জনসমুদ্র: কলকাতা বইমেলার এক পরিচিত ছবি।
সত্তর দশকের কলকাতা। শীতকালের নলেন গুড়, মিঠে রোদ্দুর কমলা রঙের উলের বলের মতো গড়িয়ে যায় ঘাসের উপর। কমলালেবুরঙা সেই রোদ্দুরে গা ভিজিয়ে আমরা ইস্কুলে সত্যিকারের কমলালেবুর খোসা ছিঁড়ে ছিঁড়ে লম্বা ফিতে বানাই। হাফ-ইয়ার্লি আর অ্যানুয়াল (চলতি ভাষায় ‘হাপিয়ালি-অ্যানুয়ালি’) দু’রকম পরীক্ষার মধ্যিখানে পুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটার মতো কয়েকটি প্রিয় পার্বণের দিকে তৃষিত নয়নে চেয়ে থাকি। সরস্বতী পুজোর আগে কুল খাই না, যদি মা সরস্বতী ফেল করিয়ে দেন! পাড়ায় ওই পুজোর চাঁদা চাইতে এলে দুষ্টু ছেলেদের ‘সরস্বতী’ বানান লিখে দেখাতে বলেন গুরুজনেরা। অর্থাৎ কিনা লেখাপড়া, বিদ্যার্জন ব্যাপারটা তখনও তামাদি হয়ে যায়নি ভ্যালু সিস্টেম থেকে। কিছু মূল্য বাড়ে বই-টই পড়লে। তার উপর দুলে দুলে আমরা মুখস্থ করেছি ‘বিদ্যা দদাতি বিনয়ম্’, যদিও কলেজ স্ট্রিটে কফি হাউসে জ্ঞানের অহঙ্কারে মটমট করেন আঁতেলেকচুয়ালরা। প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ধ্বজাধারীদের তখন ‘হাই টাইম’।
এরই মধ্যে আমাদের জীবনে এসে পড়ল এক নতুন উৎসব। স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন। ১৯৭৬ সাল। জানুয়ারিতে নতুন বই কিশলয়, ইংরেজি রিডার (কালো কুটকুটে ছাপা অতি আনফ্রেন্ডলি), কয়েকটা র্যাপিড রিডার গল্পের বই (যেগুলো স্কুল শুরু হওয়ার আগেই পড়া শেষ) বা রুল-টানা খাতার গন্ধ তখনও পুরনো হয়নি, ব্রাউন পেপার দিয়ে মলাট দিয়ে লেবেলে নিজের নাম, শ্রেণি ক্রমিক সংখ্যা লিখে তখনও বেশ একটা মশগুল ভাব। ময়দানে তখন হরেক মেলা চলে, শাড়ি-জামা-জুতো থেকে শুরু করে বঙ্গসংস্কৃতিরও। এক দিন স্কুলের দিদিরা (আমরা যাঁদের কোনও দিন ম্যাম বা দিদিমণি বলিনি) জানালেন, ‘বইমেলা’ হচ্ছে। মেলাটির নামের সঙ্গে কেমন একটা আভিজাত্য জড়িয়ে গেল তখুনি! একমাত্র এই মেলাটিতেই স্কুল থেকে বাসে করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হবে। এ রকম ‘শিক্ষামূলক ভ্রমণ’ তো কেবল এক-আধ বার হয় বছরে, বালিগঞ্জে বিজ্ঞানের জাদুঘর বা চৌরঙ্গির জাদুঘরে। সেটি গিল্ডের প্রথম মেলা। সরকারি মেলা আর গিল্ডের মেলা এর পর কয়েক বছর পাশাপাশি আলাদা আলাদা করে চলবে কলকাতায়। দুটোই ময়দানে। রবীন্দ্র সদনের বিপরীতে। এর পর দু’টি মেলা মিলে যাবে, তার পর তা যাবে পার্ক স্ট্রিটে নেহরুর মূর্তির পিছনের দিকের ময়দানে, তার বহুযুগ পর মিলনমেলায় এবং আপাতত তিনি ঠাঁই নিয়েছেন বিধাননগর সেন্ট্রাল পার্কে। বলা যেতে পারে, আমরা সেই প্যালিয়োলিথিক যুগের লোক, যারা প্রথম বইমেলা জ্ঞানচক্ষুতে চাক্ষুষ করেছিল, এবং যারা এই সময়ের আশপাশেই কোনও এক মেলায় প্রথম চাউমিনের স্বাদগ্রহণের মধ্য দিয়ে চাউমিন নামক বস্তুটির বঙ্গজীবনে শুভাগমনও প্রত্যক্ষ করেছিল। মনে করিয়ে দিই, মেলায় মেলায় তখনও বিরিয়ানির স্টল হয়নি, কিন্তু বইমেলায় একটা পাত্রে ছ’টা ফুচকা দিত, তার দাম শুনে সবার চোখ গোল গোল হয়ে যেত... পাড়ার মোড়ে তখনও দশ পয়সায় ছ’টি ফুচকা পাওয়া যায়!
মনে আছে, নির্ধারিত দিনে বই কেনার জন্য আমরা বাড়ি থেকে টাকা এনেছিলাম সামান্যই। মেরেকেটে পঞ্চাশও হবে কি? তবে বই কেনার জন্য নয়, বই দেখার জন্যই বইমেলা, সেই সময়ে মনে এ কথাটি গেঁথে যায়। স্কুলড্রেস পরা আমাদের এক দল বারো-তেরো বছুরে দু’বিনুনির কিশোরী, ইউনিফর্মের বোতল-সবুজরঙা সোয়েটার খুলে কোমরে জড়িয়ে ধুলোর মধ্যে দৌড়োদৌড়ি দাপাদাপি করে এক স্টল থেকে আর এক স্টলে গিয়েছি আর বইয়ের গন্ধ শুঁকেছি। ইংরেজি বইয়ের গন্ধ এক রকম, বাংলা বইয়ের আর এক। খুব দাম কিন্তু বড় লোভ এনিড ব্লাইটনের ‘ফেমাস ফাইভ’-এ। বাংলা মিডিয়ামের ইংরেজি দিদিরা বলেন, “ইংরেজি ভাল করতে এনিড ব্লাইটন পড়ো। অথবা পড়ো লুইজা এম অ্যালকট-এর ‘লিটল উইমেন’।”
স্কুল থেকে সবাই মিলে বাসে করে যাওয়া বইমেলা, তার এক রকমের মজা। তার দু’দিন পরেই মা নিয়ে গেলেন বইমেলায়। স্কুলের পরে, তাই সে দিনও স্কুলড্রেস পরা। কেনা হল সস্তায় সোভিয়েট ইউনিয়নের বই আর চিন প্রজাতন্ত্রের বই, সঙ্গে দু’-একটি সত্যজিৎ রায়— শঙ্কু-কাহিনি বা ফেলুদা। তখন অমনিবাসগুলি আসেনি। কেনাকাটা সেরে মাঠেই বসে খেয়েছিলাম মায়ের আনা সামান্য জলখাবার। এখনও স্বাদ মনে আছে সেই ছোলা-কড়াইশুঁটি সেদ্ধ দিয়ে বানানো টক-টক চাটের। তার ভিতরেও মিশে গিয়েছিল হয়তো ময়দানের, বইমেলার পুণ্য ধুলো!
এর পর বইমেলা আমাদের কলকাতাবাসীর বারো মাসের তেরো পার্বণের একটি হয়ে যাবে।
*****
যত বড় হয়েছি, বইমেলা আমাদের কাছে পাল্টে পাল্টে গেছে। প্রথম যুগ মানেই মায়ের কিনে দেওয়া বই। ওই একটি জিনিস আবদার বা বায়না করলে মা কিনে দেবেনই। না বলবেন না। সুবিখ্যাত মুজতবা-কাহিনি বা তারাপদ-কাহিনির মতো বলবেন না, “বই? সে তো তোদের কতই আছে, ওই যে পুজোয় কাকু-কাকিমা উপহার দিলেন দেব সাহিত্য কুটিরের মোটা ‘রাঙারাখী’? ‘আজব বই’? ওই যে ইশকুলের ক্লাসে ওঠার পরীক্ষায় সংস্কৃত আর ইংরেজিতে হায়েস্ট মার্কের জন্য দিদি পেল নারায়ণ সান্যালের ‘অপরূপা অজন্তা’ বা সুভাষ মুখোপাধ্যায় অনূদিত ‘দেশ বিদেশের কাহিনি’?” মা অবলীলায় আমাদের গোছা গোছা কিনে দেন সস্তা ও পুষ্টিকর বাংলা বইগুলি। অবশ্যই যাব বিশ্বভারতীর স্টলে। কেনা হবে রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রবিচিত্র’ থেকে ‘নদী’। মাটিতে ফেলে বিক্রি হওয়া আল্পনার বইও সমাদরে তুলে নেব আমরা। অথবা বছরে একটিই হয়তো দামি টিনটিন কেনা হবে। তখনও বাংলা টিনটিন সে ভাবে আসেনি, সদ্য ‘আনন্দমেলা’-য় বেরোচ্ছে, অনেকে কেটে কেটে সেটা দিয়েই টিনটিনের বই বানিয়ে ফেলছে। কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে অনেক বেশি ছাড়ে বই কেনা শুরু হবে শিগগিরই, যখন পড়তে যাব কলেজপাড়ায়। তবু বই দেখা, বই ঘাঁটা, বিষয়ভিত্তিক বই আস্বাদনের প্রথম পীঠ বইমেলা।
যা কেনা হবে না, সে সব বইয়ের গন্ধও আমরা শুঁকব। মহার্ঘ রঙিন চামড়ায় সোনার জলে নাম লেখা বইগুলি, ইংরেজির। কিন্তু পাশেই দেখেছি জোরকদমে বিক্রি বাড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং বই আর জিকে-বইয়ের। আমরা বড় হতে হতে তুলে নিচ্ছি কবিতা সিংহ। কিনছি তারাপদ রায়ের কাব্যগ্রন্থ ‘পাতা ও পাখিদের আলোচনা’, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘উলঙ্গ রাজা’। গুটিগুটি পায়ে তত দিনে আশির দশক। দিদি কিনেছে আসিমভের কল্পবিজ্ঞান, তাও বইমেলাতেই। সঙ্গে পি জি উডহাউস বা সমারসেট মম।
কলেজে উঠেছি যখন, তত দিনে বইমেলা নিজেই বেশ বয়স্ক, বেশ ম্যাচিয়োর। ধুলোর জন্য তখন ভিস্তিরা কেমন নেচে নেচে জল ছড়াত, সে-ও এক দেখার জিনিস। আমাদের উশুখুশু সদ্য দাড়িগোঁফ-ওঠা ছেলেবন্ধুরা অনেকেই কবি, অনেকেই লিটল ম্যাগাজ়িন বার করে। কয়েক জন তো বইমেলায় রীতিমতো দুঃসাহসী বইচোর। ঝোলা ব্যাগের দিনকাল তখন। হাত ঝোলায় রেখে ঘুরঘুর খুবই সুবিধের। আসেনি সিসিটিভির জ্বালাতনও। সুট সুট করে বই তুলে ঝোলায় চালানের সেই গল্প পরের দিন ক্যান্টিনের এবড়ো-খেবড়ো কাঠের বেঞ্চিতে বসে তুমুল উৎসাহে বর্ণনা। তখন আঁতেল মানেই একটু-আধটু বই চুরি। হাফ-আঁতেল মানে ব্লার্ব পড়ে জ্ঞানলাভ ও সেই জ্ঞান বিতরণ। একটা কবিরাজি পাঁচ ভাগ করে খাবার কফি হাউসে, কফির বদলে আদ্ধেক দাম বলে সস্তা ইনফিউশনের গন্ধের চাঙ্গায়নী ভাবটির সঙ্গে লাগসই, বই পড়ার ফিরিস্তি। অনেকেই বই মলাট থেকে মলাট পড়েছে।
তবে কিনা, সামনের মলাট থেকে পাতা উল্টে গোটা বইয়ের পাতাগুলো পড়েনি। পিছনের মলাট থেকে সামনের মলাটে এসেছে। ইংরেজি বইতে তো গাদা গাদা কথা পিছনমলাটেই থাকে, ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর আলোচনার হিরেমুক্তোর কুচিসুদ্ধুই!
তার পরে, আরও একটু পা বেড়েছে যখন, আমিও... একটু একটু যাই লিটল ম্যাগাজ়িন স্টলে, কিন্তু মূলত ঘুরতে ঘুরতে বাংলা বইয়ের অপার জগতে মণিমুক্তো কুড়োচ্ছি। আশির দশকের কোনও এক বইমেলায় ‘ফ্যান্টাস্টিক’-এর স্টলে অদ্রীশ বর্ধনের সঙ্গে সেধে গিয়ে আলাপ করি। তিনি নিজেই বিল কাটছিলেন সে দিন। দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছি ‘আনন্দ’-র স্টলের সামনে তারকাদের চেয়ার পেতে বসে আড্ডা। কে নেই সেখানে! সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তারাপদ রায়!
এখন কেউ বিশ্বাস করুন বা না করুন, আমি সত্যি সত্যি ছুটে গিয়ে ‘আনন্দ’-র স্টলের সামনে দেখেছি গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচছেন সেই সব কবিরা, পরে যাঁদের কৃত্তিবাসী কার্যকলাপ জানব। আরও অনেক অনেক দিন পরে ১৯৯৮-তে ‘কৃত্তিবাস’ পুরস্কার নেওয়ার সময়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বা তারাপদ রায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করার সুযোগ পাব, তত দিনে সমরেশ ও শক্তি চলে গিয়েছেন মঞ্চ ছেড়ে। সেই দিনে সেই গোল হয়ে নাচ হচ্ছিল ‘সাঁওতাল করেছে ভগবান’ গানের সঙ্গে। সেও আশির শেষাশেষি। শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে দেখতে দূর থেকে আমার মতোই অন্য ভক্তেরা, যাদের ডাকা হত ‘শাক্ত’ বলে, ধাওয়া করছে সেই স্বতঃস্ফূর্ত বাউলের আসরে। আগে-পরে বইমেলার মাঠেই দেখেছি শংকরকে। দেখেছি কৃষ্ণা বসুকে। আরও পরে মল্লিকা সেনগুপ্তকে। এ সবই লেখক বা কবি হয়ে ওঠার অনেক আগের কথা বলছি।
দেখেছি, শুনেছি, মাঠে গোল হয়ে বসে গান। ‘মহীনের ঘোড়া’গুলির স্রষ্টা, গিটার নিয়ে গান-গাওয়া গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের গলায়, ‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে’... গানটা শিরদাঁড়ায় বইয়ে দিয়েছে উত্তেজনার স্রোত। সামনাসামনি ‘অজানা উড়ন্ত বস্তু’ শুনেছি। ‘নগর ফিলোমেল’, আর এক গানের দল তার পর এসেছে, গৌতমের হাত ধরেই। কলেজে আস্তে আস্তে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছে, ‘ভুলে গেছি কী রকম তোমাদের নগরজীবন’।
কবিতার জগতে আমার প্রথম পদক্ষেপের তখনও আরও এক দশক দেরি!
*****
১৯৯৩ সালে প্রথম কবিতার নানা পত্রিকায় মুখ দেখাতে শুরু করেছি। তখনকার বইমেলা আবার নতুন ধরন পেল। ‘লিটল ম্যাগ’ প্যাভিলিয়নে বাংলা খেয়ে চুর তরুণী কবি, ডমিনেটিং দাদা কবি, অজস্র আত্মপীড়নশীল ভাই, যারা সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে এগজ়িস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস বুঝতে চায়, ঘোলাটে চোখে তাকায়, কথা বলে কেটে কেটে... তারা আর আমি একই বইয়ের দুই পৃথক পৃষ্ঠায় বসবাস করছি তখন। সেই সব বইমেলায় কোনও দাদা বা দিদি সঙ্গে নিয়ে ঘুরেছেন, আলাপ করিয়েছেন। ছোট পত্রিকার স্টলে স্টলে সদ্য লিখতে আসা আমার সাদা শাড়ি আর গোল চশমায় আমার প্রতি কেউ কেউ অতিরিক্ত বন্ধু, কেউ কেউ উদাসীন। মনে পড়ে, ত্রিশের কাছাকাছি বয়সে, চাকরি-টাকরি করে, তার পর কবিতা লিখতে এসেছি বেশ দেরি করে, প্রস্তুতিপর্ব গোপন ডায়েরির শমীবৃক্ষে লুকিয়ে রেখে। সে জন্যেই, অধুনাপ্রয়াত এক সম্পাদকের সেই অমোঘ উচ্চারণ, “এত দিন কোথায় ছিলেন?” না, আমার জীবনে বনলতা সেন হওয়া হয়নি, তবে প্রশ্নটা ও দিক থেকে আসায় লজ্জা পেয়েছি মুখচোরা আমি। আসলে দেরিতে লিখতে আসা যশোধরা বেশি পড়ুয়া, কম লেখক।
১৯৯৬-এ প্রথম বই বেরোনোর আনন্দ। প্রভাত চৌধুরী, ‘কবিতা পাক্ষিক’-এর স্টল, সেই সব উত্তেজনার আলাপ আরও অনেক কবির সঙ্গে। নতুন লিখতে আসা মেয়েকে উৎসাহ দিয়েছিলেন সে-সব নতুন-আলাপের অগ্রজরা। অনিল আচার্যের ‘অনুষ্টুপ’ থেকে উত্তম দাশের ‘মহাদিগন্ত’, বাসুদেব দেবের ‘কালপ্রতিমা’ থেকে প্রদীপ ভট্টাচার্যের ‘একালের রক্তকরবী’। ১৯৯৮ সালে ইউবিআই অডিটোরিয়ামের মঞ্চে উঠতে পারলাম ‘কৃত্তিবাস’ পুরস্কারের নতুন পর্যায়ের প্রথম প্রাপক হিসেবে। বিভাস রায়চৌধুরীর সঙ্গে আমি। আগে-পরে কত না অনুষ্ঠানে গিল্ডের স্টেজে উঠতে পারা। কত বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান। এক সহলেখক, যে লিঙ্গসূত্রে মেয়ে, তাকে আক্রমণ করলেন পাঠককুল, “আপনি অশ্লীল লেখেন!”
তার হয়ে কথা বলে উঠছি আমি, উত্তর দিচ্ছি, কেন শরীরী ভাষ্যের লেখামাত্রেই অশ্লীল নয়, কেন মেয়েদের লেখার এলাকা চিরাচরিত থোড়বড়িখাড়া থেকে ক্রমশ আরও বিস্তৃত হয়ে ওঠায় সনাতন মূল্যবোধে ধাক্কা খাওয়া পাঠকসমাজের মন প্রতিকূলতায় ভরে উঠবে, এটা খানিক যেন অপেক্ষিতই আসলে... অবাক হচ্ছি না, কিন্তু প্রতিবাদ রাখছি। স্টেজ থেকে নেমে হাত মেলাচ্ছি সেই সমবয়সি সহযোদ্ধার সঙ্গে। আসলে বইমেলা মানেই নানা উত্তেজনার পারদ চড়বে। যেন নাগরদোলা, এই উপরে উঠছে মন, আবার বিষণ্ণ হয়ে যাচ্ছে কখনও বা। হু-হু করে লোক ঢুকছে। মন বলছে, ফিশফ্রাইয়ের স্টলে বেশি ভিড় কেন হবে? মন বলছে, বাংলা বই কেন বিক্রি হবে না? মন বলছে, টিভির কোম্পানি স্টল দিয়েছে, ফিলিম স্টার এনেছে বলে সব ভিড় সেই দিকেই... নানা প্রতিবাদ, মিছিল, মাথায় ফেট্টি-বাঁধা নব্বইয়ের কবিদের দল। পোস্টার নিয়ে ঘোরা, খাবারের স্টল তুলে বইয়ের স্টল বসানোর হুমকি, তারুণ্যের প্রবল উচ্ছ্বাসে ভাসা হইচই স্লোগানিং গান গাওয়া। নব্বইয়ের দশক কেটেছে এ ভাবেই।
কলেজের শেষ দিকে যে বিস্ময় আনন্দ উত্তেজনা ছিল বইমেলায় গিয়ে চেনা কোনও বন্ধুর সঙ্গে আচমকা দেখা হয়ে যাওয়ার, পরের দিকে তা প্রায় পরিকল্পিত মিলনমেলায় গিয়ে দাঁড়াবে। অসংখ্য বিখ্যাত লেখকের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি বইমেলার ময়দানে। আর নিজের বৃত্তের, নিজের প্রজন্মের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা কথা আড্ডা— সব বইমেলায়।
*****
সে বছর আসতে পারব না কলকাতা বইমেলায়। কাজে যেতে হয়েছে অনেক দূরে। দূরত্বের ব্যাপারে অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ নয়, চেনা গণ্ডির বিদেশ নয়, এক্কেবারে অন্য এক মানসিক পরিমণ্ডলে, সত্যিকারের ভিন্দেশে গিয়েছি। আদ্দিস আবাবার পথে হেঁটে দারিদ্র আর প্রাচীনতার গভীর হাত-ধরাধরি অনুভব করছি। ইথিয়োপিয়ার পথে মাতাল, শ্রমিক ও ভিখারি এক সঙ্গে হাঁটেন, আর ভিখারির শতচ্ছিন্ন আলখাল্লায় লেগে থাকে অনাদি অনন্তের ধুলো। সেই আশ্চর্য দৃশ্যের ভিতরে বাচ্চারা এসে জামার হাতল ধরে টানে, টাকা চায়। আর আমার মন বলে ‘কই, কই, জানুয়ারি শেষের রোদ্দুরে বইমেলার জমায়েত কই!’ হঠাৎ দেখি লোহার চাকা-বাঁধা একটা ছোট্ট খাঁচা টেনে চলেছে এক অতি নিম্নমধ্যবিত্ত যুবক, খাঁচার ভিতরে পেপারব্যাক বইয়ের সমাহার। আমহারিক ভাষায় লেখা। জানতে পারি আমহারিক ভাষা পৃথিবীর প্রাচীন ভাষাগুলির একটি। জানতে পারি, বই পড়া আদ্দিসের যুবসমাজের অন্যতম নেশা। দেখতে পাই, আপাত-মলিন চেহারার ছেলেরা বা পাশ্চাত্য পোশাকে স্মার্ট মেয়েরা স্পষ্টত আপিস থেকে বেরিয়ে বাসের অপেক্ষা করতে করতে, ধরে-ছুঁয়ে দেখছে ওই বইগুলি। ফেরিওয়ালার মতো বইওয়ালা। দইওয়ালার সঙ্গে বইওয়ালার মিল দিয়ে তত দিনে ‘অমল ও বইওয়ালা’ প্যারডি হয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল। সত্যিকারের সাহিত্যপ্রেমী, বইওয়ালাদের দেখা পেয়ে ধন্য হয়েছিল আমার বইপিপাসু মন।
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি। প্যারিসের বইমেলায় যাওয়ার সুযোগ একটুর জন্য হাতছাড়া। কিন্তু কর্মসূত্রে দেশ-বিদেশে গিয়েছি যখন, প্রতি দিনের যাতায়াতের পথে বাসে ট্রামে ট্রেনে দেখেছি যুবক-যুবতীদের বই পড়ার অভ্যাস। ট্যাব, ফোন ইত্যাদি এসে সেই অভ্যাসে সামান্য ভাটা ফেলতে পারলেও সম্পূর্ণ অবলুপ্ত করতে পারেনি। দীর্ঘ যাত্রাপথ মানেই সিটে বসে একটি বই খুলে তার পাতায় চোখ দু’টিকে ডুবিয়ে দেওয়া। আমার কাছে দীর্ঘ কালো বা নীল কোট পরিহিতা শ্বেতাঙ্গিনী, বা অনেক সর্পসম বিনুনির জটাজালে নিজেকে সাজানো, অপরূপ প্রস্তরমূর্তির মতো গাঢ় বাদামি ত্বকের আফ্রো-আমেরিকান মেয়ে, যার পোশাকে লাল থেকে হলুদ কমলার রং তড়িতের মতো নাচে— আমার চোখে সেই মেয়েদের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য মেট্রোর সিটে বসেই বই খুলে ধরা। গ্রীবার ভঙ্গিতে মনোযোগ, বিশ্বপৃথিবীকে তুচ্ছ করার সাহস ও স্পর্ধা, লিখিত অক্ষরের সঙ্গে সময় কাটানোর গভীর আনন্দ— সবটাই ধরা থাকে।
বিদেশেও কি সবাই কেবল পড়েন ক্লাসিক গোত্রীয় বই বা ভারিক্কি প্রবন্ধ? কবিতার মতো বিমূর্ত কোন শিল্প? না, জনপ্রিয়, পাল্প সাহিত্যও পড়েন। পাঠ্য কী হবে সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা হল, বই পড়ার অভ্যাস। কাগজে ছাপা বইয়ের সঙ্গে সাহচর্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বইয়ের চরিত্র বদল হয়েছে নিশ্চয়ই, কখনও খ্রিস্টধর্মের আদি-অন্ত ইতিহাস বা কখনও পৃথিবীর কোনও প্রান্তের বইয়ের অনুবাদ। এই সব বই ঘুরে-ফিরে আসে। স্পষ্টত ইরাক খবরে উঠে এলে পশ্চিম এশিয়া নিয়ে বই জনপ্রিয় হয়। কখনও ইরানের মেয়েদের হিজাব পোড়ানো কেন্দ্র করে হয়তো বেশি বিক্রি হয় ইরান-বিষয়ক পেপারব্যাক। এ মুহূর্তে আমি নিশ্চিত যে, প্যালেস্টাইন-ইজ়রায়েলের দীর্ঘ দ্বন্দ্বের গল্পই ওঁদের হাতে হাতে ঘুরছে নানা সহজপাচ্য কিন্তু পুষ্টিকর বইয়ের আকারে। এ ছাড়াও আছে জনপ্রিয় উপন্যাস। যার ব্লার্বে লেখা থাকে নানা ভাষায় অনূদিত উপন্যাসটির লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রির কথা।
‘প্রডাক্ট’ হিসেবেও যদি ভাবি, প্রতিটি বইয়ের আলাদা কনটেন্ট আছে। দুটোর জায়গায় চারটে বই কিনলে তা কোনও দিন ‘বেশি কেনা’ হয় না। বই অনেক রকম হয়। পড়ার বই, লুকিয়ে পড়ার বই, কাজের বই, অকাজের বই, মজার বই, রাগী বই, লঘুপাঠ্য বই, লড়াইয়ের বই। বই যাঁরা পড়েন তাঁরা সবাই বই কিনেও পড়েন না, বন্ধুর কাছ থেকে বা গোপন সমিতির থেকে নিয়েও পড়েন। কিনেও পড়েন। কিন্তু, কিনেই পড়েন না। বইটা মাথার পাশে রাখেন, হাত বোলান গায়ে। বইয়ের গন্ধ শোঁকেন। বই কেনার আনন্দ অন্য কোনও আনন্দের তুল্যমূল্য নয়। বই কখনও বেশি কেনা যায় না। নিজের যথেষ্ট পরিধেয় বস্ত্র থাকা সত্ত্বেও আরও চারটে অপ্রয়োজনীয় শাড়ি কিনে আলমারি ভরানোর সমতুল্য হয় না কখনও। বা নিজের দুটো গয়নার জায়গায় দশটা আরও গয়না কিনে টাকার তথাকথিত ‘ইনভেস্টমেন্ট’, বা সদ্ব্যবহারও হয় না। অথচ বইয়ের ‘রিসেল ভ্যালু’ না থাকলেও বই চুরি হয়, আশ্চর্য নয়?
*****
ইতিমধ্যে বহু বার জায়গা বদল করেছে বইমেলা। রবীন্দ্র সদনের সামনে (এখন যেখানে মোহরকুঞ্জ) থেকে এসে, বহু বছরে পার্ক স্ট্রিটের বইমেলা স্বীকৃত হয়ে গিয়েছিল। তার পরেই এল ধাক্কা, দু’হাজার-পরবর্তী সেই ধাক্কায় ঝোড়ো হাওয়ায় ওড়া ফুচকার শালপাতার মতো বইমেলা এক বার এসে পড়ে সল্টলেক স্টেডিয়ামে, তো তার পর মিলন মেলায়। তার পর গত বেশ কিছু বছর সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কে। মেট্রোর যোগাযোগ, বাস ডিপোর সাহচর্য বিধাননগরে মেলা হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে নিঃসন্দেহে। এ দিকে জেলার বইমেলাগুলিও কিছু কম নয়। বলতে গেলে কলকাতা বইমেলার চেয়ে খড়দহ বইমেলায় গিয়েই আলোচনাসভায় শ্রোতাদের জমায়েত দেখে আশ্চর্য খুশি হয়েছিলাম। বহু জেলা বইমেলা এখন রীতিমতো জাঁকালো, আর বিক্রির পরিমাণও কিছু কম নয়।
বরং বলব, কলকাতা বইমেলায় বই কেনা-বই পড়ার বিশেষ পাঠকেরা আরও অন্য হাজারো ইতিউতি ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে থাকেন, যে বিশেষ পাঠকের দেখা আমরা পাই শিলিগুড়ি বা মেদিনীপুরে, পুরুলিয়ায় বা দুর্গাপুরে। কলকাতার বইমেলার আগেকার হিড়িক ছিল মাছভাজা খাওয়ার, ইদানীং এই সবের মধ্যে এসে মিশেছে ঘন ঘন সেলফি তোলা আর ফেসবুকে পোস্ট করা; মিশেছে উঠতি লেখকদের ক্ষণে ক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়ায় বই বিক্রির খবর দেওয়ার হিড়িক। মুহূর্তে মুহূর্তে কপি নিঃশেষিত হওয়ার খবর-সহ ।
মেলার মূল চরিত্র কিন্তু পাল্টাচ্ছে না। শাড়ি গয়না হস্তশিল্প— সব মেলার থেকে এ মেলা আলাদা, আর তা সম্ভব হচ্ছে শুধু এই মেলার এই ভিড়টার জন্যই। তা সম্ভব করেছে কিছু বই-কেনা বাঙালি, কিছু বই-উৎসুক কিন্তু না-কেনা বাঙালি, কিছু মজা-দেখা ‘প্যান ইন্ডিয়ান ক্যালকাটান’, কিছু একেবারেই ঘরের খেয়ে বনের মোষ শিকারি। তাঁদের মধ্যে আছেন অনেকে, যথা কবি, বা চৌকো লিখিয়ে (আজকাল কবিতাও-না গদ্যও-না গল্পও-না এমন চৌকো লেখা খুব চলছে, বিশেষ করে ফেবুতে), লিটম্যাগওয়ালা, উঠতি লেখক, পুরনো পাপী প্রকাশক (পুপাপ্র), নতুন শিংওয়ালা প্রকাশক (নশিপ্র), ব্লগ রাইটার, ইনফ্লুয়েন্সার (ইনফ্লুয়েঞ্জা নয়), সোশ্যাল মিডিয়া প্রজাতির নব্য পাঠক-কাম-লেখক-কাম-প্রকাশক...
এই লিস্ট বানাতে বানাতেই আমি কী রকম যেন হুস করে এই সময়ের বইমেলার অন্তরটিতে সেঁধিয়ে গেলাম। পুরনো ঘরানার ‘অল্টারনেটিভ’ বা ‘মেনস্ট্রিম’ প্রকাশক এখনও পাঠক-ক্রেতায় আসীন। বিভূতি রচনাবলি, শরদিন্দু অমনিবাস, লীলা মজুমদারের গল্প বেচে যাঁরা খুশি, সেই খানদানি বই-বিক্রেতারা আছেন তাঁদের নিজের নিজের জায়গায়। গ্লোবাল তিনিই যিনি চলেন তফাতে... পুরস্কৃত নোবেলবিজয়ীদের ছবিতে ছয়লাপ স্টলের লাইটিং-এর খরচ বই বিক্রি করে ওঠে কি না সন্দেহ। এই প্রথাসিদ্ধতা থেকে বেরিয়ে এসে, এখন বেশি ভিড় ‘লোকাল’, ছোট প্রকাশকদের স্টলে। যেখানে ক্রয় চলে আবার আড্ডাও, লেখক-পাঠক মিলেমিশে ঘণ্ট। যাঁরাই লেখক তাঁরাই পাঠক। এঁদের প্রত্যেকের উত্থানের পদাবলি মিশে আছে ডিজিটাল জগতের উত্থানের সঙ্গে, এঁরা মূলত ক্রেতা-‘বেস’ তৈরি করেন সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই। দুর্জনে বলেন, এঁদের খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি।
যত দোষই ধরি আমরা, আসলে বইমেলার মতো মেলা কলকাতায় আর একটিও নেই। বলা বাহুল্য, অন্য অনেক মেলা চলে গোটা শীতকালে। কলকাতার মেলার ক্যালেন্ডার বহুবর্ণ। অন্যান্য অনেক মেলায় টাকার অঙ্কে কেনাবেচা হয় বেশিই হয়তো। একটি মেলায় গৃহবধূরা বাংলাদেশের শাড়ি কেনেন ঠেলাঠেলি করে। অন্য মেলায় আসে হস্তশিল্প সুদূর রাজ্য থেকে। গয়নার মেলা থেকে গয়নাবড়ির মেলা, সবই হয়। কিন্তু বইমেলার মতো একটি মেলা যে কলকাতায় হয়, সে জন্য আমি যতটা গর্ব বোধ করি প্রতি বছর, ততটা আর কোনও কিছুতেই নয়। প্রতি বার থিকথিকে ভিড়ের দিকে তাকিয়ে, রাশি রাশি ছোট-বড় বইয়ের প্রকাশকের স্টলের দিকে তাকিয়ে, আমার চোখে জল আসে।
এ যেন আমাদের সারা বছরের ফসল ঘরে তোলার উৎসব। শারদোৎসবের চেয়ে কিছু কম নয়। বছরে এই দু’বার লেখকদের নিজেদের খুব জ্যান্ত বলে মনে হয়। সম্পাদকের তাগাদা আসে বিশেষ বইমেলা সংখ্যা আর শারদ সংখ্যার লেখার জন্য। প্রকাশকরা হাজার হাজার পৃষ্ঠার প্রুফরিডিং করান লেখকদের দিয়ে, কেননা তাঁদের ‘প্রফেশনাল প্রুফরিডার’রা লেখকদের নব নব ভাষা-উদ্ভাবনী ক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিতে অসমর্থ। কবিতায় কান-কে ধান আর মাস্কারাকে ভ্যান্তারা করে দিতে প্রুফরিডাররা বিশেষ ভাবে দক্ষ।
সুতরাং বইমেলায় বড় প্রকাশকদের কাছে বইমেলা ধরার জন্য আকুলতা, ৪০ বা ৫০টা ‘টাইটল’ মাঠে আনতে পারার আকুলতা যতটা, ছোট্ট অনামা লিট-ম্যাগের বাৎসরিক সংখ্যাটা পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারার আনন্দ যতটা, লেখকদের নিজের বইটি প্রকাশকের স্টলের তাকে সুসজ্জিত দেখতে পাওয়ার আকুলতাও ততটাই।
অনেক সমালোচনা হয় প্রতি বছর। কেউ লেখেন, টিকিট করা উচিত। অবাধ প্রবেশ করে লাভ কী! বাজে লোক ঢোকে। কেউ বলেন, বই কেনার লোক নেই। কেউ ভিড়ের ভেতর বুম আর ক্যামেরা নিয়ে এগিয়ে পড়লেন, চটপট ভিডিয়ো করে ফেললেন— “বলো তো, ‘সহজ পাঠ’ কার লেখা?” হায় হায়! ছেলেমেয়েরা জানে না, ‘সহজ পাঠ’ কার লেখা। ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ কার লেখা জিজ্ঞেস করলে তরুণ-তরুণী সেলফি জ়োনে হাসি-হাসি মুখে পোজ় দিতে দিতেই বলে দেয়, “ঠাকুমার!”
কাগজে এ সব নিয়ে ছাপা হবে মাতব্বরদের লেখা। সেখানে বলা থাকবে, আসলে কেউ পড়ে না, শুধু পড়ার মতো দেখায়। সেখানে বলা থাকবে, ক’টা কপি আদতে ছাপা হচ্ছে ফেকু লেখক বা ফেখক (পড়ুন ফেসবুক-লেখক)-দের বই যে, প্রতি দিন তা আউট অব প্রিন্ট হয়ে যায়? জোর করে বইকে হটকেক বানানোর জন্য, আর্টিফিশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করার জন্য এত কম কপি আনা হচ্ছে মেলায়?
বিক্রির যে হিসাব বেরোয় বইমেলার পর, তা-ও কেমন অলীক মনে হয়। ২৩ কোটি বই বিক্রি। ৩০০০ কোটি টাকার কেনাবেচা। আবার প্রত্যেক প্রকাশক হাত উল্টে বলেন, “ভাল বিক্রি নয়।” ও দিকে গার্সিয়া মার্কেস বা নবারুণ ভট্টাচার্যকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা করা পত্রিকার ছোট্ট স্টলের রুখুশুখু মফস্সলি ছেলেটি বলে, “সব কপি তার উড়ে বেরিয়ে গেছে নাকি!”
সত্যিমিথ্যা অর্ধসত্য প্রায়সত্য সত্যাতীত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy