World's largest dining table in Faluknama Palace in Hyderabad dgtl
World's Largest Dining Table
লম্বায় ৮০ ফুট, পরিবেশন করা হয় শাহি খাবার! দেশের কোথায় রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম ডাইনিং টেবিল?
কারুকার্য এবং নির্মাণের দিক থেকে যতই নজরকাড়া হোক না কেন, ফলকনামা প্রাসাদের অন্দরমহলে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়াদাওয়া করার অভিজ্ঞতা যে অনন্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সংবাদ সংস্থা
হায়দরাবাদশেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ১৪:১৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
খেতে কমবেশি সকলেই ভালবাসেন। তার পর যখন তালিকায় শাহি খাবারের ছড়াছড়ি, তখন তো আর কথাই নেই। তবে, এই শাহি খাবার যদি রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে নবাবি রেওয়াজে পরিবেশন করা হয়, তার থেকে অভিনব অভিজ্ঞতা আর দ্বিতীয়টি হবে কি? যদি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার সুযোগ মেলে? আর এই ‘খনির’ সন্ধান যদি ভারতের বুকেই মেলে! অবাক হচ্ছেন তো?
০২২০
১৮৯৩ সাল। হায়দরাবাদের ঠিক মাঝখানে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে এক রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদের চূড়া যেন আকাশের গায়ে চুমু এঁকে দিচ্ছে। প্রাসাদের গড়ন যেমন, তার নামও তেমন। ফলকনামা প্রাসাদ। ফলকনামা শব্দের অর্থ আকাশের মতো।
০৩২০
নবাব বিকার-উল-উমরা ১৮৯৩ সালে ফলকনামা প্রাসাদ তৈরি করেন। নবাব যখন ইউরোপ ঘুরতে গিয়েছিলেন তখন সেখানকার রাজপ্রাসাদগুলির আদলে ভারতেও একটি প্রাসাদ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।
০৪২০
ভারতে ফিরে এসে প্রাসাদের জন্য জায়গাও বেছে নিলেন বিকার-উল-উমরা। হায়দরাবাদ শহরের ঠিক মাঝখানে নির্মাণ করে ফেলেন ফলকনামা প্রাসাদ। সৌন্দর্যের দিক থেকে এই প্রাসাদ তাকলাগানো।
০৫২০
তবে, ফলকনামা প্রাসাদের মূল আকর্ষণ ভিন্ন। এই প্রাসাদের অন্দরমহলেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ডাইনিং টেবিল।
০৬২০
এই ডাইনিং টেবিল কারুকার্যের দিক থেকে যেমন অনন্য, ঠিক তেমনই তার আকারের জন্যও বিশ্বজোড়া নজির গড়েছে ফলকনামা প্রাসাদ।
০৭২০
ফলকনামা প্রাসাদের অন্দরে থাকা এই ডাইনিং টেবিলটি ৮০ ফুট লম্বা। টেবিলটি মোট সাতটি টুকরোয় বিভক্ত।
০৮২০
একসঙ্গে এই টেবিলে মোট ১০১ জন অতিথি বসতে পারেন। খাবার পরিবেশন করার জন্য ব্যবহার করা হয় শাহি থালাবাসন। প্রাসাদের নির্মাণের সময় নাকি রাজপরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে বসে খাওয়ার নিয়ম ছিল।
০৯২০
১০১ জন অতিথি একসঙ্গে বসলে তো কথাবার্তা বলার সমস্যা হতে পারে। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য এই টেবিলে বসার ব্যবস্থা এমন ভাবে করা হয়েছে যে, টেবিলের যে কোনও প্রান্তে বসে নিচু স্বরে কথা বললেও তা দূর প্রান্তের আসনে বসা ব্যক্তি শুনতে পাবেন।
১০২০
টেবিলের উপরে দেওয়াল থেকে ঝুলতে দেখা যায় নবাবি নকশা করা ঝাড়বাতি। ডাইনিং রুমের দেওয়ালে বিভিন্ন চিত্র আঁকা রয়েছে। সেই চিত্রগুলি যথেষ্ট অর্থবহ এবং খাবারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
১১২০
দেওয়ালের গায়ে আঁকা ওই চিত্রগুলিতে আঁকা রয়েছে এক একটি খাবারের ছবি। অর্থাৎ সারা ঘর জুড়ে এক একটি খাবারের চিত্র দিয়ে দেওয়ালের মধ্যেই অভিনব তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
১২২০
ইতিহাসবিদদের মতে, নবাবরা যখন খেতে বসতেন, তখন দেওয়ালের ওই আঁকাগুলির দিকে আঙুল দেখাতেন। নবাবের চিত্রের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ অনুযায়ী তাঁকে সেই খাবার পরিবেশন করা হত।
১৩২০
ফলকনামা প্রাসাদের ডাইনিং রুমে মানব পরিচালিত পাইপ অরগ্যান রয়েছে। ইতিহাসবিদেরা জানিয়েছেন যে, সারা বিশ্বে মানব পরিচালিত পাইপ অরগ্যান মাত্র দু’টি রয়েছে। তার মধ্যে একটি রয়েছে ফলকনামা প্রাসাদের অন্দরমহলে।
১৪২০
শুধু দীর্ঘতম ডাইনিং টেবিলই নয়, অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য ফলকনামা প্রাসাদের ভিতর রয়েছে একটি বিশাল গ্রন্থাগার।
১৫২০
নবাব বিকার-উল-উমরা যখন ইউরোপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন, তখন উইন্ডসর প্রাসাদের গ্রন্থাগার থেকে ঘুরে আসেন। উইন্ডসর প্রাসাদের গ্রন্থাগারটি দেখে তিনি এতই মুগ্ধ হন যে, অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ফলকনামা প্রাসাদে অনুরূপ একটি গ্রন্থাগার নির্মাণ করেন।
১৬২০
ফলকনামা প্রাসাদের গ্রন্থাগারে ৬ হাজার বই রাখা রয়েছে। এই গ্রন্থাগার যেন বইপ্রেমীদের কাছে বহুমূল্য খনির সমতুল্য। শোনা যায়, ১৮০১ সালে প্রকাশিত বহু বইও রয়েছে এখানে। যে নবাবেরা এই প্রাসাদে ঘুরতে এসেছিলেন, তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতাও কাগজেকলমে লিখে রেখে গিয়েছিলেন। সেই প্রাচীন নথিও সংগ্রহ করা রয়েছে গ্রন্থাগারের ভিতর।
১৭২০
গ্রন্থাগারের কাছেই একটি ঘরে রয়েছে বিলিয়ার্ড খেলার বন্দোবস্ত। নবাব বিকার-উল-উমরা যখন বাকিংহাংম প্রাসাদে ঘুরতে গিয়েছিলেন তখন বিশালাকার বিলিয়ার্ড টেবিল দেখেছিলেন। সেই অনুপ্রেরণায় তিনি ফলকনামা প্রাসাদের ভিতরেও হুবহু বাকিংহাম প্রাসাদের মতোই বিলিয়ার্ড খেলার বন্দোবস্ত করেন।
১৮২০
৩২ একর জমির উপর বানানো ফলকনামা প্রাসাদ নিজের শখে তৈরি করেছিলেন নবাব বিকার-উল-উমরা। সেই সময় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করে এই প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন তিনি। তখনকার দিনে ৪০ লক্ষ টাকা বর্তমানে কত কোটি টাকার সমান, তা কল্পনাতীত।
১৯২০
ফলকনামা প্রাসাদ তৈরি করার পর দেউলিয়া হয়ে যান নবাব বিকার-উল-উমরা। হায়দরাবাদের ষষ্ঠ নিজাম মির মেহবুব আলি খান যখন এই প্রাসাদে সময় কাটাতে আসেন তখন প্রাসাদের কারুকার্য দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। নবাবকে আর্থিক সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নিজাম।
২০২০
অধিকাংশের দাবি, ফলকনামা প্রাসাদ ভারতের সংসদ ভবনের চেয়েও প্রায় পাঁচ গুণ বড়। এই প্রাসাদ এক সময় অতিথিনিবাস হিসাবেও ব্যবহৃত হত। তবে, কারুকার্য এবং নির্মাণের দিক থেকে যতই নজরকাড়া হোক না কেন, ফলকনামা প্রাসাদের অন্দরমহলে বিশ্বের দীর্ঘতম ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়াদাওয়া করার অভিজ্ঞতা যে উল্লেখযোগ্য, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।