বলেনি।’’

মলয় সান্ত্বনা দিল, ‘‘দিদিভাই বলেনি তো কী হয়েছে? আমি তো আছি। যাই, একটু ঘুরে আসি। সমীরণের কাছে পলিগনের ইন্টার্নাল অ্যাংগলগুলো একটু ঝালিয়ে, আর লেটেস্ট আপডেটটা নিয়ে আসি। ছেলেটার অঙ্কের মাথাটা একেবারে পাক্কা।’’

এ বার আর সেবন্তী আপত্তি করল না। শুধু মলয় চটিটা গলানোর পর ওর হাতে এঁচোড়টা ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘‘আসার সময় লিটনের কাছ থেকে এটা কাটিয়ে নিয়ে এসো সোনা। বেলা হয়েছে, এখন আর ও রবিবারের ভিড়ের বাহানা দিতে পারবে না।’’

১৯

মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাড়িটা সময়মত শেষ হয়নি। ও দিকে সুতপার ছ’মাসের ভিসাও শেষ হতে চলেছে। এ বার দেশে ফেরার পালা। সুতপার অবশ্য দেশে ফিরতে আরও মাসখানেক দেরি আছে। ওর এক মাসতুতো বোন লন্ডনে মেয়ের কাছে আছে এখন। লন্ডন দেখার শখ সুতপার বহু দিনের। এই সুযোগে আমেরিকা থেকে ফেরার পথে লন্ডনে কয়েক সপ্তাহ কাটিয়ে ফিরবে। তবে যেমন ভাবা হয়েছিল, তার মধ্যেও মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাড়িটা শেষ হবে বলে মনে হয় না। তাই বিদেশ থেকে ফিরে নতুন বাড়ি ওঠার পরিকল্পনা আপাতত বাতিল করতে হয়েছে। জানুয়ারির গোড়ায় সুতপাকে ফিরে কিছু দিনের
জন্য এখানেই থাকতে হবে। গত সপ্তাহে সব পরিকল্পনা পিকলু নতুন করে সাজিয়ে দিয়েছে। প্রিয়তোষের আমেরিকা যাওয়ার টিকিটটা সস্তায় পেয়ে কেটে ফেলেছে। এ বার ভিসার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। জীবনে প্রথম বার বিদেশে যাবেন। অথচ তা নিয়ে নিজের ভেতর কোনও উত্তেজনা টের পান না প্রিয়তোষ। বরং জীবনের একটা খণ্ডাংশ এখানে কাটিয়ে প্রাপ্তি কী হল, রাতে শুয়ে শুয়ে এখন প্রায়ই সে সব ভাবেন। কয়েকটা শেষ না-হওয়া গল্পের মতোই এই জায়গায় কাটানো কয়েকটা মাস স্মৃতির মণিকোঠায় বিচিত্র আঁকিবুকির আলপনা হয়ে থেকে যাবে।

আজ ঘুমটা বেশ ভোরে ভেঙে গিয়েছে প্রিয়তোষের। ঘুম ভাঙার পর বিছানায় কিছু ক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে উঠে পড়েছেন। শীতটা ভালই পড়তে শুরু করেছে। এখন টি-ব্যাগটা আর একটু বেশি ক্ষণ ডুবিয়ে রেখে চায়ের লিকারটা একটু কড়া খেতে ভাল লাগে। কড়া লিকারের চা নিয়ে বারান্দায় আরামকেদারায় এসে মিঠে রোদে বসলেন প্রিয়তোষ। হঠাৎ খেয়াল হল, আজ রবিবার। রবিবার মানে এখন শুধু আর একটা অলস অর্থহীন অপেক্ষার দিন। প্রিয়তোষ উঠে মোবাইল ফোনটা নিয়ে এলেন। মাঝে মাঝেই চোখ পড়ে যাচ্ছে ফোনটার স্ক্রিনে। নিথর নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ফোনটা। আজ ফোনটা বেজে ওঠার জন্য সারা সপ্তাহের প্রতীক্ষা। কয়েক সপ্তাহ আগেও নিয়ম করে এই সময়ে বেজে উঠত ফোনটা। এখন শুধুই প্রত্যাশা, প্রতীক্ষা। এই প্রতীক্ষার অবসান আর কোনও দিন হবে কি? বুক ঠেলে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল প্রিয়তোষের।

কস্তুরী আর ফোন করে না। তবে ওর নানান সময়ে বলা কথাগুলো থেকে থেকে কানের কাছে বাজে। মেয়েটা বলেছিল, মনখারাপ লাগলে বা ফাঁকা লাগলে রেডিয়ো শুনতে। মোবাইলের বাক্সটার ভেতর ইয়ারফোনটা পড়েই ছিল। প্রিয়তোষ সকালবেলাগুলোয় বারান্দায় বসে এফএম শোনার অভ্যাস করে ফেলেছেন। দিব্যি সময় কেটে যায়। আজকেও ছটফটে মনটাকে শান্ত করতে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে চ্যানেল পালটাতে পালটাতে হঠাৎ একটা এফএম স্টেশনে দেবব্রত বিশ্বাসের ভরাট গলাটা পেয়ে গেলেন।

তখন পাতায় পাতায় বিন্দু বিন্দু ঝরে জল,

শ্যামল বনান্তভূমি করে ছলোছল্।

ভেবেছিলেন মনটা ঘুরিয়ে নেবেন, অথচ গানটা শুনতে শুনতে প্রিয়তোষ আরও আনমনা হয়ে পড়লেন। কিছু সম্পর্কের সুতো অচেনা স্রোতে ভেসে এসে আচমকাই শরীরে জড়িয়ে যায়, মনটাকে একটু একটু করে হাজার পাকে বেঁধে ফেলে। তার পর নিঃসাড়ে কখন যেন সেই সুতোটা গ্রন্থি ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়! মনটা কিন্তু আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়েই থাকে কোনও অজানার জন্য।

শেষ ছিল একটা এসএমএস। কয়েক সপ্তাহ আগে এক রবিবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো এসএমএসটা প্রিয়তোষ পেয়েছিলেন রেস্তরাঁতে। উত্তর দেওয়া হয়নি। ঠিক করেছিলেন, ধন্যবাদটা ফিরতি এসএমএসে না জানিয়ে সন্ধেবেলায় নিরিবিলি বারান্দায় বসে নিজের গলাতেই দেবেন। কিন্তু সেই রাত পর্যন্ত কস্তুরীর ফোনটা শুধু সুইচড অফ’ই পেয়েছেন। তার পর আরও কয়েকটা রবিবার পেরিয়ে গিয়েছে। কস্তুরীর ফোন পাননি প্রিয়তোষ। প্রথম প্রথম বেশ কয়েক বার ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে, দিনের বিভিন্ন সময়ে। কখনও সুইচড অফ পেয়েছেন, কখনও ফোন বেজে গিয়েছে, কস্তুরী ধরেনি। প্রিয়তোষ ভেবেছেন স্কুলের ক্লাসে আছে কস্তুরী, বা কোনও কারণে ব্যস্ত। মিসড কল দেখে নিজেই ঠিক ফোন করবে। কিন্তু সেই ফোন আর আসেনি। প্রিয়তোষ এর পর উদ্বিগ্ন হয়েছেন, মেয়েটার কিছু হল কি না ভেবে। ফোন চুরি, শরীরখারাপ, কিডন্যাপ— ভাবনার লাগামগুলো কোনও অশুভ সম্ভবনায় গিয়ে আটকে থাকেনি। তার পর হঠাৎ এক দিন মনে হয়েছিল, কস্তুরী কি ইচ্ছে করেই আর ফোন ধরছে না?

প্রিয়তোষের আনমনা ভাব কাটিয়ে দিয়ে এফএম-এ দেবব্রত বিশ্বাস গানের প্রথম লাইনগুলোয় ফিরে এলেন,

এসেছিলে তবু আস নাই জানায়ে গেলে সমুখের পথ দিয়ে পলাতকা ছায়া ফেলে॥

তোমার সে উদাসীনতা সত্য কিনা জানি না সে, চঞ্চল চরণ গেল ঘাসে ঘাসে বেদনা মেলে॥

কস্তুরী কি ইচ্ছে করে ফোন ধরছে না? প্রিয়তোষ এই সন্দেহ নিরসনের একটা খুব সহজ উপায় ভেবেছিলেন। অন্য একটা ফোন থেকে কস্তুরীকে ফোন করা। যে নম্বর থেকে সিএলআই-তে ফুটে উঠবে না প্রিয়তোষের নাম। কিন্তু সেটাও সম্বরণ করে নিয়েছিলেন। মেয়েটা যে কোনও কারণেই হয়তো কথা বলতে চায় না, সেটাকে মেনে নিয়েছিলেন। আর ফোন করবেন না, মনকে এই কঠিন অনুশাসন দিয়েছিলেন। কিন্তু মনের মধ্যে অবিরত একটাই প্রশ্নটা খচখচ করেছে, কেন? কেন? কী এমন হয়ে গিয়েছে?

দেবব্রত বিশ্বাসের গানটার পর বিজ্ঞাপন শুরু হয়েছে। কান থেকে ইয়ারফোন খুলে নিয়ে মোবাইলটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বারান্দায় বসে রইলেন প্রিয়তোষ। কস্তুরীর কথা বড্ড মনে পড়ছে। এলোমেলো চোখে চেয়ে রইলেন বাইরের দিকে। নীচে সবুজ চিনে ঘাসের গালিচার মধ্যে টলটলে নীল সুইমিং পুল। কেয়ারি-করা গাছগাছালি। পাঁচিল ঘেঁষে ওয়াকওয়ে। হঠাৎ চোখে পড়ল, দূরে একটা মেয়ে। ঘন নীল একটা জাম্পস্যুট পরে ওয়াকওয়ে ধরে একা একা জগিং করছে। জগিং করতে করতে আর একটু কাছে আসতেই চিনতে পারলেন। হৃষিতা। হৃষিতাকে দেখলেই এখনও একটা আত্মগ্লানিতে ভোগেন প্রিয়তোষ। সে দিন যে কী হয়েছিল! ক্ষমা অবশ্য চেয়েছিলেন রেস্তরাঁতে। তবু ওকে দেখলে সেই পুরনো বিচ্ছিরি অস্বস্তিটা ফিরে আসে।

প্রিয়তোষের খেয়াল হল, আজ তো রবিবার! আজ তো মেয়েটার গিটার শিখতে যাওয়ার দিন। রবিবার তো ও জগিং করে না! মেয়েটা কি তা হলে গিটার শেখা ছেড়ে দিল? প্রিয়তোষ আবার ভাবতে বসলেন। কস্তুরী থেকে হৃষিতা— তিনি কি সব জায়গায় অজান্তে শুধু ভুলই করে চলেছেন? হৃষিতার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। অজান্তে কস্তুরীর সঙ্গে কোনও ভুল করে থাকলে, ওর কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

ভেতরটা আবার কস্তুরীর জন্য ছটফট করে উঠল। মনের কড়া অনুশাসনটাকে অবজ্ঞা করে আর এক বার মোবাইলে চেষ্টা না করে থাকতে পারলেন না। মনকে বোঝালেন, এই শেষ বার। আজ কস্তুরী ফোন না ধরলে আর কোনও দিন চেষ্টা করবেন না। বুকের মধ্যে একটা মৃদু কাঁপুনি নিয়ে শেষ পর্যন্ত ফোন করলেন। আজও ফোনটা বেজে গেল। কেউ ধরল না। ফোন নামিয়ে রেখে, অনেক ভেবে, শেষ পর্যন্ত ফোন করলেন ঈপ্সিতাকে।

রবিবার সকালে সেজমামার আচমকা ফোন পেয়ে যথারীতি বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠল ঈপ্সিতার। ধড়ফড় করে উঠে ফোন ধরেই গলা দিয়ে বেরিয়ে গেল, ‘‘কী হয়েছে সেজমামা? বুকে ব্যথা? শরীর ঠিক আছে তো?’’

প্রিয়তোষ অপরাধী গলা করে বললেন, ‘‘ঘুম থেকে উঠেছিস?’’

‘‘উফ! সেজমামা, তুমি রোববার রোববার মাঝে মাঝে এমন অ্যালার্ম ক্লক হয়ে যাও না!’’ তার পর একটু দম নিয়ে বলল, ‘‘বলো, আজকেও কি তোমার কোনও গল্প বেরিয়েছে কাগজে?’’

‘‘না।’’

‘‘তা হলে?’’

ইতস্তত করে প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘আমার সেই যে গল্পটা বেরিয়েছিল, ‘অপেক্ষা’, সে দিন তুই আমাকে বলেছিলি, এক পাঠিকা আমাকে ফোন করবে। তোর ফেসবুকের বন্ধু। তোর কাছে আমার ফোন নম্বর চেয়েছিল।’’

ঈপ্সিতার আবছা মনে পড়ল, ‘‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। কাকে একটা যেন তোমার ফোন নম্বরটা দিয়েছিলাম। বুঝেছি, সে তোমাকে আর ফোন করেনি, তাই তো? আর তুমি ওর ফোনের অপেক্ষায় হা-পিত্যেশ করে বসে আছ। আগে বলো, তোমার মাধুরী দীক্ষিত জানে এই সব ইন্টু-মিন্টু কথা?’’

ঈপ্সিতাকে কি সব বলা যায়? অস্বস্তিটা আরও বাড়তে লাগল। আমতা আমতা গলায় প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘না, ফোন করেছিল। দু’-এক বার কথা হয়েছে।’’

‘‘তাই! আরিব্বাস, মাধুরী দীক্ষিত সিনে নেই, বিন্দাস আছ তুমি। তলে তলে কী কেস বলো তো? মেয়েটার নাম কী?’’

নাম মনে না পড়ার একটু অভিনয় করে প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘যত দূর মনে পড়ছে, কস্তুরী।’’

ঈপ্সিতা ভাবার চেষ্টা করল, ‘‘কস্তুরী… কস্তুরী… ঠিক মনে পড়ছে না।’’

প্রিয়তোষ অবাক হলেন, ‘‘সে কী রে! তোর বন্ধু তো। তবে তুই বলেছিলি, ফেসবুকে ওর নাম মৃগনাভি।’’

‘‘ওরে বাবা! তুমি তাও মনে রেখেছ? ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড। কুল সেজমামা, কুল। ও রকম অনেক আছে। অনেকে নিজের নামটা গোপন রাখে। অদ্ভুত অদ্ভুত সব নাম দেয়। জানো, আমার এক পিস ফেসবুক-বন্ধু ছিল, তার নাম গোবেচারা গোবর্ধন। সে কিন্তু মোটেই গোবেচারা নয়। যন্তর জিনিস একটা। মাঝে মাঝে যা-সব ইনবক্স করত, সে তোমাকে বলা যাবে না। সময় পেলেই এদের ঝেঁটিয়ে আনফ্রেন্ড করি। তা তার নাম কস্তুরী, তোমাকে বলেছিল বুঝি? সেটা আবার আসল নাম তো?’’

ক্রমশ

অন্য বিষয়গুলি:

Novel Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy