Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প

মুখোশ

কলেজের পর ও যখন এসে কফিশপে ঢুকল, তখন দেখতে পেল দীপ্তি আগে থেকেই একটা কোণের টেবিল দখল করে রয়েছে। চেহারা ভারী। তবু দীপ্তির রূপের ছটায় জায়গা যেন আলো হয়ে আছে।

সিজার বাগচী
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:৩০
Share: Save:

আজ আবার ফেসবুকে নিজের ছবি পোস্ট করেছে দীপ্তি। তবে এ বারের ছবি আগের ছবিগুলোকে ছাপিয়ে গিয়েছে। আজকের ছবিতে দীপ্তি একটা ফিনফিনে নাইটি পরে দাঁড়িয়ে। বুকের বিভাজিকার অনেকটাই স্পষ্ট। চোখে, ঠোঁটে আদিম ইশারা। ছবির ক্যাপশনে লেখা, আগ্নেয়গিরি।

রাতে ফেসবুক খুলেই দীপ্তির ছবিটা দেখতে পেল অজপা। আর দেখতে পেয়েই ওর মাথাটা হঠাৎ বেশ গরম হয়ে উঠল। শুধু ছবি নয়, অজপা দেখতে পেল সেই ছবির নীচে দেড় হাজারের কাছাকাছি লাইক। মন্তব্যের থ্রেডও প্রায় এক মাইল লম্বা। বেশির ভাগ মন্তব্যই ছেলেদের করা। অচেনা পুরুষদের করা সেই সব মন্তব্য পড়তে-পড়তে অজপারই কান-মাথা ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল। দীপ্তির কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? না হলে এই ধরনের ছবি কেন পোস্ট করছে? এমন ছবি পোস্ট করার আগে ওর কি এক বারও খেয়াল হচ্ছে না যে ছেলের বয়স দশ পেরিয়ে এগারো হতে চলেছে? আর ছেলেটা যা পাকা হয়েছে তাতে ঋজুর যে কোনও ফেক প্রোফাইল ফেসবুকে নেই, তাই বা কে বলতে পারে! সুব্রতদাই বা কী ভাবে মেনে নিচ্ছে স্ত্রী-র এমন ছবি পোস্ট করাকে?

চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল অজপা। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অজপা এক বার ল্যাপটপের ঘড়ির দিকে তাকাল। এখন রাত সাড়ে বারোটা। বাইপাসের ধারে ওদের এই ফ্ল্যাটটা দশতলার উপরে। এই ফ্ল্যাটের জানালায় দাঁড়ালে মাটির চেয়ে আকাশকে কাছাকাছি মনে হয়। সেই আকাশে এখন থরে-থরে মেঘ। খানিক আগে বৃষ্টি হয়েছে। জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালে ভিজে হাওয়া ঝাপটা মারছে। তবু অজপা ঠায় তাকিয়ে থাকল বাইরের দিকে।

হিমাদ্রি আর তিতলি ঘুমিয়ে পড়ার পর অজপা সাধারণত নিজের কাজ নিয়ে বসে। মা’কে পেলে তিতলি কিছুতেই ছাড়তে চায় না। সারা দিনই তো মা বাইরে থাকে। অতএব তিতলি জেগে থাকা অবস্থায় অজপাকে কলেজ কিংবা সেমিনারের কোনও কাজ করতে দেয় না। অজপা এই ধরনের সব কাজ মধ্যরাতে নিয়ে বসে। আজও তাই বসেছিল। ভেবেছিল, কলেজের দুটো নোট তৈরি করে ফেলবে।

কাজে বসার আগে মাথা হালকা করার জন্য এক বার ফেসবুক খুলেছিল। আর খুলেই দীপ্তির ছবি দেখে মাথা তো হালকা হলই না, উলটে সব তালগোল পাকিয়ে গেল। অজপা বুঝতে পারল, এই পরিস্থিতিতে নোটস লেখায় আর মন দেওয়া সম্ভব নয়। তা হলে কি শুয়ে পড়বে? কিন্তু অজপা জানে, শুলেও ঘুম আসবে না। মাথার ভিতর কেবলই দীপ্তির ছবি এবং তার নীচে করা বিভিন্ন বয়সি পুরুষদের মন্তব্যগুলোও টেনিস বলের মতো ড্রপ খাবে।

কেন এমন করছে দীপ্তি? কম দিন তো ওকে চেনে না অজপা! সেই কলেজে পড়ার সময় থেকে। অনেক বন্ধুর ভিড়ে কী ভাবে যেন দুজনের বন্ধুত্ব একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল। অথচ আপাতভাবে দেখলে দুজনের মানসিকতা একেবারে আলাদা। অজপারা থাকত টালিগঞ্জে। দীপ্তিরা থাকত হাজরায়। অজপাদের নিজস্ব দোতলা বাড়ি। দাদুর করা। দীপ্তিরা থাকত ভাড়াবাড়িতে।

অজপা চিরদিনই লেখাপড়ায় তুখড়। জীবনে ক’বার পরীক্ষায় সেকেন্ড হয়েছে হাতে গুনে বলে দিতে পারবে। চেহারা চলনসই। রোগাও নয় মোটাও নয় গোছের। গায়ের রং মাঝারি। স্কুলে থাকতে বাপ্পা নামে একটা ছেলের সঙ্গে প্রেম ছিল। সেই প্রেম উচ্চমাধ্যমিকের পর কেটে যায়। কলেজে কিছু দিন এক ব্যাচ সিনিয়র অরিজিতের সঙ্গে খুচরো সম্পর্ক হয়েছিল ওর। তার পর তো বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হিমাদ্রির সঙ্গে পরিচয়। এবং প্রায় আট বছর পর বিয়ে। হিমাদ্রি আর ও যেহেতু ব্যাচমেট, তাই ওদের থিতু হতে বেশ কয়েক বছর লেগে গিয়েছিল।

অন্য দিকে দীপ্তির জীবন ছিল একেবারেই উল্টো। দীপ্তি ছিল মারকাটারি সুন্দরী। কিন্তু খুবই রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। যে মেয়েরা কোনও দিন ছেলেদের সঙ্গে পার্কে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারে না। দীপ্তিও তাই প্রেম করার কথা ভাবত না। তবু দীপ্তির রূপের টানে প্রচুর ছেলে ওর চারপাশে মাছির মতো ভনভন করত। ও কাউকে পাত্তা দেয়নি। তবে রূপের জোর থাকলেও দীপ্তি চিরদিনই পড়াশোনায় একেবারে সাদামাটা। যাকে বলে টেনেটুনে পাশ করা টাইপের। তাতে অবশ্য দীপ্তিকে কোনও দিন অসুবিধেয় পড়তে হয়নি। অত রূপ থাকলে মেধা না থাকলেও কিছু এসে-যায় না।

দীপ্তির জীবনেও তা-ই হয়েছিল। সুব্রতদার মতো অমন বনেদি পরিবারের আইআইটি পাশ করা ঝকঝকে ছেলে যে দীপ্তিকে দেখতে এসে এক বারেই পছন্দ করেছিল, তার পিছনেও ছিল ওই রূপ। দীপ্তির বিয়েও হয়েছিল খুব তাড়াতাড়ি। বিএ পাশ করার পর পরই প্রায়।

দীপ্তির সেই রূপ এখনও পুরোপুরি টাল খায়নি। তবে ধার কমেছে। ঋজু হওয়ার পর থেকে দীপ্তি সামান্য মুটিয়েছে। তার ফলে এখন আর আগের মতো সব জামাকাপড়ে দীপ্তিকে মানাচ্ছে না।

অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে অজপা নিজের মনে কবুল করল, ওই মোটা হয়ে যাওয়া চেহারার জন্যই দীপ্তির ছবিটা ওর কাছে এতটা অশ্লীল লেগেছে।

কিন্তু দীপ্তি মেয়েটা এমনিতে খুব ভাল মনের। কলেজের আর কোনও বন্ধুর সঙ্গেই অজপার যোগাযোগ নেই। রয়েছে শুধু দীপ্তির সঙ্গে। সেটাও অনেকটা দীপ্তির জন্যই। না হলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এত দৌড়ঝাঁপ করার পর আর কারও সঙ্গে আলাদা করে যোগাযোগ রাখার মতো মানসিকতা থাকে না। অজপা এখন অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। দীপ্তিই প্রতি সপ্তাহে ফোন করে। দেখা করতে বলে। অজপা নানা ছুতোয় এড়িয়ে যায়।

কিন্তু এই গভীর রাতে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে অজপার হঠাৎ মনে হল, দীপ্তির সঙ্গে এক বার দেখা করা দরকার। কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। দীপ্তি আবার প্রেমে পড়েনি তো?

******

তারাতলার এই কফিশপটা অজপা আগে চিনত না। চেনাল দীপ্তিই। কলেজের পর ও যখন এসে কফিশপে ঢুকল, তখন দেখতে পেল দীপ্তি আগে থেকেই একটা কোণের টেবিল দখল করে রয়েছে। চেহারা ভারী। তবু দীপ্তির রূপের ছটায় জায়গা যেন আলো হয়ে আছে। হঠাৎ নিজের দিকে তাকিয়ে খানিক সঙ্কুচিত হয়ে পড়ল অজপা। আজকের শাড়িটাও তেমন ভাল না। কাল রাতে চুলে তেল দেওয়া হয়নি। ফলে খানিকটা উসকোখুসকো। বডি স্প্রের গন্ধ যেন দূর অতীতের স্মৃতি। তার উপর কাঁধে ঢাউস ব্যাগ। সেখান থেকে একটা ছাতার ডাঁটি বেরিয়ে আছে। অজপার মনে হল, আজ অন্তত একটু সাজগোজ করা উচিত ছিল। দীপ্তির পাশে ওকে একেবারেই মানাচ্ছে না।

গত পরশু রাতে ওই ছবি দেখার পর গত কালই ও ফোন করেছিল দীপ্তিকে। তখন এখানে দেখা করার কথা ঠিক হয়।

অজপাকে দেখে দীপ্তি হাত নাড়ল। অজপা হাসিমুখে ওই টেবিলের কাছে পৌঁছতে দীপ্তি হইহই গলায় বলে উঠল, “তুই কিন্তু রোগা হয়েছিস!”

“হব না? ঘরে এক পিস যা আছে!”

“ওভাবে বলিস না। ঋজুও ভারী ডানপিটে ছেলে ছিল। আমারও তখন নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল। তোদের সুব্রতদা তো দিনরাত অফিস নিয়ে পড়ে আছে। সব সামলাতে হতো আমাকে।”

অজপা এক বার বলতে গেল, ‘‘তুই তো কোনও দিন চাকরি করিসনি! করলে বুঝতি দু’দিক সামলানো কী ঝক্কির।’’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ও নিজেকে সামলে নিল।

দীপ্তি কফির অর্ডার দিল। বলল, “এদের প্রন কাটলেটটা ভারী চমৎকার। খাবি?”

অজপা মাথা নেড়ে সায় দিল।

দীপ্তি সেটার কথাও বলল অর্ডারে। তার পর ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই বেশ আছিস। চাকরি করছিস। মেয়ে সামলাচ্ছিস। নিজের ফ্ল্যাট করেছিস...”

“তুই যেন বানের জলে ভেসে গিয়েছিস!” অজপা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছল।

দীপ্তি হাসল। বলল, “সারা দিন বাড়িতে থাকতে-থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছি। তোকে কবে থেকে বলছি দেখা করার জন্য। এত দিনে তোর সময় হল।”

“কী করিস বাড়িতে?”

“বাড়ির কী কম কাজ রে? তোদের সুব্রতদা তো বাড়ির দিকে তাকায় না একেবারেই। ঋজুও বাবার মতো হয়েছে। স্কুল, টিউশন, গেমস আর বায়না। আজ এটা, কাল ওটা। এ দিকে শাশুড়িরও বয়স হয়েছে। তাঁকেও দেখেশুনে রাখতে হচ্ছে। তোর তো এ ব্যাপারে ঝাড়া হাত-পা। দুর্গাপুরে শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখাশোনার জন্য তোর দেওর রয়েছে। আমার কথা ভাব তো! এই এখন বাড়ি ফিরব। তার পর শুরু হবে দক্ষযজ্ঞ। এক দিকে শাশুড়ি, অন্য দিকে ছেলে।”

“আর সুব্রতদা?”

“ওর ফিরতে-ফিরতে রাত দশটা। ফিরেই স্নান করে ডিনার খাবে। তার পর আবার ল্যাপটপ খুলে বসবে।”

এই কথার ফাঁকে কফি আর প্রন কাটলেট এসে গেল। কাটলেটে কামড় দিয়ে অজপা বুঝল দীপ্তি ভুল বলেনি। কাটলেটটা খেতে সত্যিই চমৎকার।

দীপ্তি এ বার বলল, “আমার কথা তো হল। তোর কথা বল! তোর দেখাই পাওয়া যায় না। এত কী কাজ করিস বল তো!”

অজপা খেতে খেতে হাসল। কোনও জবাব দিল না। ও জানে, যে জবাব দেবে সেটা দীপ্তি মানতে পারবে না।

অজপা বরং এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাল। বলল, “চলছে ভাই! একটা প্রেমিক খুঁজছি। হিমাদ্রিকে দিয়ে আর চলছে না। তোর সন্ধানে থাকলে জানাস। শুধু দেখিস মাথায় যেন টাক না থাকে!”

দীপ্তির মুখটা কেমন হয়ে গেল। ভুরু কুঁচকে ও বলল, “এ কথা কেন বলছিস? হিমাদ্রি কি প্রেম-ফেম...”

“জানি না ভাই। আমার একটা প্রেমিক দরকার। তোর মতো সেক্সি চেহারা হলে তো এত দিনে পেয়েই যেতাম। আমায় যা কাকতাড়ুয়ার মতো দেখতে হয়েছে!”

“ধুস,” দীপ্তি ম্লান হাসল, “আমি কি আর আগের আমি আছি! দেখ না কেমন মোটা হয়ে গিয়েছি। তোদের সুব্রতদা তো রোজই বলে, সকালে উঠে ছুটতে বেরোও। ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করো। কিছুই করা হয় না।”

“কিন্তু তুই ফেসবুকে যে সব ছবি দিচ্ছিস, তাতে তো দেখি হাজার-হাজার লাইক,” অজপা বলল।

দীপ্তির মুখে আগের আলো ফিরে এল। ও বলল, “হ্যাঁ, প্রচুর লাইক পাই। শুধু লাইক না রে, ইনবক্সে যে কত জন প্রেম জানায়, আজেবাজে কথা লেখে ভাবতে পারবি না।”

অজপা স্থিরভাবে দীপ্তিকে দেখল। তার পর পেপার ন্যাপকিন দিয়ে মুখ মুছে বলল, “তোর খারাপ লাগে না?”

দীপ্তি খানিক অবাক হল। বলল, “খারাপ লাগবে কেন? এত জন প্রশংসা করছে! এত জন লাইক দিচ্ছে!”

অজপা কোনও উত্তর দিল না। তাকিয়ে থাকল দীপ্তির দিকে। এই কি সেই কলেজের দীপ্তি?

দীপ্তি বোধহয় ধরতে পারল ব্যাপারটা। মুখ নিচু করল ও। বলল, “তোর খারাপ লেগেছে, তাই না? তুই কি এই জন্যই আজ হুট করে দেখা করতে চাইলি?”

অজপা তাও কিছু বলল না।

দীপ্তি খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে টেবিল থেকে পেপার ন্যাপকিন তুলে তা দিয়ে চোখ ঢাকল। অজপা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। কথাটা এত তাড়াতাড়ি বলা ঠিক হয়নি। কত দিন বাদে দেখা হয়েছে। আজ ফুরফুরে কথাই বলা উচিত ছিল। অজপা ‘সরি’ বলতে গেল।

কিন্তু অজপা কিছু বলার আগেই দীপ্তি বলল, “তুই আমায় ঠিকই ভাবছিস রে।”

“কী হয়েছে?” অজপা আলতো করে হাত রাখল দীপ্তির কাঁধে। আড়চোখে চারপাশ তাকাল। নাহ, কেউ দেখছে না ওদের।

দীপ্তি ততক্ষণে নিজেকে সামলেছে। চোখ মুছে মুখ তুলেছে। কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, “ছাড় সে সব কথা।”

অজপা এ বারও কিছু বলল না। দীপ্তির দিকে তাকিয়ে থাকল।

দীপ্তি সেই চাউনির সামনে বেশি ক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। একটু চুপ করে কফিতে চুমুক দিল। তার পর বলল, “তুই চিরদিন লেখাপড়ায় ভাল। ভাল চাকরি করছিস। আমার কী আছে বল তো? থাকার মধ্যে ছিল এক চেহারা। কিন্তু এক রসগোল্লা কত দিন আর মানুষের ভাল লাগে! তখন দেখা দেয় অন্য সমস্যা। তোদের সুব্রতদা দিনরাত বাইরে কাটাত। দিনের পর দিন বাড়ি ফিরত না। আমি পরিবার আগলে রাখতাম। নিজের জন্য কিছুই থাকত না। এ ভাবেই দিন কাটাতে কাটাতে এক দিন ফেসবুকে এলাম। এসে তোদের নতুন করে পেলাম। আর জানতে পারলাম, ওখানে আমার রূপের দাম এখনও বেশ চড়া। সব জড়তা কাটিয়ে একটু একটু করে ওই সব ছবি দিতে থাকলাম। লাফালাফি শুরু হল আমায় নিয়ে। প্রথমে অস্বস্তি হত। ভাবতাম, আমি কত নীচে নেমে গিয়েছি। কিন্তু এক দিন টের পেলাম, তোদের সুব্রতদা ওই সব মন্তব্য দেখতে দেখতে আমায় নতুন করে আবিষ্কার করেছে। এই যে ইনবক্সে এত জন নোংরা নোংরা ইঙ্গিত দিয়ে লেখে, সেটা দেখে তোদের সুব্রতদার ভারী গর্ব হয়। মানে এত জনের লালসার নারীটি রয়েছে তার দখলে। এবং সে-ই হল ওই নারীর একমাত্র মালিক। সত্যি বলতে ওই ফেসবুকের লাইকই আমাদের সম্পর্কের মাঝখানে আঠার কাজ করছে। তোদের সুব্রতদা এখন বাড়ি ফিরছে নিয়মিত...”

দীপ্তি আস্তে আস্তে বলতে থাকল। আর শুনতে শুনতে অজপা অনুভব করল, রাতের আকাশের অন্ধকার মেঘগুলো ওর চারপাশে ঘিরে ধরেছে। সেই অন্ধকারে সুব্রতদার মুখটা ভেসে উঠল।

******

এখন অনেক রাত। তিতলি ঘুমিয়ে পড়েছে। হিমাদ্রি কী সব খুচখাচ কাজ করছে ল্যাপটপে। অজপা আজও কাজ নিয়ে বসেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এসে দাঁড়িয়েছে জানালার ধারে। আকাশ এখনও মেঘলা। আচমকা পিছন থেকে হিমাদ্রির গলা শোনা গেল, “ঘুমোবে না?”

“যাচ্ছি,” আলতো করে বলল অজপা।

হিমাদ্রি আড়মোড়া ভাঙল। বলল, “আজ কি কোথাও গিয়েছিলে? দেরি হল!”

“দীপ্তির সঙ্গে দেখা করতে।’’

হিমাদ্রি হাসল। বলল, “দীপ্তি আজকাল কী সব ছবি দিচ্ছে ফেসবুকে!”

“দেখলে?” অজপা বলল।

হিমাদ্রি আবার হাসল। বলল, “দেখব না! দীপ্তি তো ফেসবুক সেনসেশন হয়ে গিয়েছে। তুমি কী সব পশুপাখির পোস্ট দাও! মাঝে মাঝে সেজেগুজে দু’একটা ছবি ফেসবুকে দিতে পারো তো!”

অজপা চমকে তাকাল হিমাদ্রির দিকে। হিমাদ্রি মিটিমিটি হাসছে। সেই হাসির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ খুব ভয় করে উঠল অজপার। হিমাদ্রিকে আর কিছুতেই দেখতে পাচ্ছে না ও। বরং তার জায়গায় সুব্রতদার মুখটা ভেসে উঠছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy