ছবি: পিয়ালী বালা
পূর্বানুবৃত্তি: সৌমিত্র দত্তের বাড়িতে তাসের আড্ডায় সোমনাথের হাত লেগে একটা বিয়ারের বোতল উলটে যায়। শকুন্তলা এসে জানান, তিনি বাবার কাছে যাচ্ছেন। টিটান চুপচাপ এসে মেঝে পরিষ্কার করে, বাথরুমে ঢুকে টুইটিকে ফোন করে কাতর স্বরে এক বার আসতে বলে। অভিমন্যু ঋদ্ধিমাকে ওদের জিম, সুইমিং পুল ঘুরিয়ে দেখায়। ঋদ্ধিমা ওকে পাড়ার মোড়ের রেস্তরাঁটায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে।
ঋদ্ধিমার কথা বুঝতে না পেরে অভিমন্যু বলল, ‘‘বৃষ্টির মধ্যে মোবাইল বার করল... মানে কেন?’’
‘‘গেস করো।’’
একটু চিন্তা করে অভিমন্যু বলল, ‘‘অ্যাপ ক্যাব ডাকতে কি? কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে ফোন বার করলে তো জল ঢুকে নষ্ট হয়ে যাবে।’’
ঋদ্ধিমা কপাল চাপড়াল, ‘‘হায় ভগবান, এ তুমি কাকে লিখে দিলে আমার কপালে? বিয়ের আগেই একটা বাচ্চা দিয়ে দিলে মানুষ করতে! ক্যান্ডি বয়, ছেলেটা আমার বৃষ্টিতে ভেজার একটা ছবি তুলবে বলে ফোনটা বার করেছিল। মাথায় এ বার কিছু স্পার্ক মারল?’’
অভিমন্যু আকাশের দিকে তাকাল। নির্মেঘ আকাশ। ক’দিন আগেও আকাশ কালো করে থাকত যে মেঘগুলো, সেগুলো যেন এখন মনের মধ্যে ঢুকে বসে আছে। আজ এই পাশাপাশি হাঁটাটা ঋদ্ধিমার জায়গায় নয়নিকার সঙ্গেও হতে পারত। কোনও শব্দ থাকত না সেখানে। থাকত শুধু অনুভূতি।
‘‘ক্যান্ডি বয়, আকাশের দিকে কী তাকাচ্ছ? আজ বৃষ্টি হবে না। ভয় পেয়ো না। তোমার মোবাইলটা আজ নষ্ট করতে বলব না।’’ আবার খিলখিল করে হেসে উঠল ঋদ্ধিমা, ‘‘একটা সত্যি কথা বলবে? আসলে তোমাকে তো এর আগে ওয়ান ইজ টু ওয়ান নোটিস করিনি! তুমি কি এ রকমই ইনট্রোভার্ট?’’
‘‘বোধহয়।’’
রেস্তরাঁয় পৌঁছে গেল দু’জনে। রবিবারের অলস সকালবেলা। রেস্তরাঁটা মোটামুটি ফাঁকাই। একটা নিভৃত কোণ বেছে বসল ওরা। অভিমন্যু একটু ইতস্তত করে বলল, ‘‘বাড়িতে একটা ফোন করে বলে দিই যে আমরা এখানে আছি?’’
‘‘কেউ এখন আমাদের খোঁজ করবে না ক্যান্ডি বয়। সবাই ইচ্ছে করে আমাদের এই স্পেসটা দিয়েছে, যাতে আমরা একটু নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারি। আর তোমার মোবাইলটা তো ভিজে নষ্ট হয়ে যায়নি। দরকার হলে ওরা ফোন করবে।’’
ওয়েটার এসে মেনু কার্ড দিল। ঋদ্ধিমা বলল, ‘‘তোমাদের বাড়ি গিয়ে তো একগাদা গিলতে হবে। চিল্ড একটা কফি বলে দাও আমার জন্য, আর তুমি যা খাবে বলে দাও।’’
‘‘দু’টো ফ্রাপে আর চকো চিপ কুকিজ প্লিজ।’’
‘‘উইথ আইসক্রিম স্যর?’’ ওয়েটার জানতে চাইল।
ঋদ্ধিমা বলল, ‘‘আমারটা উইথ আইসক্রিম।’’
অভিমন্যু ওয়েটারের দিকে তাকাল, ‘‘ওয়ান উইথ আইসক্রিম, ওয়ান উইদাউট।’’
‘‘আইসক্রিম ভালবাস না? তোমার সঙ্গে তো দেখছি কিছুই মিলছে না আমার!’’ ওয়েটার চলে যেতে ঋদ্ধিমা বলল, ‘‘তোমাকে একটা সিক্রেট বলছি। এটা আমাদের আংটি বদল হয়ে যাওয়ার পর ড্যাডি অ্যানাউন্স করবে। আমাদের কিন্তু ডেস্টিনেশন ম্যারেজ হবে।’’
‘‘মানে?’’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল অভিমন্যু।
‘‘ডেস্টিনেশন ম্যারেজ। মানে বিয়েটা কলকাতায় হবে না। ড্যাডি তো আকাশ থেকে শুরু করে। চাঁদ থেকে শুরু করেনি এই ভাগ্য। প্রথমে বলেছিল মালদ্বীপ। অ্যায়সা কোটেশন পেয়েছে, মালদ্বীপ ক্যানসেল। তার পর ভাবল উদয়পুর। সেও প্রচুর খরচ। এখন ভাবছে কেরালা। ইভেন্ট ম্যানেজাররা দেখছে।’’
‘‘মানে কলকাতায় নয়। কেন?’’
‘‘না, ফর সাম রিজন কলকাতায় নয়।’’ ঋদ্ধিমা এক মুহূর্ত আনমনা হয়েই নিজেকে সামলে নিল, ‘‘আরে ডেস্টিনেশন ম্যারেজ মানে প্রচুর মজা। ভাবতে পারছ, এক প্লেন ভর্তি লোক যাব আমরা। একেবারে চার্টার্ড ফ্লাইটের মতো।’’
ঋদ্ধিমা হঠাৎ দূরে তাকিয়ে হাত নাড়ল, ‘‘হাই ঈপ্সিতা!’’
অভিমন্যু ঘুরে দেখল, রেস্তরাঁর দরজা ঠেলে ঢুকছে তিন জন মেয়ে আর এক জন প্রৌঢ়। প্রৌঢ়র মুখটা চেনা চেনা লাগল। ঈপ্সিতা এগিয়ে এসে আলতো করে ঋদ্ধিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘‘তুই এখানে?’’
‘‘সেটা তো আমিও তোকে জিজ্ঞেস করছি, তুই এখানে?’’
ঈপ্সিতা গলাটা নামিয়ে বলল, ‘‘আমার সেজমামা এখানে থাকে। গত বুধবার জন্মদিন ছিল। ইচ্ছে করে উইশ করিনি। বুড়ো অভিমানে ভাবছে, কেউ মনে রাখেনি। আজ একটা সারপ্রাইজ দেব বলে নিয়ে এসেছি। তুই আছিস তো এখন কিছু ক্ষণ?’’
‘‘থাকলে ভাল হত। আনফরচুনেটলি থাকতে পারব না। আচ্ছা, ওর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। অভিমন্যু।’’
‘‘হাই অভিমন্যু,’’ ঈপ্সিতা চোরা চোখের ইঙ্গিতে ঋদ্ধিমার কাছে ছেলেটা কে, জানতে চাইল। ঋদ্ধিমার নতুন বয়ফ্রেন্ড কি? আজ নববর্ষ নয়। এ রকম একটা সাধারণ রবিবারে ধুতি-পাঞ্জাবি পরে কোনও ছেলেকে ডেটিং করতে দেখেনি।
অভিমন্যু ঈপ্সিতাকে পালটা ‘হ্যালো’ বলতে ভুলে গেল। মুখ মুছতে রুমাল বার করতে গিয়ে বুকটা ধড়াস করে উঠেছে। মানিব্যাগটাই পাঞ্জাবির পকেটে ঢোকানো হয়নি! এখন এক জনই ভরসা। টুইটি। ওকে বললে যদি মানিব্যাগটা দিয়ে যায়।
‘‘এক্সকিউজ মি।’’ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রেস্তরাঁর বাইরে এল অভিমন্যু। টুইটিকে ফোন করল, সুইচড অফ। বাধ্য হয়ে মা’কে ফোন করল, ‘‘মা, এক বার টুইটিকে দাও না।’’
অঞ্জলি বলে উঠলেন, ‘‘কোথায় তোরা? এ বার আয়। পুজো হয়ে গিয়েছে। টুইটি তোদের সঙ্গে নেই? সেই কখন ‘ওদের ডেকে আনছি’ বলে বেরিয়েছে। কোথায় গেল মেয়েটা?’’
১৬
রেস্তরাঁয় আসা অবধি প্রিয়তোষের একটা অস্বস্তি হচ্ছে। সপ্তাহে সপ্তাহে রেস্তরাঁয় খেতে আসার মানুষ প্রিয়তোষ নন। শুধু ইপ্সি হলে তাও এক রকম ছিল, কিন্তু সঙ্গে আছে ওর দুই বন্ধু, যাদের এর আগে কোনও দিন দেখেননি প্রিয়তোষ।
ইপ্সির যে এই পৃথিবীতে কত জন বন্ধু, বোধহয় ঈশ্বরই জানেন। প্রিয়তোষ লক্ষ করলেন, রেস্তরাঁয় ঢুকেই ইপ্সি এক জন বন্ধু পেয়ে গিয়েছে, সঙ্গে আসা বন্ধুদের ছেড়ে এখন তার সঙ্গে গল্পে মেতেছে। রেস্তরাঁটায় তেমন ভিড় নেই। অনেকগুলো টেবিল ফাঁকা। কিন্তু চার জনের বসার জন্য ওয়েটার এমন একটা টেবিল দেখিয়ে দিল, প্রিয়তোষের অস্বস্তি আর ইপ্সির ওপর বিরক্তি আরও বেড়ে গেল।
টেবিলের কোনায় বসে আছে সেই ছেলেটা আর মেয়েটা। রৌনক আর হৃষিতা। কী অপ্রস্তুত অবস্থাতেই না পড়েছিলেন সেই রবিবারটায়, যে দিন কাঞ্জিলাল দুম করে ওদের ফ্ল্যাটের বেলটা টিপে দিয়েছিল। কাঞ্জিলাল আর ওর বউ কত সব কথা বলেছিল ওদের। মরমে মরে গিয়েছিলেন প্রিয়তোষ। সেই অস্বস্তিটা যে আজও যায়নি, টের পেলেন।
রৌনক আর হৃষিতা মুখোমুখি বসে কথা বলছে। প্রিয়তোষকে খেয়াল করেনি। যে কোনও মুহূর্তে চোখাচোখি হবে, তার পর বাকি সময়টা মাথা নিচু করেই থাকতে হবে। ওদের দিকে পিছন করে একটা চেয়ারে বসলেন প্রিয়তোষ।
ঈপ্সিতার দুই বন্ধু, স্নিগ্ধা আর দিঠি, নিজেদের মধ্যে গল্প করছে। সামনের দেওয়ালে বড় একটা টিভি চলছে মিউট অবস্থায়। দু’টো বিদেশি দলের খেলা চলছে। দল দু’টোকে চেনেন না প্রিয়তোষ। ওয়েটার এসে তিন জনকে তিনটে মেনু কার্ড দিয়ে গেল। ইপ্সি যতই খাওয়াতে নিয়ে আসুক, বিলটা ওকে মেটাতে দেবেন না, এটুকুই যা স্বস্তি। ইপ্সির বন্ধুদের বললেন, ‘‘ কী অর্ডার করবে তোমরা?’’
মেয়ে দু’টো ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দিঠি উঠে গিয়ে ঈপ্সিতাকে ডেকে নিয়ে এল।
‘‘স্যরি সেজমামা... আসলে অনেক দিন পর ঋদ্ধিমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।’’ তার পর গলাটা নামিয়ে বলল, ‘‘একটা গুন্ডা অটোওয়ালার প্রেমে পড়ে তাকে প্রায় বিয়ে করে ফেলছিল। তাই নিয়ে বাড়িতে প্রচুর কিচাইন। পুলিশ, হাঙ্গামা, কেলেঙ্কারি। প্রায় নিমতলা কেস। এখন তোমাদের কমপ্লেক্সের একটা আলুভাতেকে ফাঁসিয়েছে দেখছি। বেচারা!’’
ঈপ্সিতার ভাষায় প্রিয়তোষ বিরক্ত হলেন, ‘‘আহ্, ইপ্সি।’’
ঈপ্সিতা মৃদু ধমকানিটা পাত্তা না দিয়ে বলল, ‘‘বাদ দাও সেজমামা। তুই বার কর স্নিগ্ধা, আমি ওয়েটারদের ডাকছি।’’
স্নিগ্ধার হাতে একটা বড় ব্যাগ ছিল। প্রিয়তোষ দেখলেন, সেই ব্যাগ থেকে বেরল আর একটা পলিথিনের ব্যাগ, তার মধ্যে থেকে একটা কেকের বাক্স। তখনই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে গেল। বুধবার ওঁর জন্মদিন ছিল। মনে হয়েছিল, এটা বোধহয় একমাত্র সুতপাই মনে রেখেছে। ঝর্নাকে বলে পাঁচ রকম ভাজা আর পায়েস করিয়েছিল। কিন্তু ঝর্নার রান্না করে যাওয়া জন্মদিনের খাবার মাইক্রোওয়েভে গরম করে একা একাই উদ্যাপন করতে হয়েছিল। এ রকম কেক কেটে জন্মদিন পালন কস্মিনকালেও করেননি। তাও আবার ইপ্সির বন্ধুদের সঙ্গে। অস্বস্তির সঙ্গে লজ্জাও শরীরে জড়াল।
ওয়েটার এসে কেকের বাক্সটা নিয়ে গেল। ঈপ্সিতা বলল, ‘‘আজ তোমার জন্য অনেক সারপ্রাইজ আছে সেজমামা।’’
প্রিয়তোষ প্রমাদ গুনলেন। ইপ্সি আর কত অস্বস্তিতে ফেলবে! চাপা গলায় ঈষৎ বিরক্তি দেখানোর চেষ্টা করলেন, ‘‘কী যে ছেলেমানুষি করিস না তুই।’’
‘‘ও মা, ছেলেমানুষি কোথায়? আচ্ছা, বলো তো এই কলকাতা শহরে এখন ফ্যামিলি বলতে তুমি আর আমি ছাড়া কে আছে? কেউ বহরমপুরে তো কেউ মুম্বইতে। কেউ নয়ডায় তো কেউ ফিলাডেলফিয়ায়।’’
‘‘কেন, বুকু নেই?’’ ভাইপোর কথা জিজ্ঞেস করলেন প্রিয়তোষ, ‘‘মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাড়ির ব্যাপারে তো গত সপ্তাহেই কথা হল।’’
‘‘দাদাভাই থাকলে কি আজ নিয়ে আসতাম না? বৃহস্পতিবার নয়ডায় গিয়েছে। ইস, কী ভালো হতো বলো তো, সবাই মিলে আজ একটা হুল্লাট পার্টি করা যেত!’’
প্রিয়তোষ ম্লান হাসলেন। বুকের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা একটা মনখারাপ যেন ঝাপটা মারল। মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের কঙ্কালসার বাড়িটা গুঁড়িয়ে গিয়ে ঝাঁ-চকচকে আধুনিক ফ্ল্যাট মাথাচাড়া দেবে। সবাই একটা করে তালাবন্ধ ঘুপচি ফ্ল্যাটের মালিক হবে। কেউ থাকবে মুম্বই, কেউ পুনে, কেউ নাগপুর, কেউ বহরমপুরে। শুধু বাড়িটার প্রাণভোমরাটা কোথায় থাকবে, কেউ খুঁজে আনতে পারবে না।
‘‘তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি, তুমি মামির জন্য মন খারাপ করছ। বাব্বাহ্! এই বয়সেও তোমার মাধুরী দীক্ষিতের জন্য এত প্রেম? মুখটা তো পুরো বিরহ বিরহ টাইপ লাগছে। জানতাম এটাই হবে। আজ তাই তোমার জন্য আমরা ঝক্কাস ডবল সেলিব্রেশনের ব্যবস্থা করেছি।’’
‘‘ডবল সেলিব্রেশন?’’ খুব অবাক হলেন প্রিয়তোষ।
‘‘হ্যাঁ, ডবল সেলিব্রেশন। একটা জন্মদিনের, আর একটা তোমার লেখক হওয়ার সেলিব্রেশন। দেখো, আমি কিন্তু ভুলিনি। বলেছিলাম না, সেলিব্রেট করবই! জাস্ট টাইম পাচ্ছিলাম না।’’
‘‘হ্যাপি বার্থডে অ্যান্ড মেনি মেনি কনগ্র্যাচুলেশন্স, আংকল!’’ দিঠি আর স্নিগ্ধা হাত মেলাল। স্নিগ্ধা ব্যাগ থেকে রঙিন কাগজে মোড়া একটা উপহার বার করে প্রিয়তোষকে দিয়ে বলল, ‘‘এটা আমাদের দু’জনের তরফ থেকে।’’
প্রিয়তোষ রীতিমত লজ্জা পেলেন, ‘‘ছি ছি, তোমরা আবার এ সব আনতে গেলে কেন?’’
ঈপ্সিতা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে উঠল, ‘‘তোমার অত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আগে খুলে দেখো, চাঁদা করে কী ভুসি মাল দিয়েছে। দু’টোই হাড়কঞ্জুস।’’
‘‘আহ্! কী যে তোর ভাষা হচ্ছে না দিনে দিনে!’’ প্রিয়তোষ ঈপ্সিতাকে মৃদু ধমকে মোড়কটা খুললেন। ভেতরে একটা বাক্সে সুন্দর একটা পেন।
‘‘তোমাদের অনেক ধন্যবাদ। এ সবের কোনও দরকার ছিল না।’’ পেনটা হাতে নিয়ে আপ্লুত গলায় বললেন প্রিয়তোষ।
‘‘আপনি এই পেনটা দিয়ে গল্প লিখবেন, আংকল। কাগজে বেরলে আমরা পড়ব।’’ দিঠি হাসি হাসি মুখ করে বলল।
ওয়েটার বড় একটা ট্রে’তে কেকটা নিয়ে এসে টেবিলের মধ্যিখানে রাখল। কেকটা দেখেই প্রিয়তোষের মুখের রেখাগুলো পালটাতে থাকল। ঈপ্সিতা গভীর চোখে সেজমামার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল, কী প্রতিক্রিয়া হয় দেখার জন্য। সেজমামা সত্যিই হতবাক হয়ে গিয়েছে। আর এই হতবাক করার জন্য প্রচুর মাথা খাটাতে হয়েছে ওকে। মাস চারেক আগে এক রবিবারের কাগজে সেজমামার বেরনো গল্পটার সঙ্গে ছবিটা ঝক্কাস ছিল। এত দিন পরে অনলাইনে কাগজটা খুঁজে বার করে তার থেকে ছবিটা ডাউনলোড করে কেকের দোকানে গিয়ে ‘পিকচার কেক’-এর অর্ডার দিয়েছিল। কেকের ওপর সেই ছবিটা প্রিন্ট করা আছে। সেজমামা সেই ক্রিম-প্রিন্ট ছবির দিকেই নিষ্পলক চেয়ে আছে। একটা ছাতার তলায় একটা ছেলে আর মেয়ে। ছেলেটার একটা হাত মেয়েটার কাঁধের ওপর। তলায় গল্পের নামটা লেখা, ‘অপেক্ষা’। শুধু ছবিটার নীচে হলুদ ক্রিম দিয়ে লেখা, হ্যাপি বার্থডে ফ্রম অল অব আস।
‘‘কী রকম ডবল সারপ্রাইজ বলো?’’ ঈপ্সিতা জিজ্ঞেস করল। প্রিয়তোষের চোখটা তখন ফ্যালফেলে হয়ে গিয়েছে।
‘‘কাম অন সেজমামা। তুমি মুখটা এমন করছ যেন বল প্যাডে লাগেনি কিন্তু আম্পায়ার আউট দিয়ে দিয়েছে। বুঝেছি বুঝেছি, তোমার মাধুরী দীক্ষিতকে খুব মিস করছ। দাঁড়াও, আরও সারপ্রাইজ আছে। আগে কেকটা কেটে নাও। দিঠি, তুই আমার ফোনটা নিয়ে রেডি কর।’’
ক্রমশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy