নির্ভরযোগ্য: সব কোচেরই ভরসার জায়গা ছিলেন মহম্মদ হাবিব। —ফাইল চিত্র।
অমন খ্যাংরাকাঠি চেহারা। উচ্চতা মোটেও উৎসাহিত করার মতো নয়। ওরা বলত, জাঁদরেল ডিফেন্ডারদের সামনে পড়লে তো স্রেফ উড়ে যাবে।
কে জানত, এক দিন ওরা সবাই ভুল প্রমাণিত হবে। সারা জীবনের অমূল্য শিক্ষা দিয়ে যাবেন তিনি যে— যতই রোগাপাতলা হও, যতই শারীরিক ভাবে দুর্বল দেখাক, যতই বেঁটেখাটো হও, সব বাধাবিঘ্ন জয় করে ফেলতে পারবে যদি জেদ থাকে, সঙ্কল্প থাকে, অধ্যবসায় থাকে, যদি নিজের পেশার প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে পারো, যদি হার-না-মানা হও।
মহম্মদ হাবিব— তিনি শুধুই দারুণ ফুটবলার ছিলেন না, কলকাতা ফুটবলের সোনার সত্তর দশকের এক উজ্জ্বল তারকামাত্র ছিলেন না। মহম্মদ হাবিব ছিলেন জীবনের এই শিক্ষা যে, তোমার যা কিছু আছে তা নিয়ে হা-হুতাশ না করে বরং সেটাকেই হাতিয়ার করে ঝাঁপিয়ে পড়ো। শরীর নেই তো কী, মনের কাঠিন্য তৈরি করো। তা দিয়েই জিতবে।
কলকাতায় আবির্ভাবের মঞ্চ থেকেই ধরা যাক। ১৯৬৫-র সন্তোষ ট্রফি ফাইনাল। বাংলার মুখোমুখি অন্ধ্রপ্রদেশ। বাংলার রক্ষণের মুখ জার্নেল সিংহ। তখন জার্নেল মানে কুতুব মিনার। আক্রমণের ঝড় ঢুকতে পথ পায় না যাঁর সামনে। কে জানত, চার মিনারের শহরের সতেরো বছরের এক কিশোর টেক্কা দিয়ে যাবে রক্ষণের কুতুব মিনারকেও! সন্তোষ ফাইনালের প্রথম পর্ব ১-১। দ্বিতীয় পর্ব অন্ধ্র জিতল ১-০। গোলদাতা? মহম্মদ হাবিব। গোলরক্ষক জার্নেলকে এত অসহায়, এত দিশেহারা আর কখনও দেখায়নি।
যিনি দেখার, ঠিকই দেখে ফেললেন। ইস্টবেঙ্গল সে বছরই বেশ কয়েক জন প্রধান ফুটবলারকে হারিয়েছে। নতুন ছেলেদের নিয়ে দল গড়ার পরিকল্পনা চলছে। ফাইনালে হাবিবকে দেখে ‘স্পট’ করতে ভুল করেননি জ্যোতিষচন্দ্র গুহ। ওখানেই কথাবার্তা বলে পাকা করে ফেললেন ইস্টবেঙ্গলে নিয়ে আসা। ১৯৬৬-তে আগমন, তার পর ১৯৮২ পর্যন্ত টানা ময়দান শাসন করা। ওই রকম ছোটখাটো শরীর নিয়ে এত দীর্ঘমেয়াদি রাজত্ব! অভাবনীয়!
কলকাতা ফুটবলের সত্তরের দশক ছিল সোনার দশক। কাছাকাছি সময়ে একের পর এক তারকার আবির্ভাব। সুভাষ ভৌমিক, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সুধীর কর্মকার, গৌতম সরকার, সমরেশ চৌধুরী, শ্যাম থাপা, অশোকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্ত মিত্র। চুয়াত্তরে এলেন সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। ময়দানে তখন চাঁদের হাট। হাবিব তুলনায় নিতান্তই সাদামাটা। তারকাসুলভ ঠাঁটবাট একেবারেই ছিল না। কিন্তু হয়ে উঠেছিলেন বহু যুদ্ধ জেতানো নীরব যোদ্ধা। ভৌমিকের মতো বুলডোজ়ার ছিলেন না, গোলার মতো শট ছিল না। বা তাঁর মতো বিদেশি সিগারেট টানতেন না, বিদেশি সুগন্ধি মাখতেন না। সুরজিতের শিল্প ছিল না। শ্যামের বাইসাইকেল কিক ছিল না। কিন্তু ধারাবাহিকতায় ছিলেন অনেকের চেয়ে এগিয়ে। পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “রাজার রাজা!”
ফুটবল-পরিবার থেকে এসেছিলেন। বাবা মহম্মদ ইব্রাহিম ফুটবলার ছিলেন। ছয় ভাইয়ের চতুর্থ ছিলেন হাবিব। সকলেই ফুটবল খেলতেন। তার মধ্যে হাবিব-আকবরই সব চেয়ে নাম করেন। কিন্তু খুবই অভাবের সংসার ছিল। খালি পায়ে খেলতেন, বুট কেনার সামর্থ্যও ছিল না। কাকতালীয় হতে পারে, কিন্তু হাবিবের জীবনের প্রথম বুটজোড়া কেনা হয় কলকাতা থেকে। এক দাদা মইন খেলতেন কলকাতায় মহমেডান স্পোর্টিংয়ে। তিনিই প্রথম বুটজোড়া উপহার দেন ভাইকে। অন্ধ্রপ্রদেশের জুনিয়র এবং সিনিয়র রাজ্য দলের হয়ে একই সঙ্গে খেলে গিয়েছেন হাবিব। ১৯৬৫-তে যোগ দেন হায়দরাবাদ টেলিফোন্স-এ। বেতন? মাসিক ১৩০ টাকা। তাঁর জীবনের মোড়-ঘোরানো বছর। সন্তোষ ট্রফি ফাইনালে জে সি গুহের চোখে পড়ে যাওয়াটা পাল্টে দিয়ে যাবে জীবনটাই।
সেই যুগেও ছিলেন পাক্কা পেশাদার ফুটবলার। প্রচুর ভাল ভাল চাকরির প্রস্তাব পেয়েও গ্রহণ করেননি। তা হলে যে ফুটবলের জন্য সময় কমে যাবে! বড় ম্যাচের সাফল্যের দিক থেকে একমাত্র তুলনা সম্ভবত সুভাষ ভৌমিক। যখন যে ক্লাব দুর্বল হয়ে পড়েছে, হাবিবের শরণাপন্ন হয়ে অবিশ্বাস্য ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ১৯৬৬-তে ইস্টবেঙ্গলে যখন এলেন, লাল-হলুদ শিবির বেশ কয়েক জনকে হারিয়ে প্রবল চাপে। এসে প্রথম বারেই লিগ চ্যাম্পিয়ন। ইস্টবেঙ্গলের ১৯৭২-’৭৪ স্বর্ণযুগে অন্যতম প্রধান সারথি, চাণক্য প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ’৭২-এই পিকে দায়িত্ব নেন ইস্টবেঙ্গলের। সে বছরেই লিগ, শিল্ড, ডুরান্ড এবং যুগ্মভাবে রোভার্স জেতেন তাঁরা। ১৯৭৫-এ অভিমান করে ইস্টবেঙ্গল ছাড়েন তিনি। ১৯৭৪-এ মহমেডান-ইস্টবেঙ্গল লিগ ম্যাচ ড্র হওয়ার পরে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সাধারণ সচিব ডক্টর নৃপেন দাস সকলের সামনে চিৎকার করে বলে ওঠেন, “হাবিব-আকবরকে ম্যানেজ করে নিয়েছিল মহমেডান। তাই আমরা জিততে পারলাম না।” কেউ তাঁর মন্তব্যের প্রতিবাদ করেনি। হাবিবের নিজের বয়ান অনুযায়ী, প্রিয় কোচ পিকে-ও সে দিন মুখ খোলেননি। তাতেই মনে আঘাত পান বড়ে মিঞাঁ। ’৭৫-এ চলে যান মহমেডানে।
পরের বছরেই ডাক আসে মোহনবাগান থেকে। তখন তারা বেকায়দায়। ভাল দল গড়তে দরকার হাবিব-আকবরকে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে সে বারই ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে আকবরের সেই দ্রুততম গোল সবুজ-মেরুনের ভাগ্য বদলে দেয়। এর পর শুধু লিগই জিতবে না তারা, শিল্ডও ভাগাভাগি করে নেবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে। ’৭৭-এ ইস্টবেঙ্গলের কাছে লিগে হারার যন্ত্রণার মধ্যে ইডেনে পেলে-ম্যাচ। যেখানে সম্রাটের চোখে চোখ রেখে লড়ে গেলেন হাবিব। পুরো দলকে তাতিয়ে দিলেন, “পেলেও আমাদের মতো মানুষ। ভক্তের মতো তাকিয়ে না থেকে চলো লড়াই করি।” কসমস-এর সঙ্গে ড্র করে মোহনবাগান। শোনা যায়, ম্যাচের পরে বিশ্ববিখ্যাত দশ নম্বর, কলকাতার ফুটবল প্রশাসকদের কাছে জানতে চান, “হু ইজ় ইয়োর নাম্বার টেন?”
এর পরেই সবুজ-মেরুনের জয়রথ অপ্রতিহত, আর মুখ্য সারথি হাবিব। শিল্ড, ডুরান্ড, রোভার্স জিতে ‘৭৭-এ মোহনবাগান জার্সিতে ত্রিমুকুট। পরের বছর লিগ জয় এবং বিখ্যাত সেই আরারাত ম্যাচ। রুশ দলকে হারিয়ে শিল্ড জয়। তার আগে ভারতীয় দলের সদস্য হিসেবে রাশিয়া সফরে গিয়ে ছেড়ে কথা বলেননি শক্তিশালী রুশ ডিফেন্ডারদের। একটি গোলও করেন।
১৯৮০-তে ইস্টবেঙ্গল ফাঁকা করে দিয়ে সবাই চলে গেল মহমেডানে। রক্ষাকর্তা কে হবে? ডাকো বড়ে মিঞাঁকে। তত দিনে তো প্রবাদই তৈরি হয়ে গিয়েছে ময়দানে, বিপদে পড়লেই হাবিব-স্মরণ করো। উতরে দেবে। মোহনবাগানের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে ফেডারেশন কাপ জয়। ইডেনে ১৬ অগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার জেরে লিগ, শিল্ড বাতিল হয়ে গেল। কিন্তু মহমেডানের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে রোভার্স খেতাব জয়, এই ভাঙাচোরা দল নিয়েও। ’৮১-তে ফের মোহনবাগানে খেলে ’৮২-তেই ফিরলেন ইস্টবেঙ্গলে। সেটাই শেষ বছর কলকাতা ময়দানে, এবং খুব সুখস্মৃতি হয়ে থাকল না। হাবিব নিজে কয়েকটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অজ্ঞাত কারণে মাঝপথে কোচ অমল দত্ত কথা বলা বন্ধ করে দেন। মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে তিনি হায়দরাবাদ ফিরে যান। তার পর অমল দত্তের ফোন পেয়ে ফিরে আসেন, মহমেডানের বিরুদ্ধে খেলেনও, কিন্তু ম্যাচ হারার পরে ফের কোচের মনোভাব পাল্টে যেতে দেখেন। তখন আবার হায়দরাবাদ চলে যান। তত দিনে কলকাতা ময়দান দাপাতেও হাজির হয়ে গিয়েছে নতুন তারকা জুটি। মজিদ-জামশিদ। আর ফেরেননি হাবিব। যদিও অবসরের পরে টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে যথেষ্ট সফল হন।
জ্যোতিষ গুহের প্রস্তাব পেয়েও হাবিব প্রথমে কলকাতায় আসতে চাননি। কিন্তু নইমুদ্দিন ও আফজ়ল আসছেন দেখে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাড়িতে মা একদম মানতে চাইছিলেন না। বড় ভাই আজ়ম বুঝিয়ে রাজি করান। সমস্যা হল, কাছাকাছি সময়ে ভারতীয় যুব দলের হয়ে বাইরে যেতে হল। বিদেশ থেকে ফিরছেন বৃহস্পতিবার, ইস্টবেঙ্গলের প্রথম লিগ ম্যাচ শুক্রবার। প্রতিপক্ষ কালীঘাট। কলকাতার মাঠ-ময়দান সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না হাবিবের। কী ধরনের বুট পরে নামতে হবে, তা-ও জানতেন না। জ্যোতিষ গুহ তাঁকে নিজের ছেলের মতো ভালবাসতেন, কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলার সঙ্গে আপস করতেন না। হাবিব তখন তাঁর বাড়িতেই থাকেন। তবু আগে থেকে বলেননি, প্রথম একাদশে আছেন কি না। ম্যাচের দিন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে গিয়ে বোর্ডে লেখা নামগুলো গিলতে থাকেন হাবিব। পিটার থঙ্গরাজ, বি দেবনাথ, নইমুদ্দিন, রাম বাহাদুর, সুকুমার সমাজপতি... তার পরেই মহম্মদ হাবিব! ছিলেন গুরকৃপাল সিংহ, পরিমল দে, কালিবাবু শর্মাও।
তখনও হাবিব জানতেন না, হায়দরাবাদ আর কলকাতা ফুটবলের মধ্যে কতটা তফাত। দ্রুতই টের পেলেন। হায়দরাবাদে তাঁরা মূলত থ্রু পাসে খেলতেন। তাই বরাবর দারুণ পাস করতে পারতেন তিনি। কিন্তু কলকাতায় প্রথম দিন খেলতে নেমে দেখলেন, কেউ তাঁর থ্রু পাস ধরতেই পারছে না। তার উপরে ভুল বুট পরে নামার জন্য শুরুতেই ধাক্কা। দু’টো স্পাইক উড়ে গেল। প্রায় পঁয়ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য দেখে লাল-হলুদ গ্যালারিও তেতে উঠছে। ফুটবলারদের উদ্দেশে ভেসে আসছে গালিগালাজ। এর পরেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সুকুমার সমাজপতির সেন্টার থেকে ভলিতে দুর্ধর্ষ গোল করেন হাবিব। আবির্ভাবেই বাজিমাত। সেই পাসের কথা এখন আর মনে করতে পারেন না সমাজপতি। কিন্তু হাবিবের স্মৃতি হিসেবে জ্বলজ্বল করে ছবিটা— রোগাপাতলা ছেলেটা প্রাণপাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সকালে অনুশীলন সেরে দুপুরে তাঁবুতেই ঘুমিয়ে নিচ্ছে। যাতে বিকেলে তরতাজা অবস্থায় ফের অনুশীলনে নামা যায়। ভাই আকবরকেও বকুনি দিয়ে দুপুরে ঘুমোতে বাধ্য করছে। “জেদ, সঙ্কল্প, দায়বদ্ধতা দিয়ে কত কঠিন পথ অতিক্রম করা যায়, তার উদাহরণ হাবিব”— বড়ে মিঞাঁয় চিরমুগ্ধ সমাজপতি।
কলকাতায় এসে প্রথম মরসুমেই দ্রুত কয়েকটি তথ্য জেনে গেলেন হাবিব। গোল করলে তুমি রাজা। বড় ম্যাচ জেতালে তো কথাই নেই। ভক্তরা রোজ মেসে হাজির হবে ফুল, মিষ্টি, উপহার নিয়ে। তেমনই, হেরে গেলে অপেক্ষা করবে কাঁটার অভ্যর্থনা আর গালিগালাজ।
দলবদলে তাঁকে নিয়ে যা সব নাটক ঘটে গিয়েছে, হিচককের থ্রিলারকেও হার মানাতে পারে। আবির্ভাবেই এমন হুল্লোড় তুলে দিলেন তিনি যে, পরের বছরই মোহনবাগান ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করল তাঁকে এবং নইমুদ্দিনকে। বাইরে থেকে খেলে ফিরছিলেন দু’জনে। মোহনবাগান কর্তারা সব বুঝিয়ে দিলেন, বিমানবন্দরের কোন গেট দিয়ে বেরোতে হবে। তাঁরা কোথায় অপেক্ষা করবেন। কী করে যেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা ঠিক সেই ছক ধরে ফেললেন। বিমানবন্দরেই নইমকে তাঁরা ‘কিডন্যাপ’ করে নিলেন। কিন্তু হাবিবকে তুলে নিলেন মোহনবাগান কর্তারা। কিন্তু সই করানোর দিনে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন। বোমা বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। মুহূর্তে হাবিব ‘হাইজ্যাক’ হয়ে সোজা ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে।
১৯৬৮-তে মোহনবাগানে যোগ দেওয়া আর এক রুদ্ধশ্বাস কাহিনি। মুম্বইতে ভারতীয় যুব দলের শিবির হচ্ছিল। ঠিক হল, ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের নজর এড়াতে ট্রেনে ফেরানো হবে হাবিবকে, হাওড়ার বদলে খড়্গপুরে নামিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে নিয়ে আসা হবে শৈলেন মান্নার বাড়িতে। সে বার নির্বিঘ্নেই সই করতে পারলেন সবুজ-মেরুনে। নইমও সঙ্গী হলেন তাঁর। কিন্তু দু’বছরের বেশি থাকতে পারলেন না। ইস্টবেঙ্গলের হাতে ফের ‘কিডন্যাপ’ হলেন হাবিব। সে বার শান্ত মিত্র ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক হয়েছেন। হাবিবকে ফেরাতে চান। কিন্তু মোহনবাগান আগে থেকেই ‘উইথড্র’ করিয়ে রেখেছে। কী করে তিনি ইস্টবেঙ্গলে যাবেন? ও দিকে লাল-হলুদের দলবদল স্কোয়াডও মরিয়া। হাবিবকে তুলতেই হবে। বাংলা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে তেহরান যাওয়ার কথা হাবিবের। সুটকেস পাঠিয়ে দিয়েছেন। দু’দিনের মধ্যে তিনিও যাবেন। এর মধ্যেই কী কুক্ষণে যে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে গেলেন পুরনো কিছু জিনিস নিয়ে আসতে! তিন-চার জন এসে সোজা চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে গোপন ডেরায় চালান করে দিল। ও দিকে তেহরানগামী দল উড়ান ধরে নিয়েছে, হাবিবের পাত্তা নেই। খবর চাউর হয়ে গেল, তিনি ‘কিডন্যাপ’ হয়ে গিয়েছেন। এ যে দলবদলের ‘কিডন্যাপ’, কে বুঝবে! সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি তখন বেচু দত্ত রায়। তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করে ইস্টবেঙ্গল তুলে নিল হাবিবকে।
এক-এক সময় মনে হচ্ছে, পারকিনসন’স বা ডিমেনশিয়া কী করে এমন অদম্য জেদ আর সঙ্কল্পকে হারাতে পারে? হয়তো উপরের ময়দানেও কোনও বড় ম্যাচের আয়োজন হচ্ছে! চুনী, পিকে, বলরাম, অমল, সুভাষ, সুরজিৎ অনেকেই সেখানে। কেউ ‘কিডন্যাপ’ করে লুকিয়ে রাখল না তো হাবিবকে, ঠিক সময়ে বার করবে বলে? দেখা যাবে হয়তো পিকে ভোকাল টনিক দিতে দিতে এগোচ্ছেন আর টানেল ধরে চোয়াল শক্ত করে হেঁটে বেরিয়ে আসছেন তাঁর নীরব যোদ্ধা।
বড় ম্যাচের বড়ে মিঞাঁ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy