Why America suddenly celebrating PM Narendra Modi, the same country that once banned him dgtl
PM Narendra Modi In US Congress
মোদীর আমেরিকা সফরে এক সময় ছিল নিষেধাজ্ঞা, তাঁকে নিয়ে এখন এত হইচই কেন?
নরেন্দ্র মোদীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারির ১৮ বছর পর সেই মোদীকে নিয়েই মেতেছে আমেরিকার বাইডেন সরকার। বৃহস্পতিবার আমেরিকা কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে তাঁর ভাষণের পর মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ আমেরিকার আইনপ্রণেতারা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
ওয়াশিংটনশেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ ০৮:৩৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
তিন দিনের আমেরিকা সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আমেরিকার কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাইডেন সরকার। মঙ্গলবার সকালে দিল্লি থেকে বিমানে চেপে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে আমেরিকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসও পালন করেন আমেরিকা থেকেই।
০২২৫
আমেরিকা সফরে একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন মোদী। বৃহস্পতিবার আমেরিকার কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তৃতায় উঠে এসেছে ভারত-আমেরিকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে শুরু করে গণতন্ত্র, অর্থনীতি, পরিবেশ-সহ বিভিন্ন বিষয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন আয়োজিত নৈশভোজেও মোদী যোগ দিয়েছিলেন।
০৩২৫
যে মোদীকে নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের এত মাতামাতি, এক সময় সেই মোদীর উপরেই আমেরিকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল।
০৪২৫
২০০২ সাল। ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম কালো বছর। এক রক্তক্ষয়ী গোষ্ঠী সংঘর্ষের সাক্ষী হয়েছিল গুজরাত। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরায় একটি ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৬০ জন করসেবকের মৃত্যু হয়। এর পরই জায়গায় জায়গায় গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হয়। তার পর থেকে গুজরাতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় তিন দিন ধরে গোষ্ঠী সংঘর্ষ চলে। মৃত্যু হয় হাজারেরও বেশি মানুষের।
০৫২৫
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গোধরা পরবর্তী সংঘর্ষে ১,০৪৪ জন নিহত হন। যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের। সরকারি হিসাব বলছে, সেই ঘটনায় ৭৯০ জন মুসলিম এবং ২৫৪ জন হিন্দুর মৃত্যু হয়েছিল। বহু ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
০৬২৫
সে সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদী। সংঘর্ষের ঘটনায় তৎকালীন গুজরাত সরকার এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পরোক্ষে উস্কানি দেওয়া এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও সেই সব অভিযোগ পরবর্তী কালে খারিজ করে দেয় নানাবতী কমিশন।
০৭২৫
তবে গুজরাতকাণ্ডের তিন বছর পর অর্থাৎ, ২০০৫ সালে আমেরিকার প্রশাসন মোদীকে সে দেশে প্রবেশের জন্য ভিসা দিতে অস্বীকার করে। গোধরা পরবর্তী হিংসা নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তোলা অভিযোগের কারণেই আমেরিকার তৎকালীন সরকার মোদীর আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তবে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদীর উপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় আমেরিকা।
০৮২৫
নিষেধাজ্ঞা জারির ১৮ বছর পর সেই মোদীকে নিয়েই মেতেছে আমেরিকার বাইডেন সরকার। বৃহস্পতিবার আমেরিকা কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে তাঁর ভাষণের পর মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ আমেরিকার আইনপ্রণেতারা।
০৯২৫
মোদীর অটোগ্রাফ এবং তাঁর সঙ্গে নিজস্বী পেতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল যৌথ অধিবেশন কক্ষের অন্দরে।
১০২৫
কিন্তু কেন মোদীকে নিয়ে বাইডেন সরকারের এত হুড়োহুড়ি, এত মাতামাতি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এর নেপথ্যে লুকিয়ে আমেরিকার স্বার্থ। অনেকে মনে করছেন, মোদীর জন্য ওয়াশিংটন যে ‘লাল গালিচা’ বিছিয়েছে, তার নেপথ্যে সুপ্ত অভিসন্ধি রয়েছে বাইডেন সরকারের।
১১২৫
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদীকে এই ভাবে স্বাগত জানানোর নেপথ্যে অনেকগুলি কারণ রয়েছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার মধ্যে লাভ দেখছে ওয়াশিংটন। ভারতের সঙ্গে জোট বিশ্ব রাজনীতির আঙিনায় আমেরিকাকে খানিক সুবিধাজনক স্থানে রাখতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
১২২৫
রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে মোদী সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও গভীর করতে চাইছে আমেরিকা। বিভিন্ন কারণে চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মধুর না হলেও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ভারত শান্তির পক্ষে সওয়াল করেছে, কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে টোল পড়েনি। তবে রাশিয়ার সঙ্গে বিশেষ দহরম-মহরম নেই আমেরিকার। তাই ভারতের ‘এক নম্বর বন্ধু’ হয়ে উঠতে আমেরিকা উঠে পড়ে লেগেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তা হলে মস্কোর সঙ্গে দিল্লির দূরত্ব বাড়তে পারে।
১৩২৫
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর থেকে বহু দেশ রাশিয়ার উপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নিলেও ভারত রাশিয়ার সঙ্গ ছাড়েনি। উপরন্তু, পুতিনের সরকারের কাছ থেকে তেল কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে ভারত। তাতেও আপত্তি রয়েছে আমেরিকার।
১৪২৫
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকা চায় না যে রাশিয়া থেকে তেল এবং অস্ত্র কিনুক ভারত। এ নিয়ে ভারতের কাছে একাধিক বার অনুরোধও করেছে বাইডেন প্রশাসন। মনে করা হচ্ছে, রাশিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রেখে ভারতকে নিজেদের এবং বন্ধু দেশগুলির কাছাকাছি আনতে চাইছে আমেরিকা। আর তার জন্যই মোদীর আগমনে উৎসবমুখর বাইডেন সরকার।
১৫২৫
বিশ্বের নিরিখে ভারতের অর্থনীতি বর্তমানে পঞ্চম স্থানে দাঁড়িয়ে। মোদী আমেরিকায় দাবি করেছেন, খুব শীঘ্রই ভারত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এই উত্থানের সময়ে সঙ্গ ছাড়তে চাইছে না আমেরিকা।
১৬২৫
পাশাপাশি, ভারত বর্তমানে বিশ্বের সব থেকে জনবহুল দেশ। ভারতের মুক্ত বাজারে পণ্যের চাহিদাও বৃদ্ধির দিকে। তাই সেই বাজারকে ধরে এবং পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে আমেরিকা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে চাইছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত।
১৭২৫
সম্প্রতি সামরিক শক্তি বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়েছে ভারত। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এই আবহে মোদী সরকারের সঙ্গে কৌশলগত অবস্থান ঠিক রাখার মধ্যে লাভ দেখছে বাইডেন সরকার। সে ক্ষেত্রে ভারতের অস্ত্রের বাজারের বড় একটা অংশ ওয়াশিংটনের হাতে আসতে পারে।
১৮২৫
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী ভারতও। বর্তমানে ভারতের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে চাইছে মোদী সরকার। সামনের বছর লোকসভা ভোটের আগে যা বিজ্ঞাপিত করতে চায় মোদী সরকার। ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার প্রতিবেশী চিনের থেকে কম। তাই সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আমেরিকা সহায় হতে পারে বলে মনে করছে মোদী সরকার।
১৯২৫
সামরিক শক্তি আরও বৃদ্ধি করতেও আমেরিকার সঙ্গে থাকতে চাইছে ভারত। পাশাপাশি, বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্তরে ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। ভারত, আমেরিকা থেকে শুরু করে চিন— সকলেরই নজর রয়েছে এই অঞ্চলে।
২০২৫
এই অঞ্চলে কৌশলগত ক্ষমতা দখলে রাখার প্রধান কারণ— বিশ্বের আটটি প্রধান তেল এবং গ্যাসের ভান্ডারের মধ্যে তিনটি এই অঞ্চলে রয়েছে। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার এই অঞ্চলের কথাও উঠে আসে মোদীর বক্তৃতায়। তাই মনে করা হচ্ছে, এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করার ক্ষেত্রে আমেরিকাকেই প্রধান সঙ্গী করতে চাইছে ভারত।
২১২৫
মোদীর আমেরিকা সফর নিয়ে সে দেশের সরকারের অন্দরে মাতামাতি থাকলেও এর বিরোধিতাও করেছেন অনেকে। আমেরিকা কংগ্রেসের ৭০ জনের বেশি সদস্য মোদীর সফর নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন।
২২২৫
আমেরিকার ডেমোক্র্যাট পার্টির দুই কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর এবং রাশিদা তালেব মোদীর যৌথ অধিবেশনের ভাষণ বয়কট করেছিলেন। দুই মুসলিম নেত্রীর দাবি, মোদী সরকার ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন করে থাকে। মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের আক্রমণ করার অভিযোগও তাঁরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এনেছেন।
২৩২৫
রাশিদা বলেছেন, ‘‘মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্র-বিরোধিতার দীর্ঘ ইতিহাস যাঁর রয়েছে, আমাদের দেশের রাজধানীতে সেই মোদীকে একটা মঞ্চ দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত লজ্জার।’’
২৪২৫
মোদী সফর প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। তাঁর কথায়, “কূটনৈতিক আলোচনায় ভারতে মুসলমান সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরা প্রয়োজন। আমার যদি মোদীর সঙ্গে কথা হত, তাঁকে আমার এটাই বলার থাকত যে, আপনি যদি সংখ্যালঘুদের না দেখেন, তা হলে দেশটা টুকরো হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। তা ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী।’’
২৫২৫
যদিও মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ভারত এবং আমেরিকার সম্পর্ক সদর্থক দিয়েই এগোচ্ছে। মোদীর আমেরিকা সফরের পর তা আরও সুদৃঢ় হবে বলেও মনে করছেন অনেকে।