Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

বেড়ানোর হ য ব র ল

মন যতই উড়ুউড়ু হোক, ভ্রমণে এখন পুরোদস্তুর লকডাউন। কিন্তু মা-লক্ষ্মীর নয়নের মণি যাঁরা, সেই ধনকুবেরদের ব্যাপারস্যাপারই আলাদা। প্রাইভেট জেটে নির্জন দ্বীপ কিংবা গভীর জঙ্গল। ইয়টে চেপে জলসফর। ভাইরাস কিংবা আমজনতা, সকলের থেকেই ওঁরা কয়েকশো হাত ব্যবধানে নিরুপদ্রব, নিশ্চিন্ত। জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়মন যতই উড়ুউড়ু হোক, ভ্রমণে এখন পুরোদস্তুর লকডাউন। কিন্তু মা-লক্ষ্মীর নয়নের মণি যাঁরা, সেই ধনকুবেরদের ব্যাপারস্যাপারই আলাদা। প্রাইভেট জেটে নির্জন দ্বীপ কিংবা গভীর জঙ্গল। ইয়টে চেপে জলসফর। ভাইরাস কিংবা আমজনতা, সকলের থেকেই ওঁরা কয়েকশো হাত ব্যবধানে নিরুপদ্রব, নিশ্চিন্ত। জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ০২:১৯
Share: Save:

বেজায় গরম। ঘরদোর মুছে, হাতে সাবান ঘষে ল্যাপটপের সামনে বসে আছি। তবু ঘেমে অস্থির। পাশে মোবাইলটা রাখা ছিল। একটা ফোন করব বলে যেই সেটা তুলতে গিয়েছি, অমনি মোবাইলটা বলল, ম্যাও! কী আপদ! মোবাইল ম্যাও করে কেন! চেয়ে দেখি একটা বেড়াল মোবাইলের স্ক্রিন থেকে প্যাটপ্যাট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘গরম লাগে তো তিব্বত গেলেই পার!’ শুনে মাথাটা আরও গরম হয়ে গেল। বললাম, বলা ভারী সহজ! বললেই তো আর যাওয়া যায় না! তুমি কোন মুল্লুকে আছ হে? এই মাগ্গির বাজারে লোকে এসি চালাচ্ছে টিপে টিপে। ট্রেন-প্লেন ক’টা চলছে তার ঠিক নেই। তার উপরে চিনের সঙ্গে খটাখটি। আর তুমি কিনা তিব্বত যেতে বলছ?

বেড়াল এমন ভাব করল যেন আমার মতো আহাম্মক আর দুটি দেখেনি। মস্ত হাই তুলে বলল, ‘তুমি কি লোকাল ট্রেনে তিব্বত যাও নাকি মেট্রোয়? যাব বললে যাওয়াই যায়। কলকেতা, ডায়মন্ডহারবার, রানাঘাট, তিব্বত। সওয়া ঘণ্টার পথ। সিধে রাস্তা। প্লেন ভাড়া করে নিলেই হল! এ তো হামেশাই হচ্ছে। চাই কি স্পেসক্রাফ্ট নিয়ে মহাকাশেও চলে যেতে পার! মঙ্গল, বৃহস্পতি যেখানে খুশি!’ আমি বললাম, ও সব বড়লোকেদের ব্যাপার। আদার ব্যাপারির জাহাজের খোঁজে দরকার কী? মাইক্রোস্কোপিক মাইনরিটিদের নিয়ে খামখা ভাবতে যাব কেন?

বেড়ালটা ফ্যাচ ফ্যাচ করে হাসতে লাগল। গা-জ্বালানি হাসি আর থামেই না। হাসতে হাসতেই বলল, ‘রাতদিন হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করলে লোকে এমনি হোঁৎকা হয়ে যায়, কিচ্ছুটি তলিয়ে ভাবতেই পারে না। এই যে করোনা করোনা করে তোমরা হেদিয়ে মরছ, সেটা কী? আণুবীক্ষণিক বিন্দুই তো! অথচ গোটা দুনিয়াকে ল্যাজে খেলাচ্ছে সে। তুমি যাদের মাইক্রোস্কোপিক মাইনরিটি বলছ, তারাও তাই। সারা পৃথিবীর ধনদৌলত ক’টা মাত্র লোকের পকেটে ঢুকে আছে তা জান? যদি বলো, আঁক কষে বুঝিয়ে দিতে পারি। ত্রৈরাশিক চাও না ভগ্নাংশ?’

আমি দেখলাম, ব্যাপারটা জটিল দিকে চলে যাচ্ছে। অঙ্কে আমার দৌড় সাত দু’গুণে চোদ্দো-র বেশি নয়। তাই হাঁ হাঁ করে বলে উঠলাম, থাক থাক! এখন আঁক কষতে হবে না। তুমি বরং কে প্লেন ভাড়া করে তিব্বত যাচ্ছে, সেই গপ্পোটা বল।

বেড়াল বলল, ‘তিব্বতটা তো কথার কথা! করোনার পর থেকে চিনের ধারেকাছে কেউ ঘেঁষছে না। রেস্ত থাকলে যাওয়ার অন্য অনেক জায়গা আছে। নির্জন দ্বীপে যেতে পার, আফ্রিকার জঙ্গলে যেতে পার। দেখেশুনে বেছে নিলেই হল! তুমি কি মনে কর, পৃথিবীর ধনিকেরা ঘরে খিল দিয়ে করোনার ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে? তারা এই সময়টাকে কী করে উপভোগ করা যায়, তার হরেক রাস্তা বার করে ফেলেছে। সেই জন্যেই তো প্রাইভেট জেটের কারবারে এ বছর পোয়াবারো! যাতায়াতে ঘণ্টাপিছু আট হাজার পাউন্ড লোকে হাসিমুখে ধরে দিচ্ছে। জেট কোম্পানিদের কারও দশ গুণ ব্যবসা বেড়েছে, কারও নতুন খরিদ্দারই জুটেছে তিনশো শতাংশ! মাইকনস, ইবিজ়া, নিস, সেন্ট ট্রপেজ়, ফারো... ভূমধ্যসাগরের দ্বীপগুলোর খুব কাটতি এখন! তার পর ধর, অনেক ধনকুবের তো এমনিই দ্বীপ কিনে রেখেছে। নিজস্ব প্লেনও আছে। তারা শান্তিনিকেতনে ছুটি কাটাতে যাওয়ার মতো করেই প্লেন হাঁকিয়ে দ্বীপের বাড়িতে চলে যাচ্ছে।’

শুনতে শুনতে বেজার লাগছিল। মুখে বললাম, তা হতে পারে। কিন্তু করোনা ধনী-গরিব দেখে না। জানো কত বড় বড় লোকের...! বেড়াল আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠল, ‘কত রাজাগজা কেষ্টবিষ্টুর করোনা হল, তার সঙ্গে আইসোলেশনে বেড়াতে যাওয়ার কোনও বিরোধ নেই। বড়লোকেরা এমনিই সাতমহলা প্রাসাদে থাকে। তারা মাছের বাজারে লাইনও দেয় না, চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে আপিসেও যায় না। সারা বছরই আইসোলেশন। তাতেও তাদের শানাচ্ছে না। জনমনিষ্যির মুখই যাতে দেখতে না হয়, তার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা নির্জন দ্বীপে, জনমানবহীন প্রান্তরে, পার্বত্য উপত্যকায়, অরণ্যের গহিনে আস্তানা গাড়ছে। যে জায়গা যত পাণ্ডববর্জিত, তত তার দাম। লাখ দুয়েক পাউন্ড খসালেই তৈরি হয়ে যাবে পাঁচতারা তাঁবু। টোঙ্গা না পানামা, মাসাইমারা না ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, সেটা শুধু মুখ ফুটে বললেই হল।’

বেড়ালের কথা শুনে মনে পড়ল, এ রকম কিছু কথা আমারও কানে এসেছিল বটে। ফেসবুকের অন্যতম লগ্নিকারী পিটার থিল যেমন। নিউজ়িল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডে ওঁর ১৯৩ হেক্টরের একটা দ্বীপ কেনাই আছে। উনি লকডাউন কাটাতে সেখানে চলে গিয়েছেন। সিলিকন ভ্যালির অনেক অর্বুদপতিরই ছুটি কাটানোর জায়গা হিসেবে এখন প্রথম পছন্দ নাকি নিউজ়িল্যান্ড। জেসিন্ডা আর্ডেন পরিস্থিতি ভাল সামাল দিয়েছেন বলে নয়। ওঁরা শখ করে দ্বীপান্তরী হবেন, তাই নিউজ়িল্যান্ড। তার পরেই চাহিদা ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোর। দ্বীপ কেনাবেচা-ভাড়া খাটানোর ব্যবসায় ক্রিস ক্রোলো এক জন মস্ত চাঁই। তিনি বলছিলেন, বেলিজ়, বাহামাস এই সব এলাকায় দ্বীপ কিনতে চেয়ে লোকে ঝুলোঝুলি করছে। এক মিলিয়ন থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার বা তারও উপরে ঘোরাফেরা করছে দর। সাউথ প্যাসিফিকে দর উঠছে ১৫৬ মিলিয়ন। ভাড়ার ব্যাপার হলে দিনপিছু চার-পাঁচশো থেকে চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার ডলার। ক্যারিবিয়ান সাগরে রিচার্ড ব্র্যানসনের নেকার আইল্যান্ড কিংবা বাহামাস-এ ডেভিড কপারফিল্ডের মুশা কে-র ভাড়া ওই রকমই।

কিন্তু বেড়াল এত কথা জানল কী করে! আবার ফ্যাচ ফ্যাচ করে হাসবে জেনেও জিজ্ঞেস করে বসলাম, তোমাকে তো সারা দিন দেখি হয় পড়ে পড়ে ঘুমোও, নয় এই এঁদো গলিতে চক্কর মারো। এত শত জানলে কোত্থেকে? সে অপার তাচ্ছিল্যে চোখের মণিটা সরু করে ফেলল। তার পর বলল, ‘আমার ফ্রেন্ড লিস্ট কত লম্বা জান? হিজিবিজবিজের শেয়ার করা চুটকি ফরওয়ার্ড করে আমার দিন কাটে না। কত বিলিয়নেয়ার বেড়ালের সঙ্গে আমার নিয়মিত বাতচিত হয় জান? ব্রিটিশদের খবর তো পাই ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের খাস মাউসারের কাছ থেকে।’

আমি এ বারে একটু নড়ে বসলাম। হিজিবিজবিজ আমারও মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। ওর চুটকি আমি নিয়মিত ফলো করি। যেমন সেই যে একটা লোক, এক হাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন আর এক হাতে গোমূত্র নিয়ে আসছিল! ভুল করে ক্লোরোকুইনের বদলে গোমূত্র খেয়ে ফেলল— এ সব আমিও পড়ে থাকি। কিন্তু তাই বলে অন্য খবর রাখি না, তা নয়। ডাউনিংয়ের মাউসারের কথা আমারও জানা ছিল। নধর এক সাদা-কালো মার্জার। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর আবাসে ইঁদুর ধরার জন্য তাকে মোটা মাইনে দিয়ে রাখা হয়। তার কাছ থেকেই আমাদের বিল্লি শুনেছে, ব্রিটিশ বড়লোকেদের বেশির ভাগেরই কান্ট্রিসাইডে বিশাল বিশাল বাড়ি আছে। করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করা মাত্র ওঁরা গাঁয়ে চলে গিয়েছেন। পাহাড়ের উপরে ঢাউস হাভেলি। হাঁক পাড়লেও দশ মাইলের মধ্যে কেউ নেই। দেশে যাঁদের একঘেয়ে লাগছে, তাঁরা গ্রিস, কেনিয়া, পর্তুগালে বড় বড় ভিলা বা আস্ত রিসর্ট ভাড়া নিয়ে নিয়েছেন। কেনিয়ায় ৩২ একর জমি নিয়ে বিলাসবহুল ভিলার ভাড়া হপ্তায় ৬৫ হাজার ডলার। মার্কিন মুলুকেও একই ছবি। শহরের বাইরে এমনিতেই ধনীদের বিপুল জমি নিয়ে বাড়ি। তাও অনেকে দেশ ছেড়েছেন। মিডিয়া ব্যারন ডেভিড গেফেন ক্যারিবীয় দ্বীপ থেকে সূর্যাস্তের ছবি পোস্ট করে সকলের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন! লিয়োনার্দো দিক্যাপ্রিয়ো বা জনি ডেপের মতো অনেকে বাছাই বন্ধুবান্ধব নিয়ে পার্টি পালাৎসো বুক করেছেন। অনেকের আবার ঝোঁক গিয়েছে ইয়টে। মাটিতে থাকলে রোগবালাইয়ের ভয়। লম্বা সময় জলে ভেসে থাকলেই হল। লিয়োনার্দোর বান্ধবীর জন্মদিন ইয়টেই হইচই করে কাটল। নামী সংস্থারা সব ব্যবস্থা করে দেয়। দরকারে নিজস্ব সাবমেরিন দিয়ে দেয়। ইয়ট থেকে কপ্টারে ওঠার বন্দোবস্ত করে দেয়! সাধে কি আর বিল গেটস, হিলারি ক্লিন্টন, রবার্ট ডি নিরো, ক্যামেরন ডিয়াজ়দের মতো খরিদ্দার পেয়েছে ওরা! কোস্টা রিকা কিংবা ক্রোয়েশিয়া, ইয়টে ভেসে পড়লেই হল।

বলতে বলতে বেড়াল হঠাৎ থেমে গেল। গোঁফ নাচিয়ে বলে উঠল, ‘আমার বুঝি সময়ের দাম নেই? কত কষ্ট করে চুরিচামারি করে খানিক সময় জমিয়েছিলাম, তোমার সঙ্গে বাজে বকতে গিয়ে খরচা হয়ে গেল। যাও যাও! লোকজন লন্ডনে লুচিতরকারি খেয়ে প্রাইভেট জেটে উড়ে গিয়ে মেডিটেরেনিয়ানে মাছভাত সাঁটাচ্ছে আর তুমি ফেসবুকে দেবে বলে দার্জিলিংয়ের অ্যালবাম ঘাঁটছ!’

আমার রাগ হয়ে গেল! ঝাঁঝিয়ে বললাম, এ আর এমন কী? এ সব কথা এ পাড়ার পাঁচুগোপাল বরাবর বলে আসছে! পাঁচু তো বলে যে, ওর স্বপ্ন হল, রোববার দুপুরে ‘মা ভাত বাড়ো’ বলে হাঁক দিয়ে ছাদ থেকে টুক করে প্লেন ধরবে। দিঘায় দুটো ডুব দিয়ে উঠে মাথা মুছতে মুছতে আবার বাড়িতে এসে নামবে! বেড়াল কিন্তু দমবার পাত্রই নয়। আবার সে বিশ্রী করে হাসার তোড়জোড় করছে দেখে আমি রেলগাড়ি ছুটিয়ে দিলাম— আমাদের বলিউড বা কম কিসে! নেহাত এখানে বড্ড কড়াকড়ি, নইলে কি তারকারা ঘরে বসে থাকতেন? ওঁদের কি বিদেশে বাড়ি নেই? চার্টার্ড বিমান নেই? ওঁরা কি নিজেদের ইয়টে চড়ে আলিবাগের বাংলোয় যাতায়াত করেন না? আমাদের এক মস্ত শিল্পপতি কি মুম্বইয়ে বাড়ি থেকে অফিস যেতে কপ্টার চড়েন না?

এত ক্ষণে বেড়াল আমার প্রতি একটু কৃপা করল। থাবা চাটতে চাটতে বলল, ‘তা আর জানি না? আমাদের শাইনিং ইন্ডিয়া হাত গুটিয়ে রয়েছে নাকি? লকডাউনের পর থেকে এ দেশে প্রাইভেট জেটের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এবং ৭০ শতাংশই নতুন যাত্রী। অর্থাৎ এমন লোকজন, যাঁরা প্রাইভেট জেট ব্যবহারে অভ্যস্ত তো ননই, এমনকি বিজ়নেস ক্লাসের নিয়মিত যাত্রীও নন। এঁরা গোয়া, রাজস্থান, কেরলের বিলাসবহুল রিসর্টগুলোয় যাচ্ছেন। উদয়পুর, জয়সলমেরের কিছু রিসর্ট জেট সংস্থাগুলোর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিশেষ প্যাকেজ চালু করা যায় কি না, ভাবতে শুরু করেছে। উদয়পুর বা কেরলের রিসর্ট চেনের সিইও-রা জানাচ্ছেন, শুধু দিল্লি বা মুম্বই নয়। নাগপুর বা গুয়াহাটির মতো তুলনায় ছোট শহর থেকেও ফোন আসছে। ওঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, বেশির ভাগ ক্রেতাই আজকাল দরদামের খোঁজ করেন না। শুধু কার্ডটা এগিয়ে দেন। অনেক চাকুরে লোকজন ‘ওয়ার্ক ফ্রম ভেকেশন’ পছন্দ করছেন। এর বাইরে আছে আরও একটা বৃহৎ অংশ, যাঁরা প্ল্যান করছেন, কড়াকড়ি একটু আলগা হলেই উড়ে যাবেন পছন্দের নিসর্গে। একাধিক সংস্থা তাঁদের ভ্রমণসূচি তৈরি করতে ব্যস্ত। প্রাইভেট জেটে যাওয়া-আসা, হোটেল এবং বাকি সব ব্যবস্থা তাঁরাই করে দেবেন। মলদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, সিসিলি, ভুটান আর কেনিয়া যাওয়ার আগ্রহই এই মুহূর্তে বেশি। মলদ্বীপে দুটি বিলাসবহুল রিসর্টের মালিক সংস্থার সিইও ভারতীয়। বললেন, মাফারু আইল্যান্ডে আবু ধাবির সুলতান শুধু প্রাইভেট জেটের জন্যই একটা এয়ারপোর্ট বানিয়ে রেখেছেন। সেখানে নামলে সাত মিনিটে মধ্যে রিসর্টে পৌঁছনো যাবে। ১৫ তারিখ থেকে ট্যুরিস্টদের জন্য দরজা খুলবে মলদ্বীপ। ভারত-কেনিয়া সাফারি যাতে দ্রুত শুরু করা যায় নতুন করে, তার প্রস্তুতিও চলছে। গেছোদাদার কাছে আমি এ সব শুনেছি।

আমি শুধোলাম, তুমি গেছোদাদাকে চেনো? উনি আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করছেন না কেন বলতে পারো? বেড়াল জবাব দিল, হুঁ হুঁ, গেছোদাদাকে ধরা ভারী শক্ত। যখন তুমি ওঁকে হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইন দেখবে, তখন উনি আছেন ফেসবুকে। তুমি যেই ফেসবুকে যাবে, উনি তত ক্ষণে ইনস্টাগ্রামে। ইনস্টায় গেলে দেখবে টিকটকে! আমি হইহই করে বললাম, তোমার একটা কথাও বিশ্বাস করি না। টিকটক যে এখানে বন্ধ হয়ে গেছে, তাও জানো না! বেড়াল একটু থতমত খেয়ে বলল, ওহো তা হলে আইটি সেল হবে! আইটি-র টি, করোনার ক...আমি খেইটা ধরে নিয়ে বললাম, টক্করের ট আর একটা ক লাগবে! ক পাই কোথায়? বেড়াল অম্লানবদনে বলল, কেন বাঙ্কারে! আমি বুঝতে পারলাম না। এর মধ্যে বাঙ্কার এল কোথা থেকে? প্রশ্ন করলাম, তুমি কি লাদাখের সৈন্যদের কথা বলছ?

বেড়াল বলল, ‘তোমার যেমন বুদ্ধি! বাঙ্কার শুনলে সৈন্যসামন্ত ছাড়া কিছু ভাবতে পার না! কত বড়লোক করোনার ভয়ে ব্যক্তিগত বাঙ্কারে ঢুকেছে জান? করোনার জন্য কত লোক নতুন করে বাঙ্কার বানিয়েছে জান? সেখানে জিম আছে, সনা আছে, সুইমিং পুল আছে, জাকুজ়ি আছে। গ্রিনহাউস বাগান আছে। লন্ডন থেকে টেক্সাস, বাঙ্কারওয়ালারা শশব্যস্ত খরিদ্দারের চাপে। খবরের কাগজে ফিচার লিখতে হচ্ছে, কেমন করে বাঙ্কার জীবন কাটাবেন! তবে এর মধ্যে আরও একটা কথা আছে। সেটা চট করে কেউ মুখে আনতে চায় না।’

বেড়াল আবার হাসছে। কিন্তু এ হাসিটা একেবারে অন্য রকম। আশ্চর্য হয়ে দেখি, বেড়ালটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মোবাইলের পর্দা জুড়ে ওর হাসিটা জেগে রয়েছে। ক্ষীণ হয়ে আসছে কথা। বেড়াল বলে যাচ্ছে— ‘ওরা কিন্তু শুধু রোগ থেকে বাঁচবে বলে বাঙ্কার বানায়নি! ওরা অনেক দূর অবধি ভেবেছে। রোগের চেয়েও ওদের বেশি ভয় ভুখা মানুষকে। রেলে কাটা পড়া, হাঁটতে হাঁটতে বেদম হয়ে যাওয়া আত্মাকে! এ শুধু ভাইরাস নয়, এ হল গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প!’

অন্য বিষয়গুলি:

travel novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy