Why Maldives President Mohamed Muizzu is engaging in controversy with India dgtl
India-Maldives Row
কেন ভারতের প্রতি ‘কঠোর’ অবস্থান মুইজ্জু সরকারের? নেপথ্যে কি রয়েছে বিশেষ কোনও দেশের উস্কানি?
মলদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা সরানোর বিষয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছিল মুইজ্জু সরকার। এই বিষয়ে ভারতও সম্মতি জানিয়েছিল বলে জানা যায়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৮
নতুন মাত্রা পেয়েছে ভারত-মলদ্বীপ বিতর্ক। তার মধ্যেই আবার চিন সফর থেকে ফিরে ভারতকে সে দেশ থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ‘আর্জি’ও জানিয়েছে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। সেনা সরানোর জন্য রীতিমতো সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
০২২৮
মলদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা সরানোর বিষয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছিল মুইজ্জু সরকার। এই বিষয়ে ভারতও সম্মতি জানিয়েছিল বলে জানা যায়।
০৩২৮
মলদ্বীপ সরকারের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এই কমিটির দ্বাদশ বৈঠকে ১৫ মার্চের মধ্যে সেনা সরানোর জন্য ভারতকে আর্জি জানানো হয়েছে। মুইজ্জুর সচিবালয়ের শীর্ষ আধিকারিক আবদুল্লা নাজ়িম ইব্রাহিম সে দেশের একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, “ভারতীয় সেনারা মলদ্বীপে থাকতে পারবেন না। কারণ, এটাই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এবং তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত।” প্রসঙ্গত, এর আগেও ক্ষমতায় আসার পরে পরেই ভারতকে সেনা সরানোর আর্জি জানিয়েছিল মুইজ্জু সরকার।
০৪২৮
মলদ্বীপে ভারতীয় সেনার ৮৮টি ট্রুপ রয়েছে। যা কোনও দেশের জন্যই হুমকি হতে পারে না।
০৫২৮
২০১০ সাল থেকে একটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে ভারতীয় সেনা মলদ্বীপে রয়েছে। মলদ্বীপের সেনাতে যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণও দেয় তারা। পাশাপাশি মলদ্বীপের প্রত্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং চিকিৎসা উপাদান পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও রয়েছে ভারতীয় সেনার কাঁধে।
০৬২৮
তবে ভারতের তরফে উদ্ধার অভিযানের জন্য মলদ্বীপকে দেওয়া দু’টি ‘ধ্রুব’ হেলিকপ্টারকেও সে দেশে ভারতের সামরিক উপস্থিতি হিসাবে দেখানো হচ্ছে।
০৭২৮
তবে দ্বীপরাষ্ট্রটির ঘরোয়া রাজনীতিতে মুইজ্জুর দল প্রোগ্রেসিভ পার্টি অফ মলদ্বীপস (পিপিএম) এই বলে প্রচার চালাচ্ছে, দেশের সার্বভৌম ক্ষমতাকে খর্ব করতেই সেনা রেখে দিয়েছে ভারত।
০৮২৮
কিন্তু কেন ভারতের প্রতি এত ‘কঠোর’ হচ্ছেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট? বিশেষজ্ঞদের মতে, মলদ্বীপকে ভারতের ‘ছায়া’ থেকে বার করে আনতে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছেন মুইজ্জু। তবে এতে আখেরে সে দেশের বিপদ বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
০৯২৮
মুইজ্জুর এ রকম ‘ভারত বৈরিতা’র কারণ কী কী হতে পারে, তা নিয়েও একাধিক মত রয়েছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।
১০২৮
মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ সোলি ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যে নীতি নিয়ে চলতেন, সেই ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন মুইজ্জু। জিতেও যান। ভোটের আগে মুইজ্জুর যুক্তি ছিল, ভারতের প্রভাব রয়েছে তৎকালীন সোলি সরকারের উপর।
১১২৮
মুইজ্জুর সেই ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতিকে মলদ্বীপের কূটনৈতিক অবস্থানে বড়সড় পরিবর্তনের সূচক বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ভারত-ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে সম্প্রতি ‘নতুন বন্ধু’ খোঁজার চেষ্টা করছে মলদ্বীপ।
১২২৮
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যে নীতির উপর ভিত্তি করে মুইজ্জু ক্ষমতায় এসেছেন, সেই নীতিকে একেবারেই হালকা ভাবে নিতে রাজি নন তিনি। বরং সেই নীতিকে মলদ্বীপের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকার পন্থা হিসাবেই মুইজ্জু দেখছেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। ভোটে জিতে তিনি যে ভারতকে চাপে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা তাঁর একের পর এক সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট।
১৩২৮
গণতন্ত্রের রাস্তা ধরে পথচলা শুরু করার পর মলদ্বীপের সব প্রেসিডেন্টেরই প্রথম গন্তব্য হয়েছে ভারত। এমনকি, ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত প্রেসিডেন্টরাও শপথ নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতেই এসেছেন। কিন্তু মুইজ্জু সেই নিয়ম ভেঙে দিয়েছেন।
১৪২৮
মুইজ্জু তাঁর বিদেশ সফর শুরু করেছিলেন তুরস্কে গিয়ে। প্রথম বন্ধু হিসাবেই যে দেশকে মুইজ্জু বেছে নিয়েছেন, সেই তুরস্কের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব একটা ‘মধুর’ নয়। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (৩৭০ ধারা) তুলে দেওয়া নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিল তুরস্ক।
১৫২৮
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, মুইজ্জুর ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতির নেপথ্যে কাজ করছে তাঁর ‘চিনপন্থী’ মনোভাব। পাশাপাশি চিনের উস্কানিও।
১৬২৮
মলদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘চিন-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত মুইজ্জু সম্প্রতি বেজিং থেকে ঘুরেও এসেছেন। সেখান থেকে ফিরেই ভারতকে সেনা সরানোর কথা জানিয়েছে মুইজ্জু সরকার।
১৭২৮
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের প্রতি ‘বৈরিতা’ দেখালেও চিনের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতামূলক বন্ধুত্ব তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে মলদ্বীপ সরকার।
১৮২৮
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, ভারত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থানের কারণে মলদ্বীপে প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী চিন। মলদ্বীপের দ্বীপগুলি ব্যস্ততম সামুদ্রিক বাণিজ্যপথের উপর অবস্থিত। যে পথ দিয়ে চিনের ৮০ শতাংশ তেল আমদানি হয়।
১৯২৮
অন্য দিকে, প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর সফরে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে মলদ্বীপ এবং চিন। পাশাপাশি, উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করার জন্য মলদ্বীপকে ১৩ কোটি ডলার সহায়তার কথাও জানিয়েছে চিন।
২০২৮
ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে ইতিমধ্যেই বার বার সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত এবং চিন। দুই দেশের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথাও অজানা নয়। তাই কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ এ-ও মনে করছেন, ভারত-মলদ্বীপ বিতর্কে বেড়ে খেলতে চাইছে চিন। মলদ্বীপে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে তৎপর হয়ে উঠেছে বেজিং।
২১২৮
যদিও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, মলদ্বীপ ‘কঠোর’ আচরণ করলেও বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই ভারতের। ইতিমধ্যেই ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিয়ে মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী (বর্তমানে নিলম্বিত) কুমন্তব্য করার পরে দেশবাসীর একাংশের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মুইজ্জু সরকারকে।
২২২৮
তাই মুইজ্জুর ‘ভারত বৈরিতা’ সে দেশের সরকারকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে বলেও মত কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
২৩২৮
প্রসঙ্গত, ভারত-মলদ্বীপ বিতর্কের সূত্রপাত প্রধানমন্ত্রীর লক্ষদ্বীপ সফরের পর থেকে। প্রশাসনিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত দ্বীপ অঞ্চলের সমুদ্রসৈকতেও অনেকটা সময় কাটিয়ে আসেন মোদী। ফিরে এসে সেই সফরের স্মৃতিচারণাও করেন। সফরে কাটানো মুহূর্তের প্রচুর ছবিও তিনি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন।
২৪২৮
এর পরেই প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতকে নিয়ে কুমন্তব্য করেন মলদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রী। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ছবিগুলি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার পর মলদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রী মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ সেই ছবিগুলি নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ‘জোকার’ এবং ‘ইজ়রায়েলের ক্রীড়নক’ বলেও অপমান করা হয়েছে। কটাক্ষ করা হয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়েও।
২৫২৮
এর পরেই বিতর্কের মুখে পড়েন ওই তিন মন্ত্রী এবং মলদ্বীপ সরকার। বিতর্কের মুখে পড়ে নিজেদের পোস্টগুলিও মুছে ফেলেন তাঁরা। সেই সব পোস্টের ছবি (স্ক্রিনশট) সমাজমাধ্যমে ঘুরছে। যদিও সেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। তবে চাপের মুখে ওই তিন মন্ত্রীকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছে সে দেশের মহম্মদ মুইজ্জুর সরকার।
২৬২৮
কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। বিতর্ক শুরু হতেই ভারত এবং প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন অক্ষয় কুমার, সচিন তেন্ডুলকর, সলমন খান, কঙ্গনা রানাউত, জন আব্রাহাম, শ্রদ্ধা কপূর, হার্দিক পাণ্ড্যের মতো তারকারা। মলদ্বীপ যেতে বারণ করার পাশাপাশি, দেশবাসীকে ভারতীয় দ্বীপগুলি অন্বেষণ করার বার্তাও দিয়েছেন তাঁরা।
২৭২৮
সমাজমাধ্যমে ‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের উপরে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র। আগে থেকেই মলদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বিমান-হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরেও তা বাতিল করে চলেছেন একের পর এক ভারতীয়। ক্রমে সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
২৮২৮
যাঁরা বুকিং বাতিল করছেন, তাঁদের দাবি, টাকা যাচ্ছে যাক, আগে দেশ। দেশের অপমান কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যাবে না বলেও কেউ কেউ সমাজমাধ্যমে মতপ্রকাশ করেছেন। সেই বিতর্কের মাঝেই লক্ষদ্বীপকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছে ভারত। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন হোটেল, রিসর্ট, বিমানবন্দর। পাশাপাশি, জল সমস্যা মেটাতেও তৎপর হয়েছে সরকার।