হোটেল হাতেগোনা, থাকার ঘর শ’দেড়েক! প্রবেশের অনুমতিও নেই সকলের, লক্ষদ্বীপে রয়েছে লক্ষ বাধাও
মলদ্বীপ বিতর্কের মাঝে এখন নতুন ট্রেন্ড লক্ষদ্বীপ। অনেকেই সেখানে ঘুরতে যাচ্ছেন, অনেকে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন। কিন্তু লক্ষদ্বীপ ভ্রমণে অনেক বাধাও রয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
আরব সাগরের উপরে মাত্র ৩২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে লক্ষদ্বীপ। খাতায়কলমে দ্বীপের সংখ্যা ৩৬টি। তবে সবই সমুদ্রের মাঝে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েক খণ্ড জমি।
০২২৫
লক্ষদ্বীপের অগাতী, বাঙ্গরমের মতো হাতেগোনা কয়েকটি দ্বীপে পর্যটকেরা ঢুকতে পারেন। বাকি দ্বীপগুলিতে মূলত আদিবাসীদের বাস। এখনও সেগুলি ভ্রমণের উপযোগী হয়ে ওঠেনি।
০৩২৫
মলদ্বীপ নিয়ে বিতর্কের আবহে দলে দলে সকলে লক্ষদ্বীপের দিকে ঝুঁকেছেন বটে, তবে এই দ্বীপে ঘুরতে যাওয়া কিন্তু খুব একটা সহজ এবং মসৃণ নয়। রয়েছে একাধিক বাধা।
০৪২৫
লক্ষদ্বীপে যাওয়ার জন্য সবার আগে প্রবেশের অনুমতিপত্র জোগাড় করতে হয় পর্যটকদের। ভারতীয় হোক বা বিদেশি, এই নিয়ম সকল পর্যটকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
০৫২৫
ভারতীয়েরা লক্ষদ্বীপের মাত্র পাঁচটি দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারেন। সেগুলি হল— অগাতী দ্বীপ, বাঙ্গরম দ্বীপ, কবরত্তী দ্বীপ, কদমত দ্বীপ এবং মিনিকয় দ্বীপ।
০৬২৫
বিদেশি পর্যটকদের জন্য লক্ষদ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ আরও সীমিত। তাঁরা লক্ষদ্বীপের মাত্র তিনটি দ্বীপে ঘুরতে পারেন। সেগুলি হল— অগাতী দ্বীপ, বাঙ্গরম দ্বীপ এবং কদমত দ্বীপ।
০৭২৫
এ ছাড়া লক্ষদ্বীপের অন্য কোনও দ্বীপে যদি কেউ যেতে চান, তবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতিপত্র আনতে হয়। তা না হলে এই পাঁচ দ্বীপের বাইরে অন্য কোথাও কোনও পর্যটকই পা রাখতে পারেন না।
০৮২৫
লক্ষদ্বীপ যাওয়া যায় দু’রকম ভাবে— আকাশপথে এবং সমুদ্রপথে। উভয় ক্ষেত্রেই কোচি হয়ে লক্ষদ্বীপ যেতে হবে। অন্য কোনও প্রান্ত থেকে এই দ্বীপে যাওয়া যায় না।
০৯২৫
লক্ষদ্বীপে একটি মাত্র বিমানবন্দর রয়েছে। অগাতী বিমানবন্দরই সেখানে আকাশপথে যাতায়াতের একমাত্র ঠিকানা। কোচি থেকে রোজ ওই বিমানবন্দরে যাওয়ার একটি করে বিমান ছাড়ে।
১০২৫
অ্যালায়েন্স এয়ারলাইন্স নামের একটি মাত্র বিমান সংস্থা লক্ষদ্বীপের বিমান চালায়। প্রতি দিন একটি মাত্র বিমান সেখানে যাতায়াত করে।
১১২৫
অগাতী পর্যন্ত বিমান পরিষেবা থাকলেও অন্য কোনও দ্বীপে বিমানবন্দরই নেই। ফলে সেখানে যেতে হলে অগাতী থেকে নৌকা অথবা হেলিকপ্টার ভাড়া করতে হয়, যা খরচসাপেক্ষ।
১২২৫
কোচি থেকে লক্ষদ্বীপের জাহাজ ছাড়ে। ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা লাগে জলপথে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে লক্ষদ্বীপ পৌঁছতে। তবে সেখানে পৌঁছনোর পর নৌকা পরিষেবা কেমন হবে, তা নির্ভর করে আবহাওয়ার উপরে।
১৩২৫
লক্ষদ্বীপে সারা বছর মনোরম আবহাওয়া বজায় থাকে। তাপমাত্রা থাকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। তবে লক্ষদ্বীপে বর্ষার তাণ্ডব ভয়ঙ্কর। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হয় দ্বীপগুলিতে।
১৪২৫
লক্ষদ্বীপে ঢোকার প্রয়োজনীয় প্রবেশপত্রের জন্য অনলাইন মাধ্যমে আবেদন জানানো যায়। অনলাইনে সেই ফর্ম ভরে কোচিতে লক্ষদ্বীপ প্রশাসনের অফিসে নিয়ে যেতে হয়।
১৫২৫
এর পর অন্তত ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হয় প্রবেশপত্র পাওয়ার জন্য। এর জন্য দরকার হয় পর্যটকের পাসপোর্ট আকারের ছবি, আধার কার্ড, বিমান বা জাহাজের টিকিট এবং হোটেল বুকিংয়ের কাগজ।
১৬২৫
পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে এখনও পুরোদমে গড়ে উঠতে পারেনি লক্ষদ্বীপ। সেখানে পর্যটকদের জন্য হোটেলের সংখ্যা অতি সীমিত। হাতেগোনা কিছু হোটেল এবং রিসর্ট আছে লক্ষদ্বীপে। আগে থেকে সেখানে ঘর বুক করে যেতে হয়।
১৭২৫
এনডিটিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে লক্ষদ্বীপের সাংসদ মহম্মদ ফয়জল জানিয়েছেন, গোটা দ্বীপটিতে পর্যটকদের থাকার জন্য ঘরের সংখ্যা মাত্র ১৫০টি।
১৮২৫
কোরাল দিয়ে তৈরি লক্ষদ্বীপ। কাতারে কাতারে পর্যটক ধারণ করার ক্ষমতা নেই তার। পরিবেশ বাঁচিয়ে পর্যটন শিল্পকে তুলে ধরা তাই লক্ষদ্বীপে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
১৯২৫
সাংসদ জানিয়েছেন, লক্ষদ্বীপের ৩৬টি দ্বীপের মধ্যে মাত্র ১০টি বাসযোগ্য। সেখানকার জনসংখ্যার ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যটনের উপর নির্ভর করে আছে।
২০২৫
পরিবেশ বাঁচিয়ে লক্ষদ্বীপকে পর্যটনের জন্য উপযুক্ত হিসাবে গড়ে তুলতে বিচারপতি রবীন্দ্রন কমিশনকে নিয়োগ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই কমিশন লক্ষদ্বীপের উন্নয়নের স্বার্থে একাধিক সুপারিশ করে।
২১২৫
প্রতি দিন কত পর্যটক লক্ষদ্বীপে ঢুকতে পারবেন, সেই সংখ্যাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিশন। ফলে চাইলেই সকলকে লক্ষদ্বীপে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
২২২৫
মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতির আবহে শিরোনামে উঠে এসেছে লক্ষদ্বীপ। তার আগে পর্যন্ত এই দ্বীপে খুব বেশি পর্যটক যেতেন না। পর্যটকদের ভ্রমণের উপযোগী পরিষেবাও তাই সেখানে সে ভাবে গড়ে ওঠেনি।
২৩২৫
কিছু দিন আগে লক্ষদ্বীপে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তাঁর সফরকালের বেশ কিছু মুহূর্তের ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
২৪২৫
মোদীর সে সব ছবি দেখে বিরূপ এবং অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে মলদ্বীপের তিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ওই তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করে মলদ্বীপ সরকার। তবে বিতর্ক তাতে থামেনি।
২৫২৫
ভারতের সমাজমাধ্যমে ‘বয়কট মলদ্বীপ’ এখন নতুন ট্রেন্ড। সেই সঙ্গে অনেকে ‘লক্ষদ্বীপ চলো’র ডাক দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে পর্যটকদের সেই ভিড় সামাল দিতে কতটা তৈরি লক্ষদ্বীপ? সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।