Why same sex marriage has not been legalized by Supreme Court what the judges said dgtl
Same Sex Marriage Verdict
কেন স্বীকৃতি পেল না সমলিঙ্গ বিবাহ? সুপ্রিম কোর্টে কোন বিচারপতি কী যুক্তি দিলেন?
সমলিঙ্গে বিয়ে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দেয়, সে দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। বিয়ের আইনি স্বীকৃতি না দিলেও সমলিঙ্গ সম্পর্ককে স্বীকার করেছে শীর্ষ আদালত।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সমলিঙ্গে বিয়েতে আইনি স্বীকৃতি দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তারা এ বিষয়ে কেন্দ্রকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। আইনসভাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করতে পারে বলে জানিয়েছেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা।
০২২০
সমলিঙ্গে বিয়ে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দেয়, সে দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। বিয়ের আইনি স্বীকৃতি না দিলেও সমলিঙ্গ সম্পর্ককে স্বীকার করেছে শীর্ষ আদালত। এই সম্পর্কে যাঁরা থাকেন, তাঁদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
০৩২০
২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৭ ধারায় সমকামিতাকে ‘অপরাধ’-এর তকমা থেকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু দৈনন্দিন অপমান থেকে তাঁদের মুক্তি মেলেনি। নানা জায়গায় বিভিন্ন সময়ে সমকামীদের উপর নির্যাতন এবং আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে।
০৪২০
গত বছরের ২৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দুই সমকামী যুগলের দায়ের করা দু’টি মামলা সম্পর্কে অবহিত হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠান করে বিয়ে করেন সুপ্রিয় চক্রবর্তী এবং অভয় ডাং। বস্তুত, তাঁরাই দেশের প্রথম সমকামী যুবক, যাঁরা বিয়ে করেছেন। এখন বিশেষ বিবাহ আইনের স্বীকৃতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই যুগল।
০৫২০
দীর্ঘ ১৭ বছরের সম্পর্কের পর পার্থ ফিরোজ মলহোত্র এবং উদয় রাজ বিয়ে করেছেন। আদালতে ওই যুগল জানান, তাঁরা দু’টি শিশুকে লালনপালন করছেন। কিন্তু যে হেতু তাঁদের বিয়ের কোনও আইনি স্বীকৃতি নেই, তাই আইনত শিশুদের অভিভাবক হতে পারছেন না তাঁরা।
০৬২০
এর পরেই দেশের বিভিন্ন আদালতে জমে থাকা সমলিঙ্গ সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা একসঙ্গে শোনার সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট। মামলাকারীরাও চেয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের আবেদনের শুনানি হোক। তারই রায় ঘোষণা হল মঙ্গলবার।
০৭২০
কেন্দ্রকে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে সমলিঙ্গে বিবাহের বিষয়ে অগ্রসর হতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সমলিঙ্গ যুগলের রেশন কার্ড, পেনশন, উত্তরাধিকার সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ওই কমিটির মাধ্যমে।
০৮২০
উল্লেখ্য, গত ৩ মে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল, সমলিঙ্গ যুগলেরা প্রশাসনিক যে সব সমস্যার মুখোমুখি হন, সেগুলি সমাধানের জন্য মন্ত্রিপরিষদের এক জন সচিবের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি গড়ার ভাবনা রয়েছে তাদের। সেই কমিটিকেই পদক্ষেপ করতে বলেছে শীর্ষ আদালত।
০৯২০
সমলিঙ্গে বিয়ে নিয়ে রায় পড়ে শোনাতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি কোনও অনড়, অটল বিষয় নয়। বিবাহে বিবর্তন আসে। ব্যক্তিগত স্তরের যে কোনও কাজকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত নয়। বিবাহ বর্তমানে যে স্বীকৃতি পেয়েছে, আইন না থাকলে তা সম্ভব হত না।’’
১০২০
সমকামী কিংবা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের কোনও মানুষকে হেনস্থা করা যাবে না, এমনটাই মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি জানান, এই সম্প্রদায়ের কাউকে তাঁদের যৌন পরিচয় জানার জন্য থানায় তলব করা যাবে না। তাঁরা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলে তাঁদের সেখানে জোর করে ফেরানো যাবে না। এই সম্প্রদায়ের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করার আগে পুলিশকে প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।
১১২০
সমলিঙ্গ বিবাহে আইনি স্বীকৃতি দিতে হলে বিশেষ বিবাহ আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। যা বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে সম্ভব নয়। তাই আইনসভাকেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করতে হবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘বিশেষ বিবাহ আইনে পরিবর্তন আনা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংসদ।’’
১২২০
সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ জন বিচারপতি একটি বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। সমলিঙ্গ যুগল সন্তান দত্তক নিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে তাঁরা সকলে একমত হতে পারেননি।
১৩২০
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল সমলিঙ্গ যুগলের সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শুধু বিষমকামী যুগলই সন্তানকে স্থিতিশীল জীবন দিতে পারেন, এই তত্ত্ব মানতে চাননি প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, অবিবাহিত দম্পতি, সমলিঙ্গ দম্পতিও সন্তান দত্তক নিতে পারেন। তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করেন বিচারপতি কউলও।
১৪২০
বিচারপতি কউল বলেন, ‘‘প্রাচীন কাল থেকেই সমলিঙ্গ সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। শুধু যৌন ক্রিয়াকলাপের জন্য নয়। মানসিক, আবেগপূর্ণ সম্পর্কেরও প্রতিফলন ঘটে তাতে। তাই আমি এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত।’’ কিন্তু বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি এস নরসিংহ এ বিষয়ে সম্মতি জানাননি।
১৫২০
সমলিঙ্গে বিবাহ প্রসঙ্গে বিচারপতি কউল বলেন, ‘‘বিশেষ বিবাহ আইনে সমলিঙ্গ বিয়ের অন্তর্ভুক্তিতে ব্যাখ্যামূলক কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ওই আইন পরিবর্তন করতে হলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’’ তবে আইনটি শুধুমাত্র বিষমকামী যুগলদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছিল, এই মতও তিনি মানতে চাননি।
১৬২০
অবিষমকামী মিলন এবং বিষমকামী মিলনকে একই মুদ্রার দুই পিঠ হিসাবে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি কউল। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতোই তিনিও জানান, সমকামী যুগল বা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের উপর বৈষম্যবিরোধী একটি আইন দেশে প্রয়োজন।
১৭২০
বিচারপতি ভট্ট তাঁর রায় পড়ে শোনাতে গিয়ে বলেন, ‘‘কোনও বিয়ের স্বীকৃতি আইন ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু বিয়ের বিষয়ে আইন বিচারব্যবস্থা আনতে পারে না। তা সংবিধানসম্মত নয়।’’ তিনি স্বীকার করেন, প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গী নির্বাচন এবং তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার অধিকার রয়েছে।
১৮২০
বিচারপতি ভট্ট জানান, বিশেষ বিবাহ আইনটিকে লিঙ্গনিরপেক্ষ ভাবে দেখা উচিত নয়। তাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। হতে পারে হিতে বিপরীত। আবার, সমলিঙ্গ যুগলের পেনশন, পিএফের মতো সুবিধা প্রদান করা না হলে তাদের অপমান করা হয় বলেও মনে করেন বিচারপতি ভট্ট।
১৯২০
বিচারপতি নরসিংহ বলেন, ‘‘বিয়ের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া সাংবিধানিক ভাবে অনুমোদনযোগ্য নয়।’’ তিনি সমলিঙ্গ যুগলের সন্তান দত্তক নেওয়ার বিষয়ে বিচারপতি ভট্টের সঙ্গে একমত হয়েছেন।
২০২০
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খুশি নন মামলাকারীরা। সমাজকর্মী অঞ্জলি গোপালন হতাশা চেপে রাখতে পারেননি। সংবাদসংস্থা এএনআইকে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই চালাচ্ছি। ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাব। এটা গণতন্ত্র। তবে আমরা আমাদের নাগরিকদের সাধারণ অধিকারটুকু দিতে পারছি না।’’