Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
আজ কপাল পুড়ল: মণিহারা-র

প্রিন্টিং মিসটেক

চেনা গল্প অচেনা মোচড়গোয়েন্দা পাঁচুগোপাল পাকড়াশির নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে। নানা রহস্যের কিনারা চেয়ে হাজির হচ্ছেন রইস ঘরের লোকেরা। একার পক্ষে সব দিক সামলানো সম্ভব নয়। তাই এক সহকারিণীও জোটাতে হয়েছে। নাম মিস বিষুবরেখা। যুবতী গদগদ ভঙ্গিতে মক্কেলদের ট্যাকল করছেন। নিশ্চিন্ত ডিটেকটিভ মাথা ঘামাচ্ছেন বিখ্যাত বড়লোক ফণিভূষণ সাহার সুন্দরী স্ত্রী মণিমালিকার অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে।

ছবি: সায়ন চক্রবর্তী

ছবি: সায়ন চক্রবর্তী

রানা সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৪ ০০:০৯
Share: Save:

গোয়েন্দা পাঁচুগোপাল পাকড়াশির নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে। নানা রহস্যের কিনারা চেয়ে হাজির হচ্ছেন রইস ঘরের লোকেরা। একার পক্ষে সব দিক সামলানো সম্ভব নয়। তাই এক সহকারিণীও জোটাতে হয়েছে। নাম মিস বিষুবরেখা। যুবতী গদগদ ভঙ্গিতে মক্কেলদের ট্যাকল করছেন। নিশ্চিন্ত ডিটেকটিভ মাথা ঘামাচ্ছেন বিখ্যাত বড়লোক ফণিভূষণ সাহার সুন্দরী স্ত্রী মণিমালিকার অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে।

ফণিভূষণের নিঃসন্তান কাকা দুর্গামোহন বিপুল বিষয়সম্পত্তি, মৃত্যুর আগেই ভাইপোর নামে লিখে গিয়েছিলেন। ফণিভূষণ আচমকাই এক সকালে ঘুম ভেঙে আবিষ্কার করেন, জ্যাঠার মৃত্যু ঘটেছে ও তিনি রাতারাতি বড়লোক বনে গিয়েছেন। সম্পত্তি প্রাপ্তির পরে চোখধাঁধানো সুন্দরী মণিমালিকাকে বিয়ে করেন। সকলেই মনে করতেন, স্ত্রীকে ফণিভূষণ দারুণ ভালবাসেন। তাঁকে ফণিভূষণ প্রচুর গয়না দিয়েছিলেন। মণিমালিকা গয়নাগুলোকে যখের ধনের মতই আগলাতেন। ফাঁক পেলেই সেগুলি পরে একা একা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছিল তাঁর একমাত্র শখ। প্রচুর গয়না ও ভোগ্যসামগ্রী দিলেও, ফণিভূষণ স্ত্রীকে সন্তান দিতে পারেননি। ডাক্তার-বদ্যি-তান্ত্রিক-গনতকার-তাগা-তাবিজ— সবই নিষ্ফল। শিহড় থানার এসআই সুপ্রকাশ মুখুটি, মণিমালিকার অন্তর্ধান রহস্যের ব্যর্থ তদন্ত করেছিলেন, তিনি এই ইতিহাস কেস ডায়েরিতে সংকলিত করায় পাঁচুগোপালের সুবিধা হচ্ছিল ঘটনাপরম্পরা বুঝতে।

যে রাতে মণিমালিকা নিখোঁজ হয়ে যান, সে রাতে ফণিভূষণ বাড়িতে ছিলেন না। কেস ডায়েরিতে এই তথ্যটা দেখেই নড়েচড়ে বসে ডিটেকটিভ হাঁক পাড়েন, বিষুবরেখা— কফি। বিষুবরেখা গজগজ করতে থাকেন, এই নিয়ে পর পর ২৪ কাপ কফি গিলেছে বুড়োটা। তাতেও যদি বুদ্ধি না খোলে তো অমন মাথা ডাস্টবিনে ফেলে দিলেই হয়। তবু গরম কফির কাপ ডিটেকটিভের সামনে ধরে বললেন, রাত দশটা বাজল। এ বার বাড়ি যাব। পাঁচুগোপাল বললেন, না, না! আজ রাতে তোমার কোথাও যাওয়া হবে না। রাতেই এই কেসটা সল্ভ করব। তোমাকে প্রচণ্ড দরকার!

কেস ডায়েরির পাতায় ফের মনোযোগ দিলেন ডিটেকটিভ। দেখলেন, লেখা রয়েছে, মণিমালিকার সঙ্গে নিখোঁজ হন তাঁর বাপের বাড়ির পাড়াতুতো দাদা মধুসূদন। তিনি ফণিভূষণের বাড়িতেই থাকতেন। ফণিভূষণ এজাহার দিয়েছিলেন, ব্যবসা-বিপর্যয়ের জেরে তাঁর কিছু টাকার দরকার হয়ে পড়ে। সেই টাকা জোগাড় করতে না পেরে তিনি এক বার, মাত্র এক বারই মিনমিন করে স্ত্রীকে বলেছিলেন, তোমার গয়নাগুলো যদি কিছু দিনের জন্য বাঁধা রেখে টাকা আনা যেত... সে রাতে মণিমালিকা তুলকালাম বাঁধান। সর্বাঙ্গে সমস্ত গয়না পরে তিনি স্বামীকে ষাঁড়ের গোবর, আঁটকুড়ো ইত্যাদি গালিবর্ষণে ধুইয়ে দেন। এক রাশ ঘুমের বড়ি দেখিয়ে বলেন, এই গয়নাগুলো আমার সন্তান। এদের যদি আমার শরীর থেকে, কোল থেকে কেড়ে নেবার চেষ্টা করো, আত্মঘাতী হব!

পরের দিনই ফণিভূষণ টাকার চেষ্টায় অন্যত্র চলে যান। ১০ দিন পরে ফিরে আসেন। ৫০ লক্ষ টাকার দরকার ছিল। সেটা তিনি জোগাড় না করলে পথে বসার উপক্রম। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পেরেছিল, দীর্ঘ দিন ধরে নিজের ইনকাম ট্যাক্স রিটানের্র্ ব্যবসায় মিথ্যে লোকসান দেখাচ্ছিলেন ফণিভূষণ। শেষে পালে বাঘ পড়ে। ইনকাম ট্যাক্সের হানাদারি ঠেকাতে, দফতরের অফিসারদের ঘুষ দিতেই ওই টাকা তাঁর দরকার ছিল। মধুসূদন-মণিমালিকার সঙ্গে সমস্ত গয়নাও উধাও হওয়ায় তিনি খুবই মুষড়ে পড়েছিলেন। পুলিশ তদন্তে নেমে মণিমালিকা বা মধুসূদনের খোঁজ পায়নি। তাদের মোবাইল ট্র্যাক করতে গিয়ে দেখা যায়, দুটিই বন্ধ। তদন্ত চলে প্রায় বছর খানেক। তার পরে ধামাচাপা পড়ে যায়। ইদানীং ফণিভূষণ প্রতি রাতেই সালংকারা স্ত্রীর কঙ্কালরূপ দেখছেন। টর্চ হাতে স্ত্রীকে খুঁজছেন রাতভর। পরিবারের বৃদ্ধ চাকর রামচরণ, ভাঙের আসরে গ্রামের চৌকিদারকে বলেছিল এ কথা। ‘পেয়েছি, পেয়েছি! অনুশোচনাই ভূত দেখাচ্ছে ফণিভূষণকে!’ লাফিয়ে উঠলেন ডিটেকটিভ।

গভীর রাতে গাড়ি দাবড়ে ছুটে গেলেন মুখুটির কাছে। তাঁর কোয়ার্টারেই মিস বিষুবরেখার বিশেষ কঙ্কালসজ্জা হল। ফণিভূষণের বাড়ির কোল ঘেঁষে নদী বয়ে গিয়েছিল। সে দিক দিয়ে ঢুকে পড়লেন তিন জন। সবার আগে ইমিটেশনের ঝলমলে, ভারী-ভারী গয়না ঝাঁকিয়ে মিস বিষুবরেখা ঝমঝম শব্দে হাঁটছেন, পিছনে হাতে উদ্যত-রিভলভার মুখুটি। সবার শেষে পাকড়াশি।

বেশি দূরে যেতে হল না। দেখা গেল, হাতে পাঁচ সেলের টর্চ আর পিস্তল নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে খোদ ফণিভূষণ। ভয়ে বিষুবরেখা দেওয়ালের গায়ে লেপটে গেলেন। কম্পিত, মরিয়া গলায় ফণিভূষণ বললেন, মণি, আমি তোমাকে খুঁজিনি। গয়নাগুলোকে খুঁজছিলাম। গয়নাগুলো দিতে চাইলে না বলেই তো মাথায় রক্ত উঠে গেল! তোমাকে মারলাম। বেচারা মধুসূদনকেও মারলাম, ওর ঘাড়ে তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দোষটা চাপাতে। মধুসূদনের লাশটা ভাসিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার লাশটা নদীতে ভারী পাথর অত বেঁধেছেঁদে ডোবানোর পরেও কোথায় ভেসে গেল, প্রতি দিন সেটা খোঁজারই চেষ্টা করছি। আজ তোমাকে ফের মেরে আমি গয়নাগুলো পাব!

ফণিভূষণ গুলি করার আগেই গর্জে উঠল মুখুটির রিভলভার। ফণিভূষণের হাত থেকে পিস্তল পড়ে গেল। হতচকিত হয়ে বললেন, কে! কে তোমরা? মুখুটি ফণিভূষণের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেওয়ার পরে ডিটেকটিভ বললেন, আপনাকে ফাঁসিকাঠে ঝোলানোর মতো যথেষ্ট প্রমাণই আমাদের হাতে রয়েছে। জোড়া খুন। তার পরে ফের খুনের চেষ্টা! জেনে রাখুন, ডিটেকটিভ পাঁচুগোপাল পাকড়াশি আপনাকে ভূতের আঁঁকশি দিয়েই ধরল।

ranasengupta57@gmail.com

অন্য বিষয়গুলি:

rana sengupta rana printing mistake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy