Why same temperature has different impact in different places dgtl
Temperature Impact
কোথাও ৪০ ডিগ্রিতেই মৃত্যু, কোথাও ৫০ ডিগ্রিও সহনীয়! স্থানবিশেষে একই তাপমাত্রার প্রভাব ভিন্ন হয় কেন?
নাতিশীতোষ্ণ কিংবা শীতপ্রধান দেশেও এ বছর গরম মাত্রা ছাড়িয়েছে। সময়ের অনেক আগেই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ে কড়া নেড়েছে গ্রীষ্মকাল।
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৩ ১৫:৪২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহেও বর্ষার দেখা নেই। তাপপ্রবাহে কাহিল গোটা বাংলা। এই বাড়াবাড়ি রকমের গরম, বৃষ্টির অভাবের নেপথ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নকেই দায়ী করা হচ্ছে। তবে শুধু বাংলা নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তে ছবিটা অনেকটা এক রকম।
০২১৮
ভারত গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। তর্কের খাতিরে হলেও এখানে তাপের প্রাবল্য মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, অনেক নাতিশীতোষ্ণ কিংবা শীতপ্রধান দেশেও এ বছর গরম মাত্রা ছাড়িয়েছে। সময়ের অনেক আগেই কড়া নেড়েছে গ্রীষ্মকাল।
০৩১৮
উদাহরণ হিসাবে বলা যায় স্পেনের কথা। ইউরোপীয় এই দেশটির আবহাওয়া বরাবরই মনোরম। গরমকালে মাদ্রিদের গড় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খুব বেশি হলেও কখনও ৩৫ ডিগ্রি ছাপিয়ে যায় না তাপমাত্রার পারদ। কিন্তু চলতি এপ্রিলে সব নজির ভেঙে গিয়েছে। স্পেনে গ্রীষ্ম প্রবেশের আগেই তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৩৮ ডিগ্রির গণ্ডি। ভরা গ্রীষ্মেও যা অস্বাভাবিক।
০৪১৮
এ বছর মূলত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাপপ্রবাহের দাপট দেখা গিয়েছে। ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ডের মতো দেশে সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (৪৪-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড করা হয়েছে।
০৫১৮
সিঙ্গাপুর থেকে চিন, ছবিটা সর্বত্রই সমান। এ বছরের গরম কোথাও আগের সব নজির ভেঙে দিয়েছে, কোথাও গ্রীষ্মকাল শুরুর আগেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের সীমা ছাপিয়ে গিয়েছে।
০৬১৮
রাজস্থানের থর মরুভূমিতে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বরাবরই বেশি থাকে। গ্রীষ্মকালে সেখানে গড় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও প্রায়ই তা ছাপিয়ে যায় ৪০ ডিগ্রির গণ্ডি। ২০১৬ সালে থরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নজির গড়েছিল। পারদ উঠেছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
০৭১৮
পরিসংখ্যান বলছে, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কিন্তু ৫১ হোক বা ৫৮, কোনও ক্ষেত্রেই তেমন প্রাণহানির নজির নেই।
০৮১৮
অথচ, এই তীব্র গরম কলকাতা কিংবা দিল্লিতে অনায়াসে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু। পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক দিনের তাপপ্রবাহে ৪১ বা ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেই একাধিক মৃত্যুর খবর এসেছে।
০৯১৮
মরুভূমি আর সমতলে তাপের এমন তারতম্য কেন? কেন রাজস্থানে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহনীয়, কিন্তু বাংলায় নয়? নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞানের কিছু অকাট্য যুক্তি।
১০১৮
কোন অবস্থানে তাপের কেমন প্রভাব পড়বে, তা নির্ভর করে একাধিক বিষয়ের উপর। আর্দ্রতা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।
১১১৮
মানুষের শরীর তাপ পায় মূলত সূর্য থেকে। এ ছাড়া শরীরের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়, শারীরিক ক্রিয়া থেকে তাপ উৎপন্ন হয়ে থাকে।
১২১৮
শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বাইরে বার করে দেওয়াও প্রয়োজন। ঘামের মাধ্যমে যে কাজ সম্পূর্ণ হয়। ঘাম বাতাসে মিশে গিয়ে শরীর ঠান্ডা করে।
১৩১৮
কিন্তু বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বাষ্পীভূত হতে পারে না। কারণ অধিক আর্দ্রতার অর্থ হল, বাতাসে আগে থেকেই জলীয় বাষ্প ভরপুর। তাই আর্দ্রতার কারণে অধিক তাপমাত্রায় মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হয়।
১৪১৮
ঘাম শরীর থেকে সমস্ত শক্তি শুষে নেয়। এর ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে তাপের কারণে মৃত্যুর অন্যতম কারণ এটাই। সম্প্রতি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাপের এই প্রাণঘাতী প্রভাব দেখা গিয়েছে।
১৫১৮
অন্য দিকে, মরুভূমি বা অপেক্ষাকৃত শুষ্ক এলাকার বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক কম থাকে। মরুভূমির বাতাসে জলীয় বাষ্প প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই সেখানে তাপমাত্রার পারদ চড়লেও বাসিন্দাদের শরীরে ঘাম হয় কম। শুকনো গরমে সমস্যা হয় ঠিকই, কিন্তু তা থেকে মৃত্যুর নজির কম।
১৬১৮
মরুভূমি সংলগ্ন এলাকায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের শরীর উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করার জন্য প্রস্তুত হয়েই থাকে। বছরের বেশির ভাগ সময়েই তাঁদের সঙ্গী খটখটে রোদ আর তীব্র গরম। শরীর তার জন্য প্রস্তুত থাকে।
১৭১৮
নিরক্ষীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের শরীরে তাপ সহনের ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে ইদানীং বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা অতীতের নজির ছাপিয়ে যাচ্ছে। ফলে আকস্মিক আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের।
১৮১৮
মরুভূমিতে যে তাপ সহ্য করে দিব্যি দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়, আর্দ্রতার কারণে অন্যান্য অঞ্চলে ওই একই তাপমাত্রা হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী।