ছবি তুমি কার? অসমে কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সংবাদমাধ্যমে, ইতিহাসের আলোচনায় স্বাধীনতা আন্দোলনের শহিদ কনললতা বরুয়ার প্রতিকৃতি হিসেবে একটি ছবি প্রকাশিত হচ্ছে। গত ১১ অগস্টের রবিবাসরীয় প্রচ্ছদ নিবন্ধে সেই ছবিটিই প্রকাশিত হয়েছিল।
অতঃপর হরেক সংশয়। পশ্চিমবঙ্গের অনেকের মতে, ছবিটি আসলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনায় জড়িত বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের। আবার অসমের লোকেরা অনেকাংশেই নিশ্চিত, ওটি কনকলতারই ছবি।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়ে উত্তাল অসমে ১৯৪২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মাত্র ১৭ বছরের কিশোরী কনকলতা বরুয়া অসমের বিশ্বনাথে জাতীয় পতাকা হাতে থানা ঘেরাওয়ে নেতৃ্ত্ব দিয়েছিলেন। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনাচক্রে কনকলতার মূর্তি অসমের বিভিন্ন স্থানে থাকলেও, তাঁর কোনও ছবি ছিল না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে প্রকাশিত ও প্রচলিত হাতে আঁকা একটি ছবি কনকলতা বরুয়ার ছবি বলেই অসমে সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে অসমের অবদান সংক্রান্ত বইয়ের লেখক, ইতিহাসবিদ তথা অসম শিক্ষা বিভাগের প্রাক্তন সচিব লক্ষ্মীনাথ তামুলির মতে, ‘‘কনকলতার আসল ছবি কোথাও নেই। মূর্তিটাই তাই প্রামাণ্য বলে ধরা হয়। কিন্তু সম্প্রতি যে ছবিটিকে কনকলতার ছবি বলে ব্যবহার করা হচ্ছে সেই ছবিটি আগে ব্যবহার হতে দেখিনি। কনকলতার মূর্তির মুখাবয়ব বা চুলের সঙ্গে ছবির মেয়েটির মিল নেই। আসলে স্যুকাফা, লাচিত বরফুকন বা এমন অনেক ঐতিহাসিক চরিত্রেরই মনগড়া ছবি ব্যবহার করা হয়।’’
সাহিত্যিক ও গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘আমার ধারণা, ছবিটি কনকলতার হলেও হতে পারে।’’ সাহিত্য সমালোচক ও শিক্ষাবিদ হীরেন গোঁহাইয়ের মতে, ছবিটি প্রামাণ্য হিসেবেই প্রচলিত।
বিশ্বনাথের অতিরিক্ত জেলাশাসক বিশ্বজিৎ শইকিয়া জানান, ছবিটি সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন। কনকলতার কোনও ছবি ছিল না। কেউ হয়তো মৌখিক বিবরণ শুনে এই ছবি এঁকেছিল।
অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সজল নাগও বলছেন, এটি কনকলতারই ছবি।
কিন্তু অসম প্রকাশনা পরিষদের সচিব প্রমোদ কলিতার ভিন্ন মত। তিনি জানান, কনকলতা বরুয়ার ছবি হিসেবে প্রচলিত ছবিটি সম্ভবত প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের।
অসমের মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস উপদেষ্টা হৃষীকেশ গোস্বামী জানান, মূর্তিটি কনকলতার হলেও ছবিটি নিয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
পাঠ্যপুস্তক প্রকাশক ‘আসাম পাবলিশিং কোম্পানি’র কর্ণধার সঞ্জয় সান্যালের মতে, আসল ছবি না থাকায় এবং অসমের ইতিহাস সম্পর্কে বাংলায় কোনও কিছুই না পড়ানোর ফলেই এই ছবি নিয়ে বিতর্ক। ছবিটি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মতোই। সম্ভবত অজ্ঞানতা বশত কেউ ছবিটি কনকলতার বলে অসমে ব্যবহার করেছিলেন। সেই থেকেই এই ছবিটির ব্যবহার শুরু হয়েছে। এখানকার অধিকাংশ লোক প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ছবি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। আবার বাংলার লোকেরা প্রীতিলতাকে চিনলেও অসমের স্বাধীনতা সংগ্রামী কনকলতা তাঁদের অচেনা। স্বাধীনতার ৭৩তম বছরেও তাই দুই পড়শি রাজ্যের এই সংশয়: কনকলতা না প্রীতিলতা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy