‘লাল সোনা’ পাচার করে পুষ্পার রমরমা! কেন এত দাম রক্তচন্দনের? চিনে এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি কেন?
তামিলনাড়ু লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা— নেল্লোর, কুর্নুল, চিত্তোর এবং কাডাপ্পা জেলায় এই গাছ মেলে। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই গাছ খুব ভাল হয়। এক একটি গাছের উচ্চতা ৮-১২ মিটার।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে অল্লু অর্জুনের বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’। ২০২১ সালের সুপারহিট ছবি ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ়’ ছবির দ্বিতীয় ভাগ। এই সিনেমার মূল চরিত্র এক জনই, পুষ্পারাজ। প্রথম ছবির মতো তাকে ঘিরেই গল্প আবর্তিত হয়েছে। সেই চরিত্রকে পর্দায় সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অল্লু।
০২২০
তবে পুষ্পারাজ ছাড়াও এই ছবির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র লাল চন্দন, যেমনটা ছিল ছবির প্রথম পর্বেও। রক্তচন্দন কাঠের পাচার নিয়েই এই ছবির কাহিনি। কেন্দ্রীয় চরিত্র পুষ্পা কী ভাবে এই কাঠ পাচার করে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে, ছবির ছত্রে ছত্রে সেই দৃশ্যই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক।
০৩২০
এ তো গেল সিনেমার গল্প। কিন্তু সিনেমার মতো বাস্তবেও লাল চন্দন বা রক্তচন্দনের গাছ বহুমূল্য একটি জিনিস।
০৪২০
কিন্তু রক্তচন্দনের কেন এত দাম? সেই কাঠের এত চাহিদা কেন? কেনই বা কালোবাজারি চলে লাল চন্দনকাঠ নিয়ে?
০৫২০
রক্তচন্দনকে এ দেশে ‘লাল সোনা’ বলা হয়। সোনার মতোই মূল্যবান এই গাছ। এই গাছ খুবই বিরল প্রজাতির।
০৬২০
‘পুষ্পা’ ছবিতে যে জঙ্গলের কথা বলা হয়েছে, রক্তচন্দন শেষাচলম পাহাড়ের ওই ঘন জঙ্গলেই পাওয়া যায়।
০৭২০
তামিলনাড়ু লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা— নেল্লোর, কুর্নুল, চিত্তোর এবং কাডাপ্পা জেলায় এই গাছ মেলে। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই গাছ খুব ভাল হয়। এক একটি গাছের উচ্চতা ৮-১২ মিটার।
০৮২০
লাল চন্দন হল একটি ‘এনডেমিক স্পিসিস’। ‘এনডেমিক স্পিসিস’ বলতে বোঝায় এমন একটি উদ্ভিদ বা প্রাণীর প্রজাতি যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
০৯২০
প্রাকৃতিক ভাবে ‘এনডেমিক স্পিসিস’ বিশ্বের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আর সে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও রক্তচন্দনের চাহিদা কল্পনাতীত।
১০২০
দু’ধরনের চন্দনকাঠ পাওয়া যায়। সাদা এবং লাল। সাদা চন্দনে সুন্দর গন্ধ থাকলেও লাল বা রক্তচন্দনে কোনও গন্ধ নেই।
১১২০
কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণের জন্যই বিশ্ব জুড়ে এর বিপুল চাহিদা। আর সেই চাহিদার কারণেই এই কাঠ পাচার হয়। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সঙ্ঘ (আইইউসিএন) ২০১৮-য় এই গাছকে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত করেছে।
১২২০
এই কাঠ এত বিপুল পরিমাণে কাটা এবং পাচার হয়েছে যে, সারা বিশ্বে আর মাত্র পাঁচ শতাংশ গাছ পড়ে রয়েছে।
১৩২০
আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে এই কাঠের বিপুল ব্যবহার হয়। হজম, ডায়েরিয়া-সহ বেশি কিছু রোগের চিকিৎসায় এই কাঠ কাজে লাগে।
১৪২০
রক্ত শুদ্ধিকরণের গুণ রয়েছে রক্তচন্দন কাঠের। ঔষধি গুণ ছাড়া অন্যান্য শিল্পেও এই কাঠের বিপুল চাহিদা। এ ছাড়া পূজা-আর্চা, প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতেও এই কাঠ ব্যবহৃত হয়।
১৫২০
উল্লেখ্য, রক্তচন্দন থেকে যে নির্যাস পাওয়া যায়, তা-ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। রক্তচন্দনে বেশ কিছু ‘আর্থ মেটাল’ পাওয়া যায়।
১৬২০
রক্তচন্দনের কাঠ সহজে পোড়ানো যায় না। পূর্বঘাট এলাকা শুষ্ক হওয়ায় সেখানকার জঙ্গলে আগুন ধরে যাওয়া বা দাবানলের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রবল। রক্তচন্দন প্রাকৃতিক ভাবে আগুন রোধ করতে সক্ষম।
১৭২০
আন্তর্জাতিক বাজারে কেজি প্রতি তিন হাজারেরও বেশি টাকা থেকে এই কাঠ বিক্রি শুরু হয়।
১৮২০
ভারতে এই গাছ কাটা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। তবে আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এই কাঠ পাচার হয়। পাচার রোখার জন্য ‘রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স’ও গঠন করা হয়েছে।
১৯২০
চিন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই কাঠের বিপুল চাহিদা। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চিনে। তাই পাচারও বেশি হয় ওই দেশে। আসবাব, ঘরসজ্জা এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে সে দেশে এই কাঠের চাহিদা খুব বেশি।
২০২০
উল্লেখ্য, অন্ধ্রপ্রদেশে প্রাকৃতিক ভাবে রক্তচন্দনের দেখা পাওয়া গেলেও এখন ব্যবসায়িক চাহিদা এবং গাছের অস্তিত্ব সঙ্কটের কথা ভেবে অন্য রাজ্যেও এই গাছের চাষ করার চেষ্টা চলছে।