ছবি: পিয়ালী বালা
পূর্বানুবৃত্তি: টুইটির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে গল্প করতে থাকে টিটান। টুইটি জানায়, কালীপুজোর পরেই ওর দাদাইয়ের এনগেজমেন্ট। মা আংটি কিনে এনেছে, কিন্তু দাদাই আর একটি মেয়েকে ভালবাসে, বলতে পারছে না। শপিং মলের ক্যাশের লাইনে সোমনাথের সঙ্গে দেখা হয় মলয়ের। মলয়ের ভায়রা নীহার সরখেলের বাড়িতে একটা জরুরি মিটিং আছে, কেনাকাটা শেষে সেখানে মলয়কে আসতে বলেন সোমনাথ।
সেবন্তী রেগে গিয়ে বলে উঠল, ‘‘উফ! আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। কখন তোমাকে বলেছিলাম লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে! তোমাকে দিয়ে কি একটা কাজ হয় না? এসো! লাইনটা দাও!’’
মলয় ট্রলির হ্যান্ডেলটা ধরে লাইনের দিকে মুখটা ঘুরিয়ে বলল, ‘‘দিদিভাই কিছু বলল তোমাকে?’’
‘‘কী ব্যাপারে?’’
‘‘নীহারদার বাড়িতে একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে। সেটা নিয়েই তো কথা হচ্ছিল। আমাকে তো খুব ধরেছে। ছাড়ছেই না। যেতেই হবে। যতই না না বলি, অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি করেই ছাড়বে আমাকে। কী মুশকিল বলো তো! তা তোমাদের মধ্যে ব্যাপারটা যখন মিটেই গেল, চলো, বাড়িতে জিনিসগুলো রেখে একসঙ্গে এক বার নীহারদার বাড়ি ঘুরেই আসি।’’
সেবন্তী সোমনাথের ওপর একটা জ্বলন্ত চাহনি বুলিয়ে বলল, ‘‘কোত্থাও যাবে না তুমি। তোমাকে জিজুবাবু এক বারও বলেছে? যে কেউ তু-তু করে ডাকবে আর তুমি ল্যাজ দুলিয়ে দুলিয়ে যাবে? আমি বাড়ি চললাম। সব জিনিস ঠিকঠাক বিল করিয়ে সোজা বাড়ি চলে আসবে।’’
সেবন্তী চলে যেতে লম্বা একটা শ্বাস নিল মলয়। দু’টোই গেল। মাখন-কোল্ড ড্রিংকের টাকাটা, অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারির পোস্টটাও। এই সর্পিল লাইন ইঞ্চি ইঞ্চি এগোতে একটা কাজই করা যেতে পারে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে মোবাইল ওয়ালেটটা আর এক বার রিচার্জ। ভাগ্যের চাকাটা ঘুরে যদি ১০০% ক্যাশব্যাকটা পাওয়া যায়।
মোবাইল আর ক্রেডিট কার্ড হাতে নিল মলয়। কিন্তু রিচার্জ করতে গিয়ে দেখল, আজ ভাগ্যের চাকাটাই ঘুরছে না। সোমনাথের সময় টুক করে হয়ে টাকা-ভরাটা হয়ে গিয়েছিল। আর এখন ফোনের স্ক্রিনে নেটওয়ার্কের চাকাটা ঘুরেই যাচ্ছে...
১১
গত সপ্তাহে শেখা গিটারের কর্ডদু’টো রৌনককে বাজিয়ে শুনিয়ে হৃষিতা জানতে চাইল, ‘‘কেমন হয়েছে?’’
রৌনক কাঁধ ঝাঁকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলল, ‘‘নট ব্যাড। গুড গোয়িং। কিন্তু অত আড়ষ্ট হয়ে নয়, আরও ফ্লুয়েন্টলি বাজাতে হবে। ট্যাবের ওপর আরও ওয়ার্কআউট করতে হবে।’’
হৃষিতা চোখ বড় বড় করল, ‘‘বাব্বাঃ! কী বিজ্ঞ মাস্টারমশাইদের মতো কমেন্ট করলে!’’
রৌনক হেসে ফেলল, ‘‘বলতে চাইছি, ডান হাতের আড়ষ্টতা আরও কাটাতে হবে, তাতে স্ট্রোকগুলো স্পষ্ট হবে।’’
‘‘উফ! তা হলে আর গুড গোয়িং কী হল! নখ ছোট করে কেটে ফেলেছি কিন্তু। আজ প্লিজ নতুন কয়েকটা কর্ড শেখাও! একই কর্ড, ট্যাব প্র্যাকটিস করতে করতে বোর হয়ে যাচ্ছি।’’
‘‘আচ্ছা, ভাবতে দাও। তত ক্ষণে চা করে আনি।’’
হৃষিতা কোল থেকে গিটারটা নামিয়ে রেখে বলল, ‘‘চলো। আজ আমিও তোমার সঙ্গে কিচেনে যাব। রোজ রোজ তুমি আমাকে গেস্টের মতো বসিয়ে রেখে চা করে আনবে, হবে না।’’
রৌনক আপত্তি করল না, ‘‘এস।’’
রৌনকের পিছন পিছন রান্নাঘরে এসে অবাক হয়ে গেল হৃষিতা। ঝকঝকে তকতকে রান্নাঘর, অথচ রান্না করার উপকরণ কিছুই প্রায় নেই। ছেলেটা একা থাকে। তা হলে খায় কী? হৃষিতার মুখ দেখে বুঝতে পারল রৌনক। চায়ের জল চাপিয়ে বলল, ‘‘ভাত করতে পারি, আলুসেদ্ধ করতে পারি, ডিমসেদ্ধ করতে পারি, দু’মিনিটের ইনস্ট্যান্ট নুড্লস করতে পারি। আজ সানডে লাঞ্চটা করে যাবে না কি আমার সঙ্গে?’’
কিচেন স্ল্যাবের ওপর উঠে বসে হৃষিতা বলল, ‘‘হেলদি ডায়েট। কিন্তু আজ আমার অন্য একটা এনগেজমেন্ট আছে। তবে সামনের কোনও একটা রবিবার আফটার দ্য মিউজিক ক্লাস, আমরা বাইরে লাঞ্চ করব। ট্রিট। আমার তরফ থেকে।’’
‘‘হঠাৎ? কিস খুশি মে?’’
‘‘ধরো গুরুদক্ষিণা।’’
রৌনকের মুখে খুশির আঁকিবুকিগুলো ফুটে উঠল। চা তৈরি করে মগে ঢালতে ঢালতে বলল, ‘‘ঠিক আছে। কিন্তু কোনও একটা রবিবার আফটার দ্য মিউজিক ক্লাস, আমার হেলদি ডায়েট তোমাকেও তা হলে খেতে হবে। বিস্কিট খাবে?’’
হৃষিতার প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে গেল। সেটা অনুকরণ করে বলল, ‘‘দ্যাট রিমাইন্ডস মি। তোমার মা বলেন, বিস্কিট ছাড়া চা খাওয়ালে অতিথির অপমান হয়। হাউ সুইট! বাই দি ওয়ে রৌনক, তোমার মা কবে আসবেন? আমার এক বার ওঁর সঙ্গে আলাপ করার খুব ইচ্ছে। উইকডেজে হলেও অসুবিধা নেই। রাতের দিকে আসব।’’
‘‘কেন বলো তো?’’
‘‘আসলে সেই একটা রবিবার তোমার পাশের আর ওপরের ফ্ল্যাটের লোকগুলো যা করল! ভীষণ নোংরা আর ছোট মনের ওরা। এগুলো নিয়ে এখন কাজের লোক পর্যন্ত চর্চা করছে। ফ্র্যাংকলি আই কেয়ার আ ড্যাম, কে কী বলল। বাট আই অ্যাম রিয়েলি কনসার্নড অ্যাবাউট ইয়োর মাদার। তুমি এখানে মোস্টলি একাই থাকো। ওঁর কানে এ সব গেলে হার্ট হতে পারেন। আমি নিজে ওঁকে বলতে চাই, আমি ওঁর গানের স্কুল ভেবেই এই ফ্ল্যাটে মিউজিক শিখতে এসেছিলাম। তার পর যখন দেখলাম তুমি গিটার শেখাও, মত পালটে তোমার কাছে গিটার শিখতে চেয়েছি। রবিবার রবিবার কয়েকটা ঘণ্টা ছাড়া তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয় না।’’
চুপ করে কিছু ক্ষণ মাথাটা নামিয়ে রেখে রৌনক বলল, ‘‘সে দিন আমারও খুব খারাপ লেগেছিল তোমার জন্য। যেটুকু প্রতিবাদ, তুমিই করেছিলে। আমি কিছু বলতে পারিনি। অ্যাকচুয়ালি অভিযোগটাও পুরোপুরি মিথ্যে নয়। মাঝরাতে আমি গানবাজনা...’’
হৃষিতা আলতো করে রৌনকের হাতের ওপর হাত রেখে বলল, ‘‘ও মা। সারা দিন স্টুডিয়োতে কাটাও, তুমি প্র্যাকটিস করবে কখন? আমি তো শিখতে গিয়ে বুঝতে পারছি, কত প্র্যাকটিস দরকার। নেভার মাইন্ড। বলতে দাও না যা খুশি! পাত্তা না দিলেই হল। তবে তোমার মা যেন ভুল না বোঝেন।’’
রৌনকও হৃষিতার হাতের ওপর হাত রাখল, ‘‘এখানে এসে এটাই বোধহয় আমার সবচেয়ে বড় পাওনা। তোমার মতো বন্ধু পাওয়া। জানো, রবিবার সকালের এই কয়েকটা ঘণ্টা ছাড়া এই ফ্ল্যাটটায় আমার এক মুহূর্তও থাকতে ইচ্ছে করে না।’’
হৃষিতা অবাক, ‘‘কেন?’’
একটু সময় নিল রৌনক, ‘‘আমার মা... মানে কী ভাবে বোঝাই তোমাকে... আমার মায়ের সঙ্গে আমার বাবা সম্পর্কের লোকটার বিয়েটা বৈধ নয়। লোকটার দ্বিতীয় বিয়ে আমার মা। নিজের মা’কে রক্ষিতা বলতে খুব খারাপ লাগে। লোকটার প্রচুর পয়সা। মা মুখ বুজে সব সহ্য করেছে। নিজে জীবনে কিছু পায়নি। খুব কষ্ট করে আমাকে মানুষ করেছে। কিন্তু মা এখন আমার অধিকারের জন্য লড়াই করছে। এই ফ্ল্যাটটা ওই লোকটার। মা’কে দিয়ে দেবে বলেছে। মা’র এক অদ্ভুত ধারণা, যত দিন না কাগজপত্রে সব হচ্ছে, এই ফ্ল্যাটটা ফাঁকা পড়ে থাকলে লোকটার বৈধ ছেলেমেয়েরা হয়তো...’’ রৌনক ম্লান হাসল, ‘‘এ ভাবে কি সম্পত্তি পাওয়া যায়? লোকটা ইচ্ছে করলে যে কোনও দিন আমাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দিতে পারে। সেটা আরও অপমানের। কিন্তু মা বোঝে না। সত্যি কথা বলব? শুধু মা’র মনের শান্তির জন্য এখানে আছি। স্টুডিয়ো থেকে ফিরে মা’র রান্না ছেড়ে রোজ ভাতে-ভাত ফুটিয়ে খেতে বা হোম ডেলিভারি আনাতে কার ভাল লাগে!’’
চায়ে চুমুক দিয়ে হৃষিতা কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল, ‘‘তা উনি এসে তোমার সঙ্গে থাকছেন না কেন?’
লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে রৌনক বলল, ‘‘মা খুব জেদি। যেটা ভাল মনে করে, তার বাইরে যায় না। আমিও কোনও দিন মা’কে জোর করিনি। সারা জীবন তো একা একাই অনেক যুদ্ধ করে গেল। একটা যুদ্ধে নাহয় আমি সৈনিক থাকি।’’
হৃষিতা চুপ করে শুনছিল। সত্যি, কত জনের জীবনে কত বিচিত্র গল্প থাকে। রৌনক চুপ করে আছে। ওর চোখদু’টোর দিকে তাকিয়ে বুকটা ভারী মনে হল হৃষিতার। ভারাক্রান্ত গলায় বলল, ‘‘তুমি একা নও রৌনক। আমরা প্রত্যেকে জীবনযুদ্ধে সমস্যার সমুদ্রের মাঝখানে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় একা ভেসে আছি। সময় সময় মনে হয় এই বুঝি নৌকাটা ডুবে গেল, কিন্তু কিছু অচেনা স্রোত নৌকাটাকে ঠিকই ভাসিয়ে রাখে।’’
‘‘মিউজিক এক অদ্ভুত ম্যাজিক, জানো! অনেক কিছু তোমাকে ভুলে থাকতে সাহায্য করবে। মনে যত দুঃখ হবে, যত সমস্যা হবে, তত জোরে জোরে গিটার বাজিয়ে গান করবে। দেখবে সব দুঃখ, সমস্যা ধুয়েমুছে যাচ্ছে,’’ রৌনক এ বার হাসল, ‘‘কি, আবার মাস্টারমশাইদের মতো জ্ঞান দিলাম?’’
‘‘হুম! তা খানিকটা দিলে। তবে তুমি যখন ওপ্ন আপ করলে, আমিও বলি। আমিও কিছু ভোলার জন্যই মিউজিক শিখতে একটা রবিবার এই ফ্ল্যাটটায় এসেছিলাম।’’ কিচেনের কাউন্টার স্ল্যাব থেকে লাফিয়ে নামল হৃষিতা। তার পর সিঙ্কে মগ দু’টো ধুতে ধুতে বলল, ‘‘চলো, আজকের লেস্নটা শিখিয়ে দাও। তার পর লাঞ্চে বেরব।’’
রৌনক মাথা ঝাঁকাল, ‘‘হ্যাঁ, চলো। জীবন তো দু’দিনের। কাল হম কহাঁ তুম কহাঁ। আমরা জমিয়ে মিউজিকটাই করি।’’
বসার ঘরে আবার গিটার নিয়ে দু’জনে মুখোমুখি। রৌনক বলল, ‘‘তুমি গিটার বাজিয়ে গান শিখতে চেয়েছিলে। আমিও তোমাকে বললাম, জোরে জোরে গিটার বাজিয়ে গান করতে। সেটাই করি আজ। আমার সঙ্গে একটা করে কর্ডের সঙ্গে একটা করে সুর লাগাও। নোটগুলো খেয়াল করো, এ-মেজর, জি, এফ, এ-মেজর।’’ লা...লা...লা...লা... গিটার বাজিয়ে সুরটা দেখিয়ে দিল রৌনক।় রৌনক যত সহজে দেখাল, হৃষিতার সেটা আয়ত্ত করতে বেশ কিছু ক্ষণ লাগল। একটা সময় রৌনক গিটার নামিয়ে রেখে বলল, ‘‘এটাই পরের রবিবার পর্যন্ত টাস্ক।’’
হৃষিতা মুখটা কপট গম্ভীর করে বলল, ‘‘টিচার হিসেবে তুমি কিন্তু খুব বাজে। ইন্টারেস্টিং কোনও টাস্ক দাও না! চারটে নোট লা লা লা লা করে এক হপ্তা প্র্যাকটিস করতে হবে?’’
রৌনক কাঁধ ঝাঁকাল, ‘‘তা হলে মাস্টারমশাইয়ের কপালে সেই কোনও একটা আগামী রবিবারে লাঞ্চটা আর নেই?’’
‘‘না নেই। তবে বন্ধুর কপালে আছে। যদি সে একটা মন ভাল করে দেওয়া গান শোনায়।’’
রৌনক আবার গিটার কোলে তুলে নিল। তার পর নিজের মনে তাল দিয়ে বাজিয়ে গাইতে শুরু করল, ‘‘ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর... এ-মেজর জি, রিমঝিম রিমঝিম, রুমঝুম রুমঝুম, কি স্টুডেন্ট, চলবে? ভেরি সিম্পল। লা লা লা লা’র বদলে রিমঝিম রিমঝিম, রুমঝুম রুমঝুম...’
হৃষিতা রৌনকের পেছনে এসে ওর কাঁধদুটো ধরে ঝুঁকে রৌনকের সুরে গলা মেলাল, ‘‘রিমঝিম রিমঝিম, রুমঝুম রুমঝুম, তার পর...’’
‘‘ভিগি ভিগি রুত মে, তুম হম হম তুম...’’
‘‘ভিগি ভিগি রুত মে...’’
‘‘তুম হম হম তুম... ও... চলতে হ্যায়... চলতে হ্যায়... নাইন্টিন ফর্টি-টু আ লাভ স্টোরি... পঞ্চমদার কী ক্রিয়েশন!’’
হৃষিতা একটা আপ্লুত মন নিয়ে বাইরে বারান্দার দিকে তাকিয়ে গুনগুন করতে থাকল, রিমঝিম রিমঝিম, রুমঝুম রুমঝুম... আর তখনই চোখে পড়ল, বাইরে আকাশ থেকে ঝরে ঝরে পড়ছে স্ফটিকের মত একটার পর একটা বুদ্বুদ।
১২
ক’দিন ধরেই বাড়িতে সাজ-সাজ রব। নতুন ফ্ল্যাট, শহরের নামকরা ইন্টিরিয়র ডেকরেটর ঢেলে সাজিয়েছে। কোন জায়গায় কোন জিনিসটা কী ভাবে থাকা উচিত, পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে। সেটা একটু নড়েচড়ে গেলেই আজ বাড়ি মাথায় করছেন অঞ্জলি।
মায়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙল অভিমন্যুর। ঘুম ভাঙতেই মনটা তেতো হয়ে গেল। মনে হল, সব শেষ। বাকি জীবনটা কী ভাবে চলবে, সেটা ঠিক হয়ে যাওয়ার আজই সেই রবিবার। কাল অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম আসেনি অভিমন্যুর। সারা রাত তোলপাড় হয়েছে বুকের ভেতরটা। অস্থির মনটা বারবার বলছিল, বিছানা ছেড়ে ওঠো। বাবা-মা’কে বলো এ সব বন্ধ করতে। ওরা না শুনলে বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে। চিরদিনের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেনি। সেই ছোটবেলা থেকে কিছুতেই শরীরটা আর মনের হাজার উসকানিতেও জেহাদি হয়ে উঠতে পারে না। এমনকী সব সময় মনে বয়ে নিয়ে চলেছে যে নয়নিকাকে, তাকেও তো কখনও বলে উঠতে পারেনি, ‘‘চলো নয়নিকা, আমরা সারা জীবন একসঙ্গে থাকি।’’ মুখের ওপর কে যেন একটা অদৃশ্য থাবা চেপে ধরে আছে।
বাড়িতে আজকে একটা পুজোর আয়োজনও করেছে মা। অভিমন্যু মনে মনে নাম দিয়েছে শিখণ্ডী পুজো। এই পুজোটা একটা উপলক্ষ মাত্র। আসল ব্যাপারটা হল, আজ ঋদ্ধিমা ওর বাবা-মা’র সঙ্গে আসবে। এত আয়োজনের মধ্যে অভিমন্যুর একটা ছোট্ট ভূমিকা আছে। ঋদ্ধিমার অনামিকায় মায়ের কিনে আনা হিরের আংটি পরিয়ে দিতে হবে। সাক্ষী থাকবে ছোটকাকা, পিসি, বড়মাসি, কাকি, পিসে, মেসো। তার ওপর শান্তির জল ছেটাবেন পুরুতমশাই।
ক্রমশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy