Why Rafale M different from Rafale jets India has already bought dgtl
Rafale M Deal
কেন ‘মেরিন রাফালে’ মন মজল মোদী সরকারের? সাধারণ রাফালের থেকে কোথায় আলাদা এই যুদ্ধবিমান?
দু’টি রাফালকে দেখতে একই রকম হলেও ভাল করে দেখলে দেখা যাবে, রাফাল এমের সামনের অংশ বেশি লম্বা। বিভিন্ন ফরাসি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষমতার দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাফাল এম।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ১৫:৫৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
দু’দিনের প্যারিস সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার ‘বাস্তিল দিবস’ উপলক্ষে সেখানে বিশেষ অতিথি হয়ে যাচ্ছেন তিনি। ফ্রান্স থেকে ফেরার পথে এক দিনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেও থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকেই তিনি সফর সেরে দেশে ফিরবেন।
০২২২
‘বাস্তিল দিবস’ উদ্যাপন উপলক্ষে ফ্রান্স সফরে গেলে দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরালো এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মোদী। মোদী জানিয়েছেন, এই বছর ভারত এবং ফ্রান্সের পারস্পরিক সম্পর্কের ২৫ বছর বর্ষপূর্তি হতে চলেছে। সেই সম্পর্কের খাতিরেই তাঁর এই প্যারিস সফর।
০৩২২
যদিও বিভিন্ন সূত্রের দাবি, ফ্রান্স সফরেই ২৬টি ‘রাফাল এম’ বা ‘মেরিন রাফাল’ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে সইসাবুদ হতে পারে। চূড়ান্ত হতে পারে ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘স্করপেন’ ডুবোজাহাজ তৈরির সমঝোতাও।
০৪২২
দেশের বায়ুসেনাকে শক্তিশালী করতে ইতিমধ্যেই ৫৯ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে মাকরঁ সরকারের কাছ থেকে ৩৬টি রাফাল কিনেছে ভারত। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
০৫২২
এ ছাড়াও দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস যুদ্ধবিমান তৈরির কথা ঘোষণা করেছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, এই যু্দ্ধবিমান তৈরি হওয়ার পর তা ভারতের সামরিক শক্তিকে এক ধাক্কায় অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে।
০৬২২
তেজসের শক্তিপরীক্ষা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। কয়েকটি যুদ্ধবিমান ইতিমধ্যেই বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই যুদ্ধবিমানের আরও আধুনিক সংস্করণ ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তেজস ছাড়াও আলাদা আলাদা দেশ থেকে কেনা একাধিক যুদ্ধবিমান রয়েছে ভারতের হাতে। তা হলে সব ছেড়ে কেন হঠাৎ ‘মেরিন রাফাল’ কেনার প্রয়োজন কেন?
০৭২২
গত মাসেই আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আমেরিকায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিও করেন তিনি। আমেরিকার হাতে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী যুদ্ধবিমান ‘সুপার হর্নেট’। কেন সেই যুদ্ধবিমান মোদী সরকারের মন কাড়ল না এই নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
০৮২২
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে নৌসেনার বিমানবাহী রণতরীর জন্য মেরিন রাফালের পাশাপাশি আমেরিকার বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা বোয়িংয়ের তৈরি ‘এফ-এ ১৮ সুপার হর্নেট’ (আমেরিকার নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত) যুদ্ধবিমানকেও বেছে নেওয়া হয়েছিল। দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট সেই শক্তিশালী যুদ্ধবিমান নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষাও শুরু হয়েছিল।
০৯২২
গোয়ার নৌঘাঁটি আইএনএস হংস থেকে দু’টি যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা কয়েক মাস ধরে পরীক্ষা করা হয়।
১০২২
কিন্তু কোনও বিশেষ কারণে আমেরিকার ওই যুদ্ধবিমান নিয়ে আর এগোয়নি ভারত। ফলে ‘সুপার হর্নেট’ কেনার উদ্যোগকে সেখানেই মাটি চাপা দেওয়া হয়। আর তার পরই নাকি যুদ্ধবিমান কেনার জন্য পুরনো ‘বন্ধু’ ফ্রান্সের উপরই ভরসা রেখেছে ভারত।
১১২২
উল্লেখযোগ্য ভাবে, ফরাসি নৌবাহিনীও ‘মেরিন রাফাল’ ব্যবহার করে। রাফালের এই নৌ সংস্করণ পুরনো রাফালের থেকে অনেকটাই আলাদা। রাফালের থেকে কোথায় এগিয়ে রাফাল এম?
১২২২
দু’টি রাফালকে দেখতে অনেকটা একই রকম হলেও ভাল করে দেখলে দেখা যাবে, মেরিন রাফালের সামনের অংশ একটু বেশি লম্বা। ফ্রান্সের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষমতার দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাফাল এম।
১৩২২
রাফাল যুদ্ধবিমানের তুলনায় রাফাল এম যুদ্ধবিমানের চাকার শক্তিও বেশি। অবতরণের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে এই যুদ্ধবিমানের চাকা বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে।
১৪২২
মেরিন রাফাল এমন ভাবেই তৈরি করা হয়েছে যাতে বিমানবাহী রণতরীর উপর থেকেও এগুলি বিভিন্ন ভূমিকা পালন করতে পারে। যদিও দু’টি যুদ্ধবিমানই যুদ্ধের সময় একাধিক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
১৫২২
এ ছাড়াও মেরিন রাফালের আরও অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এটিকে যুদ্ধের জন্য উপযোগী বানিয়েছে।
১৬২২
অবতরণের সুবিধা এবং কোনও প্রয়োজনীয় জিনিসের বহনের কথা মাথায় রেখে মেরিন রাফালের পিছনে একটি বিশেষ হুক বা ‘টেল হুক’ লাগানো রয়েছে। যা রাফালের পুরনো মডেলে নেই।
১৭২২
রণতরী থেকে ককপিটে প্রবেশের জন্য মেরিন রাফালের ভিতরে একটি মই রয়েছে। এই যুদ্ধবিমানের ডানাও ভাঁজ করা যায়।
১৮২২
মেরিন রাফালের অস্ত্র পরিবহণের ক্ষমতাও তুলনামূলক ভাবে বেশি। আধুনিক ‘অ্যান্টি শিপ’ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ‘এয়ার টু সার্ফেস’ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়েও উড়তে পারে এই যুদ্ধবিমান।
১৯২২
বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের জন্য মেরিন রাফালের ওজন পুরনো রাফালের চেয়ে কিছুটা বেশি।
২০২২
নৌসেনার বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রমাদিত্যে এবং আইএনএস বিক্রান্তে ব্যবহারের জন্য কয়েক বছর আগেই রুশ যুদ্ধবিমান মিগ-২৯কে-র পরিবর্ত খুঁজতে শুরু করেছিল ভারতীয় নৌসেনা।
২১২২
বেশ কয়েক বার বিক্রমাদিত্যে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান তেজসের ‘অ্যারেস্টেড ল্যান্ডিং’ পরীক্ষাও হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, ‘অ্যারেস্টর হুক’-এর সাহায্যে ৯০ মিটারের মধ্যে গতিবেগ ২৪৪ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনতে পেরেছে তেজস। কিন্তু অস্ত্রবহন ক্ষমতা এবং দূরপাল্লার উড়ানের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে রাফাল।
২২২২
যদিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আগেই জানিয়েছে, ভারতের সামরিক শক্তির ভবিষ্যতের চাবিকাঠি লুকিয়ে তেজসেই। কিন্তু দেশীয় সেই যুদ্ধবিমানের আধুনিক সংস্করণ ভারতের বায়ুসেনার হাতে আসতে এখনও বেশ কয়েক বছর দেরি। আর সেই কারণেই ভারত আগামী কয়েক বছর শত্রু মোকাবিলায় আপাতত মেরিন রাফালেই ভরসা রাখছে বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের।