Why Suchana Seth case catches eye of everyone, what is the reason behind it dgtl
Suchana Seth
মায়ের হাতে সন্তান ‘খুন’ আগেও হয়েছে, কেন নজর কাড়লেন সূচনা? কেনই বা এমন কাণ্ড ঘটান বাবা-মা?
গ্রিক পুরাণেও মায়ের হাতে সন্তানের খুনের নজির রয়েছে। মনে করা হয়, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার পর গ্রিক দেবী মেডিয়া নিজের দুই সন্তানকে খুন করেন। গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী, ওই ঘটনাতেও যথেষ্ট হইচই পড়ে গিয়েছিল।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
চার বছরের পুত্রসন্তানকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন বেঙ্গালুরুর স্টার্টআপ সংস্থার সিইও সূচনা শেঠ। যা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ১২ বছর ধরে ডেটা সায়েন্টিস্ট হিসাবে কর্মরত সূচনা পড়াশোনা করেছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে।
০২২০
সূচনা ‘দ্য মাইন্ডফুল এআই ল্যাব’ নামে বেঙ্গালুরুর এক স্টার্টআপের সিইও। লিঙ্কডইন প্রোফাইল অনুযায়ী, ডেটা সায়েন্টিস্ট হওয়ার পাশাপাশি তিনি এক জন এআই নীতিশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ।
০৩২০
ব্যবসায়িক হিসাবেও সূচনার সূচনা হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। এআই বা কৃত্রিম মেধা এথিক্সের ১০০ সেরা মহিলার তালিকাতেও নাম রয়েছে সূচনার। তাঁর বিরুদ্ধেই গত ৮ জানুয়ারি গোয়ার এক সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টে চার বছরের শিশুপুত্রকে খুনের অভিযোগ উঠেছে।
০৪২০
কিন্তু কেন এত আলোড়ন ফেলল সূচনা-কাণ্ড? এমনও না যে, সূচনার বিরুদ্ধেই বিশ্বে প্রথম নিজের কোলের সন্তানকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ তো আকছার শোনা যায়।
০৫২০
গ্রিক পুরাণেও মায়ের হাতে সন্তানের খুনের নজির রয়েছে। মনে করা হয়, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার পর গ্রিক দেবী মেডিয়া নিজের দুই সন্তানকে খুন করেন। গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী, ওই ঘটনাতেও যথেষ্ট হইচই পড়ে গিয়েছিল।
০৬২০
গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই মায়ের হাতে সন্তান খুনের কমপক্ষে হাফ ডজন অভিযোগ রয়েছে ভারতে। নিজের দু’বছর বয়সি সন্তানকে লিফ্ট থেকে ফেলে খুনের অভিযোগও উঠেছে। কই সে খবর নিয়ে তো এত হইচই, এত উত্তেজনা ছড়ায়নি! তা হলে সূচনা কেন?
০৭২০
অভিযোগ, গত ৭ জানুয়ারি গোয়ার এক সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টে নিজের পুত্রকে খুন করেন সূচনা। এর পর নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
০৮২০
সন্তানের দেহ নিয়ে ভাড়া গাড়িতে চড়ে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি।
০৯২০
২০১৯ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন সূচনা। ২০২০ সালে স্বামী বেঙ্কট রামনের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয় তাঁর। সেই সম্পর্কের ফাটল দিনে দিনে আরও বেড়েছিল। তার শেষ পরিণতি হয় বিবাহবিচ্ছেদ।
১০২০
সূচনা এবং বেঙ্কট বিবাহবিচ্ছেদের পথ বেছে নেন। কিন্তু পুত্র কার কাছে থাকবে তা নিয়েও একটা প্রশ্ন তৈরি হয়। কিন্তু আদালত সন্তানকে মায়ের হেফাজতে রাখারই অনুমতি দিয়েছিল। তবে প্রতি সপ্তাহে রবিবার বাবাকে পুত্রের সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে বলেও নির্দেশ দেয় আদালত।
১১২০
পুলিশ সূত্রে খবর, পুত্রকে নিজের কাছে রাখলেও একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকতেন সূচনা। এই বুঝি পুত্রকে নিজের হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করবেন বেঙ্কট! সেই আতঙ্ক ক্রমশ গ্রাস করেছিল সূচনাকে। পুত্রকে যদি নিজের কাছে না রাখতে পারেন, তা হলে কারও হতে দেবেন না, প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, এই ধারণাই কাজ করেছিল সূচনার মধ্যে। আর সেই চিন্তাভাবনা থেকেই কি খুন করলেন সন্তানকে? এখন পর্যন্ত পুলিশের অনুমান, তেমনটাই ছিল উদ্দেশ্য।
১২২০
আবার সূচনা তার পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন যে, সন্তানের মুখের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন স্বামীর মিল রয়েছে। যা তাঁকে তাঁর বিচ্ছিন্ন স্বামীর কথা মনে করিয়ে দিত। আর সেই কারণেও সূচনা এমন কাজ করে থাকতে পারেন বলে অনুমান পুলিশের।
১৩২০
এর আগে আরুষি তলোয়ার এবং শিনা বোরা হত্যাকাণ্ডতেও এ রকম হইচই পড়েছিল। সূচনার মতো আরুষি এবং শিনার বাবা-মাও ছিলেন শিক্ষিত এবং বিত্তশালী। সমাজে পরিচিতিও ছিল।
১৪২০
যে পরিবারে অভাব-অনটন নেই, অশিক্ষা নেই, সেই পরিবারে এমন অভিযোগ উঠতেই চোখ টাটিয়েছে আমজনতার। অন্তত এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৫২০
গত বছরের জুলাই থেকে যে এক ডজন মায়ের বিরুদ্ধে সন্তান খুনের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের কেউই তেমন বিত্তশালী নন। সমাজে সুপরিচিতিও নেই।
১৬২০
পত্রিকা ‘সাইকোলজি টুডে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাবা-মায়ের সন্তানকে খুনের নেপথ্যে পাঁচটি প্রধান কারণকে দায়ী করেছেন গবেষকরা।
১৭২০
গবেষকদের মতে, অনেক বাবা-মা মনে করেন সন্তানকে খুন করে তাঁরা সন্তানের কষ্ট লাঘব করছেন। কয়েক জন বাবা-মা আবার অযৌক্তিক কারণেও সন্তানকে খুন করেন বলে মনে করছেন গবেষকরা।
১৮২০
গবেষকরা মনে করছেন, সন্তানকে জীবনের বাধা হিসাবে দেখার কারণেও অনেক বাবা-মা সন্তানকে খুন করেন। আবার অনেক সময় বাবা-মা অনিচ্ছাকৃত ভাবেও সন্তানকে মেরে ফেলেন বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
১৯২০
তবে যেটিকে মূল কারণ হিসাবে গবেষকরা, তা হল, বিয়ে নিয়ে অশান্তি এবং বিচ্ছেদের জেরেও অনেক দম্পতি সন্তানদের খুন করেন। যেমনটা সূচনার ক্ষেত্রে হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০২০
একটি সমীক্ষা বলছে, ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের সন্তানকে খুনের ১২টি ঘটনা ঘটেছে। তবে সেই সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।