World Debt Report 2024 UNO express concern know the details
World Debt Report
ভুবনজোড়া ঋণের ফাঁদ! ধারবাকিতেই চলছে বিশ্বের বহু দেশ, রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে চাঞ্চল্য
বিশ্বব্যাপী বাড়ছে ঋণের বোঝা। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:২৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
পৃথিবীর ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে। যা নিয়ে এ বার উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রপু়ঞ্জ। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে উন্নত দেশগুলি মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়বে বলে জানিয়েছে এই আন্তর্জাতিক সংগঠন।
০২১৮
চলতি বছরের জুনে বিশ্বব্যাপী আমজনতার নেওয়া ঋণ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে এই ঋণের অঙ্ক বাড়তে বাড়তে ৯৭ লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে। ২০০০ সালে যা ছিল ১৭ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত আড়াই দশকে বিশ্বব্যাপী ঋণের পরিমাণ ৫ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। (এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ে ২০০০ সাল লেখার পরিবর্তে ২০২০ সাল লেখা হয়েছে। সেটি সংশোধন করা হল। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত।)
০৩১৮
রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে বলা হয়েছে, শেষ ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরকারি ঋণ। উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলি বেশি ঋণ নিয়েছে। এই ঋণের ৩০ শতাংশ ২০০০ সাল আসার আগেই ওই দেশগুলি নিয়েছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
০৪১৮
বিশ্বব্যাপী ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়া নিয়ে জি-২০ সম্মেলনে চলেছে বিস্তারিত আলোচনা। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট সমাধানসূত্র বার হয়নি। বেশ কয়েকটি উন্নত দেশের তরফে ঋণ দেওয়ার নীতিতে বদল আনার দাবি তোলা হয়েছে।
০৫১৮
বিশেষজ্ঞদের দাবি, উন্নয়নশীল দেশগুলি মূলত শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয় ঠেকাতে ঋণ নিয়ে থাকে। এই খাতে নেওয়া ঋণের এক-তৃতীয়াংশই বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
০৬১৮
বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলির জনসংখ্যা ৩৩০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই রাষ্ট্রগুলির প্রতি তিনটির মধ্যে একটি শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপুল টাকা খরচ করছে। এই খাতে তাদের খরচের পরিমাণ বার্ষিক সুদের চেয়ে অনেকটাই বেশি বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে।
০৭১৮
উন্নয়নশীল দেশগুলির নেওয়া ঋণের পরিমাণ শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই ২৯ লক্ষ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা বিশ্বব্যাপী নেওয়া মোট ঋণের ৩০ শতাংশ। ২০১০ সালে এই পরিমাণ ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল।
০৮১৮
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশের কর কাঠামো শক্তিশালী নয়। যার জেরে উন্নয়নমূলক কর্মসূচির জন্য সরকারের হাতে পর্যাপ্ত টাকা থাকছে না। ফলে ঋণের উপরেই সরকারকে নির্ভর করতে হচ্ছে।
০৯১৮
বিশ্বব্যাপী ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির দ্বিতীয় কারণ হল অর্থের অবমূল্যায়ন। বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি লেনদেনের মাধ্যম। কিন্তু আর্থিক মন্দা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন ও ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ডলারের দামে পতন দেখা গিয়েছে।
১০১৮
তৃতীয়ত, বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশই ডলারের থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। নিজেদের দেশের অর্থেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাঁরা। তালিকায় রয়েছে ভারত, রাশিয়া ও চিনের মতো শক্তিধর রাষ্ট্র। এর ফলেও ডলারের দাম দিন দিন কমছে।
১১১৮
রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী, আফ্রিকার দেশগুলি আমেরিকার চেয়ে গড়ে চার গুণ বেশি ও জার্মানির চেয়ে গড়ে আট গুণ বেশি হারে ঋণ নিয়ে থাকে। যা দেখে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেজ় বলেছেন, ‘‘ঋণের টাকাতেই উন্নয়নমূলক কাজ করতে পছন্দ করে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ। তাদের কাছে সরকারি অর্থ ও ঋণ সমার্থক।’’
১২১৮
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০১১ সালে উচ্চ হারে ঋণ নেওয়া দেশের সংখ্যা ছিল ২২। এই সংখ্যা ২০২২ সালে একলাফে বেড়ে ৫৯-এ পৌঁছে গিয়েছে। এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির নামই এ ক্ষেত্রে সবার আগে রয়েছে।
১৩১৮
উন্নয়নশীল দেশগুলি মূলত দু’টি জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। সেগুলি হল, মাল্টিল্যাটারাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কস ও আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার। এ ছাড়া আমেরিকার থেকেও ঋণ নেওয়ার প্রচলন রয়েছে।
১৪১৮
গত কয়েক বছরে ঋণদাতা দেশ হিসাবে চিনের নামও সামনে এসেছে। তবে বেজিংয়ের বিরুদ্ধে ঋণের জালে জড়িয়ে অন্য দেশের জমি দখল করার অভিযোগ রয়েছে। চিনের থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া দেশের তালিকায় নাম রয়েছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার।
১৫১৮
সাধারণত, বিমানবন্দর বা জলবন্দরের বিনিময়ে মোটা টাকা ঋণ দিয়ে থাকে চিন। টাকা শোধ করতে না পারলে সেই জায়গা কব্জা করে বেজিং। প্রয়োজন মতো সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের উপর চাপ তৈরির অভিযোগও রয়েছে ড্রাগনের বিরুদ্ধে।
১৬১৮
ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা কমাতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার উপর জোর দিয়েছে বেশ কিছু দেশ। উদাহরণ হিসাবে জ়াম্বিয়ার কথা বলা যেতে পারে। কোভিড অতিমারি চলাকালীন আফ্রিকার এই দেশটির ঋণখেলাপের পরিমাণ ছিল ১.৭৩ হাজার কোটি ডলার। যা পরিশোধ করতে দীর্ঘ আলোচনার পর ২০২৩ সালে পাওনাদারদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে জ়াম্বিয়া। তাতে ঋণের পরিমাণ অনেকটাই কমেছে বলে জানা গিয়েছে।
১৭১৮
আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার আবার জানিয়েছে, ঋণের ক্ষেত্রে ঘানার অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ২০১৯ সালে আফ্রিকার এই দেশটি জিডিপির ৬৩ শতাংশ ঋণ নিয়েছিল। যা ২০২২ সালে বেড়ে জিডিপির ৮৮ শতাংশ গিয়ে পৌঁছেছে।
১৮১৮
গত বছর বিশ্বব্যাপী ঋণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় ভারত, আমেরিকা-সহ জি২০ ভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশ। আর্থিক ভাবে দুর্বল দেশগুলিকে আর্থিক সাহায্য হিসাবে কিছু কিছু করে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এর সুবিধা আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি বেশি করে পাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।