ছবি: পিয়ালী বালা
পূর্বানুবৃত্তি: ঋদ্ধিমা আর অভিমন্যু রেস্তরাঁয় ঢুকে কফি অর্ডার দেয়। অভিমন্যু খেয়াল করে, সে মানিব্যাগ আনেনি। টুইটিকে না পেয়ে মা’কে ফোন করে। ঈপ্সিতা ও তার দুই বন্ধুর সঙ্গে প্রিয়তোষও রেস্তরাঁয় আসেন। দেখতে পান, রৌনক আর হৃষিতাও একটা টেবিলে বসে কথা বলছে। ঈপ্সিতারা কেকের বাক্স বার করে, পেন উপহার দেয় প্রিয়তোষকে। প্রিয়তোষ দেখেন, কেকের উপরে ওঁর ছোটগল্প ‘অপেক্ষা’র ছবিটা আঁকা।
দিঠি ঈপ্সিতার মোবাইলটা তুলে কেকের দিকে তাক করল। ঈপ্সিতা আর স্নিগ্ধা কেকের ওপর কয়েকটা মোমবাতি বসিয়ে জ্বালাল। প্রিয়তোষের হাতে ছুরি তুলে দিয়ে বলল, ‘‘সেজমামা তুম জিয়ো হাজারো সাল, সাল কে দিন হো হাজার! এ বার মোমবাতিটা নিভিয়ে কেকটা কাটো তো দেখি!’’
ইপ্সিতার ভাষা কানে ঢুকছে না প্রিয়তোষের। এই ছবিটা, যেটা বুকের মধ্যে সযত্নে রেখেছেন, সেটা ছুরি দিয়ে কাটতে হবে? হাতটা জগদ্দল পাথরের মত ভারী মনে হল। ‘‘কাম অন সেজমামা, উফ! এত লজ্জা করো না!’’ ঈপ্সিতার তাড়ায় একটা ঘোরের মধ্যে মোমবাতি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে ‘অপেক্ষা’ শব্দটার পাশে ছুরিটা বসিয়ে দিলেন প্রিয়তোষ।
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ... হ্যাপি বার্থডে টু ইউ... হ্যাপি বার্থডে টু আওয়ার সুইট সেজমামা... হ্যাপি বার্থডে টু ইউ... সকলে হাততালি দিয়ে উঠল।
ঈপ্সিতা হ্যাপি বার্থডে’র সুরে ভাষাটা বদলে, হিন্দিতে গাইতে থাকল, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ জি, উমর ছুপানে কা নাম হ্যায় জিন্দেগি, মেরি আইডিয়া আপকো ক্যায়সা লগা জি, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ জি।
আবার হাততালি। প্রিয়তোষের মনে হল, হাততালি পাশের টেবিল থেকেও আসছে। মুখটা সে দিকে ঘোরাতেই দেখলেন, রৌনক আর হৃষিতা। প্রিয়তোষের সঙ্গে চোখাচোখি হতে রৌনক হাতটা উঁচু করে হেসে বলে উঠল, ‘‘হ্যাপি বার্থডে স্যর।’’
‘‘থ্যাংক ইউ।’’ যথাসম্ভব লজ্জাটাকে ঢেকে রেখে কোনও রকমে বললেন প্রিয়তোষ। দিঠি সেই থেকে ছবি তুলেই যাচ্ছে। প্রিয়তোষের মনে হল, ভিডিয়ো রেকর্ডিং করছে বোধহয়। ঈপ্সিতা কানের কাছে নিচু স্বরে বলল, ‘‘চেনো নাকি ওদের?’’
‘‘হুম। আমাদের কমপ্লেক্সেই থাকে।’’ আরও নিচু গলায় উত্তর দিলেন প্রিয়তোষ।
‘‘হ্যান্ডু ছেলে, আগে বলবে তো! ট্রাই মারতে পারতাম! আচ্ছা দাঁড়াও তো…’ বলে ঈপ্সিতা সটান হাজির হল ওদের টেবিলের সামনে।
‘‘হাই, আমি ঈপ্সিতা। প্রিয়তোষ চ্যাটার্জ্জির ভাগনি। অ্যাকচুয়ালি আমরা মামার জন্মদিনটা বিলেটেড সেলিব্রেট করছি। সানডে ছাড়া তো টাইমই হয় না। প্লিজ জয়েন আস ফর দ্য কেক...’’
প্রিয়তোষ কান খাড়া করে একমনে শুনছিলেন ঈপ্সিতার কথা। মেয়েটা অপভাষায় বল্গাহীন বকবক-করা পাগলি। কিন্তু এক বার যেটা মনে করে, সেটা করেই ছাড়ে। শেষ পর্যন্ত রৌনক আর হৃষিতাকে নিয়েই এল এই টেবিলে।
কেকের ছবিটা দেখে হৃষিতা বলল, ‘‘এই ছবিটা... অপেক্ষা... কোথায় যেন দেখেছি…’’
ঈপ্সিতা লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে চোখ বড় করে বলল, ‘‘আমার সেজমামা হচ্ছে এক জন রাইটার। এই তো কয়েক মাস আগে এক রোববারে এই গল্পটা বেরিয়েছিল কাগজে। আমরা আজ সেটাও সেলিব্রেট করছি।’’
হৃষিতা মৃদু তারিফের গলায় বলল, ‘‘জানতাম না আপনি রাইটার।’’
ঈপ্সিতা কেক কেটে ওদের দিতে দিতে বলল, ‘‘সেজমামার নেক্সট জন্মদিনে আমরা বই হওয়া সেলিব্রেট করব।’’ লেখালিখি নিয়ে কথাবার্তায় প্রিয়তোষ এখন ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েন। হাজার চেষ্টা করেও আর একটা গল্প লিখে উঠতে পারেননি। তা ছাড়া প্রিয়তোষ একটা সুযোগ খুঁজছিলেন। কথার ফাঁকেই বললেন, ‘‘সেই এক দিন আপনার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে যা হয়েছিল, সে ব্যাপারে আমি কিন্তু সত্যিই দুঃখিত। আমি আসলে...’’
রৌনক হাতটা অল্প তুলে বলল, ‘‘জানি আমরা। আপনার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম। আপনি তো কিছু বলেননি। তা ছাড়া মিস্টার কাঞ্জিলাল অনেক বারই ও রকম করেছেন। কিন্তু আজ ও সব থাক। দিনটা এনজয় করুন। থ্যাংক ইউ ফর দ্য কেক, ঈপ্সিতা। তোমার হিন্দি বার্থডে উইশটা কিন্তু ইউনিক।’’ ওরা ওদের টেবিলে ফিরে গেল।
টুং...
প্রিয়তোষের মোবাইলে এসএমএস আসার আওয়াজ হল। প্রেরকের নাম দেখে অবাক হলেন প্রিয়তোষ। কস্তুরী। লিখেছে, জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা আর প্রণাম জানাই। খুব ভাল থাকবেন।
প্রিয়তোষ খুব অবাক হলেন। ঠিক এই সময়েই কস্তুরী জানল কী করে? ভাবতে ভাবতেই অবশ্য উত্তরটা পেয়ে গেলেন। নিশ্চয়ই ফেসবুক। কস্তুরী তো আসলে ঈপ্সিতারই ফেসবুকের বন্ধু। আর কস্তুরীর তো রবিবারেই সব কিছু দেখার সময়।
‘‘তুই কি ফেসবুকে আমার জন্মদিনটা দিয়েছিলি?’’
ঈপ্সিতা একমুখ হেসে বলল, ‘‘বাহ্! তুমি এক বছর বয়স বাড়িয়ে দিব্যি স্মার্ট হয়ে উঠছ দেখছি! অ্যাকচুয়ালি ফেসবুকে পোস্টাইনি। তুমি যখন কেক কাটছিলে, তখন ফেসবুকে লাইভ ছিলে।’’
‘‘মানে?’’
‘‘ওই লাইভ টেলিকাস্টের মতো। তোমার কেক কাটাটা আমার ওয়ালে মামি কিন্তু লাইভ দেখেছে। শুধু তোমার মাধুরী দীক্ষিতই নয়, বহরমপুর, মুম্বই, নাগপুর, নয়ডা থেকে যারা যারা আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে, সবাই লাইভ দেখেছে। ফ্যামিলির সবাইকে বলে রেখেছিলাম— রবিবার, ছুটির দিন এই সময়ে আমার ওয়ালটা খেয়াল রাখতে। ডবল সেলিব্রেশন অন ফেসবুক লাইভ। দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমাকে কত জন লাইভ উইশ করছে। তোমার এবার একটা থ্যাংক ইউ স্পিচ দেওয়া উচিত। তবে তার আগে একটু মেক-আপ দরকার।’
‘অপেক্ষা’ ছবিটার ওপর থেকে ছাতার তলায় সেই ছেলেটা আর মেয়েটার ছবিটা মুছে খানিকটা ক্রিম তুলে প্রিয়তোষের দু’গালে লাগিয়ে ঈপ্সিতা ওর মোবাইলটা প্রিয়তোষের মুখের সামনে ধরল। প্রিয়তোষ দেখলেন, মোবাইলের স্ক্রিনে ক্রিম-মাখা ওঁর বিচিত্র মুখ। সেই মুখের ওপর কিছু লেখা ভেসে বেড়াচ্ছে। অপ্রস্তুত গলায় বললেন, ‘‘কী বলব?’’
‘‘আরে বাবা, তুমি দেবের মত ‘হাই বন্ধুরা’ বলবে, না অমিতাভ বচ্চনের মত ‘দেবীয়ো অউর সজ্জনো বলবে, না কি মোদীজির মত ‘মিত্রোঁওও’ বলবে, সেটা আমি কী জানি। বলো, কিছু বলো। সবাই তোমাকে শুনছে। নাও, ফোনটা নিজে মুখের সামনে ধরে কিছু বাণী দাও, তত ক্ষণে আমরা লাঞ্চটা অর্ডার করে ফেলি। বড্ড খিদে পেয়েছে।’’
১৭
হেলমেট পরে রৌনকের পিছনে বাইকে বসতে বসতে হৃষিতা বলল, ‘‘আচ্ছা, আমরা কোথায় যাচ্ছি? নিশ্চয়ই ওই পাড়ার রেস্তরাঁতে আবার নয়! কথা ছিল এই রবিবার ভাত, আলুসেদ্ধ, ডিমসেদ্ধ এ সব দিয়ে তুমি আমাকে হেলদি লাঞ্চ খাওয়াবে।’’
রৌনক স্টার্ট দিয়ে বলল, ‘‘খাওয়াব তো হেলদি লাঞ্চ। বাইক চড়তে তোমার ভাল লাগে না?’’
‘‘খুব একটা সুযোগ হয়নি। যেটুকু চড়েছি, খুব একটা এনজয় করিনি।’’
‘‘কেন?’’
‘‘আসলে অফিসে একটা ছেলে লাস্ট দু-এক বার বাইকে লিফ্ট দিয়েছিল। ছেলেটা এত র্যাশ চালায়, আমার প্রাণ উড়ে গিয়েছিল।’’
‘‘হিন্টটা নিলাম।’’
‘‘মানে?’’
‘‘ধীরেসুস্থে চালাতে হবে।’’
‘‘অফ কোর্স। আমাকে ইম্প্রেস করার কোনও দরকার নেই।’’
হেসে উঠল রৌনক, ‘‘তুমি তো ইম্প্রেসড হয়েই আছ গানে আর গিটারে। তবে এই প্রথম একটা মেয়েকে দেখলাম, যে বাইক চড়তে ভালবাসে না।’’
‘‘অনেক মেয়েকে বাইকে চড়ানোর অভ্যাস আছে নাকি তোমার?’’
‘‘অনেক না হলেও, কিছু কিছু আছে। তারা অবশ্য কোনও দিন কমপ্লেন করেনি।’’
রৌনকের কাঁধটা আলতো করে ধরেছিল হৃষিতা। বাইকটা বাইপাসের দিকে যেতে অবশ্য দিব্যি ফুরফুরে লাগতে আরম্ভ করল। গাড়িতে রোজ এই রাস্তাটা দিয়ে যায়। দু’পাশ চেনা। কাজের দিনে ভিড় থাকে। রবিবার চারদিকটা কেমন অচেনা, অলস মনে হচ্ছে। গন্তব্য অজানা।
বাইপাসে উঠতেই মনটা আরও হালকা হয়ে উঠল। হৃষিতা রৌনককে বলল, ‘‘অ্যাই রৌনক, শীত পড়লে একটা রবিবার পুরো দিন তোমার বাইকে কোথাও আউটিং-এ যাব।’’
রৌনক বলে উঠল, ‘‘কী বললে? ডেটিং?’’
হৃষিতাও হেসে উঠল, ‘‘আচ্ছা ঠিক আছে। ডেটিং। কোনও দিন কোনও মেয়ের সঙ্গে ডেট করেছ, না ওদের এমনি এমনিই বাইকে চড়াও?’’
‘‘এমনি এমনি।’’
রৌনকের বাইকটা মা ফ্লাইওভারে উঠতেই হৃষিতা জিজ্ঞেস করল, ‘‘আচ্ছা, এ বার অন্তত বলবে তো, কোথায় লাঞ্চ করতে যাচ্ছি আমরা? কোনও হাইওয়ে ধাবায় কি?’’
‘‘তোমার মনে আছে, তুমি প্রথম দিন আমার ফ্ল্যাটে কবে, কেন এসেছিলে?’’
‘‘হ্যাঁ। একটা রবিবার... ভুল করে। মানে ঠিক ভুল করে নয়। আমি শুনেছিলাম রবিবার করে তোমাদের ফ্ল্যাটে এক জন ভদ্রমহিলা গান শেখান। মানে তোমার মা। কেন?’’
‘‘আমরা আজ সেই ভদ্রমহিলার বাড়িতে যাচ্ছি। উনি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। ভয় নেই। উনি শুধু চা-বিস্কিট খাওয়াবেন না। হেলদি লাঞ্চও তৈরি করে রেখেছেন।’’
একটু চুপ করে থেকে হৃষিতা নিচু গলায় বলল, ‘‘তোমার মায়ের বাড়ি যাচ্ছি, কেন?’’
‘‘তুমিও তো মাকে অনেক বার মিট করতে চেয়েছিলে। মা তো আর নিউটাউনে আসবে না। মা’কে বললাম, আমার এক সুন্দরী ছাত্রী তোমাকে মিট করতে চায়। মা খুব খুশি। বলল, নিয়ে আয়।’’
‘‘তুমি এটা আমাকে আগে বলোনি কেন?’’
হৃষিতার গলার স্বরের তারতম্যটা ধরতে পারল না রৌনক। গুনগুন করে সুর ভাঁজতে থাকল, লা লালা লা লা... লালা লালা লা...
এটা কোন গানের সুর? সুরটা জায়গায় জায়গায় চেনা, কোথাও কোথাও অচেনা লাগছে। গানের কথাগুলো কিছুতেই মনে পড়ছে না। হঠাৎ একটা পুরনো গানের কলি মনের মধ্যে বেজে উঠল। গানটা ধরতে পারল হৃষিতা, শায়দ মেরি শাদি কা খেয়াল, দিল মে আয়া হ্যায়... ইসি লিয়ে, মাম্মি নে মেরি, তুমহে চায়ে পে বুলায়া হ্যায়।
রৌনকের বাইকের স্পিডটা কী একটু বেশি হয়ে গিয়েছে? মা ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে একটার পর একটা গাড়িকে ওভারটেক করে এগিয়ে চলেছে। হৃষিতা রৌনকের পিঠে দু’টো আলতো চাপড় মেরে বলল, ‘‘রৌনক, তোমার মায়ের কাছে যাওয়ার আগে তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই।’’
‘‘বলো।’’
‘‘বাইকে নয়। কোথাও বসে, মুখোমুখি।’’
ফ্লাইওভার থেকে নেমে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড ধরে কোয়েস্ট মলের পার্কিং লটে বাইকটা রেখে মলের মধ্যে একটা কাফেতে এসে কফি নিয়ে বসল দু’জনে। রৌনক খেয়াল করল, হৃষিতার মুখে সেই খুশি-খুশি ছেলেমানুষি ভাবটা আর নেই। একটু যেন গম্ভীর। হৃষিতা একটু সময় নিয়ে বলল, ‘‘হঠাৎ আজ আমরা তোমার মায়ের বাড়িতে যাচ্ছি কেন? প্রশ্নটার ঠিক উত্তর এখনও পেলাম না।’’
‘‘সে রকম কোনও কারণ নেই। আমাদের তো আজ একসঙ্গে লাঞ্চ করার কথা ছিল। ভাবলাম, সেটা মায়ের কাছে হলে ক্ষতি কী? মা’ও খুশি হবে। মায়ের হাতের রান্না লাজবাব।’’
‘‘তোমার মা’কে আমার সম্বন্ধে কী বলেছ?’’
‘‘বললাম তো। বলেছি, আমার এক সুন্দরী ছাত্রী তোমাকে মিট করতে চায়। মা’ও শুনে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছে। বলেছে তোমাকে নিয়ে আসতে, দুপুরে খেয়ে যেতে।’’
হৃষিতা গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে বলল, ‘‘আমরা একে অন্যকে কতটুকু চিনি রৌনক? কয়েকটা রবিবারে গিটার নিয়ে কয়েকটা ঘণ্টা, আর গত রবিবার পাড়ার রেস্তঁরায় একসঙ্গে লাঞ্চ। তোমার কি মনে হয় না, তুমি একটু দ্রুতই একটা রিলেশনশিপ তৈরির দিকে যেতে চাইছ!’’
রৌনক দু’হাতের বুড়ো আঙুলে নাকের ওপরটা টিপে খানিক ক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে বলল, ‘‘মিথ্যে বলব না। আই থিংক, আই অ্যাম ইন লাভ উইথ ইউ। আসলে প্রেমে পড়তে গেলে ঠিক কতটা পথ কত দিন ধরে একসঙ্গে হাঁটতে হয়, কতটুকু আরও চিনতে হয়, মন তার হিসেব চায় না। আমার মনের মধ্যে যে অনেষ্ট ফিলিংস আছে, সেটুকুই তোমাকে খোলা মনে বললাম।’’
‘‘নট এগেন...’’ হৃষিতা মাথাটা ঝাঁকাল, ‘‘এর পর? তুমি আমাকে প্রোপোজ করবে?’’
রৌনক চুপ করে থাকল।
‘‘দ্যাখো রৌনক, আমাদের নিজেদের একটা করে আলাদা আলাদা জীবন আছে। তোমার জীবনের কিছু কথা তুমি হয়তো আমাকে বলেছ। কিন্তু আমার কোনও কথা আমি তোমাকে বলিনি। প্রয়োজনও বোধ করিনি। সপ্তাহের মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা আমরা একসঙ্গে কাটাই। আমার মনে হয় টিন-এজারদের মতো এত চট করে ক্রাশ হয়ে যাওয়ার বয়সটা বোধহয় আমরা পেরিয়ে এসেছি। টেলর সুইফ্টের সেই গানটার মতো, উই ওয়্যার বোথ ইয়ং হোয়েন আই ফার্স্ট স ইউ... সেই বয়সটা আমরা পেরিয়ে এসেছি রৌনক। এই বয়সে মুগ্ধতা কেটে গেলে সম্পর্কটা একটা ভারী বোঝা হয়ে থেকে যায় অনেক সময়। তুমি আজ আমাকে তোমার মায়ের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছ। এর পর হয়তো এক্সপেক্ট করবে আমিও তোমাকে আমার বাড়িতে এক দিন ইনভাইট করব। রবিবারের ওই কয়েক ঘণ্টার মেলামেশাটা এক্সটেন্ডেড হবে। আমার অফিস ছুটির পরে তুমি মাল্টিপ্লেক্সের টিকিট কেটে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। তোমার মনের মধ্যে যেটা আছে, সেই সম্পর্কটা একটা পরিণতি খুঁজবে। তুমি আমাকে প্রোপোজ করবে। রিলেশনশিপটা আমি সেখানে টেনে নিয়ে যেতে চাই না। তা হলে রবিবারের এই বন্ধুত্বের খুনসুটি, মজাটা আর থাকবে না।’’
মুখ নিচু করে চুপ করে থেকে রৌনক বলল, ‘‘সব সময় কি জীবনের গভীরতায় ডুব দেওয়া খুব জরুরি, হৃষিতা? তোমার আমাকে সাবধান না করে দিলেও চলত। সম্পর্কের ব্যাপারে আমি সব সময় বুকের ভেতর কয়েকটা কাঁটা বয়ে বেড়াচ্ছি। তোমাকে জোরাজুরি করছি না। মনের অনুভূতিটা শুধু বললাম। আমিও যুক্তি দিয়ে ভাবলাম। প্রেমে পড়া এক জিনিস, সম্পর্কের পরিণতি খুঁজতে যাওয়া আর এক জিনিস। ঠিকই বলেছ। যুক্তিও বলে, এ রকম অসম প্রেমে পড়ে যাওয়া মানে বন্ধুত্বটাকেও হারানো। স্যরি, আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে না। মায়ের জীবনটাই আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষা। যে অনুভূতি তোমাকে বলে ফেললাম, ভুলে যাও। চলো, আমরা ফিরে যাই।’’
ক্রমশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy