Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
অতুলপ্রসাদের গানের বিষাদ থেকে বিদ্যাপতির পদের আর্তি, প্রাণবন্ত হয়ে উঠত তাঁর গলায়
Rabindranath Tagore

তুমি যখন গাও, মনে হয় আমার রচনা সার্থক

কণ্ঠশিল্পী সাহানা দেবীকে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিশুবয়সেই গান গেয়ে মুগ্ধ করেছিলেন কবিকে। এ বার তাঁর ১২৫তম বর্ষের সূচনা।

সুকণ্ঠী: সাহানা দেবী। শিশুকাল থেকে সঙ্গীতই ছিল তাঁর জগৎ।

সুকণ্ঠী: সাহানা দেবী। শিশুকাল থেকে সঙ্গীতই ছিল তাঁর জগৎ।

অভীক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২১ ০৭:২০
Share: Save:

তাঁর প্রিয় ঝুনু-কে রবীন্দ্রনাথ এক বার বলেছিলেন, ‘তোমাকেই দেখলুম সংসার থেকেও গান তোমার কাছে এত প্রিয়। মেয়েদের মধ্যে এটা কম দেখা যায়। তারা সংসার করতে বড্ড ভালবাসে।’ ঝুনু হলেন সঙ্গীতসাধিকা সাহানা দেবী। রবীন্দ্রসঙ্গীতেই যাঁর প্রধান পরিচিতি। কবি তাঁর সঙ্গীতকে সার্থক হয়ে উঠতে দেখতেন সাহানার গানে। ছোট থেকে বৈচিত্রময় সুরধারার পথে গড়ে ওঠেন সাহানা দেবী। যার ভিত্তি ভক্তি ও প্রেমে ভরা আধ্যাত্মিক দর্শন।

১৮৯৭ সালের মে মাসে ফরিদপুরের এক ব্রাহ্ম পরিবারে সাহানা দেবীর জন্ম। পরিবারে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের চর্চা ছিল। পিতামহ সাধক কালীনারায়ণ গুপ্ত ছিলেন সমাজসেবক, ব্রাহ্মধর্মের প্রচারক। তিনি বহু ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। বাবা প্যারীমোহন গুপ্ত সিভিল সার্জেন এবং জ্যাঠামশাই প্রখ্যাত আইসিএস কে জি গুপ্ত (কৃষ্ণগোবিন্দ)। সাহানার দেড় বছর বয়সে বাবা প্রয়াত হন। মা তরলা দেবীর সঙ্গে তাঁকে চলে আসতে হয় কলকাতার মামার বাড়িতে। রসা রোডের এই বাড়িতেই তাঁর বড় হওয়া। শিল্প, শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বদেশপ্রেম ও সঙ্গীতে আলোকিত এই পরিবার। সাহানার মামাবাবু ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। বিশিষ্ট দেশনেতা ও ব্যারিস্টার হলেও, আজীবন তিনি ছিলেন সঙ্গীতের মানুষ। সঙ্গীত নিয়ে লেখালিখি করেছেন, রচনা করেছেন গানও‌। ব্রাহ্ম হয়েও দেশবন্ধু ছিলেন বৈষ্ণব গীতিকবিতার প্রেমরসের অনুরক্ত। বাড়িতে প্রায়ই বসাতেন কীর্তনের আসর। ছোট থেকে এই সব গান অন্তরে প্রবেশ করেছিল সাহানার। দেশবন্ধুর বোন, অর্থাৎ সাহানার মাসি অমলা দাশ ছিলেন অসামান্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। বিশ শতকের গোড়ায়, রেকর্ডের আদিযুগে ইনি ‘মিস দাশ (অ্যামেচার)’ নামে অনেক রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন রেকর্ডে। সে যুগে একমাত্র তিনিই শান্তিনিকেতনি সঙ্গীত-শিক্ষা নিয়ে যথাযথ ভাবনির্ভর রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। এই মাসির কাছেই সাহানার প্রথম সঙ্গীত-শিক্ষা। মামারবাড়ির অন্য যাঁরা গানে উজ্জ্বল ছিলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েক জন হলেন কনক বিশ্বাস, সতী দেবী (রুমা গুহঠাকুরতার মা), সুপ্রভা রায় (সুকুমার-পত্নী), বিজয়া দাশ (সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী) প্রমুখ।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নিবিড় যোগ ছিল রসা রোডের বাড়ির। প্রায়ই আসতেন তিনি। এলেই কবিতা, গান, গল্পের আসর বসে যেত। এখানেই শিশু বয়সে সাহানা কবিকে দেখেন। প্রথম দর্শনেই তাঁর মনে হয়েছিল ‘কী সুন্দর চেহারা, কোথায় যেন যিশুখ্রিস্টের আদল আসে— গৌরবর্ণ, লম্বা, দোহারা, চোখ-নাক-মুখ সব যেন দেখবার মত। দেখলে চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।’ এই সময়েই এক বার মাসির কাছে শেখা ‘ঘুরে ফিরে এমনি করে ছড়িয়ে দে রে ফাগের রাশি...’ গানটি গেয়ে রবীন্দ্রনাথকে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন ছোট্ট সাহানা। কবির নজরে তখন থেকেই পড়ে গেলেন।

১৯০৫-০৬ সাল নাগাদ ভবানীপুরের পোড়াবাজার মাঠে আয়োজিত এক প্রদর্শনীতে অমলা দাশের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয় ‘মায়ার খেলা’ ও ‘কালমৃগয়া’। যার মধ্যে দ্বিতীয়টিতে ঋষিকুমার-এর ভূমিকায় মাত্র আট বছর বয়সে গান ও অভিনয়ে মাতিয়ে দিয়েছিলেন সাহানা দেবী। আবার ১৪-১৫ বছর বয়সে এক বার দেশবন্ধু তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুই যদি আমার এই গানটিতে ভাল সুর দিতে পারিস তবে তোকে একটা হীরের নেকলেস দেব।’ সাহানার সুরারোপ এতটাই পছন্দ হল তাঁর মামাবাবুর, নেকলেস তো দিলেনই, এক দিন বাড়িতে বিপিনচন্দ্র পাল এলে, তাঁকেও শোনাতে বললেন। তিনিও মুগ্ধ হন। গানটি ছিল, ‘কেন ডাকো অমন করে/ ওগো আমার প্রাণের হরি...’।

মাঘোৎসব উপলক্ষে ১৫ বছর বয়সে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে প্রথম গান করেন সাহানা। শুধু রবীন্দ্রনাথ নন, ঠাকুরবাড়ির প্রত্যেকেই ছিলেন তাঁর গানের অনুরাগী। কবিরই পরামর্শে বিষ্ণুপুরের সঙ্গীত-রত্নাকর সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সঙ্গীত-শিক্ষা। অতুলনীয় কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি সুরেনবাবু ছিলেন এক জন যশস্বী স্বরলিপিকার। অনেক রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপি করেছেন তিনি। তাঁর শিক্ষায় স্বরলিপিকরণেও যথেষ্ট দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন সাহানা দেবী।

তাঁর পিসতুতো দাদা বিশিষ্ট সঙ্গীতমনীষী অতুলপ্রসাদ সেন। অতুলদার অনেক গান তিনি গেয়েছেন। এ গানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষাদময়তা যে দার্শনিক স্তরে গিয়ে পৌঁছয়, তা অপূর্ব ভঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে সাহানা দেবীর পরিবেশনে। মাঝে মাঝেই দাদার সঙ্গে বসত গানের আসর। অনেক সময়েই সেখানে থাকতেন রবীন্দ্রনাথও। অতুলপ্রসাদের লখনউয়ের বাড়ির আসর জমে উঠত ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, দিলীপকুমার রায়ের উপস্থিতিতে। এই সব শিল্পীদের গান শোনা ও সঙ্গীত-সংক্রান্ত আলোচনায় সমৃদ্ধ হতেন সাহানা। পরবর্তী কালে অতুলপ্রসাদের বহু গানের স্বরলিপিও করেছেন সাহানা দেবী।

মামার বাড়ি ও দেশবন্ধুর প্রভাবে স্বদেশি আন্দোলনের আঁচ তাঁর উপর পড়েছিল। ১৯২০ সালে কলকাতায় লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন বসে। এখানে সরলা দেবী চৌধুরানীর পরিচালনায় সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত ‘বন্দে মাতরম্’ গানে গলা মিলিয়েছিলেন সাহানা। ১৯২২ সালের গয়া-কংগ্রেসে সভাপতি ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন। এখানেও সাহানা দেবী ও সতী দেবী মিলে গেয়েছিলেন ‘বন্দে মাতরম্’। স্বদেশি আন্দোলন সম্পর্কে নিজের সুচিন্তিত বক্তব্য আত্মকথা ‘স্মৃতির খেয়া’য় লিখেছেন সাহানা দেবী।

সারা জীবন রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর মনোজগতের শ্রেষ্ঠ আসনে। কবিও তাঁকে বরাবর ভীষণ কাছের বলে ভাবতেন। ১৯১৬ সালে ডাক্তার বিজয়কুমার বসুর সঙ্গে বিয়ে হয় সাহানা দেবীর। তিনি থাকতেন কাশীতে। ফলে, ১৯১৭ থেকে ১৯২২ অবধি সাহানা ছিলেন সেখানকার বাসিন্দা। ওই সময়ে রবীন্দ্রনাথ সেখানে গিয়ে কিছু দিন ছিলেন এবং তখন সাহানাকে শিখিয়েছিলেন বেশ কয়েকটি গান। সাহানা দেবীর দাম্পত্যজীবন সুখের হয়নি। পাঁচ বছরের মধ্যেই ফিরে এসেছিলেন কাশী থেকে। নিদারুণ মানসিক সঙ্কটে চিঠি লিখলেন রবীন্দ্রনাথকে। কবি যে উত্তর দিলেন, তাতে নতুন করে জেগে ওঠার মন্ত্র ছিল। আবারও গানে ফিরলেন সাহানা। ১৯২৩ সালের অগস্ট মাসে কলকাতার এম্পায়ার রঙ্গমঞ্চে চার দিন ধরে অভিনীত হয় ‘বিসর্জন’ নাটক। জয়সিংহের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ ও দিনেন্দ্রনাথ রঘুপতি। এ নাটকে রবীন্দ্রনাথ সাহানাকে নিয়েছিলেন গানের জন্যে। তখন এ নাটকে তিনটি গান ছিল, ‘ওগো পুরবাসী’, ‘আমি একলা চলেছি এ ভবে’ এবং ‘থাকতে আর তো পারলি নে মা’। কিন্তু, যে হেতু সাহানা গাইবে, তাই আরও সাতটি গান রবীন্দ্রনাথ জুড়লেন নাটকে। তার মধ্যে দু’টি পুরনো গান, ‘তিমিরদুয়ার খোলো’ ও ‘দিন ফুরালো হে সংসারী’। এর সঙ্গে নতুন করে লিখলেন পাঁচটি গান— ‘আমার আঁধার ভালো’, ‘কোন ভীরুকে ভয় দেখাবি’, ‘আঁধার রাতে একলা পাগল’, ‘আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে’ এবং ‘জয় জয় পরমা নিষ্কৃতি হে নমি নমি’। গানগুলি জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বসে এক এক করে শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। নিজের গান, সাহানা দেবীর গলায় শোনার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল কবির, এ তার অন্যতম প্রমাণ! সাহানাও ভীষণ ভরসা করতেন তাঁকে। ১৯২৬ সালে যখন তিনি ক্ষয়রোগে আক্রান্ত, তখন অসহায় হয়ে রবীন্দ্রনাথের কাছে আশ্রয় চেয়ে চিঠি লিখলেন। কবি সাহানাকে আশ্রমের একটি আলাদা বাড়িতে রেখে, নিজের হাতে সেবা-চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে সুস্থ করে তুলেছিলেন।

সাহানার গানে মুগ্ধ ছিলেন দিনেন্দ্রনাথও। এক বার তিনি জোড়াসাঁকোর বাড়ি থেকে সাহানাকে ফোন করে ডাকলেন‌। কয়েকটি গান তাঁকে শেখাবেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও দক্ষিণের রসা রোড থেকে উত্তর কলকাতায় যাওয়ার মতো যানবাহন মিলল না। তখন ফোনেই দিনুদার কাছ থেকে ১৪টি গান শিখে নিলেন সাহানা। শুনে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন— ‘এমন গান-পাগলা আমি আর কোনো মেয়েকে দেখলুম না।’

শুধু রবীন্দ্রনাথ বা অতুলপ্রসাদের গান নয়, ভজন, কীর্তন, হিন্দি ভক্তিগীতিও গাইতেন নানা জায়গায়। যার মধ্যে কিছু ধরা আছে রেকর্ড-রেডিয়োয়। নলিনীকান্ত সরকার ‘আসা যাওয়ার মাঝখানে’ নামে স্মৃতিকথায় লিখেছেন, একটি আসরে সাহানা দেবীর গলায় বিদ্যাপতির পদ, ‘মাধব বহুত মিনতি করি’ শুনে তাঁর মনে হয়েছিল, ‘এই মিনতি, এই প্রার্থনা যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠল সাহানা দেবীর কণ্ঠে।’ আর এক বার, দিলীপকুমার রায়ের থিয়েটার রোডের বাড়িতে নলিনীকান্ত দেখেছিলেন সাহানা দেবীর নৃত্য। ‘নৃত্যের তালে তালে’ গানটি নিজেই গেয়ে যে অপূর্ব নাচ সে দিন তিনি নেচেছিলেন, তা দেখে প্রত্যেকেই মুগ্ধ হন। তিনি ছিলেন এক জন স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্পী।

দিলীপকুমার রায়ের সংস্পর্শে এসে সাহানা দেবীর শেষ জীবন মোড় নিয়েছিল আধ্যাত্মিক অভিমুখে। বিপ্লবী অরবিন্দকে তিনি দেখেছিলেন অনেক আগেই। ঋষি অরবিন্দও তাঁকে প্রভাবিত করেছিলেন। দিলীপকুমারের সান্নিধ্যলাভের পর ১৯২৮ সালে সাহানা দেবী চলে গেলেন পন্ডিচেরির আশ্রমে। আশ্রয় নিলেন ঋষি অরবিন্দ ও শ্রীমার চরণে। নিভৃতচারী সাধিকা-জীবন কাটালেন বাকিটা সময় (প্রয়াণ ৬ এপ্রিল, ১৯৯০)। যদিও রেডিয়ো-রেকর্ডে গান গাওয়া তার পর আরও কয়েক বছর অবধি বজায় ছিল।

১৯২৫ সালে সাহানা দেবী প্রথম বার রেকর্ডে গাইলেন দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত— ‘আমার যাবার বেলায়’ এবং ‘যদি তারে নাই চিনি গো’। এর পর থেকে বিভিন্ন রেকর্ড-ক্যাসেটে তাঁর গলায় শোনা গেছে ‘তোমায় নতুন করে পাবো বলে’, ‘তরী আমার হঠাৎ ডুবে যায়’, ‘কেন যামিনী না যেতে’, ‘পিপাসা হায় না মিটিল’ ইত্যাদি রবীন্দ্রসঙ্গীত। অতুলপ্রসাদ সেনের গানের মধ্যে রয়েছে, ‘মিছে তুই ভাবিস রে মন’, ‘হৃদে জাগে শুধু বিষাদরাগিণী’, ‘আমারে ভেঙে ভেঙে করো’, ‘কি আর চাহিব বলো’ ইত্যাদি। কয়েকটি হিন্দি গানও তাঁর আছে রেকর্ডে। যেমন— ১৯৩১ সালে ‘হামারি ছোটিসি দুনিয়া’ (কথা: পণ্ডিত ভূষণ, সুর: প্রতাপ মুখোপাধ্যায়), ১৯৩২ সালে ‘বালম রে ইয়াদ করো’ (কথা: পণ্ডিত ইন্দ্র, সুর: জ্ঞান দত্ত), ১৯৩৭-এ ‘দরশন দো গিরিধারী’ (কথা: কে বি লাল, সুর: অশোক ঘোষ)। প্রসঙ্গত, সাহানা দেবীর কাছে ‘মহারাজা কেওয়াড়িয়া খোলো’ ও ‘প্রেম ডগরিয়া’ হিন্দি গান দুটি শুনে রবীন্দ্রনাথ তৈরি করেছিলেন যথাক্রমে, ‘ওগো পথের সাথী নমি বারম্বার’ ও ‘যাওয়া আসারই এই কি খেলা’।

সাহানা দেবীর গানে আছে সাত সুরের জোয়ারিতে ভরা কণ্ঠ-প্রক্ষেপণ, বাণী উচ্চারণে উপযুক্ত নাটকীয়তা এবং সুরময় আত্মনিবেদন। গানের সঙ্গে শিল্পীর একাত্মতার কথা তাঁর লেখায় ও মন্তব্যে দেখা গেছে। পরবর্তী কালের রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়ন-রীতি ও শুদ্ধতা রক্ষা প্রসঙ্গে সাহানা দেবী লিখেছিলেন, ‘যেভাবে আজকাল তাঁর গান গাওয়া হয়ে থাকে... তার মাঝে রবীন্দ্রনাথের গানকে খুঁজে পাই না। সবচেয়ে বেশি বেদনা বোধ করি স্বরলিপির নিগড়ে বাঁধা তার বন্দীদশা দেখে। চারিদিকে নিয়ম-কানুনের আট-ঘাট বেঁধে তাকে এমন একটা অবস্থায় এনে দাঁড় করানো হয়েছে যে, গাইবার সময় এইসব নিয়মকানুনের চোখরাঙানীই যেন মনে হয়, গায়কের মনের ও চোখের সামনে বড়ো হয়ে, বাধা হয়ে ওঠে তার নিজেকে দেবার পথে... তার প্রাণপ্রতিষ্ঠার পথে।’ এই সাহানা দেবীর গান সম্পর্কে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং বলেছিলেন, ‘তুমি যখন আমার গান করো শুনে মনে হয় আমার রচনা সার্থক হয়েছে, সে গানে যতখানি আমি আছি ততখানি ঝুনুও আছে, এই মিলনের দ্বারা যে পূর্ণতা ঘটে সেটার জন্য রচয়িতার সাগ্রহ প্রতীক্ষা আছে।’

তথ্যঋণ: স্মৃতির খেয়া: সাহানা দেবী (প্রাইমা পাবলিকেশনস, ২০০৪); আসা যাওয়ার মাঝখানে (দ্বিতীয় পর্ব): নলিনীকান্ত সরকার
(মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, ১৯৮৫)

কৃতজ্ঞতা: সঞ্জয় সেনগুপ্ত, সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy