চিন-আমেরিকার যুদ্ধ বাধলে কে জিতবে? সামরিক ক্ষেত্রে এগিয়ে কে? কার হাতে রয়েছে কোন গোপন অস্ত্র?
আমেরিকা এবং চিন— বিশ্বের মহাশক্তিধর দুই দেশ। কিন্তু এই দু’দেশের মধ্যেই যদি যুদ্ধ বাধে? তা হলে কে জিতবে?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪ ০৯:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৮
আমেরিকা এবং চিন— বিশ্বের মহাশক্তিধর দুই দেশ। কিন্তু এই দু’দেশের মধ্যেই যদি যুদ্ধ বাধে? তা হলে কে জিতবে?
০২২৮
সাধারণত যুদ্ধ বাধে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে। কিন্তু আমেরিকা এবং চিন প্রতিবেশী নয়। এই দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তা কোথায় হবে?
০৩২৮
এমন অনেক প্রশ্নই বার বার উঠে এসেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে যুদ্ধ বাধলে তা বিশ্বযুদ্ধের থেকে কম কিছু হবে না।
০৪২৮
এই আবহে দেখে নেওয়া যাক চিন এবং আমেরিকা— কার সামরিক ক্ষমতা কেমন।
০৫২৮
কোনও দেশের সামরিক বল কেমন, তা নির্ভর করে, সেই দেশ কত ধনী তার উপর। যার পকেটে টাকা যত বেশি, তার সামরিক ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণও তত বেশি।
০৬২৮
২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার জিডিপি ২৫ লক্ষ কোটি ডলারের। অন্য দিকে, চিনের জিডিপি ১৮ লক্ষ কোটি ডলার।
০৭২৮
বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে, আমেরিকা প্রতি বছর গড়ে ৮৭৬০০ কোটি ডলার সামরিক ক্ষেত্রে খরচ করে। যা বিশ্বের সব দেশগুলি প্রতি বছর সামরিক খাতে যত খরচ করে, তার ৪০ শতাংশ।
০৮২৮
অন্য দিকে, চিন সামরিক খাতে গড়ে বার্ষিক ২৯১০০ কোটি ডলার ব্যয় করে, যা আমেরিকার খরচের তিন ভাগের এক ভাগ।
০৯২৮
খরচের দিক থেকে আমেরিকা এগিয়ে থাকলেও সেনার সংখ্যায় এগিয়ে চিনের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)’। পিএলএ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী। যেখানে ২০ লক্ষ সক্রিয় জওয়ান রয়েছেন। অন্য দিকে, আমেরিকার পদাতিক, বায়ু, নৌ এবং উপকূলরক্ষী বাহিনী মিলিয়ে মোট ১৩ লক্ষ জওয়ান রয়েছেন।
১০২৮
বেজিং এবং ওয়াশিংটনের যুদ্ধ বাধলে চিনের প্রায় দু’কোটি মানুষ লালফৌজে যোগ দিতে পারেন। সেখানে আমেরিকার সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে পারেন ৪০ লক্ষ আমেরিকাবাসী।
১১২৮
যুদ্ধে ব্যবহৃত ট্যাঙ্কের দিক থেকে দেখতে গেলে চিন এবং আমেরিকার মধ্যে ফারাক খুব বেশি নয়। চিনের হাতে রয়েছে ৫০০০ ট্যাঙ্ক। আমেরিকার কাছে রয়েছে ৪৬০০টি।
১২২৮
যুদ্ধবিমানের দিক থেকে আমেরিকা এগিয়ে। ওয়াশিংটনের কাছে ১৮০০টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। চিনের হাতে রয়েছে ১২০০টি যুদ্ধবিমান।
১৩২৮
হেলিকপ্টারের সংখ্যার নিরিখে এগিয়ে আমেরিকা। বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির অধিকারী আমেরিকার কাছে ৫৭০০টি কপ্টার রয়েছে। চিনের কাছে সে জায়গায় রয়েছে মাত্র ৯১৩টি।
১৪২৮
দুই দেশের হাতেই ডুবোজাহাজের সংখ্যা প্রায় ৬০টি। তবে চিনের যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৭৩০। আমেরিকার হাতে যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ৪৭২টি।
১৫২৮
তবে পরমাণু অস্ত্রের নিরিখে অনেক এগিয়ে আমেরিকা। আমেরিকার কাছে ৫২২৪টি পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। চিনের রয়েছে মাত্র ৪১০টি। অর্থাৎ, আমেরিকার থেকে ১২ গুণ কম।
১৬২৮
অর্থাৎ, দুই শক্তিধর দেশই কোনও না কোনও সামরিক ক্ষেত্রে একে অপরের থেকে এগিয়ে। আবার দু’দেশের হাতেই রয়েছে লুকোনো মহাস্ত্র।
১৭২৮
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, চিনের হাতে যে লুকোনো অস্ত্র রয়েছে, তা হল সে দেশের ‘সাইবারাস্ত্র’ অর্থাৎ, সাইবার হানার ক্ষমতা।
১৮২৮
চিন এবং আমেরিকার মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১১,৩০০ কিলোমিটার। তাই সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ঝামেলার অবকাশ নেই।
১৯২৮
চিনের সঙ্গে আমেরিকার যে কয়েকটি কারণে যুদ্ধ বাধতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হল তাইওয়ান।
২০২৮
নিজেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেছে তাইওয়ান। তবে চিন একে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়নি অন্য অনেক দেশও।
২১২৮
১৯৫০ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত তাইওয়ান এবং আমেরিকার মধ্যে একটি চুক্তি কার্যকর ছিল। চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকা জানিয়েছিল, তাইওয়ানে যদি চিন আক্রমণ করে তা হলে আমেরিকা তাদের রক্ষা করবে।
২২২৮
১৯৭৯ সালের পর আমেরিকা তাইওয়ানকে রক্ষা করার কথা আর বলেনি। যদিও এখনও তারা খোলাখুলি সমর্থন জোগায় তাইওয়ানকে।
২৩২৮
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন যদি কখনও তাইওয়ানে হামলা চালায়, তা হলে তারা একসঙ্গে দু’টি হামলা চালাবে। তাইওয়ানে সামরিক হামলা আর আমেরিকায় সাইবার হানা।
২৪২৮
বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, তাইওয়ান দখলে নামলে আমেরিকার এমন সব জায়গায় সাইবার হানা চালাবে চিন, যাতে ওয়াশিংটন অন্য দিকে মাথা ঘামাতে না পারে।
২৫২৮
পাশাপাশি, বিভিন্ন দেশে থাকা আমেরিকার সামরিক ঘাঁটিগুলিতেও চিন সেই সময় সাইবার হানা চালাতে পারে বলে কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করে।
২৬২৮
আবার আমেরিকার কাছেও দু’টি গোপন অস্ত্র রয়েছে। একটি হল ‘ডলারাস্ত্র’ অর্থাৎ, ডলার। চিনে তেল নেই। ১৯ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে নিয়ে আসে শি জিনপিংয়ের দেশ। বাকি তেল আসে পশ্চিমের দেশগুলি থেকে। অনেকের মতে, চিনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত বাধলে নিজেদের অর্থবলে প্রভাব খাটিয়ে চিনে তেল রফতানি বন্ধ করাতে পারে আমেরিকা।
২৭২৮
আমেরিকার হাতে দ্বিতীয় যে অস্ত্র রয়েছে, তা হল তাদের অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ। আমেরিকা নেটোর সদস্য। তাই চিন যদি আমেরিকায় হামলা চালায় তা হলে নেটো দেশগুলির থেকে সমর্থন পাবে না। পাশাপাশি, অন্যান্য দেশও সমর্থন জোগাতে পারে আমেরিকাকেই।
২৮২৮
তাই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে, কে জিতবে তা বলা মুশকিল। তবে তা যে মহাযুদ্ধে পরিণত হবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত কূটনৈতিক মহলের একাংশ।