Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ICC Cricket World CUP 2023

আমাদের সেই সব বিশ্বকাপ

আবার দেশের মাটিতে এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। প্রতিটি বিশ্বকাপ মনে করিয়ে দেয় স্মৃতির কোলাজ। কৈশোরের উন্মাদনা। খাতায় ক্রিকেট তারকাদের স্টিকার, দেওয়ালে পোস্টার। কাপ আসে, কাপ যায়— কিছু মুখ ও মুহূর্ত থেকে যায় অমলিন।

বিশ্বজয়ী: ১৯৮৩-র প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পর মোহিন্দর অমরনাথ ও কপিলদেব। ডান দিকে, ২০১১ সালে দ্বিতীয়বার কাপজয়ের পর সচিনকে কাঁধে তুলে সতীর্থদের মাঠ পরিক্রমা

বিশ্বজয়ী: ১৯৮৩-র প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পর মোহিন্দর অমরনাথ ও কপিলদেব। ডান দিকে, ২০১১ সালে দ্বিতীয়বার কাপজয়ের পর সচিনকে কাঁধে তুলে সতীর্থদের মাঠ পরিক্রমা

সূর্য্য দত্ত
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৪
Share: Save:

নতুন দিনের নতুন পালা

সুরভিত ক্রিমের আধ টিউব শেষ। দু’গাল জুড়ে অ্যান্টিসেপ্টিকের আস্তরণের উপরে চড়ছে কোল্ড ক্রিমও। ছুটির সকাল, জানলায় বন্ধুদের ডাকাডাকি। আর ঘরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দু’রকম ক্রিম নিয়ে ধস্তাধস্তি করছে সস্তার সাদা হ্যাট পরা ক্লাস থ্রি। আসলে গলির ম্যাচে বল করতে নামার আগে মুখের ক্রিমটা কিছুতেই ধবধবে হয়ে ফুটছে না। লোকে দেখে জ়িঙ্ক অক্সাইড-মাখা ‘ম্যাকডারমট’ বা ‘ডোনাল্ড’ বলবে, তবেই না মজা! এতেও না হলে অবশ্য পাউডার আছে। যাকে বলে, লড়কে লেঙ্গে!

তখন বিরানব্বই। রোজ সকালে-বিকেলে শহর জুড়ে টিভি অ্যান্টেনা বেয়ে অফুরান ক্রিকেট নামে। একটা টাটকা প্রজন্ম বিশ্বকাপমন্ত্র নিয়ে ফেলে। আপাতত তাদের দায় নেই খেলা বোঝার, খেলোয়াড় চেনার, পত্রপত্রিকা বা খবরের কাগজ পড়ে আগাম হোমওয়ার্ক করার। কিংবা সে বছরই যে প্রথম বার রঙিন পোশাক, সাদা বল, কালো সাইটস্ক্রিন আর ফ্লাডলাইডে মুড়ে দক্ষিণ গোলার্ধে প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট হচ্ছে— সে কথা জানার। তারা শুধু মানুষ দেখে।

শুরু-শেষের মিশেলে

অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণের বিশ্বকাপ বিরানব্বই। ওই রঙিন হয়ে-ওঠাটা একটা দিক। তেমনই এটাই কপিল দেব, ইমরান খান, ইয়ান বোথাম, অ্যালান বর্ডার, মার্টিন ক্রো, গ্রাহাম গুচ, ম্যালকম মার্শাল, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত, রবি শাস্ত্রীদের শেষ বিশ্বকাপ। আর সচিন তেন্ডুলকরের প্রথম। তিনি তখন আঠারো। ভারত যে দু’টো ম্যাচ জিতেছিল ওই বিশ্বকাপে, দু’টোতেই তিনি ম্যাচের সেরা। সদ্যদীক্ষিত ক্রিকেটদর্শকের দল তখন স্কুল-ফেরত মায়ের কাছে বায়না করে এক টাকা দিয়ে সচিনের ছবির পোস্টকার্ড কেনে। বাড়ি ফিরেই সেটাকে আলমারিতে আটকায়। কত স্টিকার পাওয়া যেত তখন! খাতার ব্রাউন পেপারের মলাটের রেডিমেড লেবেলে প্রিয় ক্রিকেট-দেবতার ছবি থাকলে ভাল। নইলে এমনি ছবির স্টিকারই সেঁটে দেওয়া যাবে। স্কুলে আন্টি বড়জোর বকবেন। প্রাণে ধরে সচিন বা ব্রায়ান লারার স্টিকার ছিঁড়ে দিতে তো পারবেন না!

লারারও তো প্রথম বিশ্বকাপ বিরানব্বইয়ে। সেই সঙ্গে ইনজ়ামাম-উল-হকের, মার্ক ও’র, অজয় জাডেজার, নির্বাসন কাটিয়ে ফিরে আসা গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা টিমের। সেই টিমেরই সুপারম্যান জন্টি রোডস। যিনি ওই বিশ্বকাপে প্রায় উড়ে গিয়ে ইনজ়ামামকে অবিশ্বাস্য রান আউট করেন। সে বছর বহু টুর্নামেন্টে ঝাঁকে ঝাঁকে জন্টি রোডসের জন্ম হয়।

প্রবেশ-প্রস্থানের কোনও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। চেষ্টা শুধু অবাকচোখে দেখা কয়েকটা ছবিকে ছুঁয়ে যাওয়ার। যার কোনওটায় মাঠে কথা-কাটাকাটির পরে জাভেদ মিয়াঁদাদ হঠাৎ কিরণ মোরেকে নকল করে ব্যাঙের মতো লাফাতে থাকেন (গলি ক্রিকেটে তারও অনুকরণ চলে কারণে-অকারণে)। অনেকটা দৌড়ে বর্ডারের দুর্ধর্ষ ক্যাচ নেন জাডেজা। ভারতের প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের গ্রেম হিকের উইকেট তুলে নেন জোরে-বোলার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা বজ্রাহত হয়ে দেখে, জয়ের জন্য বাকি ২২ রান তুলতে এক দুর্বোধ্য অঙ্কের হিসাবে তাদের জন্য পড়ে আছে একটি মাত্র বল। আর ফাইনাল শেষে স্ফটিকের বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ হাতে ইমরান বলেন, “কেরিয়ারের এই গোধূলিতে আমি তৃপ্ত।”

ইডেনজোড়া আগুনরাত

খোলা ট্রাক জুড়ে রাখা দৈত্যাকার একটা ক্রিকেট ব্যাট। ট্রাকটা সেই ব্যাট নিয়ে শহরে চক্কর দিত। একই শহরে না একাধিক, সেটা আজ আর মনে পড়ে না। তবে পূর্বনির্ধারিত জায়গায় ব্যাট এলেই আমজনতা লাইন দিয়ে ট্রাকে উঠত। ব্যাটের ব্লেডে সই করে লিখে আসত দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় দলের উদ্দেশে শুভেচ্ছাবার্তা। বিনামূল্যে একটা গানের ক্যাসেটও মিলত। ছিয়ানব্বই বিশ্বকাপের ‘অফিশিয়াল’ স্পনসর ঠান্ডা পানীয়ের কোম্পানি তখন প্রচারের নিত্যনতুন পন্থা খুঁজছে। টুর্নামেন্ট জুড়ে প্রতিপক্ষ সংস্থার সঙ্গে তাদের সমান্তরাল যুদ্ধ জারি ছিল। নানা দেশের বাছাই খেলোয়াড়, এমনকি ডিকি বার্ডের মতো কিংবদন্তি আম্পায়ারকে দিয়েও শুটিং করিয়ে প্রতিপক্ষ ঠান্ডা পানীয়ের সংস্থা বাজার ছেয়ে দিয়েছিল ‘নাথিং অফিশিয়াল অ্যাবাউট ইট’ স্লোগানে।

বাজারে তখন প্রতিযোগিতার বন্যা। দেড় টাকার বাবলগামের সঙ্গে ক্রিকেটারদের ছবি ফ্রি। টিভিতে প্রশ্নোত্তর। ঠিক উত্তর দিলে মাঠে গিয়ে বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ। ঠান্ডা পানীয়ের ছিপি জমালেও উপহার। পরের বিশ্বকাপে এক বিস্কুট কোম্পানি স্ক্র্যাচ-কার্ডওয়ালা বুকলেট নিয়ে এল। পাওয়া যেত দোকানে বিস্কুটের মোড়ক জমা দিলে। এতেও মাঠে বসিয়ে বিশ্বকাপ দেখার হাতছানি।

হচ্ছিল পেল্লায় এক ব্যাটের কথা। হাজার হাজার সই-সম্বলিত সেই ব্যাট এক দিন আনা হল সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। এলেন ভারত অধিনায়ক মহম্মদ আজ়হারউদ্দিন এবং সচিন তেন্ডুলকর। ব্যাটের একটা রেপ্লিকা অধিনায়কের হাতে তুলে দেওয়া হল। বহু স্কুলপড়ুয়াকে সে দিন সাদা পোশাক পরিয়ে আর হাতে ব্যাট ধরিয়ে গ্যালারিতে আনিয়েছিলেন আয়োজকেরা। তবে ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপের উদ্বোধনটা তেমন জমেনি। লেসার শোয়ের জন্য টাঙানো ফিনফিনে সাদা পর্দা গঙ্গার হাওয়ায় উড়ে গিয়ে ব্যাপারটাকে জোলো করে দেয়।

ইডেনের কাছে ১৯৯৬ আগাগোড়া বিড়ম্বনার বিশ্বকাপ। চাইলেও মোছা যায় না কালান্তক সেই সেমিফাইনালের দাগ। শ্রীলঙ্কার ২৫১ তাড়া করতে গিয়ে ভারত ৮ উইকেটে ১২০। তখনই খেলা বন্ধ। বৃষ্টির মতো বোতল পড়ছে মাঠে। গ্যালারিতে আগুন জ্বলছে। যারা মাঠে ছিল না, যারা খেলার প্রথম ওভারেই জয়সূর্য-কালুভিথারনাকে আউট হতে দেখে চিৎকারে পাড়া কাঁপিয়ে তুলেছিল, তারা তখন শূন্যদৃষ্টিতে টিভির দিকে চেয়ে। ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড শ্রীলঙ্কাকে জয়ী ঘোষণা করে দিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলেন বিনোদ কাম্বলি। সেই রাতেই মহানগর জুড়ে বহু বিলবোর্ড আর পোস্টারে আজ়হারউদ্দিনের ছবিতে আছড়ে পড়ল রোষ।

লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে নিয়ে সেই আজ়হারকেই কৃতজ্ঞতা জানালেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অর্জুন রণতুঙ্গা। জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় অস্ট্রেলিয়া আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ় টিম পাঠায়নি শ্রীলঙ্কায়। তখন পাশে থাকার বার্তা নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে কলম্বো যায় ভারত-পাকিস্তানের যৌথ দল ‘উইলস ইলেভেন’। আজ়হারের নেতৃত্বে সেই টিমে খেলেন সচিন, সইদ আনোয়ার, আমির সোহেল, ইজাজ় আহমেদ, অজয় জাডেজা, রশিদ লতিফ, ওয়াকার ইউনিস, ওয়াসিম আক্রম, অনিল কুম্বলে এবং আশিস কপূর।

আবার সেই ভারত-পাক উত্তেজনাই চরমে ওঠে বেঙ্গালুরুর কোয়ার্টার ফাইনালে। বেঙ্কটেশ প্রসাদকে চার মেরে বাউন্ডারির দিকে ব্যাট তুলে বল কুড়িয়ে আনতে বলার ভঙ্গি করেন সোহেল। প্রসাদ পরের বলেই সোহেলের স্টাম্প উড়িয়ে তাঁকে আঙুল তুলে ড্রেসিংরুম দেখিয়ে দেন। ম্যাচটা শেষ হতেই বাজি ফাটতে থাকে। বাবা-কাকার মুখে তিরাশিতে কপিলদের বিশ্বজয়ের গল্প-শোনা কেউ কেউ সদ্য-ভাঙা গলায় বহুতলের ছাদ থেকে চিৎকার করে, “গেট রেডি ফর আ ব্রাইটার ডে!” ইডেনে শ্রীলঙ্কা অবশ্য সেই স্বপ্নকে হিমঘরে পাঠিয়ে দেয়।

সেই বিশ্বকাপের সময়ে ‘আনন্দমেলা’ থেকে কেটে রাখা ছককাটা ঘরে রোজকার খেলার ফলাফল লিখত অনেকে। এক দিন তাদেরই এক জন খেলা না দেখে আন্দাজে লিখে ফেলেছিল ‘কেনিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ়’। রাতে খবর দেখে ছকটা হাতে কেটে সংশোধন করতে হয়। কারণ, মরিস ওদুম্বের কেনিয়া হারিয়ে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে।

অঘটন ঘটে। ‘অফিশিয়ালি’ সবটুকু বলাও থাকে না।

জীবন যখন ক্রিকেট

বিরানব্বইয়ে প্রথম বিশ্বকাপ দেখা এক কুশীলব নিরানব্বইয়ে মাধ্যমিক দিয়েই মুম্বইয়ে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল। দাদর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেই জানতে পারে, সে দিন বিশ্বকাপে ভারত-জ়িম্বাবোয়ে ম্যাচে সচিন তেন্ডুলকর খেলছেন না। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। অন্ধেরীর অস্থায়ী আস্তানায় পৌঁছনোর পরেও জলস্পর্শ না করে টিভির সামনে ঠায় বসে থাকে সাড়ে ষোলোর কিশোর। ভারত তিন রানে হেরে যায়।

তখন বছর দুয়েক ধরেই অনেক বাঙালি পরিবারে ক্রিকেট দেখায় একটা বদল আসছিল। ক্রিকেটে আগে বিশেষ উৎসাহ রাখতেন না, এমন অনেকেও টিভির সামনে বসতে শুরু করছিলেন। মা-কাকিমারাও ঘর-গেরস্থালি সামলে খেলা দেখে যাচ্ছিলেন দু’দণ্ড। অনেকের মনেই বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছিল যে, এই সবের নেপথ্যে ভারতীয় দলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পাকাপোক্ত জায়গা হওয়াটার একটা বড় ভূমিকা আছে। নিরানব্বইয়ে জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নিশ্চিত শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন সৌরভ। ৯৭ রানের মাথায় জন্টি রোডস তাঁকে অকল্পনীয় রান আউট করেন। ভারত ম্যাচ হারে।

এই সঙ্কটকালেই আবহমানের নিয়ম মেনে একাকার হয়ে যায় ক্রিকেট আর জীবন। সচিন ইংল্যান্ডে ফিরে এসে পরের ম্যাচেই কেনিয়ার বিরুদ্ধে নেমে পড়েন। পিতৃশোক বুকে নিয়ে চার নম্বরে ব্যাট করে অপরাজিত ১৪০ করেন ১০১ বলে। বাবাকে উৎসর্গ করা শতরানে পৌঁছে ব্যাটটা তুলে অনেক ক্ষণ তাকিয়ে থাকেন আকাশে— যেন বাবাকেই খুঁজছেন। অতি কাঠখোট্টা ক্রিকেটদর্শকেরও চোখ ভিজে গিয়েছিল সেই মুহূর্তে। সচিন পরে জানান, দেশের কাজ করতে মা তাঁকে ফেরত পাঠিয়েছিলেন বিশ্বকাপে। সচিনের উল্টো দিকে অপরাজিত ১০৪ করেন প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামা রাহুল দ্রাবিড়।

১৯৯৯ সালের ২৬ মে-র আগে ছাপোষা বাঙালি ক্রিকেটদর্শকের সিংহভাগ জানত না, ইংল্যান্ডের সমারসেটে টনটন বলে একটা জায়গা আছে। ওই দিন টনটনের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ম্যাচে চামিন্ডা ভাস-মুরলীধরনদের কার্যত ক্লাব স্তরে নামিয়ে আনলেন সৌরভ। তিরাশিতে কপিলের সেই অপরাজিত ১৭৫-এর পাশেই চিরস্থায়ী জায়গা হয়ে গেল তাঁর ১৫৮ বলে করা ১৮৩ রানের। সৌরভ ছক্কা মারেন সাতটা। দ্রাবিড়েরও আবার সেঞ্চুরি— ১২৯ বলে ১৪৫। ১৭টা করে চার মারেন দু’জনেই। ট্র্যাজেডি এই যে, দ্রাবিড়ের এই দুই মহাকাব্যিক ইনিংসও কিছুটা আড়ালে চলে যায়।

মুম্বইয়ে নতুন বন্ধুদের মুখে ‘দাদা’ ডাক বেশ লাগত মাধ্যমিক-দেওয়া ওই বাঙালি কিশোরের। সৌরভের টনটনের ইনিংস দেখার পরে বিকেলে সেই বন্ধুদের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে গিয়ে ক্রিকেট বলের পুরো দামটা যেচে একাই দিয়ে দেয় সে। বিস্মিত মুখগুলোকে বলেছিল, “ইয়ে সৌরভকে লিয়ে।” এর পর বৃষ্টির জন্য দু’দিন ধরে চলা ইংল্যান্ড ম্যাচে সৌরভ ব্যাটে ৪০ রানের পাশাপাশি তিনটে উইকেট নিয়ে আবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন। সুপার সিক্সে দ্রাবিড়, জাডেজা ভাল রান পেলেন। কিন্তু পয়েন্ট টেবিলে সবার শেষে থাকায় ভারতের দৌড় সেখানেই শেষ হয়ে যায়।

এই বিশ্বকাপের সুপার সিক্স আর সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার দু’টো ম্যাচ কিন্তু কিংবদন্তি হয়ে গেল। সুপার সিক্সের ম্যাচটা জিততেই হত অস্ট্রেলিয়াকে। সেই ম্যাচে স্টিভ ও’র ক্যাচ ঠিকমতো ধরার আগেই বল ছুড়ে উল্লাস করতে গিয়ে ক্যাচ ফেলে দেন হার্শেল গিবস। শোনা যায় স্টিভ তখন গিবসকে বলেছিলেন, “তুমি তো বিশ্বকাপটাই হাত থেকে ফেলে দিলে!” যদিও পরে সে কথা অস্বীকার করেছিলেন স্টিভ। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন লান্স ক্লুজ়নার। ডোনাল্ড রান আউট হওয়ায় ম্যাচটা টাই হয়। নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে অস্ট্রেলিয়া চলে যায় ফাইনালে। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে একপেশে সেই ফাইনালে জেতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়াকে তুলতে হয়েছিল মাত্র ১৩৩! প্রত্যেক বার আলাদা স্পনসরের আলাদা ট্রফির বদলে ১৯৯৯ থেকেই নতুন নকশার নিজস্ব বিশ্বকাপ ট্রফি দেওয়া শুরু করে আইসিসি। এখনও সেটিই বহাল।

আমরাও কাপের শ্রমিক

২০০৩ বিশ্বকাপের শুরুই তোলপাড় দিয়ে। ডোপ ডেস্টে ধরা পড়ে বাদ শেন ওয়ার্ন। সেই ওয়ার্ন-হীন অস্ট্রেলিয়ার সামনেই গ্রুপ লিগের ম্যাচে ভারত গুটিয়ে গেল ১২৫ রানে।

রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল কুশপুতুল। যত দূর মনে পড়ে, কলকাতায় ইডেনের কাছে কারা যেন খাটিয়ায় চাপিয়ে ‘মৃত’ ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতীকী শব বয়ে এনেছিল। মনে রাখবেন, ব্যাপারটা ঘটেছিল ভারত অধিনায়ক সৌরভের শহরে। এই শহরই কি না অভিষেক টেস্ট সিরিজ়ে জোড়া শতরান, টনটনে ১৮৩ করা ‘ঘরের ছেলে’ দেশের অধিনায়ক হওয়ার পরে খুশিতে পাগল হয়ে গিয়েছিল! গ্রেগ চ্যাপেল-কিরণ মোরে জুটি সৌরভকে বাদ দেওয়ার পরে আগুন জ্বেলেছিল রাস্তায়।

খুব সম্ভবত পরের ম্যাচ থেকেই শুরু হয়ে যায় টিম ইন্ডিয়ার বিখ্যাত সেই ‘হাডল’। মাঠে নামার পরে, বিপক্ষের প্রতিটি উইকেট পড়ার পরে, জলপানের বিরতি হওয়ার পরে পরস্পরের কাঁধে হাত দিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা যায় নীল পোশাকের এগারো জনকে। ব্যাপারটা কী, জানতে চাওয়া হলে এক সিনিয়র ক্রিকেটার বলেন, “বাইরের সমর্থন তো পাচ্ছি না, তাই নিজেরাই নিজেদের উদ্বুদ্ধ করছি।” কথাটা বোমার মতো ফাটে। এক প্রাক্তন ক্রিকেটার বলে ফেলেন, “দেশের সমর্থকদের আচরণ দেখে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া জাতীয় দল নিজেদের একা মনে করছে, এর চেয়ে লজ্জার কিছু নেই।”

এর পরে সৌরভদের আর কোনও জনরোষ দেখতে হয়নি। তার সুযোগও দেননি তাঁরা। কারণ ২০০৩ বিশ্বকাপে ওই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটার পরে একেবারে ফাইনালের আগে পর্যন্ত ভারত আর কোনও ম্যাচ হারেনি। তবে ক্রমশ মনে হচ্ছিল, অনেকেই আর নিছক দর্শক বা সমর্থক ভাবছেন না নিজেকে। বিশ্বকাপ জেতাটা যেন তাঁদের ব্যক্তিগত মানসম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সেই দরজা আরও কিছুটা খুলে দিয়েছিলেন একটি দৈনিক কর্তৃপক্ষ। একটি ই-মেল আইডি প্রকাশ করে তাঁরা বলেছিলেন, টিম ইন্ডিয়ার উদ্দেশে সমর্থকদের কোনও পরামর্শ থাকলে তাঁরা সেখানে লিখে জানাতে পারেন। সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে টিমের কাছে। নিজের চোখে দেখেছি, পঞ্চাশোর্ধ্ব এক চাকুরে সৌরভের জন্য তিন পাতা চিঠি লিখে ছেলেকে সাইবার কাফেতে পাঠিয়েছিলেন সেটা টাইপ করে পাঠাতে। টিভিতে সৌরভকে দেখে ভদ্রলোকের মনে হয়েছিল, একটু বেশিই চাপে রয়েছেন অধিনায়ক। তাই চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘ক্রিজ়ে গিয়ে মনে মনে ১-২-৩ গুনে শ্বাস টানবেন। আবার ১ থেকে ৫ গুনে শ্বাস ছেড়ে দেবেন। বার দুই-তিন এমনটা করলেই দেখবেন অনেকটা চাপমুক্ত লাগছে।’

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৩ রানে ৬ উইকেট নিলেন আশিস নেহরা। লালুপ্রসাদ যাদব ঘোষণা করলেন, নেহরা দেশে ফিরলেই তাঁকে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবেন। যে কেউ দেখলেই বুঝত, গোটা টিমটা টগবগিয়ে ফুটছে। ফাইনাল বাদে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে সচিন যে কী অবিশ্বাস্য ছন্দে ছিলেন, তা আজ নতুন করে মনে করানো নিষ্প্রয়োজন। কে ভুলবে পাকিস্তান ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই শোয়েব আখতারকে তাঁর পর পর মারা দু’টো চার আর একটা ছয়! পাক অধিনায়ক ওয়াকার ইউনিস ওই ওভারের পরেই শোয়েবকে তখনকার মতো সরিয়ে নেন। অনেকে মনে করেন, ১৯৯৯ সালে ইডেনে এশীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শোয়েবের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রান আউট হওয়াটাকে সচিন কখনওই মেনে নিতে পারেননি। শোয়েবের ওই একটা ওভারে পুরনো সেই হিসাব মিটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।

সুপার সিক্স আর সেমিফাইনালে সৌরভ দু’টো সেঞ্চুরি করেন কেনিয়ার বিরুদ্ধে। সেমিফাইনালে কেনিয়া ব্যাট করার সময়ে ভারত অধিনায়ককে দেখা গিয়েছিল, পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বার করে বার বার তাতে চোখ বোলাচ্ছেন। আসলে ম্যাচে বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় ডাকওয়ার্থ-লুইসের যাবতীয় হিসাবনিকাশ চিরকুটে লিখে নিয়ে নেমেছিলেন সৌরভ। হরভজন, সচিন, যুবরাজ, সহবাগদের স্পিন ব্যবহার করে দ্রুত ওভার শেষ করাচ্ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ১৭৯ রানেই অলআউট হয়ে যায় টেস্ট না-খেলা প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা কেনিয়া।

রাস্তায় ক্রিকেটারদের পোস্টার টাঙানো, বড় ম্যাচের আগে যাগযজ্ঞ করা— এ সব বরাবরই ছিল। কিন্তু সে বারের বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের দিনে পাড়ার শনিমন্দিরে পুজোর খাতাতেও দেখা গেল সৌরভের নাম। তবু ফাইনালে কোনও হিসাবই মেলেনি। জ়াহির খান প্রথম ওভারেই পর পর নো বল আর ওয়াইড করতে লাগলেন। রিকি পন্টিংয়ের ঝড়ে ভর করে অস্ট্রেলিয়া তুলল ২ উইকেটে ৩৫৯। ভারত আর ম্যাচে ফেরেনি। থমথমে মুখে স্যর গ্যারি সোবার্সের হাত থেকে সচিনের টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফি নেওয়ার ছবিটা আজও ইন্টারনেটে ঘোরে। তবে এই স্বপ্নভঙ্গে সমর্থকদের তেমন কোনও বিক্ষোভ হয়েছিল বলে জানা নেই। বীরের সংবর্ধনা নিয়েই দেশে ফিরেছিল টিম ইন্ডিয়া।

যৎকিঞ্চিৎ

২০০৭-এর বিশ্বকাপ ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে। সৌরভ টিম থেকে ছাঁটাই হয়ে আবার ফিরে এলেন দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে খেলতে। ভারতের এই বিশ্বকাপ অভিযানে মনে রাখার ঘটনা বলতে বাংলাদেশ ম্যাচে সেই বহুচর্চিত হার। সৌরভ একা লড়ে ৬৬ রান করেছিলেন। সুপার এইটে ভারত-পাকিস্তান কেউই পৌঁছয়নি। আয়ারল্যান্ডের কাছে পাকিস্তান হারে। তার পরেই হঠাৎ মারা যান পাকিস্তানের কোচ বব উলমার। বিশ্বকাপকে ছাপিয়ে দুনিয়াজোড়া শোরগোল তখন উলমারের রহস্যমৃত্যু নিয়ে। ফাইনালে হারজিত নির্ধারিত হয়েছিল ডাকওয়ার্থ-লুইসে। আর ভারতে আবার আগুন জ্বলেছিল। বাংলাদেশ ম্যাচে হারের পরে রাঁচীতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বাড়ি আক্রান্ত হল। পুড়ল কুশপুতুল। আর তার ঠিক ছ’মাসের মধ্যে সেই ধোনির হাতেই উঠে এল প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপের ট্রফি। চার বছর পরে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপও।

খবর-ঘরের সেই রাতে

বিশাল ছক্কাটা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে পাঠিয়ে আলগোছে ব্যাটটা ঘোরাচ্ছেন ধোনি। উল্টো দিক থেকে যুবরাজ সিংহ ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন তাঁর উপরে। লাফিয়ে উঠছেন ভারতীয় দলের কোচ গ্যারি কার্স্টেন। ছুটতে ছুটতে মাঠে ঢুকছেন সচিন। কাঁদছেন হরভজন। ক্যানসার নিয়ে, মুখে রক্ত তুলে ব্যাটে-বলে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়া যুবরাজও। গ্যালারি উত্তাল। ধোনির হাতে ট্রফি। মুম্বইয়ের আকাশে বাজির রোশনাই। ২৮ বছর পরে ভারত আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।

ছবিগুলো সবাই দেখেছেন। এ বার একটা অন্য গল্প শোনাই। বিরানব্বইয়ে প্রথম বিশ্বকাপ দেখা ক্লাস-থ্রির সেই ছেলে ঠিক খেলাপাগল না হলেও খেলা দেখতে, খেলার খবর পড়তে ভালবাসত। শেষ পর্যন্ত চাকরিও পায় খবরের কাগজে। ২০১১-র ফাইনালের রাতে ব্যস্ত নিউজ়রুমে ছেলেটা পড়েছিল এক ধর্মসঙ্কটে। পরের দিনের কাগজের প্রথম পাতায় খবর বসানোর দায়িত্ব তার। খেলা শেষের আগে ম্যাচ রিপোর্ট আসবে না। তাই হাতে কিছুটা সময় আছে দেখে মাঝেমধ্যেই সে টিভির সামনে থেকে ঘুরে আসছিল। ভারতের জেতার মুখে অবশ্য প্রায় গোটা নিউজ়রুমেরই চোখ টিভিতে। ধোনির ছক্কার পরে সমবেত গর্জনে মুহূর্তের জন্য হলেও মুছে গিয়েছিল খবরের আঁতুড়ে আবেগবর্জিত থাকার পেশাগত অলিখিত শর্ত। ওঁরা কেউ কপিলদের বিশ্বজয় দেখেছেন। কেউ আবার ওই ছেলেটার মতো— তিরাশিতে জন্মালেও জ্ঞান হয়নি তখনও। এই দ্বিতীয় গোষ্ঠীর কাছে তাই গোটাটাই প্রথম বার স্বচক্ষে দেশকে বিশ্বকাপ জিততে দেখা। টিভিতে তখন সচিনকে কাঁধে নিয়ে মাঠ চক্কর দিচ্ছেন বিরাট কোহলি। সচিন তুলে ধরেছেন হাতের জাতীয় পতাকা। ছেলেটার চোখের সামনেই সেই ছবি কাগজে উঠে আসে। ছবির গা ছুঁয়ে এক শব্দের হেডলাইন হয়— ‘ভুবনজয়ী’।

শুধু কি ছেলেটা? আট বছর আগে বিশ্বকাপের রানার্স ট্রফি নেওয়া অধিনায়ক এই ফাইনালে ছিলেন অন্যতম ধারাভাষ্যকার। সৌরভ নিজেই বলেছিলেন, ফাইনালের পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটা তাঁকে সঞ্চালনা করতে বলা হয়েছিল। তিনি সবিনয়ে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমি ওইখানে মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে ওদের কাপ নেওয়াটা দেখতে চাই।” ওয়াংখেড়ে থেকে যখন ফিরছেন, তখন মেরিন ড্রাইভে কাতারে কাতারে লোক। সৌরভের গাড়ির ছাদেও উঠে পড়েছিল মানুষ। ভয় হচ্ছিল, ছাদটা তুবড়ে গেলে ওঁরা হয়তো গাড়ি থেকে আর বেরোতেই পারবেন না। বলা বাহুল্য, স্বপ্নের রাতে তেমন কিছু ঘটেনি। শুধু আফসোস, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে স্টেডিয়াম প্রস্তুত না হওয়ায় ইডেন থেকে এই বিশ্বকাপের ম্যাচ সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আইসিসি!

কাপ আসে, কাপ যায়

২০১৫, ২০১৯... আরও দু’টো বিশ্বকাপ যায়। দু’টোতেই ভারত সেমিফাইনাল খেলে। তবে এরই মধ্যে বছরভর ক্রমাগত বেড়ে চলে ক্রিকেট ম্যাচের সংখ্যা। ‘এক সন্ধ্যার শো’ টি-টোয়েন্টি বাজারে আরও জাঁকিয়ে বসে। সৌরভ-সচিনের আমলে টিভির সামনে জড়ো হওয়া সেই ‘অনিয়মিত’ দর্শকের ভিড়টাও যেন ফিকে হয়ে আসে। একদা ক্রিকেটপাগল, একটি হাসপাতাল চেনের বছর চল্লিশের কর্তা বলছিলেন, “এই ব্যস্ত জীবনে ৫০ ওভারের খেলা আর দেখব কখন? শাহিদ আফ্রিদির একটা ৩৭ বলে সেঞ্চুরি তখন বিরলতম ছিল। আর এখন তো সেটাই স্বাভাবিক!” প্রবীণ ব্যবসায়ীর আক্ষেপ, “একটা ম্যাচে সেলিম দুরানির মারা দু’টো ছয় আমার আজও মনে আছে। এখন তো এত ছয় যে, হিসাবই থাকে না। বোলারদের জন্য চূড়ান্ত প্রতিকূল, একপেশে একটা পরিস্থিতি চলছে।”

দু’জনেরই অবশ্য খুঁটিয়ে মনে আছে লর্ডসে ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল। সুপার ওভারও টাই হওয়ার পরে বেশি চার মারার সুবাদে ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন হওয়া। বেন স্টোকসের শাপমুক্তি। আরও মনে আছে ম্যাঞ্চেস্টারে ভারত আর নিউ জ়িল্যান্ডের সেই সেমিফাইনাল। কে এল রাহুলকে ধরলে ওই ম্যাচে চার জন উইকেটরক্ষককে ব্যাটিংয়ের ভরসায় খেলিয়েছিল ভারত। লাভ হয়নি। ঋষভ পন্থের আউট হওয়ার ধরন দেখে ড্রেসিংরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এসে কোচ শাস্ত্রীর কাছে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন অধিনায়ক কোহলি। অনেকগুলো রান বাকি থাকলেও অনেকে আশায় ছিলেন, বহু কঠিন ম্যাচের মতো এই সেমিফাইনালও উতরে দেবেন ‘ফিনিশার’ ধোনি। মার্টিন গাপ্টিলের সরাসরি থ্রোয়ে তিনি রান আউট না হলে সেটা হয়েও যেত হয়তো। হয়নি। রয়ে গিয়েছে চিরস্থায়ী চিনচিনে জ্বালা। ওই টুর্নামেন্টে রেকর্ড পাঁচটি সেঞ্চুরি সত্ত্বেও বিশ্বজয়ী হতে না পারার যন্ত্রণা কি বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা ভুলতে পারবেন কখনও?

পুজো-বৃষ্টি-বিশ্বকাপ...

যে কোনও বড় উৎসবেরই একটা আবহ থাকে। এই ২০২৩-এর অক্টোবরে কোনও কোনও গলি বা রাজপথে চোখ বুলিয়ে এক-এক সময়ে মনে হচ্ছে, এ বারের বিশ্বকাপে রোহিত শর্মাদের অভিযান কি বিজ্ঞাপনের বোর্ড ছাড়া সে ভাবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে কোথাও? পাড়ার মোড়ে তারকাদের ছবি দিয়ে তৈরি ব্যানার বা ছাদ থেকে ঝোলানো মস্ত তেরঙ্গাও গত শতকের মতো তেমন চোখে পড়ে না। ভয় দেখাচ্ছে বৃষ্টিও। কেউ কেউ যেমন ‘ক্রিকেট-জ্বর’ই দেখছেন না। তবে এ কথাও ঠিক যে, টিকিট বিক্রি হয়েছে। বাড়িতে বড় দল করে জমিয়ে টিভিতে খেলা দেখার আয়োজনও সেরে ফেলেছেন অনেকে। হয়তো পুজোর তীব্র রোশনাই কেটে গেলেই ফাঁকা আকাশে আরও ঝলমলিয়ে উঠবে বিশ্বকাপের নক্ষত্রপুঞ্জ। এক মাঝবয়সি বলছিলেন, “আমরা একটা প্রতিশ্রুতিমান টিমের জন্য গলা ফাটাতাম। সেই ভারতই এখন মহাশক্তি। সেমিফাইনাল অবধি এই টিম যাবেই। যাওয়া উচিত। দেখাই যাক না।”

ভরসা আছে। ভরসার জয় হোক।

অন্য বিষয়গুলি:

cricket world cup History
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy