ছবি: পিয়ালী বালা।
পূর্বানুবৃত্তি: মেহুলি তার ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্টের কথা জানায় ময়ঙ্ককে। ময়ঙ্ক শোনে সব। তার পর বলে, সে মেহুলিকে একটা ভাল খবর দেবে। অন্য দিকে, মেহুলির ঘরে ফিমেল কন্ডোম পেয়ে দুনিয়া তোলপাড় হয়ে যায় কস্তুরীর। সে তখনই ফোন করে আকিঞ্চনকে। অন্য নারীতে মগ্ন আকিঞ্চন ফোন ধরতে পারে না। একটু পরে কল ব্যাক করে কিছুটা শোনে কস্তুরীর মুখে। ঘটনার আভাস পেয়ে ঘাবড়ে যায় আকিঞ্চনও। তার ফেরার জন্য অপেক্ষা করে কস্তুরী। মাথায় নানা রকম চিন্তা ঘোরে তার।
আচমকা বাইকটা দাঁড়াল। বেশ মস্তিতে ছিল মেহুলি। আচমকা দাঁড় করানোয় তার বুকদুটো প্রায় বসে গেল ময়ঙ্কের পিঠে। মেহুলির শরীরটা কেমন শিরশির করে উঠল। তাকিয়ে দেখল ময়ঙ্কের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। এই অপ্রশস্ত রাস্তাটা আসলে হাইওয়ে ছেড়ে বাঁ দিকে একটা সার্ভিস রোডের মতো। ময়ঙ্ক তাকিয়ে আছে পাশের বিশাল মাঠটার দিকে। মেহুলি জানতে চাইল, “কী হল, দাঁড়ালি কেন?”
“কাশফুল।”
“অ্যাঁ? অগস্টে কাশফুল কোথায় পেলি রে?”
“ওই দেখ, আরে ওই যে, দেখতে পাচ্ছিস না?”
দেখতে পেল। সত্যি তো। বাঁ পাশে একটা বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঠটা যেখানে দিগন্তে শেষ হয়েছে, ঠিক সেইখানে একটা বিশাল লাল-কমলা রঙা আলোর বল ডুবে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আর ওই বল আর মাঠের মাঝখানটার দূরত্বকে যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ করলে যত দূর হয়, ঠিক সেইখানে সত্যি কাশফুলের গাছ। আর কিছু বাড়িঘরের চিহ্ন। গ্রাম না কি? মেহুলি কোনও দিন গ্রাম দেখেনি। একদৃষ্টে সে দিকে তাকিয়ে ছিল মেহুলি। লক্ষ করে ময়ঙ্ক বলল, “জীবনে ফার্স্ট টাইম দেখছিস না কি?”
কোনও জবাব দিল না মেহুলি। সত্যিই জীবনে চর্মচক্ষে সে প্রথম কাশফুল দেখছে। বাপি তাকে প্রথম কাশফুল দেখায়, তাও একটা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ওল্ড মুভিতে। ডিরেক্টর সত্যজিৎ রে। মেহুলির সিনেমা নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই। ফ্রেন্ডস সার্কেলের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে মাল্টিপ্লেক্সে যায়, ওকেও ডাকে। তবে গাদাগুচ্ছের টাকা খরচ করে অন্ধকারে ঠায় বসে পপকর্ন চিবোনো তার পোষায় না। তার যা কিছু দেখা বাপির এনে দেওয়া সিডিতে, বাকিটা ওটিটি-তে। স্টিভেন স্পিলবার্গ, মার্টিন স্করসেসে, কোয়েনটিন টারানটিনো, হিচকক, পিটার জ্যাকসন, আকিরা কুরোসাওয়া... ভাবতে গিয়েই মা’র মুখটা ভেসে উঠল। ভদ্রমহিলা যে কী করে বাংলা সিরিয়াল দেখে ভাবতেই অবাক লাগে। যত্তসব ফালতু মেলোড্রামা! মেহুলি অনেকটা দূরে ঘনায়মান প্রায়ান্ধকার ক্যানভাসটার দিকে তাকিয়ে বলল, “হে বাডি, তোর গুড নিউজ়টা কী রে?”
ময়ঙ্ক হাতের আড়াল দিয়ে একটা সিগারেট জ্বালানোর চেষ্টা করছিল, থামিয়ে দিয়ে বলল, “ইয়া। আ গুড নিউজ় ইজ় টু বি সার্ভড। আয়াম গোয়িং টু ম্যারি, টিনা।”
মেহুলি তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখতে পেল ঠিক ‘টিনা’ শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে সূর্যটা ডুবে গিয়ে অনেক দূরের হরাইজ়ন্টাল বর্ডারলাইনটা মুছে গেল। এক অদ্ভুত মনখারাপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেহুলি বলল, “বাড়ি যাব। আমাকে একটু বাড়িতে ড্রপ করে দিবি? নাঃ থাক, আমি নিজেই চলে যাব। তুই যা।”
“হোয়াট হ্যাপেনড!”
“কী হবে?”
“আমি একটা গুড নিউজ় দিলাম আর তুই...”
“আয়াম স্যরি, কনগ্র্যাটস ইয়ার। তুই ওকে ভালবাসিস? ইজ় শি সেক্সি?”
“ধুস। দেখেইছি এক বার। মেয়েটা ওয়েল এডুকেটেড অ্যান্ড...”
“বুঝলাম। ভাল থাকিস। তুই যা।”
“আর তুই?”
“সে তোকে ভাবতে হবে না।”
“পিরিয়োডিক্যাল পাগলামিটা ফের চেপেছে? এই নে, সিগারেটটা ধর আর পিছনে বোস।”
“ডোন্ট বি ন্যাগিং ড্যুড।”
“আয়াম সিরিয়াস বাডি। তোকে এই ফাঁকা রাস্তায় ছেড়ে চলে যাব? ফাজলামি হচ্ছে?”
মেহুলির কিছু ভাল লাগছে না। এই ফুরফুরে বাতাস, এই নির্জন সার্ভিস রোড, ময়ঙ্কের সান্নিধ্য, কিছুই আর যেন সহ্য হচ্ছে না। একটা নেশার মতো ওই মাঠটা তাকে ডাকছে। সে চেঁচিয়ে উঠল, “গেট লস্ট ফাকার। আদারওয়াইজ় আমি চেঁচাব।”
থমকে গেল ময়ঙ্ক, “চেঁচা। এখানে কে শুনতে আসছে? তোকে না নিয়ে আমি যাব না। গাড়িতে ওঠ, দেখ, কথা না শুনলে আমি...”
ময়ঙ্কের কথা শেষ হল না। সবিস্ময়ে সে দেখল মেহুলি মাঠের উপর দিয়ে দৌড়চ্ছে। কোন লেভেলের পাগলামি এটা? সে পিছু নিতে গিয়ে থমকাল। এখানে বাইক ছেড়ে গেলে ফিরে এসে আর দেখতে পাবে না। হতবুদ্ধির মতো অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল সে।
নীচে কেতকীবালা ছিলেন। দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে একটা মাসিকের পাতা ওল্টাচ্ছিলেন। বাইরে গ্যারাজ খোলার শব্দ শুনে চেয়ে দেখলেন, ছেলে। আজ তো ছুটির দিন। এমন দিন হলে আকিঞ্চন একটু দেরিতেই ফেরে। কেতকীবালা দরজা খুলে দিলেন। কিছু বলার আগেই দেখলেন আকিঞ্চন দ্রুতবেগে উপরে উঠে গেল।
আকিঞ্চন এক এক লাফে দুটো করে সিঁড়ি পেরিয়ে ড্রয়িংরুমে ঢুকে দেখল শুনশান। কোথায় গেল কস্তুরী? কস্তুরী তখন ‘রাঙামাটির মেয়ে’র পঞ্চম এপিসোডটা দেখছিল বুঁদ হয়ে। মিশুক মেয়েটা আগের সিরিয়াল ‘ক্রন্দসী’তে একটা সাইড রোলে ছিল। তাতেই যেটুকু দেখিয়েছে, কস্তুরী মুগ্ধ। আর ‘রাঙামাটির মেয়ে’তে তো লিড রোল। এক জন অন্ধ, বোবা মেয়ের চরিত্র। কথা না বলে যে কী লেভেলের অভিনয় করে দেখানো যায়, রিখি চরিত্রে মিশুক দেখিয়ে দিচ্ছে। একটা সিনে একটা চুড়ান্ত মুহূর্তে পিছনে পায়ের আওয়াজ শুনে পজ় করে উঠে বসল সে। দেখল আকিঞ্চনের মুখে কেমন একটা ভ্যাবাচ্যাকা ভাব, “কী হয়েছে?”
কোনও কথা না বলে বেডরুম থেকে সে প্যাকেটটা এনে ছুড়ে দিল আকিঞ্চনের দিকে। লুফে নিয়ে এক ঝলক দেখেই বোমকে গেল আকিঞ্চন, “এটা কোত্থেকে এল?”
“তোমার মেয়ের আলমারি থেকে।”
“তুমি ফের ওর ওয়ার্ডরোব ঘেঁটেছ?”
“সেটাই কি সবচেয়ে বড় কথা এখন?”
কস্তুরীর হিমশীতল স্বরে সামান্য হলেও ঘাবড়ে গেল আকিঞ্চন। এ জিনিস সে চেনে। আচমকা কস্তুরীর ‘তোমার মেয়ে’ কথাটা তার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিল। আকিঞ্চন মেয়েকে অনেকটাই স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে এটা দিনের আলোর মতো সত্যি, কিন্তু তাই বলে এতটা মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা এখনও অর্জন করতে পারেনি সে। কতই বা বয়স মেহুর! এই মুহূর্তে তার হাতে ধরা প্যাকেটটা যদি একটা বাস্তব হয়, তা হলে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এখনই। ফ্রিজ খুলে গলায় ঠান্ডা জল ঢেলে আকিঞ্চন গুম ধরা গলায় জিজ্ঞেস করল, “মেহু কোথায়?”
“জানি না।”
“জানি না মানে কী? তুমি নিজেই জানো না তোমার মেয়ে কোথায়? বাঃ। স্প্লেনডিড।”
“আমার মেয়ে ছিল আকিঞ্চন। বছর খানেক হল ও তোমার মেয়ে হয়েছে। তুমি নিজেই ডিক্লেয়ার করেছ। করোনি?”
“তুমি... তুমি...”
“আমি মেয়ে অথবা তার বাবা— কারও খোঁজ রাখি না আজকাল। রাখার অনুমতি দেওয়া হয়নি। যেমন আমি কি জানতাম আজ সকাল থেকে তুমি কোথায় গেছ? কার সঙ্গে আছ? ফোন না করলে কখন ফিরতে?”
বুকটা সামান্য কেঁপে উঠল আকিঞ্চনের। কস্তুরী কী কিছু ডাউট করেছে রাধিয়ার ব্যাপারে? আকিঞ্চনের বিবেচক মন বলল, এখন এই দৃশ্যপট থেকে সরে যাওয়াই শ্রেয়। পরে মনের মতো একটা জবাব দেওয়া যাবে কস্তুরীকে। আকিঞ্চন হনহন করে মেহুলির ঘরের দিকে ধাবিত হয়ে ঠিক এক মিনিটের মধ্যে ফিরে এসে কাউচে ধপাস করে বসে মোবাইলে ধরার চেষ্টা করল মেহুলিকে। রিং হচ্ছে। ধরছে না। আজ তো কলেজ নেই। তার মানে বন্ধুদের সঙ্গে হয়তো আছে। ক্লাসে যখন নেই, তখন আর কারও না হোক বাপির ফোন রিসিভ করবে না, এটা জাস্ট ইম্পসিবল।
“কিছু বুঝলে?”
কস্তুরীর প্রশ্নের জবাবে কোনও জুতসই উত্তর খুঁজে পেল না আকিঞ্চন। শুধু এক বার অস্ফুটে বলল, “ফোনটা যে কেন ধরছে না!”
“যদি লাঞ্চ না হয়ে থাকে, তা হলে বোলো, খাবার সার্ভ করব।”
“হ্যাঁ। দাও তো। খিদে পেয়েছে। আগে স্নানটা সেরে আসি।”
“গিজ়ার চালিয়ে নিয়ো।”
কস্তুরী কিচেনে ঢুকে গেল। আকিঞ্চন থম মেরে বসে রইল। এক বার মনে এল, হয়তো জিনিসটা মেহুর নয়। অন্য কারও।
চুপ করে বসে থাকতে থাকতে আকিঞ্চনের মনে হল, তবে কি সে-ই ভুল? মেয়ের কী দোষ? সে নিজেই তো কোনও ব্যাপারে মেহুলিকে আটকায়নি। মেয়ের অমত প্রতিষ্ঠিত হয় এমন কোনও সিদ্ধান্তে কস্তুরীর কোনও ওজর আপত্তি শোনেননি। শুনলে কি তাকে আজকের দিনটা দেখতে হত? ফিমেল কন্ডোম! এতটা বড় হয়ে গেছে তার মেয়ে? কবে থেকে? কার সঙ্গে? পুরো ব্যাপারটা আর এক বার মাথার মধ্যে চালিয়ে নিতেই আকিঞ্চনের মনে হল মাথাটা সামান্য ঘুরছে। হয়তো গরম থেকে এসেই গলায় হিমঠান্ডা জল ঢেলেছে তাই। সে তড়িঘড়ি টয়লেটের দিকে চলল টলতে টলতে। তবে সবটা যেতে পারল না। চোখের সামনে সব কিছু মুছে গেল। দড়াম শব্দ শুনে কস্তুরী ছুটে এসে দেখল, টয়লেটের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে আকিঞ্চন।
এনটিওয়ান-এর দরজা খুললেই ডান দিকে অনেকটা চওড়া কার পার্কিং। অন্য সময় মোটামুটি প্যাকড আপ থাকে। জায়গা থাকে না বলে প্রোডাকশনের গাড়িগুলো বাঁ দিকের খালি জায়গায় রাখা হয়। আজ শেষ বিকেলে জায়গাটা পুরোপুরি খালি। এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চার-পাঁচ জন মানুষ। বাঁ দিকের ফ্লোরের বাইরে এক জন মোটামুটি মুখচেনা অভিনেতা বসে আছেন প্লাস্টিকের চেয়ারে। এক হাতে নরম পানীয়ের বোতল আর আর এক হাতে না-জ্বালানো একটা সিগারেট। তাকে ঘিরে তিন জন ছেলে আর একটি মেয়ে। নিচু স্বরে কথাবার্তা চলছে। সামনের দিকে এগিয়ে প্রথম বাঁ-হাতি গলি ছেড়ে পরের গলিতে একটা পুরুষ-প্রসাধন কক্ষে আরতি দেবী খুব নিবিষ্ট মনে একটা বই পড়ছেন। অন্য সময় এই মেকআপ রুমগুলোয় বসার জায়গা থাকে না। আজ ছুটির দিন বলে আরতি দেবী বসতে পেরেছেন আরাম করে। অন্য দিন সামান্য দূরে একটি চার দিক খোলা মাথা ঢাকা দেওয়া জায়গায় বেঞ্চিতে অপেক্ষা করেন।
ঘরে এসি চলছে। আরতি দেবী যতটা পড়ছেন, ঢুলছেন তার চেয়ে বেশি। ক্যালেন্ডার হিসেবে আজ তাঁর এখানে আসার কথা নয়। কিন্তু মেয়ে কাল রাতেই জানিয়েছে আজ শুটিং আছে। কী সব ব্যাঙ্কিং না কী বলে, সেটায় নাকি টান ধরেছে। আগে মেয়ের সঙ্গে পাটুলি থেকে বাসে করে নিয়মিত স্টুডিয়োগুলোয় আসতেন আরতি দেবী। হাজার হোক মেয়ে বলে কথা। সে সব ভারী স্ট্রাগলের দিন ছিল। এখন আর আসেন না। বেশি দেরি হলে প্রোডাকশনের গাড়ি মেয়েকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
কিন্তু আজকের কথা আলাদা। আজকের শুটিং শেষ হলে রাতে পাঁশকুড়া যেতে হবে। মাচার প্রোগ্রাম আছে। এই মাচার প্রোগ্রামগুলো থাকলে আরতি দেবী মেয়েকে কখনওই একা ছাড়েন না। সব অচেনা অজানা লোকজন গ্রামগঞ্জের। মেয়ে যদিও অনেক বার বলেছে, “কী দরকার। আমি না হয় ওদের পার্সোনালি চিনি না। কিন্তু আমাদের প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জাররা তো চেনে। তাতেই হল। আর গাড়ি করে নিয়ে যাবে, বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবে, সঙ্গে আমার চেনা লোকজন থাকবে। প্রবলেমটা কী? ঐন্দ্রিলা, অহনা, পারিজাত, সোমাশ্রীদেরও তো মাচা থাকলে বাবা-মা কেউ যায় না। ওদের কোনও দিন বিপদ হয়েছে? তা হলে?”
তা হোক, তবুও মায়ের মন বলে কথা। সে মেয়ে বুঝবে না। অন্তত এখনই। এমনিতে ন’টা বাইশ পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন মেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ‘বেরোলাম’ জানায় না, তখন থেকেই টেনশন শুরু হয়ে যায়। কী জানি হাউস গাড়ি দিল কি না আজ, অ্যাপের ট্যাক্সি ড্রাইভারগুলো যা বদমাশ হয়েছে আজকাল। প্রতি সপ্তাহেই তো কাগজ খুললে সেই খারাপ খবরগুলো প্রথমে নজরে আসে আর গা শিউরে ওঠে।
মেয়ের আগে একটা ফোন ছিল। সম্প্রতি আর একটা ফোন কিনে দেওয়া হয়েছে রীতিমতো জোর করেই। মেয়ের আর একটা যে স্মার্টফোন আছে, সেটা এত ব্যস্ত থাকে আর তাতে হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক আরও কী সব ছাতার মাথা অ্যাপ সারা দিন চলে। ফলে দিনের শেষে ব্যাটারি ফুরিয়ে সুইচড অফ হয়ে যায় প্রায়ই। সব সময় চার্জ দেওয়ার ফুরসতও মেলে না। তাই যাতে অন্য ফোনে অন্তত যোগাযোগটা করা যায়, তাই এই কমদামি ফোনটা কিনে দেওয়া।
দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল মিশুক। আরতি দেবী সোজা হয়ে বসে জিজ্ঞেস করলেন, “আর ক’টা সিন রে মিশু?”
“আর একটা। হলে বাঁচি। ভাল লাগে বলো? ছুটির দিন। ভাবলাম দুপুরে ফাটিয়ে ঘুমোব। বিকেলে দিদার সঙ্গে আড্ডা। তার পর রাতে মাচা। ব্যস। তা নয়। ধুত! বিরক্তিকর।”
মিশুক মায়ের গায়ে ভর দিয়ে মোবাইলে টেপাটিপি শুরু করল। আরতি দেবীর খুব ইচ্ছে করছে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কিন্তু উপায় নেই। চুল হেয়ারড্রেসারকে দিয়ে সেট করানো, তাও আবার নিজস্ব খাটো চুলের পিছনে উইগ লাগিয়ে লম্বা করা। হাত দিলে সব ঘেঁটে যাবে। তখন ফের ঝিঙ্কিকে খবর দিতে হবে। স্টুডিয়োগুলোয় আসার জন্য অথবা বলা যায় মিশুক মুখার্জির মা হওয়ার সুবাদে অনেক নন-অ্যাক্টর মানুষজনের সঙ্গে আরতি দেবীর আলাপ আছে। তার মধ্যে এই ঝিঙ্কি মেয়েটাকে খুব ভাল লাগে তাঁর। বেশ চটপটে হাসিমুখ মেয়েটি। আসে সেই নৈহাটি থেকে। মিশুকরা ওকে ‘ঝিঙ্কু মামনি’ বলে খেপায় দেখেছেন তিনি। মেয়েটা কিন্তু রাগে না।
মাথায় বিলি কেটে দেওয়ার ইচ্ছে দমিয়ে রাখতে হল। গালেও চুমু খাওয়া নিষেধ। মুখের মেকআপ চটকে যাবে। এখন নাকি এক ধরনের কাজল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, মিশুকরা ইউজ় করে, ওতে নাকি জল লাগলেও ঘেঁটে যায় না। আরতি দেবীর সময়ে তো শুধু ক্রিম আর ফেস পাউডার ছিল। মেয়ের দৌলতে কত বিভিন্ন প্রকারের যে সাজগোজের জিনিসপত্র হতে পারে, জানতে পেরেছেন তিনি। কত রকমের ব্র্যান্ড! সব নাম মনে রাখাই মুশকিল। আর শুধু মুখকে সাজাতেই হরেক আইটেম হাজির। কনসিলার, স্টুডিয়ো-ফিক্সার, ফাউন্ডেশন, প্রাইমার, আইলাইনার, মাস্কারা, ব্লাশ, আইশ্যাডো প্যালেট... বাপরে বাপ! মিশুকের মেকআপ বক্স খুললেই তো চক্ষু চড়কগাছ। এই ক’বছরে মেকআপের একটাই স্টেপ শিখেছেন আরতি দেবী। প্রথমে কনসিলার, তার পরে ফাউন্ডেশন, শেষে স্টুডিয়ো-ফিক্সার। ব্যস। আর কিছু মনে রাখতে পারেন না তিনি। মিশুকের প্রথম প্রথম মেকআপ আর্টিস্ট লাগত, এখন আর লাগে না। মেকআপ আর্টিস্ট না থাকলে নিজেই নিজের মেকআপ করতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy