ছবি: কুনাল বর্মণ
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কারা দফতর থেকে প্রকাশিত কারাবাসীদের পত্রিকা ‘নবার্ক’-র কার্যকরী সম্পাদক হিসেবে লেখা আনতে যখনই শিশির বসুর কাছে তাঁর এলগিন রোডের বাড়িতে গিয়েছি, প্রথমে তিনি অনর্গল বলে যেতেন আলিপুর জেল (প্রেসিডেন্সি) ও আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে তাঁর রাঙাকাকা কোন সালে কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত বন্দি ছিলেন, কখন এবং কারা দেখা করতে যেতেন, পছন্দের কোন খাবার নিয়ে যেতেন, কবে খাবার দিতে পারেননি বা দেখা হয়নি তার ইতিহাস। সে সব কথা মনে পড়তে ভাবি, নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পেরিয়ে গেলেও লেখা যেতে পারে— কেমন কাটত তাঁর আলিপুরের কারাজীবন।
মহানিষ্ক্রমণের আগে তিনি মোট এগারো বার কারাবরণ করেন। শেষ বার যখন প্রেসিডেন্সি জেলে আসেন, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে, ডালহৌসি স্কোয়ারের এক কোণে হলওয়েল মনুমেন্ট (সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে অন্ধকূপ হত্যার নিদর্শন) অপসারণে যুবসমাজ ও সাধারণ মানুষকে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে। প্রেসিডেন্সির যে দোতলা বাড়িতে তিনি বন্দি ছিলেন, এখনও তা সংরক্ষিত। বন্দি ছিলেন ১৯৪০ সালের ২ জুলাই থেকে ৪ ডিসেম্বর। ২৬ নভেম্বর তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী ফজলুল হককে চিঠি দিয়ে জানালেন, রাজবন্দিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনশন শুরু করবেন এবং তা চলবে আমৃত্যু। অনশন শুরু করেন ২৯ নভেম্বর। কিছুটা হলেও ভয় পেলেন কর্তৃপক্ষ। অনশন করেও যে বাঙালি বিপ্লবী মৃত্যুবরণ করতে পারেন, তার উদাহরণ যতীন দাস। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলে বিভিন্ন সময়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দি থেকে যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যোদ্ধারে ইউরোপ যেতে হয়েছিল সুভাষচন্দ্রকে, বেশি দিন হয়নি ফিরেছেন।
প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে যখন আমি মুখ্য নিয়ামক, কারারক্ষী বিপুল দে-র কাছে জেনেছিলাম, নেতাজি সুভাষ যখন অনশন করছেন, জেলের প্রধান কারারক্ষী ছিলেন বিপুলের ঠাকুরদা মৃত্যুঞ্জয় দে। প্রধান কারারক্ষী ও তাঁর অধীনে কারারক্ষীরা ইংরেজ সরকারের কর্মচারী হলেও মননে ছিলেন দেশপ্রেমিক। তাই নেতাজির সঙ্গে কর্তব্যরত অবস্থায় তাঁরাও যোগ দিলেন অনশনে। জানতে পেরে নেতাজি দোতলা থেকেই হাঁক দিলেন, “শুনুন মৃত্যুঞ্জয়বাবু, সরকার বাহাদুরের কর্মচারী হয়ে আপনারা যোগ দিতে পারেন না এই অনশনে।”
মৃত্যুঞ্জয়বাবুদের মনে হয়েছিল, এই কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে দেবলোক থেকে। তিনি ও তাঁর ছেলে সুধাংশু— তিনিও পরে হয়েছিলেন কারারক্ষী— সারা জীবন আনন্দে কাটিয়ে দিলেন সেই দেবলোকের কণ্ঠস্বর স্মরণ করে।
এ দিকে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে, ১৯৪০ সালের ৫ ডিসেম্বর নেতাজিকে অন্তরিন করে রাখা হয় এলগিন রোডের বাড়িতে।
জালিয়ানওয়ালা বাগ ঘটনার পর রবীন্দ্রনাথের ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগের সঙ্গে নেতাজির পিতা জানকীনাথ বসুও ত্যাগ করেন রায়বাহাদুর খেতাব। আসলে তত দিনে তিনি কটকের বসবাস তুলে এলগিন রোডে বাড়ি করেছেন ১৯০৯ সালে। মেজ ছেলে শরৎচন্দ্র আবার কাছেই বড় রাস্তার উপরেই ১ নং উডবার্ন পার্কে বাড়ি করেছেন।
জানকীনাথ মনেপ্রাণে চাইতেন, তাঁর নবম সন্তান প্রতিভাবান সুভাষ শিক্ষান্তে উচ্চপদে চাকরি করুক। কিন্তু আইসিএস পরীক্ষায় চতুর্থ হয়েও চাকরি প্রত্যাখ্যান করে লন্ডন থেকে ফেরার জাহাজ ধরলেন তিনি। বম্বে পৌঁছে প্রথমেই গান্ধীজির সঙ্গে দেখা করে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন— অহিংসার পথে যদি স্বাধীনতা না আসে তখন তিনি কী করবেন। গান্ধীজির দৃঢ় উত্তর— অহিংসার পথেই স্বাধীনতা আসবে এবং তা আসবে চরকায় সুতো কাটতে কাটতেই। তবুও সুভাষকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখে তিনি বুঝলেন, সুভাষ তাঁর অন্য স্নেহভাজনদের মতো নন। তাই বললেন, এ ব্যাপারে সুভাষ যেন কলকাতায় ফিরে চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে কথা বলেন। সুভাষ চিঠি লিখলেন ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাশকে— “আপনি আমাকে চেনেন না। আমার পিতা কটকের সরকারি উকিল জানকীনাথ বসুকে আপনি চিনলেও চিনতে পারেন। কিন্তু আমার এক দাদা কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার শরৎচন্দ্র বোসকে আপনি নিশ্চয়ই চেনেন। আমি আইসিএস পাশ করেছি কিন্তু উচ্চ বেতনে শাসক শক্তির আজ্ঞানুবর্তী হইয়া জীবন যাপন করা আমার রুচি ও বিবেকবিরুদ্ধ। আমি বিলেতে থাকাকালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে জাতীয় আন্দোলনের অগ্রগমন মনোযোগের সঙ্গে পাঠ করিয়াছি। ওই আন্দোলনে আপনার ভূমিকাও আমি মনোযোগের সঙ্গে পাঠ করিয়াছি। আমার দৃঢ় ইচ্ছা আপনার নেতৃত্বাধীনে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে আমি আত্মনিয়োগ করিব।” এর সঙ্গে ছিল শিক্ষা ও অন্যান্য কিছু বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথা। দেশবন্ধু চিঠির কথা শরৎচন্দ্রকে জানালে তাতে সায় ছিল সুভাষচন্দ্রের মেজদা ও মেজবৌদিরও। কলকাতা পৌঁছে দেখা করে কিছু কথাবার্তার পর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সুভাষের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী বাসন্তী দেবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তখনকার মতো ‘স্বরাজ’ পত্রিকায় কিছু কাজ দিলেন।
গান্ধীজির ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে সুভাষচন্দ্র ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন এক সঙ্গে প্রথম বারের জন্য প্রেসিডেন্সি জেলে এলেন ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে। পাশাপাশি ছিলেন দু’মাস। যত মিশছেন, কথা বলছেন, তত বেশি জানছেন চিত্তরঞ্জন দাশকে। ১৯২২-এর প্রথমে দু’জনেরই বদলি হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। সেখানেও ছ’মাস ছিলেন পাশাপাশি। জেলে অভিভাবক চিত্তরঞ্জনের কথাবার্তা ও ব্যবহারে একেবারে মুগ্ধ সুভাষ স্থির করলেন, ইনিই হতে পারেন তাঁর প্রকৃত গুরু। বহু গুণের অধিকারী চিত্তরঞ্জন কখনও সুভাষকে পড়ে শোনাচ্ছেন ব্রাউনিং-এর কবিতা, কখনও গল্প করছেন আইনজীবী হিসেবে কোন পরিস্থিতিতে অরবিন্দের জন্য লড়েছিলেন। প্রখর রসবোধ ছিল দেশবন্ধুর। তিনি বলতেন রসবোধ থাকলে প্রতিকূল ঘটনার আঘাতে মানুষ সহজে কাতর হয় না। প্রেসিডেন্সিতে বেয়নেট উঁচিয়ে তাঁদের পাহারা দিত গোর্খা সৈনিক আর আলিপুরের পাহারায় রুলধারী হিন্দুস্থানি সিপাহি। এক দিন ঘুম থেকে তুলে দেশবন্ধু বলছেন, “দেখো সুভাষ, এ যে অসি ফেলে বাঁশি, আমরা কি এতই নিরীহ?”
দেশবন্ধুর কথাবার্তার মধ্যে ছিল নারীজাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম। তারই মর্যাদা দিতে আজাদ হিন্দ ফৌজে ছিল পৃথক ঝাঁসি বাহিনী-সহ আরও অনেক নারী বাহিনী।
শেষ কয়েক মাস দেশবন্ধুর জন্য নিজ হাতে রান্নাও করেছেন সুভাষ।
১৯২৪ সালে দেশবন্ধু কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র, নেতাজি সিইও, যার বর্তমান রূপ কমিশনার। কমিশনারের রুমে যখনই গিয়েছি মিটিং করতে, দেখেছি প্রাক্তন প্রশাসকদের তালিকায় প্রথমেই জ্বলজ্বল করছে সুভাষচন্দ্র বসুর নাম। আগে এই পদ অলঙ্কৃত করতেন আইসিএস-রা, এখন সিনিয়র আইএএস-রা। চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার পদে থেকে বেতন নেননি সুভাষ, ১৯৩০ সালে মেয়র হয়েও নেননি বেতন। পরবর্তী কালে বেতন নেননি ডা. বিধান চন্দ্র রায়, ফজলুল হকের মতো বেশ কয়েক জন মেয়র। আসলে সুভাষের ছিল শরৎচন্দ্রের মতো এক জন মেজদা, স্নেহ ভালবাসায় আগলে রাখার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর ভাইকে প্রয়োজনীয় অর্থ জুগিয়ে যেতেও ভুল হত না তাঁর।
কিন্তু ঘরে বাইরে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল শত্রু। কাজের শেষে কর্পোরেশন স্ট্রিট (এখন এস এন ব্যানার্জি রোড) দিয়ে বেরিয়ে ধর্মতলার মোড়ে কোনও সভা বা আন্দোলনে যোগ দিলে পুলিশ কত বার যে আঘাত করেছে মেয়র সুভাষকে, এমনকি লাঠিপেটাও, তার গোনাগুনতি নেই। তাঁর উপর সবচেয়ে বেশি রোষ ছিল পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের। অত্যাচারী টেগার্টকে মারতে গিয়ে গোপীনাথ সাহা ভুল করে গুলিও করলেন সাধারণ ইউরোপীয় আর্নেস্ট ডে-কে। প্রাদেশিক কংগ্রেস সভায় সুভাষ গোপীনাথের কাজের সমালোচনা করলেও তাঁর দেশপ্রেমের কথা বলতে ভুললেন না। তার উপর নেতাজি সুভাষেরই সৃষ্ট ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ বা বি ভি-র তিন সদস্য বিনয়-বাদল-দীনেশ ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর অভিযান করলেন রাইটার্স বিল্ডিং।
চার্চের দিকে ১ নং ব্লকে বসতেন টেগার্ট, তার পরে বিচার বিভাগের সচিব নেলসন এবং একেবারে পশ্চিমে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে ৫ নং ব্লকে প্রিজ়ন আই জি কর্নেল সিম্পসন। অনেকটাই উদার সিম্পসন সবে হাত দিয়েছিলেন জেল সংস্কারে। বিপ্লবীরা যদি প্রথমে ৫ নং ব্লকে না গিয়ে ১ নং ব্লকে যেতেন, ভয়ঙ্কর অত্যাচারী টেগার্ট মারা পড়তেন এবং হত না অলিন্দ যুদ্ধ। তা-ও মেয়র সুভাষ এই ঘটনার দু’দিন পরে কর্পোরেশনের বিশেষ সভা ডেকে বিপ্লবীদের কাজের সমালোচনা করলেও প্রশ্ন তুললেন, ভাবতে হবে কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে বাংলার উচ্চশিক্ষিত যুবকেরা এই পথ বেছে নিচ্ছেন। আগে থেকেই রাগ ছিলটেগার্টের, সুভাষের উপর আক্রোশ আরও বেড়ে গেল তাঁর।
রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্যের জন্য ১৯৩০ সালেও সুভাষের জেল হয়, আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সেলেই থাকলেন এক সঙ্গে, দোতলায়। পরে এই সেল ব্লকেই ছিলেন বিধানচন্দ্র রায়, জওহরলাল নেহরুর মতো বড় বড় নেতারা। এপ্রিল মাস। মেছুয়া বাজার, লবণ আইন ভাঙা সত্যাগ্রহী ও অন্যান্য মামলার আসামিদের মারতে মারতে ভিতরে ঢোকানো হচ্ছে, চেঁচামেচি শুনে নেমে এলেন সুভাষ। সেই সুযোগে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কয়েক জন পেশোয়ারি কয়েদি ও সেপাই। তিনি পড়ে গেলেন গেটে। মাথায় আঘাত পেলেন যতীন্দ্রমোহনও। ক্ষতবিক্ষত সুভাষের প্রচণ্ড জ্বর। দেরিতে জানতে পেরে স্বয়ং মা প্রভাবতী এলেন পরের দিন কিন্তু দেখা হল না, কারণ নামতে পারলেন না সুভাষ।
পরের বছর ১৮ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র যাচ্ছিলেন মালদহের সভায়। তাঁকে পৌঁছতে দেওয়া হল না, পুলিশি পাহারায় মালদহ স্টেশনের প্রতীক্ষালয়ে রেখে এসডিও বি বি ঘোষের বিচারে সাজা হল এবং পাঠানো হল রাজশাহী জেলে। ট্রেন সেই স্টেশনে পৌঁছনোর আগেই দেখা গেল, গভীর রাতেও জনসমুদ্র এবং প্রায় প্রত্যেকের হাতে মালা। পরিস্থিতি বুঝে রাজশাহীর জেলাশাসক নিজের গাড়িতে করে নেতাজিকে নামিয়ে দেন নাটোর স্টেশনে। দার্জিলিং মেলে কলকাতা পৌঁছে সুভাষের আবার স্থান হয় সেই আলিপুর সেন্ট্রাল জেলেই। এ বার নেই গ্রেফতার ও সাজার কারণ। কয়েক দিন মাত্র ছিলেন। দেখলেন, আরও বেশি সংখ্যায় মোতায়েন হয়েছে হিন্দুস্থানি সেপাই, আরও পেশোয়ারি পালোয়ান এবং কুখ্যাত কয়েদিরা। সবই টেগার্টের ইচ্ছেয়। ইদানীং টেগার্ট ঠিকই করে ফেলেছেন, জেলের বাইরে থাকলে সুভাষচন্দ্রকে লাঞ্ছনা করবে পুলিশ এবং জেলের ভিতরে থাকলে মারধর করবে কুখ্যাত কয়েদিরা।
১৯৩১-এর ২৬ জানুয়ারি নেতাজি ময়দান অঞ্চলে তাঁর লোকজন নিয়ে পালন করছেন ‘স্বাধীনতা দিবস’। কংগ্রেসের তরফেই এই দিবসটি পালন শুরু হয়েছে ১৯৩০ সাল থেকে। সভায় বেদম লাঠি চালায় পুলিশ। প্রচণ্ড আহত সুভাষকে লালবাজার হয়ে নিয়ে যাওয়া হল আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে, কোনও চিকিৎসা ছাড়াই। লাঠিপেটা খেয়েছিলেন অন্যান্য কংগ্রেস নেতাও। কর্পোরেশন তদন্ত কমিটি গঠন করেও সুরাহা হল না।
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল অনন্য শুধু এই কারণে নয় যে, বহু বিখ্যাত রাজনীতিক এখানে বন্দি ছিলেন বা বাঙালির নয়নের মণি সুভাষচন্দ্রকে বার বার এই জেলের মেয়াদ খাটতে হয়েছে; অনন্য এই কারণেও যে সর্বভারতীয় রাজনীতিকদের মধ্যে একমাত্র জওহরলাল নেহরু আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ছিলেন তিরিশের দশকে। মেদিনীপুরের তিন কুখ্যাত জেলাশাসককে পর পর হত্যা করার পর যে অসহনীয় লাঞ্ছনা ও পীড়ন নেমে এসেছিল বিপ্লবী ও মেদিনীপুর জেলাবাসীর উপর, কলকাতার এক সভায় তার প্রতিবাদ করার ফলে গ্রেফতার হন নেহরু। তবে তাঁর কারাগারে আসার কিছু দিন আগে সুভাষ বেরিয়ে যাওয়ায় সেখানে দেখা হয়নি দু’জনের। এই সময় কমলা নেহরু প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর আসায় নেহরুকেও আড়াই বছরের পুরো সাজা খাটতে হয়নি।
সেই সেন্ট্রাল জেল এখন চলে গিয়েছে বারুইপুরের রংকলে। প্রকৃতপক্ষে চিড়িয়াখানা থেকে কালীঘাট ব্রিজ পর্যন্ত আদিগঙ্গার পাড় বরাবর অঞ্চলটি একদা ছিল ওয়াজেদ আলি শাহ ও তাঁর আত্মীয়দের। লখনউ থেকে আনা ওয়াজেদ আলি শাহের সাধের চিড়িয়াখানাটি ইংরেজ সরকার কিনে নেয় ১৮৭৬ সালে। তারও আগে কেনা হয় বর্তমান প্রেসিডেন্সি ও মহিলা সংশোধনাগার অঞ্চল। সব শেষে অধিগ্রহণ করা হয় কালীঘাট ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা। তাই অনেক পরে আধুনিক গঠনশৈলীতে তৈরি হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেল (১৯০৬)। অনেকটাই দিল্লির কনট প্লেসের মতো। মাঝে সেন্ট্রাল টাওয়ার। তার চার পাশে লাইন করে সমান্তরালে সুসজ্জিত ওয়ার্ড ও সেল ব্লক। সেই সেন্ট্রাল জেল এখন শহরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দর্শনীয় স্থান শুধু নয়, পবিত্র তীর্থভূমিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy