Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৭
Bengali Story

দৈবাদিষ্ট

কুন্তী আপ্লুত হয়ে আবেগে চক্ষু নিমীলিত করেন। দু’টি হাত আপনা থেকেই জোড় হয়ে বুকের কাছে উঠে যায়। অস্ফুটে বলেন, “হে ইন্দ্রদেব, ধন্য!”

সৌরভ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২২ ০৫:৫৪
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি:সশিষ্য দ্রোণ আবিষ্কার করেন এক সারমেয়কে। তার গলায় অনেকগুলি তির বিদ্ধ হয়েছে। ফলে সে চিৎকার করতে পারছে না। তার পশ্চাদনুসরণ করে তাঁরা সন্ধান পান এক কিশোরের। সে দ্রোণকে প্রণতি জানিয়ে বলে, তার নাম একলব্য। সে জাতিতে নিষাদ। শরনিক্ষেপে সারমেয়র কণ্ঠরোধ তারই কীর্তি। অন্য দিকে, দীর্ঘক্ষণ পঞ্চপুত্রের অদর্শনে চিন্তান্বিত হন কুন্তী।এক বার কৌরবদের হাতে ভীমের মৃত্যুপথযাত্রী হয়ে পড়ার ঘটনা তাঁর স্মৃতিপটে উঁকি দেয়।

কুন্তী একটু আগ্রহের স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার পুত্ররা মহাবীর হয়ে উঠছে? সকলেই?”

“অভ্রান্ত ভাবে, ভদ্রে,” বিদুর বললেন, “ভল্লযুদ্ধে ও রথচালনায় যুধিষ্ঠির শ্রেষ্ঠ, গদা ও মল্লযুদ্ধে ভীম। মাদ্রীনন্দনেরা উভয়েই অসিযুদ্ধে সর্বোৎকৃষ্ট। আর তৃতীয়পাণ্ডব অর্জুন...”

বিদুর একটু থামলেন। উৎসুক কুন্তী তাকিয়ে রয়েছেন, “অর্জুন...?”

“সে হয়ে উঠছে শ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদ। আচার্য দ্রোণ বলেন, বহু যুগের মধ্যে অর্জুনের মতো সর্বাস্ত্রচালন-দক্ষ ধনুর্ধর মর্ত্যে আসেনি! তাকেই সযত্নে দেওয়া হচ্ছে সমস্ত গূঢ় ও মন্ত্রসিদ্ধ বিদ্যাগুলি, যা ত্রিভুবনে গুরু পরশুরাম, আচার্য দ্রোণ ও মহান গঙ্গাপুত্র ব্যতীত এই প্রজন্মে কারও আয়ত্ত নেই!বাসব-পুত্রের বলিষ্ঠ বাহুর উপর কুরুসাম্রাজ্য ভরসা রাখবে বহুকাল।”

কুন্তী আপ্লুত হয়ে আবেগে চক্ষু নিমীলিত করেন। দু’টি হাত আপনা থেকেই জোড় হয়ে বুকের কাছে উঠে যায়। অস্ফুটে বলেন, “হে ইন্দ্রদেব, ধন্য!”

বিদুর কয়েক পল নীরব থাকেন। কী যেন ভাবেন। একটু কি বিষণ্ণ দেখায় তাঁর ওষ্ঠপ্রান্তের ক্ষীণ হাসিটি? আসন থেকে উঠে তিনি পৃথার ঠিক পাশটিতে গিয়ে দাঁড়ান। এ দিকে-ও দিকে এক বার চকিত দৃষ্টিপাত করে নিয়ে উপবিষ্টা নারীর বাম স্কন্ধটি সামান্য স্পর্শ করেন। মৃদু কণ্ঠে বলেন, “শুধুই ইন্দ্র ধন্য? আর... ধর্ম?”

কুন্তী মুখটি সামান্য তুলে, চোখ খুলে তাকালেন। পরিপূর্ণ দৃষ্টি। বড় অপূর্ব গভীর চোখ দু’টি পৃথার। আয়ত নেত্রের মধ্যস্থলে কৃষ্ণ অক্ষিতারা, প্রান্তদ্বয় ঈষৎ রক্তিম। বড় বড় পল্লব, ঘন পক্ষ্ম। মর্যাদাপূর্ণ কিন্তু অনুদ্ধত, স্থির কিন্তু বাঙ্ময় দৃষ্টি। এক বার চোখ পড়লে সরিয়ে নেওয়া শক্ত। বিদুর অপলকে দেখতে থাকেন। এমনিতে ক্ষত্তাকে সকলে স্থিতানুভব ও অনুদ্বেলচিত্ত বলে জানে, কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁকেও কিঞ্চিৎ দ্রব দেখাচ্ছিল।

যৌবনের সিংহদুয়ার অতিক্রম করেও পৃথা কী স্নিগ্ধ শ্রীময়ী রূপ ধরে রেখেছেন আজও! কেশদামে কিছু রৌপ্যসূত্র বা আননে কয়েকটি বয়োচিহ্নরেখা তাঁর সৌন্দর্যের স্থিরবিজুরিকে ম্লান করতে পারেনি। তাকিয়ে থাকতে থাকতে বিদুরের মনে পড়ে— প্রায় দুই দশক আগের সেই তপ্তযৌবনা রমণীর কথা। রাজসুখ ছেড়ে অক্ষমদেহ পতির সঙ্গে আরণ্য-নির্বাসনে চলেছেন স্বেচ্ছায়...

“ধর্ম...”

অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন বিদুর। কুন্তীর স্বরে তিনি চকিত হয়ে তাকালেন। মুখটি নামিয়ে নিয়েছেন কুন্তী। অনুচ্চ মঞ্জুকণ্ঠে বলছেন, “তিনি অনন্য। আমার প্রথম সন্তানের পিতা। আমার শ্রেষ্ঠ পুত্রটি তাঁর দান। আমার নারীজীবনেপ্রথম চরিতার্থতা তিনিই এনে দিয়েছিলেন— ধর্ম, তিনি অদ্বিতীয়!”

বিদুর সরে আসেন নিরাপদ দূরত্বে। কক্ষ নির্জন, কিন্তু দাসদাসীরা চরবৃত্তি করে অনেকেই। তাঁর নিজস্ব গূঢ়বার্তা-সংগ্রাহকও যেমন আছে এদের মধ্যে ছড়ানো, তেমনই স্বয়ং গঙ্গাপুত্রের নিজস্ব গুপ্তচরও। বিদুর হয়তো তাদের সকলকে চেনেন না। ভ্রাতৃবধূর সঙ্গে পরামর্শ করতে দেবর হিসেবে তিনি প্রায়শই আসেন, তাতে সমস্যা নেই; তিনি অমাত্যও বটে, রাজ্ঞী কুন্তীর কক্ষে সে বিচারেও গতিবিধি তাঁর অবারিত। কিন্তু এই নৈকট্য তথা অঙ্গস্পর্শের কথা যদি ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ্যে আসে... রাজপুরীতে প্রচারিত হয় বা কুন্তীর পুত্রদের কর্ণগোচর হয়...

অনেকটা ব্যবধানে আসেন, তার পর পৃথার বিপরীত দিকে মুখ রেখে ঘুরে দাঁড়ান বিদুর। যে বাক্যটি তাঁর জিহ্বাগ্রে এসেছে সেটি বলবেন কি না, ভাবেন কয়েক মুহূর্ত। তার পর বলেন, “কিন্তু আর্যে, কথাটি তো সত্য নয়!”

“কোন কথা?”

“যে, ধর্মই আপনার প্রথম সন্তানের পিতা...”

কুন্তী তড়িৎস্পৃষ্টের মতো মুখ তোলেন। অমন ধীমতী, ব্যক্তিত্বমণ্ডিতা রমণী— কিন্তু এক লহমায় নীরক্ত হয়ে গিয়েছে তাঁর ওষ্ঠ। শ্বাস নিতেভুলে গিয়েছেন।

পশ্চিমগগনবিলগ্ন দিবাকরের রক্তস্বর্ণিম বর্ণচ্ছটা অলিন্দে এসে পড়েছে। বিদুর সেই দিকেই চেয়ে রইলেন কিছু ক্ষণ। কক্ষে নিবিড় নৈঃশব্দ্য। পৃথা কাষ্ঠপুত্তলির মতো স্থাণুবৎ। বিদুর নিজের অন্তরের মধ্যে খনন করতে থাকেন। কথাটি বলা সমীচীন হল কি? দুর্বল ও অসতর্ক মুহূর্তে যতটুকু বলে ফেলেছেন, তার অধিক কি ব্যক্ত করার প্রয়োজন আছে এখনই? কুন্তী কি আহত হলেন? হওয়ারই কথা! একে তো বিষয়টি নিতান্ত গোপন, সম্ভবত এই জগতে মাত্র দুই বা তিন জন জীবিত ব্যক্তি এই গূঢ় তথ্যের সন্ধান রাখেন; সেই তথ্যজ্ঞানীদের তালিকায় বিদুরের অন্তর্ভুক্ত থাকার কথাই নয়! বিদুরের মুখে এই বাক্যটি— স্পষ্টতই কুন্তীর কাছে চরম অপ্রত্যাশিত। নির্বাক হয়ে গিয়েছেন পাণ্ডুজায়া। এখনই, এই অবস্থায় আরও যদি বিশদ হয় এই স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ, তাতে প্রবল অস্বস্তি-আলোড়নের আশঙ্কা আছে— বুঝতে পারছেন বিদুর।

থাক। থাক তবে আপাতত। পরে কখনও...

১২

যুধিষ্ঠির একটু অগ্রসর হয়ে আসে। খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করে কিশোরের আনন। হ্যাঁ, ঘোর সন্দেহজনক! গুরুর সংশয় অমূলক নয় একেবারেই! এর নাসা খর্ব নয়, ওষ্ঠ স্থূল নয়। ললাট উন্নত। করোটি সুগোল, পশ্চাদংশ সমুচ্চ হয়ে ওঠেনি। এই কিশোর কিছু শীর্ণদেহ, সম্ভবত অরণ্যে কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে পুষ্টির অভাব। দীর্ঘ-অকর্তিত কেশপাশ পীতাভ হয়ে জটার আকার নিয়েছে। কিন্তু এ নিষাদবংশজ হতে পারে না। নিষাদ তাঁরা অনেক দেখেছেন।

“আচার্য ঠিক বলেছেন, একলব্য!” যুধিষ্ঠির তার তর্জনীটি তুলে বলে, “তুমি অনার্যরক্তসম্ভূত নও আদৌ। তোমার গাত্রবর্ণ ঈষৎ শ্যামল ঠিকই, কিন্তু আর্যগোষ্ঠীতে তেমন হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তোমাকে অতিরিক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মনে হচ্ছেকারণ তুমি মুখে-গাত্রে অঙ্গারচূর্ণমিশ্রিত মৃত্তিকা লেপন করেছ— নিষাদ-রীতি অনুযায়ী। কিন্তু,কালি মাখলেও, দেহ-গঠন গোপন করা তো সম্ভব নয়। তোমার মুখে ও কঙ্কালে নির্ভুল ক্ষত্রিয়-অভিজ্ঞান ধরা পড়ছে! তোমার জটা-বল্কল-পশুচর্ম-ভাষাভঙ্গি সবই নিষাদোচিত, অথচ মনে হচ্ছে এ সবই তোমার ছদ্মবেশ!”

“ছদ্মবেশ! না না, ছি ছি!” একলব্যকে বিপন্ন দেখায়। কাতর ভঙ্গিতে সে বলে, “আমি মিথ্যে বলিনি, বনের দেবতার শপথ! হ্যাঁ, অবশ্য আপনাদের সন্দেহ জাগার কারণ আছে, এও আমি বুঝি। দেশে আমার খেলার সাথী আর প্রতিবেশীরাও বলে, আমি নিজেও জানি— আমায় দেখতে কিছু অন্য রকম... কে জানে কেন! ঠিকই। কিন্তু তাতে আমি কী করব বলুন। সত্যিই আমি নিষাদের ছেলে, বিশ্বাস করুন। আমার বাপ, নিষাদরাজ হিরণ্যধনু, মগধের অধীন জঙ্গল-প্রদেশের গোষ্ঠীপতি, পৌণ্ড্র-কিরাতরাজ্যেও তাঁর অধিকার বিস্তৃত।”

“মগধ! পৌণ্ড্র!” দ্রোণের কপালের কুঞ্চন গভীর হয়, “সে সব তো দূরের রাজ্য! এই অরণ্য কুরু-অধিকৃত— এখানে তুমি বসবাস করছ কী ভাবে?”

নতমুখে কিশোর বলে, “আমি সেই ছোট্টবেলা থেকেই নির্ভুল লক্ষ্যে তির চালাতে পারি, চোখের পাতা ফেলার আগেই! অনেক দূর পর্যন্ত নিশানা লাগাতে পারি। তির-ধনুক নিয়েই খাই-ঘুমোই, ওই আমার ধ্যানজ্ঞান। আপনার কাছে আরও উঁচুদরের শিক্ষা পাব এই আশাতেই দূরদেশ থেকে হস্তিনায় এসেছিলাম, আচার্যদেব। ভাল করে তিথি-টিথি দেখে এক সকালে স্নান করে ফল ফুল দূর্বা দুধ মধু আর হরিণের মাংস নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম শিক্ষাকেন্দ্রের সামনে। কিন্তু, প্রভু, আশ্রমে পা রাখার সুযোগই মেলেনি। দরজায় দাঁড়ানো রক্ষীরাই আমাকে তাড়িয়ে দিলে— বললে যে, গুরু দ্রোণ নিষাদ-জাতিকে শিক্ষাদান করেন না!”

দ্রোণ এক বার নিজের শিষ্যদের সঙ্গে দৃষ্টিবিনিময় করেন, কিন্তু উত্তর দেন না। একলব্য বলতে থাকে, “একটি বার আপনার সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য আমি তাদের পায়ে পড়েছিলাম, বলেছিলাম তিনি আমাকে শিষ্যত্বে নিন বা না-নিন— আমি এক বার তাঁকে আমার তির চালানোটুকু দেখাতে চাই! তার পর তাঁর যা বিচার হয়! কিন্তু আমাকে বলা হল, স্বয়ং গুরুই কঠোর আদেশ দিয়ে রেখেছেন, নীচজাতির প্রবেশাধিকার নেই আশ্রমে। দূর থেকে আচার্যকে এক পলক দেখলাম শুধু, ধনুক নিয়ে এক কুমারকে গুণ পরানো শেখাচ্ছেন— তার পরেই প্রহরীরা আমাকে ধমক দিলে, ফিরে এলাম!”

“হ্যাঁ, আদেশ তেমনই ছিল। কিন্তু, বালক, মগধে তো তুমি ফিরে যাওনি। অরণ্যের মধ্যে গোপনে তুমি বিদ্যা-সাধনা শুরু করেছ... এবং প্রভূতপরিমাণে সিদ্ধিও অর্জন করেছ দেখতে পাচ্ছি! এখানে আর কে বাস করে তোমার সঙ্গে?”

“কেউ না, প্রভু। আমি একাই থাকি। বনে খাদ্যের অভাব নেই, আত্মরক্ষা করতে জানি, নির্জনে সাধনারও সুবিধে প্রচুর। এই সমস্ত গাছ কাটা থেকে কুটির-তৈরি, লক্ষ্যপট-বানানো, অভ্যাস করার সমস্ত আয়োজন— আমি একলা করেছি। এখান থেকে কিছু দূরে এক কাঠুরে সম্প্রদায় থাকে— তারা মহানন্দে সব ডালপালা কাঠ ইত্যাদি নিয়ে গিয়ে, জায়গাটা পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছে, এইটুকুই। আর এখানকার বনচর ব্যাধেরা মাঝে মাঝে হাসিঠাট্টা খোঁজখবর করে যায়, খাবার জল আর মধু দিয়ে যায়, পশুচামড়া হাড় শিং বা ছিলার উপাদান দরকার কি না জেনে যায়...”

এত ক্ষণ সব কথা নীরবেই শুনছিল, এ বার অর্জুন একটু তীব্র ভঙ্গিতে বলে ওঠে, “কারও সহায়তা বিনা একা-একা এমন বড় বড় গাছ কাটতে পারে কেউ? তুমি মিথ্যাবাদী!”

একলব্য এ বার তার দিকে তাকাল। হাসল। বলল, “কেন পারবে না, কুমার? ধনুক যার হাতে আছে, তির চালাতে যে জানে— সে কোন কঠিন কাজে ডরায়? এখনই ওই উত্তর দিকের বিরাট শিশুগাছটা মাটিতে শুইয়ে ফেলে দেখাব?”

“শুধু ধনুর্বাণ দিয়ে?” অশ্বত্থামার বিস্মিত প্রশ্ন ভেসে আসে। একলব্য তত ক্ষণে পাঁচটি অদ্ভুতদর্শন শর তূণীর থেকে নির্বাচন করে ফেলেছে। পুনরায় মৃদু হেসে সে বলে, “আজ্ঞে, হ্যাঁ, গুরুপুত্র!”

কুমারদের সঙ্গে দ্রোণও সবিস্ময়ে নিষাদপুত্রের শরগুলি দেখছিলেন। শরের অগ্রভাগ ধাতুনির্মিত নয়। সম্ভবত কোনও পশুর শৃঙ্গকে শাণিত করে ফলক হিসেবে প্রয়োগ করা হয়েছে। সাধারণ তিরের মতো সূচীমুখ নয়, এক-একটি ফলা প্রায় অষ্ট করাঙ্গুলি-প্রমাণ বিস্তৃত— ঈষৎ উপবৃত্তাকার। শৃঙ্গ-নির্মিত হওয়াতে, কাঙ্ক্ষিত আকৃতি দেওয়ার সুবিধা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য বিদ্ধকরণ নয়, কর্তন! বেগে আঘাত করলে এক একটি বাণ, ক্ষুদ্রাকৃতি কিন্তু ধারালো ছুরিকার মতো, বা বিস্তৃতমুখ ভল্লের মতো, ছেদনের কাজ করবে।

দুর্যোধন বিস্মিতস্বরে বলল, “অর্ধচন্দ্রবাণ! এ শিক্ষা তো আমাদের আশ্রমে এই সদ্য...”

দ্রোণ নিরুত্তরে একলব্যের প্রতিটি অঙ্গসঞ্চালন পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তাঁর বিস্ময় ক্রমবর্ধমান। দুর্যোধন ঠিক বলেছে। অর্ধচন্দ্রবাণ কোনও অন্ত্যজ ধানুকীর করায়ত্ত হওয়ার কথা নয়! এ শিক্ষা রাজবংশীয় শিক্ষার্থী ভিন্ন দেওয়া হয় না। দ্রোণ মাত্র কিছুকাল হল এ পর্ব আরম্ভ করেছেন তাঁর গুরুকুলে— তাও মাত্র সেই প্রাথমিক বিদ্যাটুকু, যেটি সাধারণ বিদ্যার্থীর জন্য। অর্জুনের জন্য রুদ্ধকক্ষে বিশেষ প্রয়োগ-শিক্ষণের পর্ব এখনও শুরু হয়নি। এই নিষাদ স্ববুদ্ধিতে সেই অস্ত্র নির্মাণ করে ফেলেছে! অরণ্যে উৎকৃষ্ট লৌহের সরবরাহ নেই, তার বিকল্পও উদ্ভাবন করেছে নিজ মস্তিষ্কগুণে!

দর্শকদের স্তম্ভিত করে রেখেই পর পর পাঁচটি বাণ নিক্ষেপ করল একলব্য। তার দেহ পেশল নয়, বেতসের মতো শুষ্ক ও কৃশ, কিন্তু এত দ্রুত তার যোজনা আর ক্ষেপণ— কয়েক লহমার জন্য অস্পষ্ট মনে হল তার শরমুষ্টি ও আঙুলগুলি! পাঁচটি টঙ্কারধ্বনিও পৃথক করে বোঝা গেল না। মনে হচ্ছিল যেন এক বারেই পাঁচটি তির জ্যামুক্ত হয়ে বেরোল তার কার্মুক থেকে!

আর, অপর প্রান্তে? সশব্দে ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ল সেই শিংশপা-তরুটি— অন্তত চল্লিশ অঙ্গুলি যার কাণ্ডের ব্যাস!

ক্রমশ

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy