স্মৃতিস্তম্ভ: পাস্পলোনা শহরের রাস্তায় স্থাপিত আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মূর্তি। ছবি: অতনু বিশ্বাস।
পাম্পলোনা শহরের প্লাজ়া দেল ক্যাসিলো-র কাফে ইরুনা-তে যখন ঢুকলাম, সে এক বিস্ময়কর অনুভূতি। সচেতন ভাবে আমি অনুসরণ করে চলেছি বিশ শতকের বিশ্বসাহিত্যের এক অবিসংবাদিত নক্ষত্র, আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ের শতকপ্রাচীন পায়ের ছাপকে। হ্যাঁ, হেমিংওয়ে। দুর্দান্ত ভ্রমণকারী আমেরিকান। কিংবদন্তি মদিরাসক্ত। এক প্রবল প্রেমিক, এক জন যোদ্ধা। এমন এক লেখক, যাঁর লেখা বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে জীবনের প্রতি তেজস্বী দৃষ্টিভঙ্গি। হেমিংওয়ে এমন এক নোবেলজয়ী লেখক, যাঁর কলম থেকে জন্ম নিয়েছে ‘ফর হুম দ্য বেল টোলস’, ‘আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’ কিংবা ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’-র মতো বিশ শতকের কিছু অবিস্মরণীয় সাহিত্যকীর্তি।
গত ২১ জুলাই পেরিয়ে গিয়েছে হেমিংওয়ের ১২৫তম জন্মবর্ষ। হেমিংওয়েকে বুঝতে গেলে ঘুরতেই হবে পাম্পলোনার কক্ষপথে। কারণ হেমিংওয়ে আর পাম্পলোনা জড়িয়ে রয়েছে এক অচ্ছেদ্য বন্ধনে। উত্তর-পূর্ব স্পেনের নাভারা প্রদেশের একটা ছোট্ট শহর এই পাম্পলোনা। স্পেনীয় সমাজ ও জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্যগুলি মিলেমিশে এই শহরটা স্পেনের আর পাঁচটা ছোট শহরের মতোই। পাম্পলোনা নামটার অবশ্য একটা জবরদস্ত ইতিহাস আছে। ৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান জেনারেল পম্পেই যুদ্ধযাত্রায় এসেছিলেন এ পথে। তিনি যে সামরিক বন্দোবস্ত স্থাপন করেছিলেন,তা জন্ম দেয় রোমান শহর পম্পেলোর। সেখান থেকেই পাম্পলোনা।
আজ গোটা পাম্পলোনা শহর জুড়েই যেন হেমিংওয়ের অস্তিত্ব, তাঁকে ভুলে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। তবু, এই কাফে ইরুনা যেন আরও স্বতন্ত্র। ‘টরন্টো স্টার’ কাগজের ২৪ বছর বয়সি রিপোর্টার হেমিংওয়ে পাম্পলোনাতে প্রথম আসেন ১৯২৩ সালে। সঙ্গে তাঁর তৎকালীন স্ত্রী হ্যাডলি রিচার্ডসন। তখন থেকেই এই কাফের সঙ্গে হেমিংওয়ের নিবিড় যোগসূত্র। তাঁর ভীষণ প্রিয় ছিল এই কাফে। এখানে বসে পান করে আর আড্ডা দিয়ে বহু ঘণ্টা কাটিয়েছেন তিনি। পরবর্তী কালে যখন এই শহরে ফিরে ফিরে এসেছেন, তখনও। এই কাফেকে তিনি দিয়েছেন অমরত্বও, তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য সান অলসো রাইজ়েস’-এর মাধ্যমে। যা হয়তো তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাসও বটে। বইটির নামকরণ হয়েছে বাইবেলের এক সূত্র ধরে, যা জীবনের চক্রাকার প্রকৃতি এবং আশার অবিচলতার প্রতীক। উপন্যাসটা লেখা ১৯২৫-এ তাঁর তৃতীয় পাম্পলোনা সফরকালে, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার রঙে-রসে মিশিয়ে। ছাপা হয় তার পরের বছর। ব্রিটেন এবং জার্মানিতে ছাপা হয় ‘ফিয়েস্তা’ নামে, উপন্যাসটি লেখার সময় যে চলতি নাম ব্যবহার করেছিলেন হেমিংওয়ে। ‘ফিয়েস্তা’ এক স্পেনীয় শব্দ, অর্থ ‘উৎসব’। ‘দ্য সান অলসো রাইজ়েস’ উপন্যাসে কয়েক জন প্রবাসী মার্কিন আর ব্রিটিশ পর্যটক প্যারিস থেকে আসেন পাম্পলোনাতে। ঠিক যেমন এসেছিলেন হেমিংওয়ে নিজেও। চেটেপুটে তাঁরা উপভোগ করেন ছোট স্পেনীয় শহরটার গ্রীষ্মকালীন ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের দৌড়, মদিরা-মেদুর এবং আলস্যে-ভরা জীবনশৈলী। উপন্যাসটির চরিত্রগুলিও চিত্রিত হয়েছে হেমিংওয়ের নিজস্ব বন্ধুবর্গের আদলে। যেমন, লেডি ডাফ ট্যুইসডেন উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছেন লেডি ব্রেট অ্যাশলে হিসেবে, এবং ব্রেট অ্যাশলের প্রাক্তন প্রেমিক রবার্ট কন আদপে হেমিংওয়ের পুরনো বক্সিং পার্টনার হ্যারল্ড লোয়েব ছাড়া অন্য কেউ নন। হেমিংওয়ের বন্ধু জুয়ানিটো কুইন্টানা ছিলেন এক জন হোটেল মালিক এবং ষাঁড়ের লড়াইয়ের বিশেষজ্ঞ। কুইন্টানার আদলেই বইটিতে তৈরি হয়েছে জুয়ানিটো মন্টোয়া-র চরিত্রটি, যার হোটেলে থাকেন এই গল্পের আমেরিকান দলটি।
উপন্যাসে হেমিংওয়ের প্রতিরূপ হলেন জেক বার্নস, যিনি বলছেন, “আমরা ইরুনাতে আরামদায়ক বেতের চেয়ারে বসে কফি খেলাম, ঠান্ডা তোরণের মধ্য থেকে বড় চত্বরের দিকে তাকিয়ে।” এই কাফেটার পরিবেশ বড় একটা বদলায়নি গত একশো বছরে। পাম্পলোনাতে তাঁর বেশির ভাগ সফরকালে হেমিংওয়ে থাকতেন প্লাজ়া দেল ক্যাসিলো-র উত্তর-পূর্ব কোণে গ্রান হোটেল লা পেরলা-তে। হোটেলের এক দিকে এস্টাফেটা স্ট্রিট, যা ষাঁড়ের দৌড়ের একটা প্রধান রাস্তা। যে ঘরে থাকতেন হেমিংওয়ে, তার এখন নামকরণ হয়েছে তাঁর নামেই। ১৯২০-র দশকে হোটেল কুইন্টানাতেও কয়েক বার থেকেছেন হেমিংওয়ে, যা ছিল প্লাজ়াতে কাফের কোনাকুনি উল্টো দিকে। ছিল, কারণ এই হোটেলটা এখন আর নেই। হেমিংওয়ে লিখেছেন, “রোদ্দুর থেকে বেরিয়ে স্কোয়ারের চার পাশে পুরোটা জুড়ে থাকা তোরণের ছায়ার নীচে যাওয়া ছিল উপভোগ্য।” স্কোয়ারের সেই তোরণগুলি রয়েছে আজও। সঙ্গে রয়েছে সেই পুরনো আকর্ষণকে ধরে রাখার চেষ্টাও।
জুলাইয়ের প্রথমে অনুষ্ঠিত হয় পাম্পলোনার বাৎসরিক ষাঁড়ের দৌড়ের ‘সান ফার্মিন’ উৎসব। এর মূল আকর্ষণ অবশ্য একটা ৯৩০ গজ রাস্তার মধ্যে, স্যান্টো ডোমিনগো স্ট্রিট থেকে প্লাজ়া ডে টোরস পর্যন্ত। উচ্ছ্বাস এবং স্বতঃস্ফূর্ততা ছড়িয়ে পড়ে জনগণের মধ্যে। স্বেচ্ছায় ষাঁড়ের সঙ্গে দৌড়োন বহু মানুষ। সময়ের পথ বেয়ে ‘সান ফার্মিন’ হয়ে উঠেছে এক স্বতন্ত্র ‘ফিয়েস্তা’, যার অনুরণন উপভোগকরতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসেন বহু পর্যটক। ২০১১-র বলিউড ছবি ‘জ়িন্দেগি না মিলেগি দোবারা’তে রয়েছে এই ষাঁড়-দৌড়ের চমৎকার চিত্রণ।
নাভারা প্রদেশের এই ছোট্ট শহরটার সঙ্গে হেমিংওয়ের রোম্যান্সের শুরু কিন্তু প্রথম দর্শনেই। এবং সেই রোম্যান্স বয়ে চলেছে তাঁর গোটা জীবন জুড়ে। ১৯৫৯ সালে হেমিংওয়ে নবম এবং শেষ বারের মতো আসেন পাম্পলোনায়। তাঁর এই স্পেন সফর ছিল ‘লাইফ ম্যাগাজ়িন’-এর হয়ে বুলফাইটিং-এর উপর একগুচ্ছ আর্টিকল লেখার জন্য। তিনি তখন নোবেল এবং পুলিৎজ়ার পুরস্কার বিজয়ী কিংবদন্তি লেখক। হেমিংওয়ে কিন্তু আশ্চর্য হন পাম্পলোনা শহরে ‘ফিয়েস্তা’র সময় চল্লিশ হাজার পর্যটকের ভিড় দেখে। এই পর্যটকরা তো মোটের উপর অনুসরণ করেছে তাঁরই পদাঙ্ক, যা তিনি নিজে স্থাপন করেছেন বহু বছর আগে। হেমিংওয়ের স্মৃতিচারণা ‘দ্য ডেঞ্জারাস সামার’ ছাপা হয় ১৯৮৫-তে, তাঁর মৃত্যুর ২৪ বছর পরে। তাতে তিনি লিখছেন, পাম্পলোনাতে মেরেকেটে জনা কুড়ি টুরিস্ট এসেছিল ১৯২৩-এ, তাঁর সেই প্রথম পাম্পলোনা সফরের সময়। ১৯৫৯-এ হেমিংওয়ের শেষ পাম্পলোনা দর্শন মোটেই সুখের ছিল না। তাঁর শরীর এবং মন-মেজাজ ভেঙে পড়ছিল ক্রমেই। তার মধ্যে তিনি এমন একটি শহরকে খুঁজে পেলেন যাকে তিনি চিনতে পারছেন না। এমনিতেই তখন জেনারেল ফ্রাঙ্কোর ফ্যাসিবাদী মুঠিতে দু’দশক আটকে থাকা সেই দেশের সঙ্গে ১৯২০-র দশকের প্রাণোচ্ছল স্পেনের আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এই স্পেনে হেমিংওয়ের বইও তো নিষিদ্ধ! এবং পাম্পলোনার টুরিস্ট-বিধ্বস্ত চেহারা দেখে হেমিংওয়ের মনে হয় তিনি সৃষ্টি করেছেন এক দানবকে। ঘটনাচক্রে এর দু’বছর পর, ১৯৬১-তে, যখন আইডাহো-র কেচুম-এ তাঁর বাড়ির বারান্দায় নিজের মুখে শটগান রেখে ট্রিগার টেনেছিলেন হেমিংওয়ে, সেও কিন্তু ছিল সান ফার্মিনের সপ্তাহ।
হেমিংওয়েই পাম্পলোনা আর তার ষাঁড়ের দৌড়ের ‘ফিয়েস্তা’কে এনেছেন গোটা দুনিয়ার সামনে। এই ‘ফিয়েস্তা’ আর বুলফাইটিং হেমিংওয়ের মনে যে হিল্লোল তুলেছিল, তার আর এক ফলশ্রুতি তাঁর ১৯৩২-এর বই ‘দ্য ডেথ ইন দি আফটারনুন’। আজ দু’লাখ লোকের শহর পাম্পলোনায় প্রতি বছর ‘ফিয়েস্তা’র সময় আসেন লাখ পনেরো পর্যটক, শহরের অর্থনীতির পক্ষে যা এক সঞ্জীবনী মন্ত্র। পাম্পলোনা তাঁকে যতটা ভালবাসত, হয়তো তার চেয়ে অনেক বেশি পাম্পলোনার প্রেমে মশগুল ছিলেন হেমিংওয়ে। কিন্তু এটাও ঠিক, এই শহরটা আর তার মানুষজন আজও লাভের গুড় ঘরে তুলছে সেই প্রায়-একপেশে রোম্যান্সকে ভাঙিয়ে। পাম্পলোনার সর্বত্র হেমিংওয়ে। তাঁর স্ট্যাচু রয়েছে প্লাজ়া দেল ক্যাসিলোতে, কাফে ইরুনার কাঠের প্যানেলযুক্ত ঘরের দেওয়ালের পাশে, পাম্পলোনা বুল রিংয়ে। শহরের নানা দোকানে, পাব-এ ব্যবহৃত হয়ে চলেছে হেমিংওয়ের নাম। তাঁর পদচিহ্ন খুঁজতে টুর সংগঠিত করে শহর।
হেমিংওয়ে ভ্রমণকারী। তাঁর দুর্বার পদচিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে দুনিয়ার নানা স্থানে। যেমন, নোবেল-নন্দিত ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’র সূত্র ধরে আমরা পৌঁছতে পারি কিউবাতে, ‘টু হ্যাভ অ্যান্ড হ্যাভ নট’ ধরে ফ্লোরিডা কিজ-এ, ‘ট্রু অ্যাট ফার্স্ট লাইট’-এর আলোতে কেনিয়ায়, যেতে পারি ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরার ‘দ্য গার্ডেন অব ইডেন’-এ, কিংবা ‘আ মুভেব্ল ফিস্ট’-এর মধ্য দিয়ে আমরাও উপলব্ধি করি যে, যৌবনে যদি প্যারিসে যাওয়া যায়, তা হলে সেই প্যারিসের একটা টুকরো সঙ্গে বয়ে চলে জীবনভর, তা সে দুনিয়ার যেখানেই যাই না কেন। তবু ভুললে চলবে না, পাম্পলোনাই হেমিংওয়ের প্রথম প্রেম। নিঃসন্দেহে যা ছিল নিকষিত হেম। প্লাজ়া দেল ক্যাসিলোর একটা বেঞ্চে বসে ভাবার চেষ্টা করি, কী হতে পারে এক অসম্ভব প্রতিভাবান উদ্দাম আমেরিকান তরুণ আর এক ছোট্ট স্পেনীয় শহরের নিবিড় বন্ধনের যোগসূত্র। কী বিস্ময়-জাদু বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখককে এক জীবনব্যাপী রোম্যান্সে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলতে পারে এক ছোট ইউরোপীয় শহরের সঙ্গে? আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, স্পেনীয়রা দুনিয়ার সব চেয়ে হুল্লোড়ে জাতিদের মধ্যে অন্যতম। হয়তো স্পেনীয় জীবনযাত্রার সেই জীবনীশক্তিটুকু, আর সেই সঙ্গে দেশটার প্রকৃতি, তার ঝকঝকে উদাত্ত সূর্যালোক, ষাঁড় নিয়ে সংস্কৃতি, অসাধারণ কফি, মদিরা, নারী, মৎস্য শিকার, সব মিলেমিশে সৃষ্টি হয়েছিল এক নিবিড় রসায়ন। এক অনন্য বিনি-সুতোর-মালা। হেমিংওয়ের ব্যক্তিগত পছন্দের সঙ্গে মিলেমিশে পাম্পলোনা হয়ে উঠেছিল তাঁর পক্ষে এক যথাযথ শহর। ১৯২৩ থেকে ১৯২৭, এই সময়কালে প্রতি বছর পাম্পলোনায় এসেছেন হেমিংওয়ে। প্রত্যেক বারই এসেছেন সান ফার্মিন উৎসবের সময়— বুলফাইটিং, নিষ্ঠুরতা, মদিরা, গান উপভোগ করতে। পাম্পলোনার বাইরে ইরাতি নদীতে মাছ ধরতে যেতেন তাঁরা। ‘দ্য সান অলসো রাইজ়েস’-এ উচ্ছ্বসিত জেক বার্নস বলছেন, “ফিয়েস্তা সত্যিই শুরু হয়েছে। এটা চলল সাত দিন সাত রাত। নাচ চলতে থাকল, চলতে থাকল মদ্যপান, এবং হতে থাকল প্রবল হইহট্টগোল।” সাহসিকতা এবং মৃত্যু নিয়ে সম্পূর্ণ রূপে আবিষ্ট ছিলেন হেমিংওয়ে; তাই এই জীবনধারা এবং সংস্কৃতিতে হয়তো মোহিত হয়েছিলেন তিনি। এমনিতে ‘সান ফার্মিন’ উৎসব নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ছিলআগে থেকেই; উৎসবটাকে সর্বজনীন করার কৃতিত্বটুকু হেমিংওয়ের।
পাম্পলোনা হয়তো হেমিংওয়েকে ভালবাসতে পারেনি তাঁর মতো করে, কিন্তু তাঁকে অগ্রাহ্য করাও অসম্ভব তার পক্ষে। এবং পাম্পলোনা সম্পর্কিত হেমিংওয়ের ১৯৫৯-এর নির্মম মূল্যায়নও যে খুব একটা অন্যায্য ছিল, তাও নয়। কিন্তু এটাও ঠিক, তা হয়তো দানব-প্রতিম হয়ে ওঠেনি— যেমনটা মনে করেছেন হেমিংওয়ে। আসলে পাম্পলোনা সম্ভবত এক চক্রাকার জীবনের কক্ষপথের কেন্দ্রস্থলে। তাকে ঘিরে হেমিংওয়ের জীবনের ঘূর্ণাবর্ত, তাঁর ২৪ বছর থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত। উত্তর স্পেনের আর এক শহর বিলবাও থেকে গাড়ি করে পাম্পলোনা যাওয়ার পথে দূর থেকে দেখি শহরটাকে। একশো বছর আগে এই পাম্পলোনাকেই দূর থেকে দেখে জেক বার্নস-এর মনে হয়েছিল, “সমভূমি থেকে উঠেছে... শহরের দেয়াল, এবং দুর্দান্ত বাদামি ক্যাথিড্রাল এবং ভাঙা আকাশরেখা।” জীবনের চক্রাকার পরিক্রমা তাই চলতেই থাকে।
‘দ্য সান অলসো রাইজ়েস’ হয়তো পাম্পলোনার এক অস্বস্তিকর কৈশোরের সূচনাবিন্দু। তা যেন ক্রমেই পূর্ণতা পায়, বিকশিত হয় এক প্রাপ্তবয়স্ক পরিশীলতায়। যে পরিণতিতে এক উদ্দাম বোহেমিয়ান মার্কিন যুবকের জীবনভর— হয়তো বা খানিকটা একপেশে— নিবিড় প্রেমের প্রগাঢ় অবদান। অপর দিকে, তাঁর প্রতি পাম্পলোনার নিরাসক্তি কী বেশি করে অনুভব করেন ‘ওল্ড ম্যান’ হেমিংওয়ে, তাঁর শেষ সফরে? পাম্পলোনার, স্পেনীয় জীবনযাত্রার, উদ্দামতাকে ছাপিয়ে এক বিসর্জনের বিষণ্ণতার সুর কি তাই বেজে ওঠে তাঁর হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy