Zheng Yi Sao most successful pirate in history dgtl
River Pirate
যৌনকর্মী থেকে জলদস্যু! নিজস্ব আইন, পাসপোর্ট ব্যবস্থা, সাগরের বুকে সাম্রাজ্য ছিল তাঁর
দস্যুবৃত্তিতে সাফল্যের নজির তৈরি করেছিলেন চেং ই সাও।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ১৭:৩৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
চেং ই সাও— সর্ব কালের এক জন সফল জলদস্যু। সর্ব কালের সফল কথাটাতে হয়তো একটু হোঁচট খাবেন, ভাবতে বসবেন এক জন জলদস্যুর জীবনে সাফল্যটা আসবে কী ভাবে? তা-ও আবার মহিলা! দস্যুবৃত্তিতে সাফল্যের নজির তৈরি করেছিলেন চেং ই সাও।
০২২০
একজন সাধারণ যৌনকর্মী থেকে উনিশ শতকে দক্ষিণ চিন সাগরের ত্রাস— জলদস্যু হিসাবে কার্যত সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলেন চেং ই সাও।
০৩২০
চিনা উপকূল এলাকা গংডং-এ ১৭৭৫ সালে জন্ম হয় চেং-এর। গৃহযুদ্ধ এবং চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠেন তিনি।
০৪২০
তীব্র আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে গংডং উপকূলবর্তী এলাকার মানুষরা বিভিন্ন বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়তেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল নারীপাচার।
০৫২০
জীবনধারণের জন্য সমুদ্রে ভাসমান যৌনপল্লিতে নাম লেখাতেন গংডং-এর মেয়েরা। ১৮০১ সালে তেমনই এক যৌনপল্লিতে নাম লেখান চেং।
০৬২০
নিজের ব্যবসাবুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম হন তিনি। সেই ভাসমান যৌনপল্লিতেই এক দিন হাজির হন সেই সময়কার কুখ্যাত জলদস্যু জেং শী জেং।
০৭২০
তিনি প্রেমে পড়ে যান চেং-এর। বিয়ের প্রস্তাব দেন তাঁকে। চেং-এর শর্ত ছিল তাঁকে বিয়ে করতে হলে অর্ধেক সম্পত্তির অংশীদার করতে হবে।
০৮২০
সেই শর্ত মেনে চেং-কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যান জেং। বিয়ের পর চেং পরিচিত হন জেং ই শাও হিসাবে। যার অর্থ হল জেং-এর স্ত্রী। জলদস্যু মহলে ওই নামেই পরিচয় হয় তাঁর।
০৯২০
সেই সময় দক্ষিণ চিন সাগরে ছোট ছোট জলদস্যুরাও তাদের নিজেদের মতো করে লুটতরাজ চালাত। স্বামীর সঙ্গে তাদের একত্রিত করার উদ্যোগ নেন চেং।
১০২০
জলদস্যুদের একটি মহাজোট তৈরি করেন চেং। সেই জোটে প্রায় ৭০ হাজার জলদস্যু শামিল হয়েছিল।
১১২০
সে সময় তাঁরা জেন বো শাই নামে এক বালককে শিক্ষানবিশ হিসাবে রাখেন। পরবর্তীকালে তাকে দত্তক নেন তাঁরা।
১২২০
১৮০৭ সালে চেং-এর স্বামী মারা যান। তখন থেকে জেং-এর জলদস্যু সাম্রজ্যের দায়িত্ব নেন এবং একা হাতে সব সামলাতে থাকেন।
১৩২০
সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য তিনি দত্তক ছেলেকে দায়িত্ব দেন তাঁর স্বামীর পুরনো বাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার। ছেলে যাতে কোনও ভাবে বিশ্বাসভঙ্গ করতে না পারে, তার জন্য ছেলেকে বিয়ে করে নেন।
১৪২০
তার পর তিনি মন দেন সাম্রাজ্য বিস্তারে। জলদস্যুদের জন্য নানা আইন-কানুন তৈরি করেন। কেউ যদি বিশ্বাসভঙ্গ বা চুরি করে তবে তার মাথা কেটে নেওয়ারও নিদান দেওয়া হয় ওই আইনে। অনুমতি না নিয়ে গরহাজির হলে কান কেটে নেওয়ার কথাও বলা হয় আইনে। সেই সময় গংডং-এ নুনের জাহাজের উপর হামলা শুরু করেন চেং। একটা সময় দেখা যায়, তাঁর দখলে চলে এসেছে ২৭০টি নুনের জাহাজ। নুন ব্যবসায়ীদের জন্য পাসপোর্ট ব্যবস্থাও চালু করে তিনি। যারা গংডং দিয়ে নুন অন্যত্র নিয়ে যাবেন তাদের চেং-এর থেকে পাসপোর্ট নিতে হবে।
১৫২০
কী সেই পাসপোর্ট ব্যবস্থা? জলদস্যুদের আক্রমণ বাঁচিয়ে নুন অন্যত্র নিয়ে যেতে গেলে টাকা দিয়ে পাসপোর্ট কিনতে হবে চিং-এর কাছ থেকে। ওই পাসপোর্ট দেখালে জলদস্যুরা আর আক্রমণ করবে না ওই জাহাজে। পরবর্তী কালে মাছ ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও এই নীতি প্রযোজ্য হয়। তাদেরও নিরাপদে চলাচলের জন্য পাসপোর্ট কিনতে হত চেং-এর কাছ থেকে।
১৬২০
কর আদায়ের জন্য গংডং এলাকায় একাধিক অফিস তৈরি করেন চেং। সেই অফিস থেকে কর আদায় করা হত সমুদ্রে নিরাপদে চলাচলের জন্য। কার্যত পাল্টা রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে শুরু করেছিলেন চেং।
১৭২০
যেহেতু খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের জন্য জলদস্যুরা গ্রামবাসীদের উপর নির্ভর করত, তাই চেং-এর স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, পাসপোর্ট নেওয়া গ্রামবাসীদের নৌকায় জলদস্যুরা হামলা চালালে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
১৮২০
চেং-এর নেতৃত্বে জলদস্যুদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে চিন সরকার সেই সময় ব্রিটিশ এবং পর্তুগিজ নৌসেনাকে সাহায্যের জন্য আবেদন জানায়। একাধিক লড়াইয়ের পরও চেং-কে হারানো যায়নি।
১৯২০
১৮১০ সালে শেষ পর্যন্ত সরকার উপযুক্ত পেনশনের প্রস্তাব দিয়ে চেং এবং তাঁর সঙ্গীদের এই পথ থেকে সরে আসতে আবেদন জানায়। সেই প্রস্তাব মেনে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা জলদস্যু বৃত্তির পথ থেকে সরে আসেন।
২০২০
এর পর দীর্ঘ দিন আর কোনও খোঁজ মেলেনি চেং-এর। ১৮২২ সালে দ্বিতীয় স্বামী মারা গেলে তিনি ফের গংডং-এ ফিরে আসেন এবং সেখানে তাঁর ছেলেকে মানুষ করতে থাকেন। শোনা যায় তিনি সেখানে একটি ক্যাসিনোও খোলেন। সেই ক্যাসিনো থেকেও বিপুল আয় করতেন তিনি। প্রচুর ধনসম্পত্তির মালকিন চেং মারা যান ৬৯ বছর বয়সে। আর সেখানেই শেষ হয় এক ‘সফল’ জলদস্যুর ইতিহাস।