মুখোমুখি: শম্ভু মিত্র এবং রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত
সে বার জুনে কলকাতায় জোর বর্ষা নেমেছিল। সেই বৃষ্টির মধ্যেই অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে রাত জেগে লাইন দিয়েছেন বহু মানুষ। নাটকের টিকিট কাটার লাইন। সারা ভারতের বাছাই নাটক এক জায়গায় দেখার সুযোগ তখন কোথায়?
সেটা ১৯৮৪ সাল। নান্দীকার সে বার পঁচিশ বছরে পা দিচ্ছে। অতটা সময় একটা স্বাধীনতা-উত্তর দলের পক্ষে তো কম নয়! ভাবছিলাম, কী করে উদ্যাপন করব? দলের সুব্রত পাল বললেন— ‘সবাই নিজের প্রতিষ্ঠা দিবসে, জন্মদিনে নিজেদের সাজায়, নিজেদের কথা তুলে ধরে। আমরা বরং একটা ছাতা মেলে ধরি, যেখানে ভারতীয় নাটকের রূপরেখা ফুটবে।’
নান্দীকারের জাতীয় নাট্যমেলার সেই শুরু। নয়-নয় করে ৩৫টা বছর হয়ে গেল। গোড়ায় কিন্তু ভাবিনি যে প্রত্যেক বছর করব। কিন্তু সে বার ডক্টর শ্রীরাম লাগু, হাবিব তনবীরেরা নিজেদের নাটক নিয়ে এলেন। খুব একটা কাণ্ড ঘটে গেল কলকাতায়! পরের বছর বেশ কিছু শুভানুধ্যায়ী বললেন, এটা প্রতি বছরই হওয়া দরকার। ভরসা দিলেন। তখন আমরা নিয়মিত শুরু করলাম।
প্রথম বছরেই আইটিসি দিয়েছিল চার লাখ টাকা। সে সময়ে অনেক! তা বাদেও গোটা কলকাতা জুড়ে হোর্ডিং, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন বাবদ সব খরচ ওরাই দিল। বেশ হইচই পড়ে গেল। আমরা ঠিক করেছিলাম, লাইনে দাঁড়িয়েই টিকিট কাটতে হবে। সে নিজের লোক হোক বা পরের লোক। ফেস্টিভ্যালের নাটের গুরু যে সুব্রত, সে-ও কাউন্টারে অন্য লোক বসিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের বন্ধুদের জন্য টিকিট কাটত। নান্দীকারের এই ঘর আমার দিদি কমলা সেনের নামে। ওঁর উপরেই অনেকটা নির্ভর করত আমাদের অস্তিত্ব। তিনি টিকিট চাইতে তাঁকেও বলে দিলাম, ‘না দিদি, আমি পারব না।’ দিদি টিকিট কাটতে লাইন দিলেন। নিবেদিতা স্কুলের শিক্ষয়িত্রী তিনি, বয়সও হয়েছে। তখন বন্ধুরা আমায় বকুনি দিলেন, ‘‘আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন!’’
নান্দীকারের জন্ম ২৯ জুন। সেই কারণেই প্রথম বার জুনে মেলা করা হয়েছিল (পরের বার থেকে ডিসেম্বরে সরিয়ে আনা হয়)। সুব্রত সকালে অ্যাকাডেমি ক্যান্টিনে গিয়ে বলল, ‘যাঁরা সারা রাত লাইনে আছেন, সবাইকে একটা করে কফি আর বিস্কুট দাও। দিচ্ছি।’ দ্য স্টেটসম্যান কাগজে ‘ক্যালকাটা নোটবুক’-এ লেখা হল, ‘টিকেট উইদ এ কাপ অব কফি’।
সে না হয় হল। কিন্তু অ্যাকাডেমির সামনেটায় যে বিস্তর জল জমে! ভারী বিপত্তি! পুলিশের গাড়ি করে কাউকে পাঠাতে হল হাওড়া স্টেশনে বোধহয় হাবিব তনবীরকে না ডক্টর লাগুকে আনার জন্য। বিরজু মহারাজ ছিলেন গোলপার্কের গেস্ট হাউসে। গাড়িতে আসছেন। জলের মধ্যে গাড়ি গেল ব্রেকডাউন হয়ে। জলে নেমে তিনি নিজেই গাড়ি ঠেলতে লাগলেন। সে একটা দেখার মতো ব্যাপার!
এই আকাশভাঙা জল আমাদের উৎসাহে কিন্তু জল ঢালতে পারেনি। আমরা তখন টগবগ করে ফুটছি। বাংলার দর্শকদের সামনে নানা রাজ্য নানা ভাষার নাটক মেলে ধরতে হবে। সেই সঙ্গে নানা প্রান্তের নাট্যকর্মীদের একে অপরকে চেনার, মত বিনিময়ের পরিসর খুলে দিতে হবে। তখন তো ইউটিউব ছিল না। শ্রীরাম লাগুর নাম শুনেছে কলকাতার লোক, দুটো সিনেমা হয়তো দেখেছে। কিন্তু নাটক দেখার সুযোগ পায়নি। লোকে দেখে চমকে উঠছে— ওরে বাবা, ‘চরণদাস চোর’ এ রকম! যাঁরা খুব ভাল বলে আমরা জানতে পারছি, কিন্তু থিয়েটার মহলে তেমন পরিচয় হয়নি, তাঁদের তুলে আনাও ছিল একটা বড় লক্ষ্য। যেমন বি জয়শ্রী— সর্বভারতীয় পরিচিতি ছিল না, এখান থেকেই হল। নান্দীকারের নিজের নাটক কিন্তু উৎসবে থাকত না। প্রথম বার তো নয়ই, পরেও অনেক বছর পর্যন্ত নয়।
নান্দীকারের জাতীয় নাট্যমেলা এক দিক দিয়ে এ দেশে ভগীরথ। তার আগে কোথাও নিয়মিত নাট্যোৎসব হত না। প্রথমে ছ’দিনের মেলা, পরে আস্তে আস্তে দশ দিন হল। এর আগে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি করেছিল একটা-দুটো বিচ্ছিন্ন ফেস্টিভ্যাল। বহুরূপী কখনও-সখনও নিজের কিছু নাটক নিয়ে উৎসব করেছে। কিন্তু সর্বভারতীয় কিছু হয়নি। অনেক পরে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা ‘রঙ্গ্ মহোৎসব ভারঙ্গম’ শুরু করে। অথচ শম্ভু মিত্র খুব চাইতেন যে এমনটা হোক। শম্ভুদা তখন বহুরূপী থেকে আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন। উনি ছিলেন আমাদের অনুপ্রেরণা।
প্রেক্ষাগৃহে শম্ভু মিত্রের একটা বাঁধা আসন ছিল। ডান দিকের ব্লকের ভিতরের দিকে প্রথম সারির কোণের আসনটা। এক বার মজা হয়েছে। উনি বিরতিতে গ্রিনরুমে এসেছেন। ঝুলন বলে আমাদের একটি মেয়ে, তার দায়িত্ব ছিল শম্ভুদাকে চা-টা দেওয়ার, সে চা নিয়ে এমন উত্তেজিত, গোটাটা উল্টে শম্ভুদার গায়ে পড়ে গেল। তসরের পাঞ্জাবি। সকলে তো চেঁচিয়ে উঠেছে, শম্ভুদা বললেন, ‘জয় হোক!’ কী স্থিতধী মানুষ!
প্রথম বারের নাট্য মেলায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল চার জনকে— বিজয় তেন্ডুলকর, পুরুষোত্তম লক্ষ্মণ দেশপাণ্ডে, তৃপ্তি মিত্র আর মহম্মদ রেজা। প্রথম তিন জন তো স্বনামধন্য। রেজা তা নন। তাঁর কাজ ছিল ‘বহুরূপী’-তে সেটের জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া, লাইটের জিনিসপত্রের হিসেব রাখা, আরও নানা কাজকর্ম। ব্যাকস্টেজের লোকেদের স্বীকৃতি দিতে ওঁকে আমরা সংবর্ধনা দিলাম।
কত জনকেই তো সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এক বার গিরিশ কারনাডকে দেওয়া হল। গিরিশ তখন সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান। মঞ্চে ওঁকে বললাম, ‘আমাদের সামান্য টাকার নান্দীকার সম্মান। তবে সঙ্গীত নাটক অ্যাকডেমির রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের চেয়ে এক টাকা বেশি।’ ওঁদের পুরস্কার ছিল দশ হাজার টাকা, আর আমাদের দশ হাজার এক! গিরিশ শুনে বললেন, ‘তাই?’ পরের বছর থেকে ওদের পঞ্চাশ হাজার টাকা হয়ে গেল! লাভই হল। এক বার খালেদ চৌধুরীকে বললাম, ‘আপনাকে সম্মানিত করতে চাই।’ উনি বললেন, ‘না না, আমার মঞ্চসজ্জাকে কেউ পাত্তাই দেয় না। আমার সম্মান নেই কোনও!’’ পরে খালেদদাকে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি সম্মান দিল। তখন আমরা বললাম, ‘আপনি নিলেন যে?’ তার পরের বছর খালেদদা আমাদেরটা নিতে রাজি হলেন।
এত কিছু হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যারা বোঝার তারা আমাদের ভিখিরি দশা ঠিকই বুঝতে পারত। এক বার আমরা ইব্রাহিম আলকাজিকে পঁচিশ হাজার টাকা দিয়ে সংবর্ধিত করলাম। উনি তা আমাদেরই দান করে দিয়ে গেলেন! গণেশ পাইন এক বার একটা চেক দিলেন। উনি যেমন মানুষ, টুক করে হাতে দিয়ে নিচু গলায় বললেন, ‘এটা রেখে দিন।’ আমি এক ঝলক দেখে বললাম, ‘একেবারে পঞ্চাশ হাজার!’ উনি তেমনই নিচু গলায় বললেন, ‘পঞ্চাশ নয়, ওটা পাঁচ লাখ!’
থিয়েটারের বন্ধুরাও এক কথায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। ঋতু বর্মা বলে একটি ছোট্টখাট্টো মেয়ে পাণ্ডবাণী করে, তীজন বাঈয়ের মতো। এক বার ঋতুর আসার কথা, হঠাৎ জানাল আসতে পারবে না। কী করি? হাবিবকে বললাম, ‘তুমি শো করে দেবে? তুমি তো আছো কলকাতায়।’ হাবিব মুখের কথায় দুটো শো করে দিলেন। ঋতুর শো হাউসফুল ছিল। আমরা ঘোষণা করলাম, যাঁরা টিকিট ফেরত দিতে চান, দয়া করে কাউন্টার থেকে টাকা নিয়ে যান। মাত্র একটা টিকিট ফেরত এসেছিল।
আর এক বার শ্রীরাম লাগু আসার সময়ে কোথায় যেন ট্রেন বেলাইন। উনি শম্ভুদাকে ফোন করলেন। আটকে গিয়েছেন, আসতে পারছেন না। আমরা ওঁকে ফোন করে বললাম, ‘আপনারা আসুন, দুটো শো আছে পরপর, দুটোই হাউসফুল, মুশকিলে পড়ে যাব!’ উনি বললেন, ‘কী করে যাব?’ আমরা বললাম, ‘প্লেনে চলে আসুন।’ হাতে বিশেষ টাকাকড়ি ছিল না আমাদের, কিন্তু সাহসটা ছিল।
সকলের অলক্ষে অনেকেই যে যার মতো করে সাহায্য করে গিয়েছেন। ব্যক্তিগত ভাবে টাকা দিয়েছেন, টাকা জোগা়ড় করে দিয়েছেন। এখনও করে চলেন। এক বার কেন যেন নান্দীকার অফিসের বদলে আমাদের গৌতম হালদারের (অভিনেতা নন, পরে ছবি পরিচালনা করেছেন) বাড়িতে চলে গেল টিকিট বিলির কাজ। ক্রমাগত সেখানে লোকজন আসছে। আমরা সারা দিন আছি। দেখা গেল, বাড়ির ভিতর থেকে নিঃশব্দে চা, বাদাম দিয়ে মুড়ি-চিঁড়ে ভাজা চলে আসছে। সুব্রত বলল, ‘কেলেঙ্কারি! রোজ ওই বাড়িতে আট-দশ জন করে খাবে?’ আবার সব অফিসে সরিয়ে আনা হল। তখন গৌতমের মা জিগ্যেস করলেন, ‘আমাদের কোনও অন্যায় হয়েছে?’ — কেন? উনি বললেন, ‘না, তোমরা এখানে ছিলে, আমাদেরও আনন্দ হচ্ছিল।’ আসলে ওঁরাও নিজের মতো করে এই কর্মকাণ্ডে যোগ দিচ্ছিলেন।
কিন্তু কিছুই তো নির্জলা পাওয়া যায় না। দুর্নামও কিছু পেয়েছিলাম। কলকাতা নাট্যজগতের কিছু লোক, তারা কাগজে লিখল যে নান্দীকার চাইছে বাংলা থিয়েটারের নাক কেটে দিতে! বাইরের নাটক যদি বাংলার চেয়ে ভাল হয়, একটা তুলনা হবে ইত্যাদি। কিন্তু তাতে ক্ষতি কী? অন্য জায়গা থেকে নাটক এলে বরং সবাই একে অন্যের কাজ দেখতে পাবে। তাতে সকলেরই লাভ।
অন্য বিপত্তিও ছিল। এক বার রাজস্থান থেকে ভানু ভারতীর নাটক এসেছিল। ওরা যে রাজস্থানি কথা ব্যবহার করছে, লোকে বুঝতে পারছে না। দর্শকদের মধ্যে থেকে এক জন চেঁচিয়ে বললেন— ‘কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না!’ আমিও চেঁচিয়ে বললাম, ‘ভারতীয় থিয়েটারের ফেস্টিভ্যাল, সেখানে শুধু হিন্দি আর বাংলায় হবে? সকলের সামনে আপনি বাংলার নাক কাটছেন যে বাংলা বাছবিচার করে অতিথি আনে!’’
আমাদের মেলা যেহেতু খুব সফল হল, কেন্দ্রীয় সরকার ‘ফেস্টিভ্যাল গ্রান্ট’ চালু করল। ঊর্ধ্বসীমা ছিল পাঁচ লাখ। আমরাও পেতাম, অনেক নতুন দলও পেত। বহু দলের সেটাই লাইফলাইন ছিল, এখনও আছে। প্রচুর উৎসব হতে লাগল। দেখতে-দেখতে সারা ভারতেই নাট্যমেলা করার চল হয়ে গেল।
তার পর টিভি এসে গেল, আরও নানা বিনোদন, মানুষের হাতে সময় কমে গেল। ফলে প্রথম কিছু বছর যে দু’দিন ধরে রাত জেগে লাইন পড়ত, সেই উন্মাদনা কিছুটা থিতিয়ে গেল। বড় সংস্থাগুলোও মনে করতে লাগল, থিয়েটারে কেন টাকা দেব? তার চেয়ে ফিল্ম, ক্রিকেট, টেনিস যা বহু লোকে দেখে, সেখানে দেব। আইটিসি-র সেই অনুদান এখন দশ হাজারে নেমেছে। নেসলে অবিশ্যি সেই প্রথম দিন থেকে এখনও মেলা শুরু আর শেষের দিনে সকলের জন্য অকাতরে কফি দিয়ে যায়!
মাঝে-মধ্যে ক্লান্তি লাগে, আর কত ভিখিরিপনা করব! দশটা দিনের জন্য তিন মাস ধরে কত কষ্ট। দিল্লি যাও, একে ধরো, তাকে দিয়ে বলাও। তার পর প্রচার। আগে নিজে নানা দলকে, নানা জনকে চিঠি পাঠাতাম। অনেকে দু’লাইন উত্তরও দেন না। তাই কয়েক বছর ধরে আমরা টুকটাক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছিলাম। এ বার আরও বড় করে করা হয়েছে।
এখন পিছু ফিরে দেখলে মনে হয়, অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হলেও আমাদের চেষ্টাটা খারাপ ছিল না। এক বার আমার স্ত্রী স্বাতীলেখা নিজে দাঁড়িয়ে অ্যাকাডেমির টয়লেট সাফ করালেন। বেলফুল, জুঁইফুলের মালা কিনে আনলেন। প্রত্যেক দিন গ্রিনরুমের আয়নাগুলোয় মালা দেওয়া থাকত। অতিথি অভিনেতারা সেগুলো নিয়ে চলে যেতেন। তাঁদের জন্যই তো রাখা। পরের দিন আবার লাগানো হত। আমরা নিজেরা অন্য জায়গায় থিয়েটার করতে গেলে যা পেলে খুশি হব, একটু ভাল টয়লেট, একটু পেট ভরা খাবার, সেটা দেওয়া।
এই কাজটা সরকারের করার কথা ছিল। একটা ফেস্টিভ্যাল তখনই সত্যি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে, যদি প্রথম দিনে যিনি নাটক করছেন তিনি শেষ দিন অবধি থেকে অন্যদের কাজ দেখতে পারেন। কিন্তু উৎসবগুলোয় নাট্যদলকে যত পরে হয় এনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদায় করার ব্যবস্থা। রাখলেই তো খরচ! কী করে মত বিনিময় হবে? সরকারই এটা করতে পারত, তাদের টাকার অভাব নেই। কিন্তু থিয়েটারের যে সম্মান প্রাপ্য ছিল, মানুষ কিছুটা দিলেও সমাজ চালকেরা তা দিলেন না।
দীর্ঘ ৩৪ বছরের সালতামামি। তবে অনুরোধ একটাই। পুরনো জেনে আধেক আঁখির কোণে চাইবেন না।
অনুলিখন: সোমেশ ভট্টাচার্য
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy