জাপানে প্রকাশ্যে দেখা যায় না ডাস্টবিন! নেপথ্যে কি শুধুই পরিচ্ছন্নতার ভাবনা? না মৃত্যুর ভয়ঙ্কর ইতিহাস?
যখন-তখন বাড়ির ডাস্টবিনে রাখা আবর্জনা নিয়ে বাইরে বেরোতে পারেন না জাপানিরা। ময়লা নিয়ে যত্রতত্র চলাফেরা করা জাপানের সংস্কৃতি বিরোধী।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন দেশ হিসাবে জাপানের নাম রয়েছে তালিকার বেশ উপরের দিকেই। এই দেশে যাঁরা প্রথম বার বেড়াতে যান, তাঁরা অবাক হন, কী ভাবে দেশটি এত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হল!
০২১৯
জাপানের অধিবাসীরা যখন-তখন বাড়ির ডাস্টবিনে রাখা আবর্জনা নিয়ে বাইরে বেরোতে পারেন না। যখন-তখন রাস্তার ধারে আবর্জনা ভর্তি ব্যাগ রেখে দেওয়া জাপানে সম্ভব হয় না।
০৩১৯
সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে এলাকায় আবর্জনা পরিষ্কার করতে আসেন পুরকর্মীরা। তখনই সকলকে আবর্জনা নিয়ে বেরোনোর নির্দেশ দেওয়া রয়েছে।
০৪১৯
সে কারণে রাস্তাঘাটে চলতে-ফিরতে কোথাও ময়লা ফেলার ডাস্টবিন চোখে পড়ে না বললেই চলে।
০৫১৯
কেন জাপানের রাস্তাঘাটে বা উন্মুক্ত স্থানে জণগণের জন্য রাখা থাকে না কোনও ডাস্টবিন বা পাবলিক ট্র্যাশ ক্যান?
০৬১৯
কারণ ময়লা নিয়ে যত্রতত্র চলাফেরা করা জাপানের সংস্কৃতি বিরোধী। জাপানিদের একটি নিজস্ব ধর্ম আছে, তা হল ‘শিনতো’। এর মূল মর্মবাণীই হল পরিচ্ছন্নতা।
০৭১৯
জাপানিরা পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে এতটাই সচেতন যে, যত ক্ষণ না সঠিক ভাবে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করা সম্ভব, তত ক্ষণ তাঁরা সেই ময়লা আবর্জনা নিয়ে রাস্তায় বেরোন না।
০৮১৯
শহর জুড়ে কোথাও নেই ময়লা ফেলার জায়গা। এমনকি রাস্তাঘাটেও কোনও ময়লার গাড়ি চোখে পড়বে না। কারণ এখানকার বাসিন্দারা নিজেরাই আবর্জনা পরিষ্কার করেন।
০৯১৯
এই সাংস্কৃতিক নিয়মটি জাপানি সমাজে গভীর ভাবে গেঁথে আছে।
১০১৯
জাপানে আবর্জনা পাত্র দেখতে না পাওয়ার আর একটি কারণ হল নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ। দু’দশক আগে ১৯৯৬ সালে টোকিয়োর সাবওয়েতে হয়েছিল এক রাসায়নিক হামলা।
১১১৯
এই অন্তর্ঘাতের সঙ্গে জড়িত ছিল জাপানের এক গুপ্ত সঙ্ঘ, নাম তার অম শিনরিকো।
১২১৯
সারিন গ্যাসের হামলায় ১৩ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। ৫৪ জন গুরুতর আহত হয়েছিলেন এবং আরও ৯৮০ জন এই গ্যাসের প্রভাবে পরবর্তী সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়।
১৩১৯
সারিন এক ধরনের রাসায়নিক মারণ গ্যাস। বর্ণ, গন্ধ বা স্বাদহীন এই তরল রাসায়নিক বাতাসের সংস্পর্শে এলে মুহূর্তে বাষ্পের মতো মিশে যায়। আর সেই বিষাক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিলেই আক্রান্ত হয় মানুষ।
১৪১৯
সেই হামলার পর থেকেই ‘পাবলিক ট্র্যাশ ক্যান’কে জাপানের প্রকাশ্য স্থান থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরিয়ে ফেলা হয়। বিস্ফোরক বা অন্যান্য বিপজ্জনক জিনিসগুলি লুকিয়ে রাখার জায়গা হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে এই আশঙ্কায় আবর্জনা পাত্রগুলি জাপানের রাস্তাঘাট বা জনবহুল স্থান থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
১৫১৯
জাপানিরা যে কোনও পুরনো জিনিসকেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য করায় বিশ্বাসী। প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা সংস্থা তথ্য অনুসারে, জাপানে ৭৭ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হয়।
১৬১৯
জাপানে ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্তরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতি একটি দৃঢ় দায়বদ্ধতা লক্ষ করা যায়। এর মানে হল যে জাপানিরা নিজেরাই আবর্জনা বাছাই করে, যতটা সম্ভব পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে বিপজ্জনক উপকরণগুলি সঠিক জায়গায় ফেরত পাঠান।
১৭১৯
অনেক ক্ষেত্রে, বর্জ্য সংগ্রহকে সরকারি দায়িত্ব বলে এড়িয়ে না গিয়ে ব্যক্তি বা সামাজিক গোষ্ঠী নিজেরাই ব্যবস্থা করেন। জাপানের বর্জ্য হ্রাস এবং ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের চাবিকাঠি এটাই।
১৮১৯
তবে কোভিডের বিধিনিষেধ হ্রাস পাওয়ার পরে জাপানে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আনাগোনা ক্রমশই বাড়ছে।
১৯১৯
জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে পর্যটকদের বয়ে আনা আবর্জনায় রাস্তাঘাট ভরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখে ট্র্যাশ ক্যানগুলি পুনরায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে জাপানে।