Why investors are not picking up lithium block of Jammu and Kashmir in auction dgtl
Lithium
কাশ্মীরে ‘সাদা সোনা’র খনি হাতে পেয়ে দেড় বছরেও নিলামে তুলতে পারল না ভারত! কেন?
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় লিথিয়ামের ভান্ডারের হদিস পেয়েছিল ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বা জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই)। ৫৯ লক্ষ টন লিথিয়ামের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে সেখানে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় লিথিয়ামের ভান্ডারের হদিস পেয়েছিল ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বা জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই)। ৫৯ লক্ষ টন লিথিয়ামের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে সেখানে। ভারতে সেই প্রথম এত পরিমাণ লিথিয়ামের খোঁজ পাওয়া গ়িয়েছিল।
০২২০
এর পরেই দেশ জু়ড়ে খুশির হাওয়া বয়ে যায়। মনে করা হচ্ছিল, লিথিয়াম ভান্ডারের খোঁজ মেলায় ভূস্বর্গ তো বটেই, দেশের ভাগ্যের চাকাও ঘুরতে চলেছে। লিথিয়াম খনির খোঁজ ভারতের কাছে এক বিরাট প্রাপ্তি।
০৩২০
বিশ্বের বাজারে এই ধাতুর গুরুত্ব অপরিসীম। মূল্যের বিচারে একে ‘সাদা সোনা’ও বলে থাকেন কেউ কেউ। যে ‘সাদা সোনা’র জন্য এ যাবৎ কাল অন্য দেশের কাছে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হত, সেই মূল্যবান সম্পদ এসে গিয়েছে ভারতের হাতে। যার জেরে আগামীতে দেশের ভবিষ্যৎ বদলাতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছিল।
০৪২০
সেই ঘটনার দেড় বছর পেরিয়েছে। তবে দেড় বছরেই বদলে গিয়েছে চিত্র। লিথিয়ামের খনি থেকে আকরিক তুলে উৎপাদন শুরু করা তো দূর অস্ত, এখনও খনিগুলি নিলাম করতে পারেনি সরকার।
০৫২০
এই নিয়ে সরকার তিন বার ওই খনি নিলামে তুলেছিল। কিন্তু ক্রেতা জোটেনি এক বারও। তৃতীয় বার তো সরকার ওই খনির নিলাম প্রক্রিয়াই বাতিল করতে বাধ্য হয়। কিন্তু কেন এই অবস্থা? বিরল ‘সাদা সোনা’ কিনতে কেন অনীহা বিনিয়োগকারীদের?
০৬২০
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বেশ কয়েকটি ভূতাত্ত্বিক বাধার কারণেই লিথিয়ামের খনি কেনার সাহস দেখাতে পারছে না কোনও সংস্থা।
০৭২০
লিথিয়ামের আকরিক মূলত পাথরের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে কাশ্মীরে মজুত লিথিয়াম পাওয়া গিয়েছে মূলত কাদামাটির রূপে। যা বাণিজ্যিক ভাবে কতটা লাভজনক, তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। পাশাপাশি, কাদামাটি থেকে লিথিয়াম আকরিকের যে প্রযুক্তি, তা-ও ব্যয়সাপেক্ষ।
০৮২০
লিথিয়াম খনি কাশ্মীরের যেখানে পাওয়া গিয়েছে, সেই রিয়াসি জেলা এবং তৎসংলগ্ন এলাকাগুলি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে পড়ে। তাই ভূমিকম্পের কারণে ধস নেমে যখন-তখন খনির কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই অনেকে খনি কেনার জন্য এগিয়ে আসছে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
০৯২০
বিশেষজ্ঞদের মতে, লিথিয়াম খনি সম্পর্কে নিলামের নথিতে এত সীমিত তথ্য দেওয়া হয়েছে যে, অনেকেই ওই খনিতে বিনিয়োগে নিমরাজি।
১০২০
যে কোনও খনির খোঁজ মিললে সেই খনির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। তবে কাশ্মীরের ওই লিথিয়াম খনি যথার্থ ভাবে খনন করে দেখা হয়নি। পুরোটাই হয়েছে প্রাথমিক স্তরে। আর সেই কারণেও অনেক সংস্থা কাশ্মীরের লিথিয়াম খনিতে বিনিয়োগ করতে চাইছে না।
১১২০
ভারতে যে পরিমাণ লিথিয়াম পাওয়া গিয়েছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বাজারমূল্য ছিল ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। তবে এই অঙ্ক বর্তমানে বদলে গিয়েছে বিশ্ববাজারে লিথিয়ামের দামের উপর নির্ভর করে। লিথিয়াম নিষ্কাশন ব্যয়বহুল। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী লিথিয়ামের দাম কমেছে। আর সে কারণেও অনেকে ওই খনিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
১২২০
সূত্রের খবর, লিথিয়াম খনি নিলামের জন্য সরকারের তরফে প্রাথমিক ভাবে যে দর হাঁকা হয়েছে, তা নিয়েও সন্তুষ্ট নন অনেক বিনিয়োগকারী। অনেকে নাকি জঙ্গিদের ভয়েও বিনিয়োগ করতে চাইছেন না লিথিয়াম খনিতে।
১৩২০
এ সকল কারণেই নাকি প্রথম দুই নিলামে ওই খনির দায়িত্ব কেউ নিতে রাজি হয়নি। তৃতীয় নিলামে সরকার নিলাম বাতিল করতে বাধ্য হয়। ২০১৫ সালের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, তিন জনের কম বিনিয়োগকারী নিলামে ‘বিড’ করলে ওই নিলাম বাতিল করতে হয়। লিথিয়াম খনির তৃতীয় নিলামের ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছে।
১৪২০
এই পরিস্থিতিতে এখন সরকার নিজেই এই খনি চালাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এর জন্য সরকারের তরফে আর্জেন্টিনার এক লিথিয়াম সংস্থার কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলেও খবর।
১৫২০
কিন্তু কেন লিথিয়াম গুরুত্বপূর্ণ? প্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক পৃথিবী অচল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রযুক্তির ছাতা যেন আগলে রেখেছে সভ্যতাকে। দিন দিন তা আরও এগিয়ে চলেছে। এই প্রযুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ব্যাটারি।
১৬২০
ব্যাটারি বা তড়িৎকোষ প্রায় প্রতিটি বৈদ্যুতিন যন্ত্রেই ব্যবহার করা হয়। গাড়ি থেকে শুরু করে মোবাইল, ক্যামেরা, ল্যাপটপ, সর্বত্র ব্যাটারির বহুল ব্যবহার প্রচলিত। এই ব্যাটারি শিল্পের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ই লিথিয়াম।
১৭২০
বৈদ্যুতিন গাড়ি এবং ল্যাপটপে যে ধরনের রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, তার অন্যতম প্রধান উপাদানও লিথিয়াম। শুধু তাই নয়, বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রেও লিথিয়ামের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দূষণ রুখতে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। আর এমন গাড়ির জন্য যে ব্যাটারির প্রয়োজন হয়, তা হল লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি।
১৮২০
চিকিৎসা বিজ্ঞানেও লিথিয়ামের ব্যবহার রয়েছে। মানসিক অবসাদ কিংবা বাইপোলার ডিজ়অর্ডারের মতো মানসিক রোগের চিকিৎসায় এই ধাতু ব্যবহার করা হয়। মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে শান্ত করতে লিথিয়ামের জুড়ি মেলা ভার। কাচের তৈরি জিনিসপত্র শক্তিশালী করতেও লিথিয়াম ব্যবহৃত হয়। এই ধাতুর ভূমিকা রয়েছে মৃৎশিল্পেও। লিথিয়াম প্রয়োগ করলে কাচ বা চিনামাটির দ্রব্যের গলন দ্রুত হয়। এগুলির গলনাঙ্ক কমাতে সাহায্য করে লিথিয়াম।
১৯২০
লিথিয়ামের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে পারে ভারতের ব্যাটারি শিল্প। এত দিন বিদেশ থেকে ব্যাটারি বা তা তৈরির কাঁচামাল আমদানি করতে হত ভারতকে। লিথিয়ামের খনি ক্রিয়াশীল হলে ভারতের উপাদানেই ব্যাটারি তৈরি করা যাবে। এমনকি তা বিদেশে রফতানিও করতে পারবেন উৎপাদকেরা।
২০২০
আর্জেন্টিনা এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে মূলত ‘সাদা সোনা’ আমদানি করে ভারত। মনে করা হয়েছিল কাশ্মীরে খুঁজে পাওয়া লিথিয়ামের হাত ধরে ভাগ্য খুলতে পারে ভারতের। তবে সেই খনি নিয়ে জট এখনও কাটেনি।