Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শতবর্ষে সুকুমারী

হিন্দু নন, খ্রিস্টান। তাই স্নাতক স্তরে সংস্কৃত, অঙ্ক-সহ সব বিষয়ে প্রথম হয়েও ঈশান স্কলারশিপের শিকে ছেঁড়েনি তাঁর ভাগ্যে। তার পর, চলতি ছক ভেঙে বার বার প্রমাণ করলেন, বৈদিক সাহিত্য প্রথম থেকেই রক্ষণশীল। নারী এবং শূদ্রের অধিকার সেখানে কোনও দিনই স্বীকৃত হয়নি।হিন্দু নন, খ্রিস্টান। তাই স্নাতক স্তরে সংস্কৃত, অঙ্ক-সহ সব বিষয়ে প্রথম হয়েও ঈশান স্কলারশিপের শিকে ছেঁড়েনি তাঁর ভাগ্যে। তার পর, চলতি ছক ভেঙে বার বার প্রমাণ করলেন, বৈদিক সাহিত্য প্রথম থেকেই রক্ষণশীল। নারী এবং শূদ্রের অধিকার সেখানে কোনও দিনই স্বীকৃত হয়নি।

সুকুমারী ভট্টাচার্য।

সুকুমারী ভট্টাচার্য।

মৌ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ০০:১৩
Share: Save:

দেখতে দেখতে শতবর্ষে পৌঁছে গেলেন সুকুমারী ভট্টাচার্য। দিনক্ষণের হিসাবে, এই অতিমারি আর লকডাউনের মাঝে গত রবিবার, ১২ জুলাই তিনি পা দিয়েছেন একশো বছরে। এখনও মনে হয়, এই তো সে দিনও তিনি আমাদের মধ্যে ছিলেন!

ভাবনার দোষ নেই। ২০১৪ সালে প্রায় ৯৩ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। সুকুমারী ভট্টাচার্য শেষ দিন পর্যন্ত ধারণ করে রাখতে পেরেছিলেন তাঁর তেজস্বী মনস্বিতা, এক জন জাগ্রত পাঠক এবং সচেতন লেখক হিসেবেও। তাই, এই সে দিন অবধি যিনি এতটা সজীব ছিলেন, এত তাড়াতাড়ি যে তাঁর শতবর্ষ পালন করতে হবে, সেটা বাঙালি সমাজের ভুলে যাওয়াটা হয়তো খুব দোষের নয়। শতবর্ষে প্রাচীন মানুষের প্রাচীন কীর্তির পুনর্মূল্যায়ন করাই রীতি, কিন্তু সুকুমারী ভট্টাচার্যের মতো আধুনিক মননসম্পন্ন এবং প্রতিনিয়ত নিজেকে ‘আপডেট’ রাখায় অভ্যস্ত এক জনের মৃত্যুর মাত্র সাত বছরের মধ্যে তাঁর সারা জীবনের কাজের পুনর্মূল্যায়ন করা আদৌ সম্ভব কি না, প্রশ্ন সেটাই।

অসাধারণ মেধার পরিচয় রেখে ছাত্রজীবন সম্পন্ন করেন সুকুমারী দত্ত। জন্মসূত্রে তিনি খ্রিস্টান পরিবারের কন্যা, কিন্তু ধর্ম বলতে বামপন্থী মানবতাবোধে বিশ্বাসী। প্রচণ্ড ভাল লাগা ও কৌতূহল বশত তিনি স্নাতক স্তরে সংস্কৃত অনার্স নিয়ে পড়েন, আর শুধু সে-বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়াই নয়, গোটা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত-সহ সমস্ত কলা বিভাগের মধ্যে প্রথম হওয়ার দরুন ঈশান স্কলারশিপের দাবিদার হন। কিন্তু, এই স্কলারশিপের এন্ডাওমেন্ট পলিসির অন্যতম শর্ত হল, প্রাপককে হিন্দু হতে হবে। এই শর্ত একান্ত ভাবে স্কলারশিপটির প্রদাতাদের আরোপিত, যা উল্লঙ্ঘনের অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। শুধু ধর্মের কারণে ন্যায্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়ে সুকুমারীর নিদারুণ ক্ষোভ জন্মায় এবং তিনি সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর না পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর পড়তে তাঁকে কোনও বাধা দেয়নি, তবু রটে যায় যে, তিনি খ্রিস্টান ছিলেন বলে সংস্কৃতে এম এ পড়তে পারেননি। জীবদ্দশায় এ ভাবেই ‘মিথ’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

সংস্কৃতের বদলে সুকুমারী ইংরেজিতে এম এ পড়লেন এবং ভাল ফল করলেন। ইংরেজির অধ্যাপক অমলকুমার ভট্টাচার্যের সঙ্গে প্রণয়, পরিণয় এবং নিজেও ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিলেন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। সেখানে দশ বছর অধ্যাপনা করাকালীনই ১৯৫৪ সালে অভিমান ভুলে সুকুমারী আবার আপন করে নিয়েছিলেন তাঁর প্রথম প্রেম সংস্কৃতকে, প্রাইভেটে এম এ পরীক্ষা দিয়েও সে-বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হলেন তিনি। ইংরেজি এবং সংস্কৃত এই দুটি ভাষা ও সাহিত্যেই প্রগাঢ় পণ্ডিত সুকুমারী ভট্টাচার্যকে ১৯৫৭ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য পড়ানোর জন্যে ডেকে নিলেন বুদ্ধদেব বসু। কয়েক বছর পর সুকুমারী চলে এলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই সংস্কৃত বিভাগে।

হিন্দু ধর্মে তথাকথিত উদারতা ও সহিষ্ণুতার আড়ালে, নারী ও শূদ্র, সমাজের এই দুই প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের প্রতি কী মাত্রায় বিদ্বেষমূলক বৈষম্য ও শোষণ করা হয়েছে সে-বিষয়ে প্রথম বার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুকুমারী ভট্টাচার্যের লেখা ‘প্রাচীন ভারত : সমাজ ও সাহিত্য’ (আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৮৮) নামে আনন্দ-পুরস্কারে ভূষিত গ্রন্থটির জন্য বাঙালি পাঠক তাঁকে মনে রাখবেন। এটি বাংলা ভাষায় লেখা প্রতিবাদী সাহিত্যের একটি দিগ্দর্শী নিদর্শন। দীর্ঘ কাল ধরে প্রচলিত হিন্দু ধর্মের বহু বৈষম্যমূলক বিধি-বিধানকে ‘শাস্ত্রের’, বিশেষত ‘বেদের বিধান’ বলে বিনা প্রশ্নে মেনে আসা সমাজকে রীতিমতো ধাক্কা দিয়েছিল এই বইটি। বিদ্বৎ-সমাজে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা একটি ‘মিথ’— বৈদিক যুগে সব বিষয়ে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ছিল— তার মূল ধরে নাড়া দিয়েছিল অধ্যাপক ভট্টাচার্যের লেখা এই গ্রন্থ। তাঁর মতে, ভারতের মাটিতে আর্যদের বসবাস সূচনার পর মোটামুটি দু’শতক পর্যন্ত নারী তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের অধিকার আংশিক হলেও ভোগ করতে পেরেছিল, কিন্তু তার পর ক্রমশ সে তার সব অধিকার হারায়। নারীর অধিকারের এই ক্রমাবনতির কারণ হিসেবে পণ্ডিতেরা যুক্তি দেন, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে বহিঃশত্রুর ক্রমাগত আক্রমণে উত্তর ভারত বিপর্যস্ত হয় এবং সেই বিপদ থেকে রক্ষার জন্যই তৎকালীন স্মৃতি ও ধর্মশাস্ত্র নারীর স্বাতন্ত্র্য নিষিদ্ধ করে। এই ভ্রান্ত জ্ঞানের বিরুদ্ধে বাংলা সাহিত্যে প্রথম বলিষ্ঠ ও যুক্তিপূর্ণ কণ্ঠস্বর সুকুমারী ভট্টাচার্যের। তিনি প্রাচীনতর যুগের শাস্ত্রগ্রন্থ থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়ে দেখিয়েছেন যে, এই সমাজে নারী-পুরুষের কখনওই সমানাধিকার ছিল না, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের প্রাচীন নারীদের মতো আর্য নারীরাও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন সভ্যতার শুরু থেকেই, তার প্রধান কারণ শারীরিক শক্তিতে তাঁরা পুরুষের থেকে দুর্বল। এই অমানবিক মানসিকতাকে আড়াল করে প্রাচীন শাস্ত্রসমূহ যে ভাবে নারীর অধিকার খর্ব করেছে, তার স্বরূপ উন্মোচনই ছিল সুকুমারী ভট্টাচার্যের লক্ষ্য। তাই তিনি বৈদিক সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন ধর্মের নামে দ্বিচারিতার আদি উৎসগুলোকে।

মার্ক্সবাদী সুকুমারীর এই সব গবেষণালব্ধ তথ্য সনাতনপন্থীদের কাছে প্রখর বিদ্বেষ ও বিদ্রুপের বিষয় হয়ে ওঠে। তীব্র প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে তাঁর সত্যোদ্ঘাটনের জেদ আরও বেড়ে যায় এবং ক্রমশ তাঁর শাণিত কলমে প্রকাশিত হয় আরও কিছু মূল্যবান প্রবন্ধের গ্রন্থ, যেগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ‘বেদের যুগে ক্ষুধা ও খাদ্য’ (১৯৯৮), ‘বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য’ (২০০০) এ ছাড়াও ইংরেজিতে ‘উইমেন অ্যান্ড সোসাইটি ইন এনশিয়েন্ট ইন্ডিয়া’ (১৯৯৪), ‘ফেটালিজ়ম ইন এনশিয়েন্ট ইন্ডিয়া’ (১৯৯৫)।

প্রকৃত গবেষকের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত সংস্কারমুক্ত, নিরপেক্ষ এবং নৈর্ব্যক্তিক, এটি সুকুমারী ভট্টাচার্য বার বার তাঁর ছাত্রছাত্রীদের শেখালেও তাঁর নিজের লেখায় এই নিরপেক্ষতা এবং নৈর্ব্যক্তিকতা সব সময় রক্ষিত হয়নি বলে মত পোষণ করেন বহু সুধীজন, যাঁরা নিজেরাও সংস্কারমুক্ত, নিরপেক্ষ গবেষণার সমর্থক। তাই অভিযোগ ওঠে, যে-সব বৈদিক ও পৌরাণিক সাহিত্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে অধ্যাপক ভট্টাচার্য প্রাচীন ভারতকে নারীবিদ্বেষী বলে প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকগুলোই প্রসঙ্গরহিত ভাবে বিশেষ উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন তাঁর প্রথমোক্ত গ্রন্থটিতে “বৈদিক সমাজে নারীর স্থান” প্রবন্ধে ঐতরেয় ব্রাহ্মণের একটি মন্ত্রাংশের (৬.৩.৭.১৩) তিনি অর্থ করেছেন ‘কন্যা অভিশাপ’ (পৃ : ৩৮), এখানে সম্পূর্ণ মন্ত্রটিতে জায়াকে সখা মানে বন্ধু বলা হয়েছে, পুত্রকে বলা হয়েছে পরমাকাশের জ্যোতি আর কন্যার প্রতি প্রযুক্ত হয়েছে ‘কৃপণ’ এই বিশেষণটি, যার অর্থ সুকুমারী ভট্টাচার্য করেছেন ‘অভিশাপ’, প্রাচীন ব্যাখ্যাকার নিরুক্ত-গ্রন্থের প্রণেতা যাস্ক এই শব্দটির অর্থ করেছেন ‘কষ্টের কারণ’, বিবাহের পরে কন্যা মা-বাবাকে ছেড়ে চলে যায়, তাই সে তাঁদের কষ্টের কারণ এমন ব্যাখ্যাও রয়েছে। যে-মন্ত্রে জায়াকে বন্ধু বলা হয়েছে, সেখানেই এক নিঃশ্বাসে কন্যাকে কী করে অভিশাপ বলা হল, তার যুক্তিগ্রাহ্যতা প্রশ্নাতীত নয়, তা-সত্ত্বেও সুকুমারী ভট্টাচার্যের ‘কৃপণ’ শব্দটির সটান ‘অভিশাপ’ অনুবাদ নিরপেক্ষ গবেষকদের মনেও অনুবাদকের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় জাগায়। একই ভাবে উল্লেখ করা যায়, তাঁর ওই গ্রন্থেরই ‘নারীর স্থান— রামায়ণে ও মহাভারতে’ প্রবন্ধটির, যেখানে ব্রাহ্মণ গালবের গুরুদক্ষিণা মেটানোর জন্যে যযাতিকন্যা মাধবীর চারটি পুরুষের কাছে আত্মবিক্রয়ের মর্মান্তিক কাহিনি উল্লেখ করে প্রবন্ধকার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, ‘এসবের পশ্চাতে সমাজমানসে যে বোধটি সক্রিয় ছিল তা হল: নারী ব্যক্তি নয়, বস্তু এবং ভোগ্যবস্তু।’ (পৃ. ১১৮) অথচ, কী প্রসঙ্গে মহাভারতকার এই কাহিনির অবতারণা করেছেন তা তিনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলেন! মহাভারত (৫.১১৮-২২) অংশে কোনও বিষয়ে অহেতুক জেদাজেদি করলে কী অনর্থ ঘটতে পারে তার উদাহরণ হিসেবেই গালব ও মাধবীর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। শিক্ষান্তে গালব তাঁর গুরু বিশ্বামিত্রকে গুরুদক্ষিণা দিতে চান। গুরু কোনও রকম দক্ষিণাই নিতে চাইলেন না, কিন্তু গালবের জেদ চেপে গেল গুরুকে দক্ষিণা দিতেই হবে। তাঁর ক্রমাগত পীড়াপীড়িতে বিরক্ত হয়ে বিশ্বামিত্র এমন মহার্ঘ দক্ষিণা চেয়ে বসলেন যে, তা দেওয়ার সামর্থ্য গালবের ছিল না। তিনি বিপত্তি এড়াতে রাজা যযাতির দ্বারস্থ হন, কারণ তখন প্রথা ছিল যে ব্রহ্মচারীর গুরুদক্ষিণা দেবার সাধ্য না থাকলে দেশের রাজার কর্তব্য তাঁকে আর্থিক সাহায্য করা। তখন যযাতিও অর্থসঙ্কটে ছিলেন, তিনি অর্থের পরিবর্তে তাঁর মেয়ে মাধবীকে ভাড়া খাটিয়ে সেই দক্ষিণা জোগাড়ের জন্য গালবকে অনুমতি দিলেন। এখানে স্পষ্ট যে, নারী পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, তা সত্ত্বেও এটি যে অনর্থ ও অনভিপ্রেত, তা কিন্তু কাহিনির শুরুতেই মহাভারতকার বলে দিয়েছেন। এই তথ্যটিকে উপেক্ষা করা নিরপেক্ষ গবেষকের কর্তব্য নয়।

গবেষক সুকুমারী ভট্টাচার্য বিশ্বের দরবারে পরিচিত তাঁর ‘দ্য ইন্ডিয়ান থিয়োগনি’ বইটির জন্যে। ভারতের ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এই ত্রিদেব তত্ত্বের বৈদিক উৎস ও পৌরাণিক বিবর্তন নিয়ে তিনি ১৯৬৪ সালে পিএইচডি-র জন্য গবেষণা করেন। তার বছর দুয়েকের মধ্যে কেমব্রিজের ক্লেয়ার হল থেকে ১৯৬৬-৬৭, এই এক বছরের জন্যে একটি ফেলোশিপ পান। এই সময়ে সারা পৃথিবীর পৌরাণিক তত্ত্বের সঙ্গে ভারতীয় পৌরাণিক তত্ত্বের তুলনামূলক গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। মেধা, মনন ও শ্রমের অত্যুৎকৃষ্ট ফসল তাঁর ‘দ্য ইন্ডিয়ান থিয়োগনি’ ১৯৭০ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং এইটিই সুকুমারী ভট্টাচার্যের ম্যাগনাম ওপাস। এ ছাড়াও তাঁর বিশেষ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ দুটি খণ্ডে প্রকাশিত ‘লিটরেচার ইন বেদিক এজ’। বেদ-গবেষণায় যে মাত্রা সুকুমারী এনে দিয়েছেন, তা ভারতীয় গবেষণার পরিসরে নিঃসংশয়ে অনন্য এবং অভিনব। তাঁর পদ্ধতি ভারতীয় বেদ-পড়া মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেছিল সুপ্রাচীন এই গ্রন্থকে আধুনিক এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন করে পড়তে।

মেয়েদের আত্মমর্যাদা ও সামাজিক সমতার প্রত্যাশী সুকুমারী ভট্টাচার্য শুধু প্রবন্ধ ও বৌদ্ধিক আলোচনাতেই নয়, নিজেকে প্রসারিত করে দিয়েছিলেন বাস্তব জগতেও। ১৯৮২ সালে সুকুমারী ভট্টাচার্যকে সভানেত্রী করে প্রয়াত যশোধরা বাগচী ‘সচেতনা’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, যেখানে অনেক নিপীড়িত মেয়েকে আত্মনির্ভর ও আত্মসচেতন হতে সাহায্য করা হত।

সুকুমারী ভট্টাচার্য আজীবন বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত থেকেও ২০০৯ সালের নন্দীগ্রামের ঘটনায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছিলেন। এর জেরে পার্টির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়। শারীরিক অক্ষমতা সত্ত্বেও তিনি পার্টির তরফ থেকে আসা সাহায্য ফিরিয়ে দেন। ভাবলে অবাক হতে হয়, কতখানি মানসিক দৃঢ়তা থাকলে সম্পূর্ণ একা, প্রায় শয্যাশায়ী নবতিপর এক বৃদ্ধা এমন আপসহীনতার সাহস দেখাতে পারেন! সেই চিরন্তন আধুনিক মনস্বিনী সত্যই প্রণম্য।

অন্য বিষয়গুলি:

sukumari bhattacharya author writer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy