সীমান্তবর্তী: কর্তারপুর করিডরে প্রবেশের পথ। ডান দিকে, নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন জন ট্যুরিস্ট পুলিশ কাফায়াৎ উল্লাহ্, ওয়াসিম আর কাশিত
এক নিঃশ্বাসে প্রশ্নগুলি করছিলেন গুরমীত কাউর, “আপনি লাহোরে থাকেন বললেন না? ইছরা চেনেন? সেখানে শামিমা থাকত। শামিমার বাবার নাম বশির আলম। এই নামে চেনেন কাউকে?” তাঁর চোখ থেকে অঝোরে জল জড়িয়ে পড়ছে। শক্ত করে ধরে আছেন ইমিগ্রেশন সেন্টারের কর্মী রিয়াজ়ের হাত। বিহ্বল হতভম্ব রিয়াজ় বুঝতেই পারছেন না কী বলবেন। শুধু মৃদু চাপ দিয়ে ধরে রেখেছেন তাঁর হাত। “অ্যায়সে বিছড়ে হাম জ্যায়সে কভি এক থে হি নেহি..!” কথাগুলি বলতে বলতে ফুঁপিয়ে যাচ্ছেন গুরমীত। মেয়ে এসে সরিয়ে নিচ্ছেন মাকে। চার দিকে লোক দেখছে, ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর।
জলন্ধরের মেয়ে গুরমীত আগে কখনও আসেননি পাকিস্তানে। তাঁর মা জসবিন্দর থাকতেন অবিভক্ত ভারতের লাহোরে। গুরমীত বড় হয়েছেন দেশভাগের রক্তাক্ত দিনগুলির গল্প শুনে। তবে শুধুই অন্ধকারের গল্প নয়, তার আগের সোনালি স্বপ্নের মতো দিনগুলির কথাও শুনেছেন মায়ের মুখে। ছটফটে চঞ্চল জসবিন্দরের সঙ্গে চুপচাপ লাজুক শামিমার বন্ধুত্বের গল্প। ধর্মীয় ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও এক হিন্দু পরিবারের সুখে-দুঃখে এক মুসলমান পরিবারের পাশে থাকার গল্প। ইছরার কাছে ছোট একটা গ্রামে বাবা-মা-ভাই-বোনের সঙ্গে থাকতেন জসসি। কয়েকটা বাড়ি পরেই থাকতেন শামিমারা। সর্ষে আর মকাইয়ের খেতে খেলে, নদীর ধারে বেড়িয়ে, দোলনায় দোল খেয়ে বড় হচ্ছিল দুই মেয়ে। ইদ আর লহোরি পালন করত একই সঙ্গে। দেশভাগের ধাক্কা যখন এসে পৌঁছল গ্রামটায়, সে দিনই সব ওলটপালট হয়ে গেল। যে রাতে বাড়িঘর খেতখামার ছেড়ে একবস্ত্রে পথে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই রাতের কথা এত বছর পরেও বলতে গিয়ে শিউরে উঠতেন জসবিন্দর। সারা রাত বাড়ির সদর দরজায় হেলান দিয়ে বসে থাকা বাবাকে ধাক্কা মেরে ফেলে বড় বোনকে যখন টেনে নিয়ে চলে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, সেই সময়ে দিদির অমানুষিক আর্তনাদ, মায়ের বুকফাটা চিৎকার কানে বাজত জসবিন্দরের। দিদিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। দিদির মতো পরিণতি তাঁরও হত যদি না সেই রাতের জন্য শামিমাদের বাড়িতে আশ্রয় পেতেন তাঁরা। দুই রাত লুকিয়ে থাকার পর যখন দেখা গেল এ ভাবে শেষরক্ষা হবে না, তখন রাতের অন্ধকারে গ্রাম ছেড়েছিল জসসির পরিবার। বিদায়বেলায় বিচ্ছেদের সময় বড় কেঁদেছিল দুই বন্ধু। তার পরের ইতিহাস ভয়ঙ্কর।
মাইলের পর মাইল হেঁটে লায়ালপুরের উদ্বাস্তু শিবির। ভয়ঙ্কর দুর্দশার দিনে লেডি মাউন্টব্যাটেন এসেছিলেন সেখানে। আতঙ্কিত পরিবারগুলির দেখভাল করেছিলেন। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি তাতে। সেখান থেকে বারবার ঠাঁই নাড়া হতে হতে জলন্ধরে পিসির বাড়িতে। আত্মীয়স্বজন যে যেখানে ছিল, সবাই প্রাণভয়ে চলে এসেছিল এই দিকে। শামিমাদের আর কোনও খবর কানে আসেনি। তার পর কেটে গিয়েছে কত বছর। দ্বিখণ্ডিত কৈশোরের কষ্ট চাপা পড়ে গেছিল আস্তে আস্তে। কিন্তু মৃত্যুর আগে চেতনে-অচেতনে বারবার জসসি ফিরে যেতেন তাঁর শৈশব-কৈশোরের গ্রামে। পিপুল গাছের তলায়, সর্ষেখেতের ধারে কাপড়া বাজারে আরিফচাচার দোকানে। আসন্ন মৃত্যুর ঘোরের মধ্যে শুধু ফিরতে চাইতেন হারিয়ে যাওয়া দেশে, যে দেশে আর কখনও ফেরা হয়নি তাঁর। পাকিস্তানের কর্তারপুর যাওয়ার পথে ইমিগ্রেশন সেন্টারে রিয়াজের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাই ও ভাবে কাঁদছিলেন গুরমীত। তাঁর মনে পড়ে যাচ্ছিল মায়ের শৈশবের স্মৃতিচারণার কথা, মায়ের বান্ধবীর মধ্যে যেন তিনি খুঁজছিলেন মা-কেই।
ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৪ কিমি দূরে পাকিস্তানের কর্তারপুরে দরবার সাহিব গুরুদ্বার শিখদের অন্যতম পবিত্র ধর্মস্থান। বলা হয়, গুরু নানক তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলি এখানেই কাটিয়েছিলেন। র্যাডক্লিফ লাইন যখন আলাদা করে দিল দুই দেশকে, ইরাবতীর তীর বরাবর কর্তারপুর চলে গেল পাকিস্তানের মধ্যে। তার পরও কখনও কখনও কোনও শিখ পরিবার চলে যেত দেশের সীমানা পেরিয়ে। গ্রাম ডিঙিয়ে পৌঁছে যেত তাঁদের গুরুর সমাধির পাশে। সারাদিন সেখানে কাটিয়ে সূর্য ঢললে ফিরে আসত ইরাবতী পার হয়ে। কিন্তু ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেল ইরাবতীর সেতু। সীমান্ত নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো হল। দরবার সাহিবে যাওয়ার সমস্ত পথ গেল বন্ধ হয়ে। দীর্ঘ দিন ধরে শিখদের দাবি ছিল কর্তারপুরে যেন তাঁদের যেতে দেওয়া হয়। আগে কর্তারপুর যেতে হলে পাকিস্তানের লাহোর থেকে বাসে আসতে হত। দিল্লি-লাহোর বাস চালু হওয়ার পর অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং নওয়াজ শরিফের মধ্যে ১৯৯৯ সালে ভারত থেকে সরাসরি কর্তারপুর আসার ব্যবস্থা করার কথা হয়। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের দিক থেকে কর্তারপুর করিডরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর দু’দিন পর পাকিস্তানের দিক থেকেও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ শেষ হয়। ২০১৯-এর নভেম্বর মাসে গুরু নানকের ৫৫০-তম জন্মশতবার্ষিকী তে ভারতীয়দের জন্য খুলে দেওয়া হল কর্তারপুর করিডর। ওই দিন ভারত থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, নভজ্যোত সিংহ সিধু, সানি দেওলকে নিয়ে বিরাট এক ‘জাঠা’ কর্তারপুর পৌঁছোয়। দুই দেশের তরফ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়, এই পদক্ষেপ ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কে নতুন দিক খুলে দেবে।
দরবার সাহিব গুরুদ্বারকে নতুন করে গড়েছে পাকিস্তান। বড় সুন্দর দেখতে শুভ্র বিশাল এই গুরুদ্বার। ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের সীমান্তে ঢোকা মাত্র পাকিস্তানি রেঞ্জারদের নজরে। গেট থেকে দরবার সাহিব পর্যন্ত যেতে নজরে পড়ে বিস্তীর্ণ চাষের জমি, গাধার পিঠে মাল চাপিয়ে যাচ্ছে মেয়ে-পুরুষ। চড়া পড়েছে ইরাবতীর বুকে। সেখানে খেলা করছে ছেলের দল। একটু আগে ছেড়ে আসা অমৃতসরেরই দৃশ্য যেন। তবু সীমান্তে জেগে থাকা কাঁটাতার অন্য কথা বলে।
মহম্মদ সাজিদ ইমিগ্রেশন সেন্টারের সুপারভাইজ়ার। লাহোরে নাইট কলেজে পড়েন। সকালে চলে আসেন কর্তারপুরে। ভারত থেকে আসা দর্শনাথীদের পর পর বুঝিয়ে দেন কী কী করতে হবে। একের পর এক বাস এসে থামছে। এগিয়ে যাচ্ছেন সাজিদ। বাচ্চা মেয়েটা অনেক ক্ষণ ধরে দৌড়চ্ছিল মোরাম বিছানো রাস্তায়। হঠাৎ পড়ে গিয়ে ভীষণ চোট পেয়েছে, কাঁদছে। এগিয়ে এসেছেন রেঞ্জার সাদারকত, বাচ্চাটাকে তুলতে ছুটে এসেছেন সাজিদ। বলছেন, “কেঁদো না, ব্যথা কমে যাবে। আমাদের দেশে এসে কাঁদলে আমাদেরও মন খারাপ হবে।” পাকিস্তানি রেঞ্জারদের নিয়ে ভয়াবহ গল্প শুনে অভ্যস্ত বাচ্চাটির মা দেখেছে কোমল মুখে মেয়ের হাত ধরে নাড়াচ্ছে রেঞ্জার সাদারকত। কর্তারপুর করিডরের মধ্যে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশরা। কাফায়াৎ উল্লাহ্, ওয়াসিম আর কাশিত অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন অতিথিদের। বললেন, “নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুরুন। দেখুন কেমন লাগে আমাদের দেশ।” বাধা দিলেন ওয়াসিম। মজা করে বললেন, “আগে সুযোগ পেলেই ইন্ডিয়ান সিনেমা দেখতাম, জানেন তো? আপনাদের সব কিছু আমাদের দেশের মতোই লাগে।”
অকাল তখতের সামনে মার্বেলে মোড়া মেঝেতে রীতিমতো আড্ডা বসে গিয়েছে। মুলতান থেকে লাহোরে বোন রাবেয়ার কাছে এসেছেন রেশমা। প্রথমে সন্দিগ্ধ চোখে তাকাচ্ছিলেন ভারতীয়দের দিকে। তার পর প্রাথমিক মনের বাধাটুকু কাটিয়ে ভাতিন্ডার শর্মিলিদের সঙ্গে দিব্যি কথাবার্তা চলছে। গুরুদ্বারের একটু বাইরে জমিতে ফুল দিয়ে শিখ ধর্মের প্রতীক অসাধারণ একটি ‘খন্ড’ তৈরি করেছেন মালি আমজাদ আর মহম্মদ লতিফরা মিলে। যিনি ওইখানে আসছেন, তাঁকেই বাগান দেখতে অনুরোধ করছেন আমজাদ। বাগানে গেলে ঘুরে ঘুরে বোঝাচ্ছেন কোনটা কোন গাছ, কোনটা কোন ফুল। বাগান দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে নানা সুখ দুঃখের গল্প জুড়ছেন। মহম্মদ লতিফ গুরুদ্বার পরিষ্কার করার কাজ করেন, তার চেয়েও বেশি করেন দর্শনার্থীদের ছবি তোলার কাজ। কথা বলতে গেলেই একমুখ হেসে গল্প জুড়ছেন। প্রচণ্ড পঞ্জাবি টান কথায়। বললেন, “আমি আগেও বাঙালি দেখেছি। বাঙালিরা ভীষণ মিষ্টি করে কথা বলেন।”
দরবার সাহিব থেকে ঘণ্টাদুয়েক লাগে লতিফের গ্রাম বড়া চুন্দাওয়াল পৌঁছতে। প্রতিদিন এই পথটা উজিয়ে আসেন বছর কুড়ির মহম্মদ আসগর। লেখাপড়া শেখার সময় পাননি। তার অনেক আগেই কাজের খোঁজে নামতে হয়েছে পথে। ভয়ানক দারিদ্র বাড়িতে। এইখানে কাজ পাওয়ার পর তাও দু’বেলা দুটো রুটি জুটছে ভাগ্যে। চলে আসার সময় হাতজোড় করে ‘নমস্তে’ বললেন। তার পরই অল্প হেসে বললেন, “ভারতে যাওয়ার খুব ইচ্ছে। শুনেছি আমাদের মতোই দেশ আপনাদের। আমরা গেলে থাকতে দেবেন কিছু দিন আপনাদের দেশে?”
এঁরা কেউ কখনও আসেননি ভারতে। মহম্মদ আসগরের ঠাকুরদা থাকতেন দিল্লিতে। দাঙ্গায় সর্বস্ব খুইয়ে পালিয়ে আসেন পাকিস্তানে। তার পর আর আসেননি ভারতে। আসগর অনেক শুনেছেন দিল্লির গল্প। জামা মসজিদ, চাঁদনি চকের গল্প। ঠাকুরদা থাকতেন পরানঠা গলির কাছে। সেখানেই বড় মকান ছিল আসগরদের। আসগরের খুব ইচ্ছে পূর্বপুরুষের ভিটে দেখার। বললেন, “অনেক বার ইচ্ছে হয়েছে জানেন দিল্লি যাওয়ার। ভয় হয়েছে খুব। যদি পাকিস্তানি বলে ঘৃণা করেন আপনারা? ওখানকার মাটির গন্ধ ছিল আমার দাদুর বুকে। আপনাদের ঘৃণা সহ্য করতে পারব না।” কথাগুলি মনে ধাক্কা দিয়ে গেল। একটু আগে ঠিক এই রকম আর্তিই ছিল গুরমীতের কথায়। দুই দেশের দুই মানুষ। অতীত ছুঁয়ে দেখার আকুলতা এক তারে বেঁধে রেখেছে দুটো মানুষকে। এঁদের বেদনা, এঁদের আশঙ্কা একই রকম।
সাম্প্রদায়িকতা, দেশভাগ এমন ক্ষত তৈরি করেছে গুরমীত, আসগরদের বুকে যা কোনও দিনও যাওয়ার নয়। পাকিস্তানের ভয়ানক অবস্থার কথা বলছিলেন আসগর। আসগরের ফুফা আর তাঁর ছোট মেয়ে বোমা বিস্ফোরণে কিছু দিন আগে মারা গিয়েছেন পাকিস্তানে। সন্ত্রাসবাদ কী ভাবে কব্জা করে রেখেছে দেশটাকে, সেই গল্প করছিলেন। খাদ্য নেই, শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য নেই। আসগরের কথা শুনে মনে পড়ল, পাকিস্তানে ঢোকার আগে কাস্টমস পোলিও ড্রপ খাইয়ে দিয়েছিল। ভারতকে পোলিও মুক্ত দেশ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু পাকিস্তানে এখনও পোলিওর প্রকোপ অত্যন্ত বেশি। পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়েও বারবার প্রশ্ন উঠেছে। আসগরের বন্ধু আমজাদ ছিলেন পাশেই। বললেন, “আপনাদের দেশে নাকি এমন সব আইন হয়েছে, যেগুলো দেশ থেকে মুসলমানদের তাড়িয়ে দেবে? এ কথা সত্যি? আপনাদের দেশের নাগরিকদেরও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে রাখবে?”
উত্তর নেই এই প্রশ্নের। আগের দিনই ওয়াগা-আটারি বর্ডারে বিটিং রিট্রিট সেরিমনিতে যখন ম্লান বিকেল উজ্জ্বল হয়ে যাচ্ছিল পতাকার কমলা-সবুজ আভায়, তখন ঘোষক নাম ঘোষণা করলেন দুই বিএসএফ জওয়ানের, যাঁরা প্রথম যাবেন সেই দিনের অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দিতে। এঁদের এক জনের নাম এজায়েজ় খান, অন্য জন সুরিন্দর সিংহ। নাম ঘোষণামাত্র আগের অনুষ্ঠানগুলির মতোই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়া জনতা অভিনন্দন জানালেন দু’জনকে। মুসলমান নাম শুনে এতটুকু কম হল না তো আনন্দ! কে বলে এই দেশ মুসলমানদেরও নয়? এই দেশ কখনও কোনও একক ধর্মের দেশ হতে পারে না।
ফেরার পথে গুরমীত বলছিলেন যে, তিনি এক বার তাঁর মাকে একটা কবিতা পড়ে শুনিয়েছিলেন, “মুঝে তো লাগা মেরা ঘর হ্যায় ও/ পর লোগ বাতাতে হ্যায় অব পাকিস্তান হ্যায় ও’...।” মৃত্যুর সময় বিড়বিড় করে এই লাইনগুলিই শুধু বলতেন জসবিন্দর। চুপ করে রইলেন গুরমীত। বেলা পড়ে আসছে। ঘন কুয়াশা নামছে ইরাবতীর বুকে। এক এক করে আলো জ্বলে উঠছে দূরের কোনও গ্রামে। সীমান্তের কাছে এক ভারতীয় জওয়ান আর এক পাকিস্তানি রেঞ্জার ঠিক মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিষ্পলক চোখ পেতে রেখেছে একে অন্যের দেশে। নিষ্কম্প শরীর। নিষ্পলক দৃষ্টি। রাষ্ট্র যন্ত্র বানিয়ে দেয় মানুষকে। কিন্তু এর বাইরেও যে কত কিছু আছে! এইটুকু সময়ের মধ্যেই রিয়াজ়ের সঙ্গে অদ্ভুত একটা স্নেহের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে গুরমীতের। রিয়াজ কথা দিয়েছ শামিমার কোনও খবর পেলে জানাবে সে। এত বছর পর মায়ের বন্ধুকে আর খুঁজে পাবে কি না জানে না গুরমীত, তবে ধর্মের ঊর্ধ্বে, দুই যুযুধান দেশের ঊর্ধ্বে দুটো মানুষের বন্ধনটুকু রয়ে যাবে। এও কি আসলে শামিমাকেই খুঁজে পাওয়া নয়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy