Who is the Mystry Man Virendra Singh Chauhan of Chota Udaipur, who owns a solitary share in the Unlisted Tata Sons dgtl
Ratan Tata
টাটা সন্সের একান্ত পারিবারিক শেয়ারে নাম এক মহারাজার! কে সেই রহস্যময় ব্যক্তি?
ব্রিটিশ শাসনেরও আগে গুজরাতের একটি দেশীয় রাজ্য ছিল ছোটা উদয়পুর। রাজস্থানের সম্রাট এবং বীর যোদ্ধা পৃথ্বীরাজ চৌহানের বংশধরেরা ছিলেন সেই রাজ্যের শাসক। সেই বংশের রাজার নাম মহারাওয়াল বীরেন্দ্র সিংহ চৌহান।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ১৫:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৮
কয়েক বছর আগে টাটা সন্সে যখন মালিকানা সংক্রান্ত কর্পোরেট মামলা চলছিল, তখন একটি অদ্ভুত তথ্য প্রকাশ্যে আসে!
০২২৮
টাটা সন্স সংস্থা, যার শেয়ার সাধারণ মানুষ কিনতে পারেন না, যার মালিকানা কেবল টাটা পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তাদের শেয়ারের একটি হিসাব প্রকাশ করা হয়।
০৩২৮
তাতে দেখা যায়, টাটা ট্রাস্টের হাতে রয়েছে দু’লক্ষ ৬৬ হাজার ৬১০টি শেয়ার। শাপুরজি পালনজি পরিবারের হাতে রয়েছে ৭৪ হাজার ৩৫২ শেয়ার, বিভিন্ন টাটা সংস্থার অধীনে রয়েছে ৪৯ হাজার ৩৬৫টি শেয়ার, টাটা পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে ৮২৩৫টি শেয়ার। আর একটি মাত্র শেয়ার রয়েছে ছোটা উদয়পুরের কোনও এক বীরেন্দ্র সিংহ চৌহানের নামে।
০৪২৮
ওই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরই রহস্য ঘনিয়ে ওঠে বীরেন্দ্র সিংহকে নিয়ে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, বীরেন্দ্র সিংহ আসলে কে? তিনি টাটা সন্সের শেয়ারই বা পেলেন কী করে? যে সংস্থা শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত নয়, তার শেয়ার টাটা পরিবারের বাইরে কোনও ব্যক্তির হাতে গেল কী করে?
০৫২৮
বিশেষ করে যেখানে টাটাদের ‘কুটুম্ব’ তথা রতন টাটার ভাই নোয়েল টাটার শ্বশুরবাড়ি সাপুরজি পালনজি পরিবারকেই বহিরাগত বলে মনে করে টাটারা, সেখানে একজন চৌহান এই শেয়ার পান কী ভাবে?
০৬২৮
এর পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন ওঠে, ওই ব্যক্তির কাছে টাটা সন্সের কেবল মাত্র একটি শেয়ারই বা রয়েছে কেন?
০৭২৮
ক্রমেই রহস্য বাড়তে থাকে ছোটা উদয়পুরের ওই চৌহানকে ঘিরে। আগ্রহীরা নিজেদের মতো করে চালাতে থাকেন তদন্তও। তেমনই এক তদন্তে জানা যায় বীরেন্দ্র সিংহ চৌহান আসলে একজন মহারাজা!
০৮২৮
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম স্ক্রোল বীরেন্দ্রের পুত্র জয়প্রতাপ সিংহজির সঙ্গে কথা বলে এই রহস্যমোচন করে। জানা যায়, বীরেন্দ্রের আসল নাম মহারাওয়াল বীরেন্দ্র সিংহজি নটবর সিংহজি চৌহান। তিনি ছিলেন ছোটা উদয়পুরের মহারাওয়াল বা মহারাজা।
০৯২৮
ব্রিটিশ শাসনেরও আগে গুজরাতের একটি দেশীয় রাজ্য ছিল ছোটা উদয়পুর। রাজস্থানের সম্রাট এবং বীর যোদ্ধা পৃথ্বীরাজ চৌহানের বংশধরেরা ছিলেন সেই রাজ্যের শাসক।
১০২৮
তাঁর বংশে রাজারা শিল্প এবং স্থাপত্যে উৎসাহী ছিলেন। উৎসাহী ছিলেন আধুনিক প্রযুক্তিকে আপন করে নেওয়ার ক্ষেত্রেও। তিরিশের দশকে এই বংশের রাজা ছিলেন মহারাওয়াল নটবর সিংহজি। শোনা যায় তিনি ১৯৩৭ সালে নিজের জন্য একটি বিশেষ ভাবে নির্মিত রোলস রয়েস ফ্যান্টম মডেলের গাড়ি আনিয়েছিলেন ব্রিটেন থেকে।
১১২৮
সেই গাড়ির ভিতরটা তৈরি করা হয়েছিল রেলের বিলাসবহুল সেলুন কারের মত করে। যাতে গাড়িতে বসেই ট্রেনে চাপার অভিজ্ঞতা পেতে পারেন তিনি। বিশেষ ভাবে তৈরি সেই রোলস রয়েসের পিছনের বসার আসনের জন্যও ছিল একটি ড্যাশবোর্ড। যাতে যাত্রীরা পিছনে বসেও গাড়ির গতি পরখ করতে পারেন।
১২২৮
এ হেন নটবর সিংহজি ১৯৪৬ সালে লিসবনে ছুটি কাটাতে গিয়ে হঠাৎই মারা যান। তাঁর পরে রাজ্য শাসনের দায়িত্ব এসে পড়ে বীরেন্দ্র সিংহের কাঁধে। যিনি তখন সবে ১১ বছরের বালকমাত্র। তবু সেই বয়সেই রাজা হন বীরেন্দ্র।
১৩২৮
এক বছর পরে যখন ব্রিটিশ শাসন থেকে দেশ মুক্ত হল এবং বহু স্বশাসিত দেশীয় রাজ্য স্বাধীন ভারতের অঙ্গ হয়ে গেল, তখনও ছোট্ট রাজা বীরেন্দ্রের সে সব বোঝার ক্ষমতা ছিল না।
১৪২৮
ছোটা উদয়পুরে কুসুমবিলাস প্রাসাদই ছিল তাঁর জগৎ। পরে ইনদওরের ডালি কলেজে পড়াশোনা করেন বীরেন্দ্র। এই কলেজ ছিল ভারতের বিভিন্ন রাজ পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনার জায়গা।
১৫২৮
বীরেন্দ্র ‘রাজা’ হলেও কলেজে পড়তে পড়তে তাঁর মধ্যে ব্যবসায়িক বুদ্ধির স্ফুরণ দেখা যায়। পরে রাজা হিসাবে তিনি যত না পরিচিত হন, তার থেকে অনেক বেশি খ্যাতিমান হয়েছিলেন একজন শিল্পদ্যোগী হিসাবে।
১৬২৮
১৯৬২ সালের ইকনমিক উইকলি নামের একটি অর্থনীতি সংক্রান্ত পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে, বীরেন্দ্রকে একজন শিল্পপতি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই পত্রিকায় এ-ও জানানো হয়েছে যে, তিনি টাটা গোষ্ঠীর রেডিয়ো প্রস্তুতকারী সংস্থা ন্যাশনাল একসো-র ডিরেক্টর।
১৭২৮
হিসাব বলছে, তখন বীরেন্দ্র সবে ২৬ বছরের এক তরতাজা যুবক। আর তাঁর প্রায় সমবয়সি রতন টাটা , যিনি ভবিষ্যতে টাটা গোষ্ঠীর সর্বেসর্বা হবেন, তখন সবে টাটা স্টিলে একজন শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করতে শুরু করেছেন। শিখছেন পাথর ভাঙতে হয় কী ভাবে। কী ভাবেই বা ইস্পাতের কারখানায় জ্বালাতে হয় ধাতব চুল্লি।
১৮২৮
বীরেন্দ্র তখন এগিয়েই চলেছেন। একের পর এক সংস্থায় অধিকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের নামী দামি কোম্পানি ডিরেক্টরদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে পড়়েছেন। কাজ করেছেন আজিম প্রেমজির বাবা হাসাম প্রেমজি, এসএস কিরলোস্কার, বিএম ঘিয়া, নবরোজ বি ভাকিল, বরোদার মহারাজার মতো শিল্প জগতের বিখ্যাত সব ব্যক্তিত্বের সঙ্গে।
১৯২৮
তিরিশের কোঠায় তাঁকে আবার ডিরেক্টর পদে নিয়োগ করে টাটা। এ বার তিনি দায়িত্ব নেন টাটা মিলসের। যে সংস্থা তখন টাটার মূল সংস্থাগুলির একটি। যার মাথায় ছিলেন রতনের বাবা নওল টাটা।
২০২৮
পরে টাটা পরিবারের সঙ্গে টাটাদের বোর্ড সদস্যও হন বীরেন্দ্র। ক্রমেই টাটা পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত একজন হয়ে ওঠেন বীরেন্দ্র।
২১২৮
রাজকীয়তা ছিল তাঁর রক্তে। তবে বীরেন্দ্র নিজের কাজ দিয়ে নিজের আলাদা পরিচয়ও তৈরি করেন। সেই সময়ে দেশের উচ্চ সমাজের বড় নাম ছিলেন বীরেন্দ্র। মুম্বই এবং লন্ডনের বহু ক্লাবের সদস্য ছিলেন। শিকার করতেন, ঘোড়া চালাতে ভালবাসতেন, গাড়ির রেসে অংশ নিতেন আবার ক্রিকেট, বিলিয়ার্ডও খেলতেন।
২২২৮
তাঁর কাজের জন্য তিনি বড় অঙ্কের বেতন তো পেতেনই, এর পাশাপাশি ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসাবে জুড়ে যাওয়ার চুক্তির জন্য সরকারের কাছ থেকে বছরে দু’লক্ষ ১২ হাজার টাকা পেতেন। তখনকার দিনে এই অঙ্ক নেহাত কম ছিল না।
২৩২৮
যদিও ১৯৭১ সালে ভারত সরকার আইন করে দেশীয় রাজ্য গুলির অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার পরে সেই অর্থ আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে বীরেন্দ্র তাঁর ক্ষুরধার ব্যবসায়ী বুদ্ধিতে তত দিনে অনেকটাই উপরে উঠে এসেছেন।
২৪২৮
কিন্তু তাঁর কাছে টাটা গোষ্ঠীর পারিবারিক শেয়ার এল কী করে? বীরেন্দ্রের পুত্র জয়প্রতাপ জানাচ্ছেন, ১৯৮০ সালে জাহাঙ্গির রতনজি দাদাভাই টাটা টাটা সন্সের ১২-১৩টি শেয়ার দিয়েছিলেন বীরেন্দ্রকে।
২৫২৮
ঠিক কেন সেই শেয়ার দেওয়া হয়েছিল, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ না জানলেও জয়প্রতাপের ধারণা, এই ধরনের সংস্থায় অনেক সময়ে শেয়ারের অভ্যন্তরীণ হিসাব বদলায়। হয়তো সে ভাবেই তখন কিছু শেয়ার অতিরিক্ত হয়েছিল। টাটাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সেই শেয়ার দেওয়া হয়েছিল বীরেন্দ্রকে। জয়প্রতাপ মনে করেন, ওই শেয়ার ছিল তাঁর বাবার প্রতি টাটাদের ভরসার একটি স্মারক।
২৬২৮
কিন্তু তা হলে এখন তাঁর নামে একটি মাত্র শেয়ার রয়েছে কেন? জয়প্রতাপ জানিয়েছেন, ১৯৯৮ সালে বীরেন্দ্র নিজে বস্ত্র ব্যবসায় নামেন। নিজের কারখানাও গড়ে তোলেন। সেই সময়েই মূলধনের প্রয়োজনে টাটার শেয়ার বিক্রি করে দেন। রেখে দেন শুধু একটি। স্মৃতিচিহ্ন হিসাবেই। যে স্মৃতির বরাবরের ভক্ত ছোটা উদয়পুরের রাজপরিবার। কারণ তাদের রাজপ্রতীকে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা দু’টি লাতিন শব্দ ‘মেমোরিয়া ম্যানেট’। যার বাংলা অর্থ ‘স্মৃতিটুকু থাক’।
২৭২৮
যদিও এই স্মৃতির দাম নেহাত কম নয়। টাটা সন্সের ওই একটি শেয়ারের দামের হিসাব কষলে বাকি শেয়ার হোল্ডারদের সম্পত্তির হিসাব কষতে হবে। শাপুরজি পালনজিদের শেয়ারের হিসাব করলে দেখা যাবে, তাঁর ৭৪ হাজারের কিছু বেশি সংখ্যাক শেয়ারের দাম না হোক ৯০ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে বীরেন্দ্রের ওই একটি শেয়ারের দাম ১ কোটির কম তো হবেই না।
২৮২৮
তবে এই কোটি টাকার শেয়ার এখনও রয়েছে বীরেন্দ্রের নামেই। জয়প্রতাপ জানিয়েছেন, তাঁর বাবা ২০০৫ সালে মারা গেলেও ওই শেয়ারের মালিকানা রয়েছে তাঁরই নামে। বীরেন্দ্রের দুই সন্তানের মধ্যে উত্তরাধিকারী কে হবেন, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে পরিবারে। তা না মিটলে কোটি টাকার শেয়ার কার ভাগ্যে যাবে, সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হবে না।