Ziggurat of Ur, an engineering achievement of Mesopotamia, which is more than 4000 year-old dgtl
Ziggurat of Ur
Ziggurat of Ur: লুকিয়ে বহু সম্পদ, গিজার পিরামিডের চেয়ে পুরনো এই স্থাপত্য রক্ষায় যুদ্ধবিমান রাখতেন সাদ্দাম
মেসোপটেমিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী ছিল উর। যে শহরের প্রাণকেন্দ্রে ছিল জিগুরাত নামের এক স্থাপত্য। বয়সের ভারে যা আজ ন্যুব্জ।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২২ ১৬:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
চার হাজার বছরেরও বেশি আগে মেসোপটেমীয় সভ্যতার কেন্দ্র ছিল অধুনা ইরাকের উর শহর। বস্তুত, সে সময় মেসোপটেমিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী ছিল ওর। যে শহরের প্রাণকেন্দ্রে ছিল জিগুরাত নামের এক স্থাপত্য। বয়সের ভারে যা আজ ন্যুব্জ। ক্ষয়ে পড়া এই স্থাপত্যটি মিশরের গিজার পিরামিডের থেকেও পুরনো।
০২২২
ইরাকের কুখ্যাত কারাগার আবু ঘ্রাইবের কাছে মরুভূমি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে জিগুরাতের ভেঙে পড়া অংশ। ইরাকের পাশাপাশি ইরানেও এর অংশবিশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও পিরামিডের মতো একটি সমতলের উপর গড়ে ওঠেনি এটি। বরং সিঁড়িওয়ালা কয়েকটি তলের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে জিগুরাত। পিরামিডের মতো এর ভিতরে কক্ষ নেই। বরং সিঁড়ি বেয়ে একেবারে উপরে উঠলে পাওয়া যাবে মন্দিরের মতো একটি অংশ।
০৩২২
মিশরে প্রথম পিরামিড গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৭৮০ শতকের কাছাকাছি সময়। তার প্রায় ৬৮০ বছর পর নির্মাণ শুরু হয়েছিল জিগুরাতের। তবে গিজার পিরামিডের থেকে এটি পুরনো। খ্রিস্টপূর্ব ২৬ শতকের গোড়ায় প্রায় ২৭ বছর ধরে গড়ে উঠেছিল গিজার পিরামিড।
০৪২২
মাদালেনা রুমর নামে আমেরিকার কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘জিগুরাত হল পবিত্র ভবন। প্রথমে এটি ছিল, একটি সিঁড়ির উপরে গড়ে ওঠা এক কক্ষবিশিষ্ট মন্দির। তবে সময়ের সঙ্গে এই সমতলের উপরে অনেকগুলি মন্দির গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়তে থাকে। আরও জটিল আকার নিতে থাকে এই স্থাপত্য। এক সময় এটি বহুতলে পরিণত হয়।’’
০৫২২
রুমরের দাবি, কৃত্রিম ভাবে সেচের কাজের ক্ষেত্রে মেসোপটেমিয়া ছিল অগ্রগণ্য। ইউফ্রেতিস নদীর জল কৃষিকাজে ব্যবহার করতে খাল কেটে এর প্রবাহকে নিয়ন্ত্রিত করতেন উর শহরের বাসিন্দারা।
০৬২২
রুমর আরও বলেন, ‘‘মেসোপটেমিয়ায় প্রতিটি শহরকেই দেবদেবীর বসবাসের স্থল হিসাবে দেখা হত। এমনকি, সেখানকার বাসিন্দারা বিশ্বাস করতেন যে দেবদেবীরাই ওই শহরগুলির গোড়াপত্তন করেছেন। তাঁরাই শহরের রক্ষাকর্তা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী।’’
০৭২২
কালের নিয়মে জিগুরাতের বহু অংশ হারিয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে একেবারে উপরের মন্দিরটি। তবে জিগুরাতের নীচের অংশটি আজও অক্ষত। জিগুরাতের আসল চেহারা কেমন ছিল, তা জানতে আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি হেরোদোতাসের মতো ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে বাইবেলের লিখিত অংশের উদাহরণও নেওয়া হয়েছে।
০৮২২
‘আ জিগুরাত অ্যান্ড দ্য মুন’ নামে গবেষণাপত্রের লেখিকা তথা প্রত্নতত্ত্ববিদ আমেলিয়া স্পারভিনা বলেন, ‘‘সমতলের উপর শিখরের মতো আকৃতি ছিল জিগরাতের। রোদে শুকোনো ইটের সারির উপরে যা গড়ে উঠেছে। সেগুলি আবার আগুনে পোড়ানো ইটের সারিতে ঢাকা ছিল। প্রায়শই এর বহিরঙ্গে নানা রং চাপানো হত।’’
০৯২২
জিগুরাতের অংশবিশেষ পরীক্ষার পর প্রত্নতত্ত্ববিদদের দাবি, দুই সারি বিশালাকার মাটির সিঁড়ির স্তরের উপরে একটি মন্দিরকে ধরে রাখত এই স্থাপত্য। জিগুরাতের সমতলকে ধরে রাখতে ৭২০,০০০টি কাদা-মাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছিল। এক-একটির ওজন ছিল ১৫ কেজি।
১০২২
দক্ষিণ-মধ্য মেসোপটেমিয়ার সুমেরিয়ান সভ্যতায় বর্ণিত চাঁদ এবং সূর্যের সময়চক্রের ছায়া দেখতে পাওয়া যায় জিগুরাতের স্থাপত্যে। এর চারটি কোণের প্রতিটি একটি কম্পাসের মতো এক-একটি দিককে চিহ্নিত করে। জিগুরাতের উপরের স্তরে একটি বিশাল আকারের সিঁড়ি রয়েছে যেটি পূর্ব দিকে মুখ করে তৈরি করা হয়েছে।
১১২২
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় যে খ্রিস্টপূর্ব ২১০০ শতকে উর নাম্মু সম্রাটের আমলে জিগুরাতের প্রথম ইটের গাঁথনি হয়েছিল। পরে উর নাম্মুর ছেলে সম্রাট শুলগির আমলে সে নির্মাণকাজ শেষ হয়। তত দিনে মেসোপটেমিয়ার রাজধানী হিসাবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে উর।
১২২২
দেশের মহামূল্যবান ইতিহাসের চিহ্নকে অক্ষত রাখতে জিগুরাতের সংস্কারে মন দিয়েছিলেন সাদ্দামও। সেটি ছিল গত শতকের আশির দশক।
১৩২২
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মরুভূমির রুক্ষতায় জিগুরাতের ক্ষয় শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রায় ৫৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলোনিয়ার সম্রাট নাবোনিদাসের আমলে জিগুরাতের সংস্কারকাজ শুরু হয়। তবে সে সময় তিনটির বদলে সাতটি সিঁড়ির সারি গড়েন সম্রাট নাবোনিদাস।
১৪২২
জিগুরাতের অংশবিশেষ যে এখনও তুলনামূলক ভাবে অক্ষত রয়েছে, তার পিছনে সুমেরীয় কারিগরদের উদ্ভাবনী ক্ষমতাও যথেষ্ট কৃতিত্ব দাবি করে। এর স্থাপত্যের অংশবিশেষ আজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি মূলত তিনটি কারণে।
১৫২২
প্রথমত, জিগুরাতের ভিতরে অবাধে বায়ু চলাচলে সুবন্দোবস্ত রয়েছে। যার জন্য এর অংশবিশেষের দশা ততটা বেহাল হয়নি। ভিতরে কাদামাটির ইট এবং বহিরঙ্গে রোদে পোড়া ইটের সারি— এ ভাবেই তৈরি এটি। ভিতরের কাদামাটির সারি আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। যার জেরে এই স্থাপত্য সহজেই ধ্বংসের মুখে চলে যেতে পারত। তবে বহিরঙ্গের দেওয়ালে অসংখ্য ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে সেই আর্দ্রতা দ্রুত উবে যায়। ফলে এই স্থাপত্যে দ্রুত ধ্বংসের মুখে যায়নি।
১৬২২
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে রুমর বলেন, ‘‘বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টির জেরে কাদামাটির অন্দরমহল নরম হয়ে যেতে পারত। এমনকি, শেষমেশ তা ধসেও যেত। তবে বহিরঙ্গের নির্মাণের জেরে তা হয়নি।’’
১৭২২
দ্বিতীয়ত, জিগুরাতের দেওয়াল কিছুটা হেলানো ভাবে নির্মিত। এতে এর দেওয়াল বেয়ে সহজেই জল নীচে চলে যায়। তা উপরের স্তরে জমে থাকে না। এর একটি অন্য ফায়দাও রয়েছে। দূর থেকে এই স্থাপত্যটিকে বড় আকারের দেখায়। যা শত্রুপক্ষের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।
১৮২২
তৃতীয়ত, একেবারে উপরের স্তরের মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে কাদামাটির ইট দিয়ে। যেগুলিকে আলকাতরা দিয়ে ‘গাঁথা’ হয়েছে। এর জেরেও ওই ইটের গাঁথনির মধ্যে দিয়ে বৃষ্টির জল ঢুকতে পারে না। ফলে অক্ষত থাকে ভিতরের স্তরটি।
১৯২২
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে সঙ্কটের মুখে পড়েছিল ওর শহরের অস্তিত্ব। ইউফ্রেতিস নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ায় শহরে জলসঙ্কট শুরু হয়েছিল। ফলে ধ্বংস হয়ে যায় শহরটি। কালের নিয়মে বালির তলায় চলে যায় জিগুরাত।
২০২২
১৮৫০ সালে জিগুরাতের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। তবে গত শতকের কুড়ির দশকে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যর লিয়োনার্ড উলির নেতৃত্বে এখানে খননকাজ শুরু হয়। সেই খননকাজে জিগুরাতের মাত্র ৩০ শতাংশ বার করা সম্ভব হয়েছিল।
২১২২
অনেকের মতে, এক সময় এই স্থাপত্যকে ‘ঢাল’ হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেন। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় এর কাছে তিনি দু’টি মিগ ফাইটার যুদ্ধবিমান রেখে দিয়েছিলেন। যাতে ঐতিহাসিক স্থান মনে করে এর উপর হামলা চালাতে না পারে আমেরিকা তথা অন্য বিদেশি শত্রুরা। যদিও ছোটখাটো ক্ষতির হাত থেকে একে বাঁচানো যায়নি।
২২২২
গত বছর থেকে এই স্থাপত্যকে ঘিরে পর্যটনের দ্বার খুলে দিয়েছে ইরাক সরকার। ধীরে ধীরে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে জিগরাটে। আইরিশ সাংবাদিক জ্যানেট নিউয়েনহ্যাম বলেন, ‘‘এই সুন্দর রংচঙে মন্দিরের উপরের অংশটি অনেক দিন আগেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তবে মরুভূমির মাঝে ছড়ানোছেটানো যে ছোট ছোট ঢিবিগুলি রয়েছে, সেগুলি যে এই মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, তা বেশ বোঝা যায়। নিঃসন্দেহে এখানে বহু অজানা খাজানা লুকিয়ে রয়েছে, যা এখনও খুঁজে বার করা হয়নি।’