Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Reclaim The Night

আকাশ ভরা তারার কথা

যারা নেমে এসেছিল অগণিত মোমের আলো হয়ে। ১৪ অগস্টের সেই আশ্চর্য রাতে। রাত দখলের আহ্বান ছড়িয়ে গিয়েছিল মহানগর পেরিয়ে শহরতলি, গ্রামে-গঞ্জে। সঙ্গী হয়েছিলেন পুরুষরাও। তাঁরা বিবেকবান, হৃদয়বান, সমব্যথী। কিন্তু নারীর পাশে থাকার সার্বিক যোগ্যতা আজও পুরুষ অর্জন করতে পেরেছে কি?

প্রতিবাদ: নিহত তরুণী চিকিৎসকের জন্য সুবিচারের দাবিতে ১৪ অগস্টের সেই রাতে বয়স, সামাজিক অবস্থা, বিত্ত, পেশা নির্বিশেষে পথে নেমেছিলেন নারীরা।

প্রতিবাদ: নিহত তরুণী চিকিৎসকের জন্য সুবিচারের দাবিতে ১৪ অগস্টের সেই রাতে বয়স, সামাজিক অবস্থা, বিত্ত, পেশা নির্বিশেষে পথে নেমেছিলেন নারীরা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

তিলোত্তমা মজুমদার
শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৫
Share: Save:

অনন্য রাতের আহ্বান

সে দিন রাত দখলের ডাক দিয়েছিল মেয়েরা। শহর কলকাতায় একটি মেয়ে বৈদ্যুতিন সামাজিক মাধ্যমে সেই আহ্বান ছড়িয়ে দিয়েছিল চেনা-অচেনা বন্ধুদের মধ্যে। অতি অল্প সময়ে সেই আহ্বান শত লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এমনই অমোঘ সেই ডাক, ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগের সেই ১৪ অগস্টের রাত দখল করতে বেরিয়ে পড়ল মেয়েরা। মহানগরের পথে পথে জল, কাদা, গর্ত, পাথর কিংবা বন্ধুরতা উপেক্ষা করে চলতে লাগল বিশেষ লক্ষ্যে। অগণিত মোমের আলো যেন আকাশের লক্ষ কোটি তারাদের কথা।

সেই রাতে মেয়েদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথে নেমেছিল পুরুষরাও। সৎ, বিবেকবান, হৃদয়বান পুরুষেরা। বয়স, সামাজিক অবস্থান, বিত্ত, পেশা কোনও বিভেদ সৃষ্টি করেনি। আদৌ সে সব নিয়ে কেউ ভাবিত ছিল না। এমন রাত কেউ কখনও দেখেনি। রাত দখলের এই আহ্বান মহানগর পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছে শহরতলিতে, গ্রামে, গঞ্জে। ছড়িয়ে গিয়েছে অন্য প্রদেশে, অন্য দেশেও।

এই রাত দখলের আহ্বানে কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর প্রাধান্য ছিল না, ছিল না ‘সেলেব’ হয়ে ওঠা মুখ। যদি বা থেকেও থাকেন, কাউকে আলাদা করে গুরুত্ব প্রদানের কথা মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করেনি এই অভিযান। এ এক অভিনব উদ্যম, এ যেন সময়ের আহ্বান, এ মানুষের জন্য মানুষের, নারীর জন্য নারীর চলা। এই রাতের সম্মিলিত বাণী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের দাবি, অপরাধের বিরুদ্ধে উপযুক্ত দণ্ডবিধানের দাবি, মানুষের কাছে মনুষ্যোচিত আচরণের দাবি। ১৪ অগস্টের রাত মানবেতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দুর্জয় রাত।

উৎসবের মধ্যরাতেও মহানগর অথবা অন্যান্য শহর জনবহুল হয়ে ওঠে। কিন্তু সুসজ্জিত, উল্লসিত রাতের সঙ্গে কোনও সাদৃশ্য ছিল না ১৪ অগস্টের মধ্যরাত্রির। এই রাতের জনসমাবেশ ও মোমের আলো, এর নীরবতা বা সমস্বর দাবি, অত্যন্ত নির্মমতার, গর্হণের, অত্যাচার ও হননের বিষাদদিগ্ধ, ব্যথামিশ্রিত, ক্রোধ ও ধিক্কারের সমন্বয়।

৯ অগস্ট থেকে ক্রোধ, বেদনা, ধিক্কার ও শত শত প্রশ্ন মানুষের হৃদয়ে মাথা কুটছিল। কারণ, সেই রাতে, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে, কে বা কারা, এক জন কর্তব্যরত তরুণী চিকিৎসককে, তাঁরই কর্মস্থলের সেমিনার রুমে বীভৎস অত্যাচার, নারকীয় ধর্ষণ ও নির্মম হত্যা করে।

এই ঘটনা সংবাদে প্রকাশ পাওয়া মাত্র প্রথমেই উঠে এসেছিল নিরাপত্তার বিষয়। ২০১৩ সালে তৈরি হওয়া সেই আইন কোথায়? দ্য সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অব উইমেন অ্যাট ওয়ার্কপ্লেস (প্রিভেনশন, প্রোহিবিশন অ্যান্ড রিড্রেসাল) অ্যাক্ট? যা ঘটেছে তা উৎপাত বা হয়রানি নয়। তার চেয়ে অনেক বড় কিছু। অনেক বেশি ভয়ঙ্কর, নারকীয়, দুর্বিষহ। দিনরাত্রি চিকিৎসা করে, সেবা করে, মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে রাখেন যাঁরা, সেই চিকিৎসকরা যদি নিজ কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত না হতে পারেন, তা হলে আপামর জনসমাজ সন্ত্রস্ত হবে বইকি। এক গভীর কান্না সকলকে অধিকার করে নেবে, যে কান্না নির্যাতিতা ও নিহতের জন্য সমবেদনার, যে কান্না তার পরিবারের প্রতি সমানুভূতির, যে কান্না ক্রোধের, হতাশার, ত্রাসের ও দ্রোহের। ১৪ অগস্টের মহামিছিল এই সমস্ত কিছুর পরিবাহী। নারীর যে জ্বালা তার সারা জীবনের পথ চলায়, তার প্রতীক।

রাত্রি দখলের এই অনন্য প্রতিবাদের পর, বিভিন্ন পেশার মানুষ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। ডাক্তারির পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা লাগাতার কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শুরু থেকেই। শুধু নিরাপত্তার দাবি মানুষকে পথে নামিয়ে আনে না। আনে মানবিকতাবোধ। গণআন্দোলনে যোগ দেওয়ার অর্থ, আপন স্বার্থ সরিয়ে রেখে জনগণস্বার্থে নিজেকে বিলীন করে দেওয়া। আবার গণআন্দোলনের ধর্ম, বহু ব্যক্তির দাবি, প্রতিবাদ, প্রত্যাশা ও প্রশ্ন একত্রিত করে বহুস্বরকে একক কণ্ঠে পরিণত করা। অর্থাৎ, গণস্বার্থ অনেকখানি ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা করে। তাই চেনা-অচেনা হাতে হাত রেখে প্রতিবাদী মানবশৃঙ্খল গড়ে তোলা যায়।

আজকের নারীর রাত দখল তরুণী চিকিৎসকের প্রতি ঘটে যাওয়া নির্যাতন ও হনন কেন্দ্র করে উৎসারিত, কিন্তু তার অর্থ ও উদ্দেশ্য বহুতর।

নিরাপত্তা, তুমি কার

নারীর নিজস্ব ইতিহাস এমনই স্বল্প থেকে বহুধা বিস্তৃত। এমনই এক কালচেতনার প্রকাশ। লক্ষণীয় এই যে, কত সহস্র বছর নারী পুরুষের ইচ্ছেদাসী, নির্যাতিতা, অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার। কিন্তু নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার আদায় আন্দোলনের ইতিহাস সম্পূর্ণ অহিংস। পুরো মাত্রায় গণতান্ত্রিক। এমনকি ১৪ অগস্টের রাতেও, তরুণী চিকিৎসকের প্রতি অমানুষিক হিংসার প্রয়োগ সত্ত্বেও, দাবি ও প্রতিবাদ ছিল সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ও অহিংস। তথাকথিত কোনও নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত না হলেও সেই রাতের মিছিল ও সমাবেশ ছিল সুশৃঙ্খল। মানসিক দৃঢ়তা ও বিবেকবোধ থেকে যে এক ভাষা, এক স্বর গড়ে ওঠে, তার মূল শক্তি বহুস্বরের সম্মিলিত ঐক্য। তার মূল অস্ত্র পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা, সততা।

ওই রাতের পরে যে পেশাকেন্দ্রিক প্রতিবাদ মিছিল পথে নেমেছে, সেও ছিল অহিংস ও নিরস্ত্র। আর জি কর হাসপাতাল চত্বরে আন্দোলনরত ডাক্তারি ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের প্রতিবাদমঞ্চে এক দল গুন্ডা হামলা চালায়, হাসপাতালের কিছু অংশ ভাঙচুর করে, নানাবিধ হিংসার আশ্রয় নিয়ে তারা আন্দোলন পণ্ড করতে সচেষ্ট হয়, কিন্তু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ প্রতিহিংসার পথে না যাওয়ায় হিংসার আগুন ছড়াতে পারেনি। সেই দিনের ওই ঘটনার পরেও তরুণী চিকিৎসক-কেন্দ্রিক সমস্ত মিছিল ও সমাবেশ ছিল অহিংস্র। এমনকি, সাতাশে অগস্টে ‘ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা ‘নবান্ন অভিযান’-এও সমবেত মানুষেরা সংযম প্রদর্শন করেছেন। সেই রাত দখলের মিছিলের মতো নবান্ন ঘেরাওয়ের আহ্বানেও সাড়া দিয়েছেন নানা ধরনের নাগরিক। তাঁরা সরব হয়েছেন এই বলে, তাঁদের ঘরে মেয়ে আছে, তাঁরা সেই সব মেয়েদের জন্য নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।

সমাজে নিরাপত্তা না থাকলে শুধু নারী নয়, পুরুষরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে তার শিকার হবেন। নিরাপত্তা কেবল পাহারাদারি তো নয়, নিরাপত্তা মানে সামাজিক শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক তৎপরতা, নিরপেক্ষ আরক্ষা বিভাগ, নির্ভরযোগ্য আদালত ও সৎ বিচারব্যবস্থা; নিরাপত্তা মানে ভরসাযোগ্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ন্যায্য মূল্যের বাজার, বহনযোগ্য মূল্যে শিক্ষার অধিকার; নিরাপত্তার অর্থ প্রশাসনের প্রতি আস্থা ও পারস্পরিক বিশ্বাস এবং আরও অনেক কিছু। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার মূল উপাদান হৃদয়বত্তা। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা, সহানুভূতি।

সিসি ক্যামেরার মতো যন্ত্র, হাসপাতালে প্রবেশ-প্রস্থানে নিশ্ছিদ্র সুরক্ষা ব্যবস্থা, প্রচুর আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত রূপে অপরাধের মাত্রা হ্রাস করে, কিন্তু যখন সহকর্মীরা হয়ে ওঠে শিকারি, পথচলতি অচেনা হাত হয়ে ওঠে যৌননিপীড়ক, যখন শিক্ষকের দ্বারা বলাৎকার ঘটে কোনও ছাত্র বা ছাত্রীর, যখন প্রতিবেশীর দ্বারা ধর্ষিত হয় শিশু, তখন কি নিরাপত্তার সংজ্ঞা সেই মানবিক দরবারে গিয়েই পৌঁছয় না?

মনে রাখা প্রয়োজন, নিরাপত্তা শুধু যান্ত্রিক ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ হয় না, নিরাপত্তার অধিকাংশই সামাজিক সংস্কৃতি, মানবিক সততা ও শ্রদ্ধাবোধ। নিরাপত্তা এক অধিকার এবং চর্যা।

রাত দখল

নারী বহু কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। তাই ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ আহ্বান ঠিক কোন ধ্বনি, কোন কোন অর্থ বহন করে, তা বুঝতে হবে।

ইউরোপ ও আমেরিকায় নারীজাগরণের আদি পর্বে, নারীর যথাযথ অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১২ দফা দাবি নিয়ে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন এলিজ়াবেথ ক্যাডি স্ট্যান্টন, তিনি বলেছিলেন, এই অধিকারের দাবিগুলি ভুল অর্থে উপস্থাপিত হবে, ভুল ভাবে ব্যাখ্যাত হবে এবং এগুলিকে ব্যঙ্গ করা হবে। অচিরেই তিনি নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছিলেন। পুরুষেরা এই আন্দোলনকে যুক্তিহীন ও হাস্যকর ঠাউরেছিলেন, অধিকাংশ সংবাদপত্র বিকৃত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এমনকি মেয়েদের এক বিরাট সংখ্যা, সমাজে নারী-পুরুষ সমান অধিকার ও মর্যাদা পাক, এই দাবি মেনে নিতে পারেননি।

মেয়েরা স্বাধীনতার প্রতিটি বিন্দু আস্বাদ করতে চায়। তাতে কোনও ভুল নেই, অন্যায় নেই। কিন্তু মেয়েদের স্বাধীনতা বলতে মানুষ চিরকাল বুঝে আসছে চূড়ান্ত উচ্ছৃঙ্খলতা। যা কিনা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। শৃঙ্খলাবোধ এক রকম দীক্ষা, তা থাকে মনে, চিন্তায়। নিজস্ব পরিবেশ ও শিক্ষাজাত দর্শন সেই শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রক। স্বাধীন জীবনে সমস্ত পুরুষ যেমন গোল্লায় যায় না, তেমন নারীও জানে সে কী চায়। কিন্তু ভারতীয় সমাজ ও পরিবার এখনও নারীস্বাধীনতাকে ভুল বুঝে চলেছে। সর্বাগ্রে, সমাজের বহুলাংশের ধারণা হয়, নারীস্বাধীনতার অর্থ পুরুষের অধিকার খর্ব করে নারীর শাসন কায়েম করা। অর্থাৎ সহস্র বছর ধরে পুরুষতন্ত্র যা করে এসেছে, তার পাল্টা তাদের চিন্তা অধিকার করে। এ হল ভুল চিন্তা।

রাত দখলের ডাক দিয়ে ১৪ অগস্টের প্রতিবাদী রাত্রিও তেমনই শাসকের কাছে ভুল অর্থ বহন করে। ঘোষিত হয়, মেয়েদের নাইট ডিউটি বন্ধ হোক। এর চেয়ে বেশি ভুল বোঝাবুঝি আর হতে পারে না। মেয়েরা এতে যথেষ্ট অপমানিত বোধ করেন এবং এই ঘোষণা কতখানি অবান্তর, তা নিয়ে সরব হয়ে ওঠেন। ফলে ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে নারীস্বাধীনতার ইতিহাসে এমন এক দাগ পড়ল, যা ইঙ্গিত করে, নারী আজও কতখানি বঞ্চিত, বেদনার্ত ও শোষিত। চাইলেই কোনও মেয়ের স্বাধীনতা হরণ করা যায়। পরিবার তা করতে পারে, সমাজ তা করতে পারে। উভয়ত ঠিক সেটুকুই মেনে নিতে সম্মত, যা মেয়ের পেশাগত কারণ। যাকে বলে ওই ‘নাইট ডিউটি’। কারণ পরিবার মেয়েদের সুরক্ষিত রাখতে চায়। সমাজ চায় মেয়েদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে।

মেয়েরা রাতে বেরোচ্ছেন মানেই তাঁরা ধর্ষিত হবেন, এই কি সভ্য সমাজের লক্ষণ? দেশের নাগরিক, যে কোনও সময়, যে কোনও প্রান্তে নির্বিঘ্নে বিচরণ করতে পারবেন, এই কি ন্যায্য অধিকার নয়?

কিন্তু রাত্রি ও নিরাপত্তাহীনতা এমনই সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মেয়েরা যত প্রগতিশীল হয়ে উঠুক, যতই তারা নিজের সার্বিক সক্ষমতার প্রমাণ দিক, সমাজ রাত্রির সঙ্গে মেয়েদের বন্ধুত্ব হতে দিতে রাজি নয়। পেশাগত কারণে যাঁদের রাতে পথ চলতে হয়, তাঁদের নিরাপত্তা আরও নিশ্ছিদ্র করা প্রয়োজন বলেই সমাজ আজও মনে করে। অর্থাৎ, সমাজ মেয়েদের বিচরণে যত সহজে ঘেরাটোপ দিতে পারে, বিকৃতমানস পুরুষের মন পরিবর্তনের জন্য ততখানি অগ্রসর হতে পারে না। এমনই ধমকে, চমকে, মেয়েদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানবোধকে খাটো করে দেওয়া হয়। তাদের সম্পূর্ণ পুরুষনির্ভর করে রাখাই সমাজের দস্তুর। অতীতেও এমনটাই ঘটেছে শতকের পর শতক জুড়ে। অথচ, অন্ধকারে নিরাপত্তাহীনতার কথাই যদি ওঠে, পুরুষও কি সেখানে অসহায় ও বিপন্ন নয়?

স্বাধিকার বৃত্তান্ত

আজ পর্যন্ত নারী যতখানি স্বাধিকার অর্জন করেছে, নারীর সুরক্ষা ও ন্যায়াধিকারের পক্ষে যত আইন তৈরি হয়েছে, তা কোনও জাদু নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের লড়াইয়ের ফল হিসেবে সেগুলি অর্জিত হয়েছে। ভারতে নারীর জন্য সেই লড়াই শুরু করেছিলেন পুরুষরা। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি যখন স্ট্যান্টন ভাবছেন, ‘একই স্রষ্টা নারী ও পুরুষ গড়েছেন, তা হলে কেন নারীর জীবন পুরুষের চেয়ে এত আলাদা, কেন নারীর চার দিকে শুধু নিষেধ...’ সেই সময় ব্রিটিশশাসিত ভারতে রামমোহন রায় ভেবেছেন সতীদাহ বন্ধ হোক, তাঁর কিছু বছর পর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভাবছেন, মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার কথা, ভাবছেন বাল্যবিবাহ রোধ ও বিধবাবিবাহ প্রচলনের কথা।

ভারতে নারীর নারকীয় জীবনের অবসান ঘটিয়েছেন সংগ্রামী দূরদ্রষ্টা পুরুষ। সেই দূরদর্শিতা ও নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, সমানুভূতি যদি ভারতীয় ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার হতে পারত, আজকের ভারত হয়ে উঠত মহত্তর। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আজকের পুরুষ হারাতে বসেছে নারীর বিশ্বাস ও আস্থা। অথচ দুই পক্ষ মিলেই সমাজ, দুই পক্ষ মিলেই সভ্যতা। এমনকি স্বাধীন ভারতে নারীর রাজনৈতিক অধিকার একেবারে সংবিধান রচনার কাল থেকে নিশ্চিত হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে নারীকে প্রাণ দিতে হয়নি। কিন্তু একই ভাবে, পুরুষতান্ত্রিকতা কবলিত ভারতীয় সমাজ যে ভাবে নারীর প্রতি রক্ষণশীল, সে ভাবেই এ দেশে নারীর রাজনৈতিক অধিকার দীর্ঘকাল সীমাবদ্ধ ছিল ভোটদানের অধিকারে। বহু সংগ্রামের পরেও, বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে নারী-পুরুষের সমসংখ্যক প্রতিনিধিত্ব বলবৎ হয়নি।

অর্থাৎ, নারীর প্রতি পুরুষের মানসিকতা বিগত তিন শতক যাবৎ কখনও উদার ও ন্যায়বোধসম্পন্ন, কখনও তা সঙ্কীর্ণ ও শোষণবাদী। আজও অধিকাংশ পুরুষের চোখে নারীমাত্রেই পুরুষের অধিকৃত। নারীমাত্রেই যৌনতার উপকরণ। নারীমাত্রেই দুর্বল ও সহজলভ্য। পৃথিবীর সর্বত্র কমবেশি এই দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান। তাই নারী নির্যাতন, যৌন নিগ্রহ, গার্হস্থ হিংসার রোজনামচা প্রত্যেক দেশের সমস্যা।

নারীর নিজস্ব পথ

নারী সমাজে নিজের অবস্থান বিষয়ে সচেতন হওয়ার পর মানবেতিহাস দুই ধারায় বিভাজিত হতে বাধ্য হয়। কারণ, সভ্যতার ইতিহাসে নারী ও পুরুষের পথ চলা একই প্রক্রিয়ায় হয়নি। নৃতাত্ত্বিক মতে, আদিম জনগোষ্ঠী ছিল মাতৃতান্ত্রিক। কিন্তু সম্পদের উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজ সন্তানের নিশ্চয়তা নির্ণয়ের প্রবণতা নারীকে বন্দি করে। অর্থাৎ, এক অর্থে সম্পদ সঞ্চয় নারীর বন্দিত্বের অন্যতম কারণ। মানবসভ্যতার আদি ইতিহাসে পুরুষ নারীকে পালিত পশুর মতো ব্যবহার করেছে। সেই জায়গা থেকে আজকের নারী যতখানি সামাজিক অধিকার আদায় করেছে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছে, তা কোনও ভাবেই যথেষ্ট বলা চলে না সামগ্রিক ভাবে সমাজমানসের জন্য।

স্ট্যান্টন বলেছিলেন, নারীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্য প্রকৃতপক্ষে এক সচল সংগ্রাম। তাঁর দূরদর্শিতা বিস্ময়কর। আমাদের দেশে আজও লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে সংগ্রাম চলেছে, চলেছে নারী ও পুরুষকর্মীর সমান পারিশ্রমিকের দাবি, শিশুকন্যার স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকারের দাবি, কন্যাভ্রূণ হত্যার বিরুদ্ধে প্রচার।

আইনত এ দেশে উল্লিখিত বিষয়গুলি সমতা প্রাপ্ত। কিন্তু আইন থাকা মানেই সমাজমানসের পরিবর্তন নয়। বিবাহে পণ নেওয়া আইনত অপরাধ, কিন্তু এই প্রথা বন্ধ করতে পারা যায়নি। এ দেশে নানা ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের বাস। এক-এক সমাজ এক-এক নিয়মে চলে। আজও পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোয় মেয়েরা বহু ক্ষেত্রে প্রাচীন রীতিনীতি মেনে চলতে বাধ্য হয়। এই ব্যবস্থার ভিতর সব সময়ই ন্যায়-অন্যায়ের সংঘাত পরিবারে নারী বনাম পুরুষ এমন নয়, পিতৃতান্ত্রিকতার মধ্যে নিহিত স্বৈরাচার নারীকেও গ্রাস করে এবং পরিবারের প্রধান হিসেবে নারীও নারীর প্রতি অত্যাচারী হয়ে উঠতে পারেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যা ঘটে তা হল গার্হস্থ হিংসা। মেয়েকে অল্প বয়সে বিবাহ করতে বাধ্য করা, নিজের জীবনসঙ্গী নির্বাচনের অধিকার কেড়ে নেওয়া, জাত, ধর্ম, বা প্রচলিত নিয়ম মানতে বাধ্য করা, আরও কত।

এ গেল বিবাহ-পূর্ব জীবনের কথা, বিবাহ-পরবর্তী জীবন আরও অনেক বেশি সঙ্কটপূর্ণ। অনেক বেশি নির্মম ও অযৌক্তিক প্রত্যাশায় ঠাসা। যেমন, বধূর কাছে পরিবারের কাম্য, সে যেন পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়। বহু পরিবারে এই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ না হলে বধূকে অত্যাচারিত হতে হয়।

অন্তহীন ক্ষত

এক সুস্থ সুন্দর জীবনের জন্য শিক্ষা, তার দ্বারা জীবিকা অর্জন এবং স্বাবলম্বন হলেই কিন্তু নারীর সামাজিক সমস্যা সম্পূর্ণ দূর হয় না। আমেরিকান নারীবাদী লেখক ও কর্মী বেটি ফ্রিডান ১৯৬৩ সালে একটি বই লেখেন। ‘দ্য ফেমিনিন মিস্টিক’ নামের বইটিতে ফ্রিডান দেখিয়েছিলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে মেয়েদের সমস্যাগুলি কী। পশ্চিমি সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় যা যা উল্লেখ্য ছিল, বর্তমানে ভারতীয় শিক্ষিত নিম্ন, মধ্য, উচ্চবিত্তের সমাজে তার অধিকাংশই বিরাজমান। পশ্চিমে মধ্যবয়সে পৌঁছে বিবাহবিচ্ছেদের সমস্যা খুবই বেশি। এ দেশে বিবাহ এখনও সারা জীবনের বন্ধন মনে করা হয়। বিশেষ কোনও সমস্যা না থাকলে বৈবাহিক প্রতিষ্ঠান ও পারিবারিকতা বজায় রাখতে চান নারী-পুরুষ উভয়েই। এ ক্ষেত্রে, ‘দ্য ফেমিনিন মিস্টিক’-এর সঙ্গে বর্তমান ভারতীয় নারীর তুল্য বিষয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার প্রতিপালনের জন্য মেয়েরা স্বোপার্জিত জীবিকা ত্যাগ করেন, স্বামী তাঁর অর্জিত স্থান বজায় রাখেন। সন্তান লালনপালন ও পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন নারী। যখন তাঁর সেই ফেলে আসা দক্ষতা ও পেশা পুনরর্জন করার সময় পান, তখন সেই সুযোগ আর থাকে না। বয়স অন্তরায় হয়। দীর্ঘ অনভিজ্ঞতা পরিচয়পত্রে ছায়া ফেলে। ভারতের মতো জনবহুল দেশে চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তির পক্ষে নতুন করে জীবিকা সন্ধান খুবই কঠিন। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারে উদ্বৃত্ত অর্থ এমন পরিমাণে থাকে না যা দিয়ে স্বাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করা যায়। জীবনের এই পর্বে পরিবারকেন্দ্রিক নারীর মধ্যে জন্ম নেয় হতাশা ও একাকিত্ববোধ। নিজেকে তাঁরা অপ্রয়োজনীয় ভাবতে থাকেন। অর্থাৎ পারিবারিকতার প্রধান বলি হয়ে ওঠেন নারী, আজও।

আরও কিছু সমস্যা, যা পশ্চিমে এখনও অবিরল, প্রাচ্যেও ঘটমান, তা হল গার্হস্থ হিংসা ও যৌন নির্যাতন। যা সুগভীর বেদনার ও অপরিসীম লজ্জার তা হল, পরিবারে শিশুকন্যাকে আত্মীয়, বন্ধু, পরিজন পুরুষের কাছ থেকে আগলে রাখা। কখন কার ভিতরে জেগে উঠবে যৌন কামনা, কেউ জানে না। সকল পুরুষই এমন তা কখনও নয়, সেই বিষয়টি আরও যন্ত্রণা ও গ্লানির জন্ম দেয় যে, যিনি সৎ ও সংযমী, তিনিও এই সন্দেহের তালিকার বাইরে থাকতে পারেন না। এই মানসিক সন্ত্রাসের থেকে মুক্তি দেবে কে? কোন তত্ত্ব? কোন স্বাধীনতার আন্দোলন?

এক জন মা, মাতৃস্থানীয়া, তাঁর কন্যার বিষয়ে নিশ্চিন্ত হবেন কবে? কী ভাবে?

যে তরুণী চিকিৎসকের নারকীয় হত্যাকাণ্ড ১৪ অগস্ট মেয়েদের রাত্রি দখলের প্রণোদনা, সেই চিকিৎসকের মা নিশ্চিত ভাবে বিকৃতমানস পুরুষের কবল থেকে মেয়েকে আগলে চলেছিলেন। সেই বেদনাজর্জর ইতিকথা জানেন এক জন মা-ই। হয়তো এই বেলা তিনি নিশ্চিন্ত ছিলেন, ডাক্তার মেয়ে নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছেন, শীঘ্রই তাঁদের পরিণয় সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। সেই নিশ্চিন্তি দলে, পিষে, খণ্ড খণ্ড করে নষ্ট করে দিয়ে গেল কেউ বা কারা। এর পর কি মায়েরা, মেয়েরা সমাজে নিরাপদ, নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারে কতিপয় সিসি ক্যামেরার ভরসায়?

প্রচলিত কথায়, মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু। এই প্রবচন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া উচিত। নারী ব্যক্তিমাত্র। দু’জন নারী পরস্পর প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারেন, ভিন্ন মতাদর্শী হতে পারেন, ক্ষতিও করতে পারেন পরস্পরের। এই সমস্তই মানুষ হিসেবে নারীর মানস। ঠিক একই ভাবে পুরুষও কি পরস্পর প্রতিহিংস্র ও যুযুধান হয়ে ওঠে না? সেখানে বলা যাবে কি, পুরুষই পুরুষের শত্রু? এই ধারণাগুলি একেবারেই ভ্রান্ত এবং বিভ্রান্তিকর। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার অন্যতম দিক হল নারীকে খাটো করা। এবং নারী কেবল পুরুষের বিকৃত যৌনলালসার শিকার, তা নয়। পুরুষতান্ত্রিকতার মধ্যে যে অহং, যে আমিত্বসর্বস্বতা, যা চেতনা অধিকার করে, ভাবে আমি শক্তিমান, আমি প্রভু, নারী আমার অঙ্গুলিহেলন ব্যতীত চলবে না— সেই মিথ্যা অহমিকাও নারীকে আক্রমণ করে অহরহ। ঘরে কিংবা বাইরে। প্রেমে কিংবা অপ্রেমে।

পানশালায় কর্তব্যরত জেসিকা লালের কথা ভুলে যাওয়ার নয়। তাঁকে হত্যা করেছিল পৌরুষের অহঙ্কার, ক্ষমতার দর্প। জেসিকা সুবিচার পাননি। কিন্তু জেসিকার বোন এই হত্যার প্রতিবাদে জনমত তৈরিতে উদ্যোগী হন। এই সময় মানুষের হাতে এসেছে সেলফোন। তার মাধ্যমে বার্তা ছড়িয়ে পড়ে জেসিকা লালের প্রাপ্য সুবিচারের দাবি। এবং অনেকগুলি বছর পর অপরাধী দণ্ডিত হয়।

মেয়েরা মেয়েদের পাশে থাকে, থাকবে। আজ নারীর সহায়ক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। জেসিকা লালের মতোই আজকের আরও উন্নত সেলফোন ও বৈদ্যুতিন সংযোগ মাধ্যমগুলি অপরিহার্য ভূমিকা নিয়েছে ১৪ অগস্ট ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ এই বার্তা দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে, মেয়েদের একত্রিত করতে।

এই সময়, নারীর ইতিহাস পৃথক ভাবে লিখিত হচ্ছে। সেই ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে নারীমুক্তির সম্পর্ক। দেখা যাচ্ছে, গার্হস্থ জীবনে নারীর দাসত্ব যত ভারী শেকলে বাঁধা ছিল, তার একটি একটি করে খুলে পড়েছে এক-একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তিগত আবিষ্কারে। যেমন এই সেলফোনের সহায়তা। সেই রকম, প্র্যাম, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং আরও কত কী। এই আবিষ্কারগুলির বিপরীত দিক থেকে দেখলে, অর্থাৎ যখন এই বস্তুগুলি ছিলও না, সেই সময়, নারীরা কেমন করে কাজগুলি সামলাতেন, কতখানি পরিশ্রম করতে হত তাঁদের, কত দক্ষ ছিলেন তাঁরা, তাঁদের সৃজনশীলতা ও শারীরিক ক্ষমতার সবটাই তাঁরা ব্যয় করেছেন পরিবারের জন্য। বিনিময়ে তাঁরা কিছুই পাননি। সম্মান, শিক্ষার অধিকার, আর্থিক স্বাধীনতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা, নিজের শরীর বিষয় ও যৌন স্বাধীনতা, কিছুই নয়।

আজকের নারী স্বাধীন, প্রগতিশীল, সর্বকর্মপারঙ্গমা। বহুতর বর্বরতার ইতিহাস ও উদাহরণ সত্ত্বেও নারী পুরুষকে বর্জন করেনি। আজকের পুরুষকে নারীর পাশে থাকার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নারীর প্রতি এবং নিজের প্রতি ধারণায় ভুলত্রুটি শুধরে উৎকর্ষ আয়ত্ত করতে হবে। মহাকাল নিরন্তর সেই ইঙ্গিত দিয়ে চলেছে। বৈরিতা নয়, নারী ও পুরুষের মধ্যে সখ্য, সমানুভূতি ও ভালবাসাই মানবসভ্যতার এগিয়ে চলার পাথেয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Against Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy