Why Maldives always has been a favourite destination for Travelers dgtl
India-Maldives Row
প্রকৃতি, বিলাসবহুল রিসর্ট তো আছেই, বিশেষ এক উপায়েও পর্যটক টানে মলদ্বীপ! কিসের সেই অমোঘ টান?
পর্যটকদের কাছে মলদ্বীপের মূল আকর্ষণ অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য। নীল জলরাশি, ঝিকিমিকি লেগুন, সাদা বালির সৈকত, প্রচুর প্রবাল— মলদ্বীপে গেলে মন খুশি করার মতো জিনিসের অভাব নেই।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:২১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
তিন মন্ত্রী (বর্তমানে নিলম্বিত) ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে কুমন্তব্য করার পর থেকেই বিতর্কের মুখে মলদ্বীপ সরকার। যে দ্বীপরাষ্ট্র এত দিন ভারতীয়দের ভ্রমণের স্বপ্নরাজ্য ছিল, সেই মলদ্বীপকে বয়কটের ডাকও দিচ্ছেন ভারতীয়েরা।
০২২৬
যে ভারতীয় তারকারা ছুটি কাটাতে মলদ্বীপে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন, তাঁরাও মলদ্বীপ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। মলদ্বীপ না গিয়ে ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জগুলিতে ছুটি কাটানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
০৩২৬
বিতর্ক এতটাই মাথাচাড়া দিয়েছে, দেশের বহু মানুষ ইতিমধ্যেই মলদ্বীপ যাওয়ার হোটেল এবং বিমানের টিকিট বাতিল করে দিয়েছেন।
০৪২৬
কিন্তু দু’সপ্তাহ আগে পর্যন্তও এমন পরিস্থিতি ছিল না। মলদ্বীপ যাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে থাকত ভারতীয়দের মধ্যে। শুধু ভারত কেন, সারা বছরই বিভিন্ন দেশের পর্যটকের ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রে এসে ভিড় জমান। কিন্তু কেন?
০৫২৬
এর জন্য অনেকটাই দায়ী পর্যটকদের ভিসা নীতি। ভিড় টানতে নিজেদের ভিসা নীতি পাল্টে ফেলেছে মলদ্বীপ। যার ফলে গত কয়েক বছরে দ্বীপরাষ্ট্রে পর্যটকের সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে।
০৬২৬
পর্যটন হল মলদ্বীপের বৃহত্তম শিল্প। মলদ্বীপের ২৮ শতাংশ জিডিপি এবং ৬০ শতাংশ বিদেশি মুদ্রা আসে পর্যটন থেকে।
০৭২৬
ভারত, রাশিয়া, চিন এবং কাজাখস্তানের বাসিন্দাদের ভিসা ছাড়াই প্রবেশের অনুমতি দেয় মলদ্বীপ। এই দেশগুলির জন্য ভিসা নীতিতে কিছু পরিবর্তন করে মলদ্বীপ নিশ্চিত করেছে যে বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশগুলির বাসিন্দারা যেন সহজেই দ্বীপরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার পান।
০৮২৬
বৈধ পাসপোর্ট, হোটেল বুকিং, যাতায়াতের টিকিট এবং পকেটে টাকা থাকলেই ঘুরে আসা যাবে মলদ্বীপ। এর বাইরে মলদ্বীপ যাওয়ার জন্য আর কোনও নিয়ম নেই।
০৯২৬
মলদ্বীপে ‘নো-কস্ট ভিজ়িটর’ ভিসা ৩০ দিনের জন্য বৈধ, দ্বীপরাষ্ট্রে পৌঁছনোর পরে তা জারি করা হয়। সর্বাধিক ৯০ দিন পর্যন্ত সেই ভিসার বৈধতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। মলদ্বীপ সরকারের এই পদক্ষেপ সে দেশের পর্যটন ব্যবসাকে ব্যাপক ভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলেছে।
১০২৬
মলদ্বীপে পৌঁছনোর পর ভিসা দেওয়ার নীতি সে দেশের পর্যটন শিল্পের রমরমার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়।
১১২৬
ভারত, রাশিয়া, চিন এবং কাজাখস্তান থেকে আগত পর্যটকদের জন্য ভিসার কড়াকড়ি নেই মলদ্বীপে। বাকি দেশগুলির বাসিন্দাদেরও ‘ভিসা-অন-অ্যারাইভাল’-এর সুবিধা রয়েছে। অর্থাৎ, কেউ চাইলে অনায়াসে মলদ্বীপে পৌঁছনোর পর ভিসা পেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কয়েকটি বৈধ নথি থাকা আবশ্যক।
১২২৬
করোনা অতিমারির সময়েও পর্যটকদের জন্য নিজেদের সমুদ্রসৈকত খুলে রেখেছিল মলদ্বীপ। ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিডের জন্য মলদ্বীপ মাত্র তিন মাস পর্যটকদের জন্য নিজেদের সীমানা বন্ধ রেখেছিল। জুলাই মাস থেকে আবার পর্যটকদের জন্য দরজা খুলে দেয় দ্বীপরাষ্ট্র।
১৩২৬
কোভিড আবহে বিশ্বের বহু দেশ লকডাউনের রাস্তায় হাঁটলেও মলদ্বীপ পর্যটকদের জন্য কার্যত ভিসা ছাড়াই প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল। যা সে দেশের জন্য যথেষ্ট সাহসী পদক্ষেপ ছিল।
১৪২৬
করোনা অতিমারির সময় পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য বহুমুখী প্রচেষ্টা চালিয়েছিল মলদ্বীপ সরকার। দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে পুঁজি বানিয়ে পর্যটন শিল্পের প্রচারে নেমেছিল সেই দেশ।
১৫২৬
তৎকালীন মলদ্বীপ সরকারের যুক্তি ছিল, মলদ্বীপের দ্বীপগুলি একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন। আর তাই সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহজ।
১৬২৬
এ ছাড়াও প্রায় সারা বছরই নামীদামি বিদেশি তারকা এবং নেটপ্রভাবীদের সঙ্গে চুক্তি করে মলদ্বীপ। সেই তালিকায় রয়েছেন প্রচুর বলিউড তারকাও। লক্ষ্য, সে দেশের পর্যটন শিল্পের প্রচার চালানো।
১৭২৬
দ্বীপরাষ্ট্রের বিলাসবহুল রিসর্ট এবং হোটেলগুলিতে এসে প্রায়ই সময় কাটান বলিউড তারকারা।
১৮২৬
মলদ্বীপ সরকার প্রায়ই অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং নেটপ্রভাবীদের সে দেশের হোটেল-রিসর্টগুলিতে সময় কাটানোর জন্য এবং সমাজমাধ্যমে সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
১৯২৬
ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের মতো সমাজমাধ্যমও মলদ্বীপের পর্যটন বিভাগকে চাঙ্গা করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সমাজমাধ্যমে শাহরুখ খান, কিয়ারা অডবাণী থেকে শুরু করে দিশা পটানির মলদ্বীপ ঘুরতে যাওয়ার ছবিতে লাইক এবং শেয়ারের বন্যা বয়ে গিয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
২০২৬
এ ছাড়াও পর্যটকদের কাছে মলদ্বীপের মূল আকর্ষণ অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য। নীল জলরাশি, ঝিকিমিকি লেগুন, সাদা বালির সৈকত, প্রচুর প্রবাল— মলদ্বীপে গেলে মন ভাল করার মতো জিনিসের অভাব নেই।
২১২৬
মলদ্বীপের আরও দুই অন্যতম আকর্ষণ হল বিভিন্ন ধরনের জলক্রীড়া এবং ছুটি কাটানোর জন্য সমুদ্রসৈকতের ধারে ছোট ছোট ‘ওয়াটার রিসর্ট’।
২২২৬
তবে মনে করা হচ্ছে, এখন থেকে বাকি দেশগুলির পর্যটকেরা মলদ্বীপে ঢুঁ মারলেও কমবে ভারতীয় পর্যটকদের সংখ্যা। নেপথ্যে সম্প্রতি শুরু হওয়া বিতর্ক। অথচ এত দিন ভারতীয় পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করত মলদ্বীপের সমুদ্রসৈকতগুলি।
২৩২৬
কিন্তু বিতর্কের সূত্রপাত কোথায়? সম্প্রতি লক্ষদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রশাসনিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত দ্বীপরাজ্যের সমুদ্রসৈকতেও অনেকটা সময় কাটিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। ফিরে এসে সেই সফরের স্মৃতিচারণাও মোদী করেছেন। সফরে কাটানো মুহূর্তের প্রচুর ছবিও তিনি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
২৪২৬
লক্ষদ্বীপের সমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্নর্কেলিং (এক ধরনের জলক্রীড়া) করা, সাদা বালির উপর ভ্রমণ বা বিশাল নীল সৈকতে বিশ্রাম নেওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেই বিতর্কের শুরু।
২৫২৬
অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ছবিগুলি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার পর মলদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রী মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ সেই ছবিগুলি নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ‘জোকার’ এবং ‘ইজ়রায়েলের ক্রীড়নক’ বলেও অপমান করা হয়। কটাক্ষ করা হয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়েও। এর পরেই বিতর্কের মুখে পড়েন ওই তিন মন্ত্রী এবং মলদ্বীপ সরকার। বিতর্কের মুখে পড়ে নিজেদের পোস্টগুলিও মুছে ফেলেন তাঁরা। সেই সব পোস্টের ছবি (স্ক্রিনশট) সমাজমাধ্যমে ঘুরছে। যদিও সেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
২৬২৬
এর পর থেকেই জটিল হয়েছে দু’দেশের কূটনৈতিক পরিস্থিতি। গলা ছেড়ে মলদ্বীপ বয়কটের ডাক দিতে শুরু করেছেন ভারতীয়েরা।