What reasons behind heavy rainfall in Dubai from Monday night to Tuesday evening dgtl
Flood Situation in Dubai
মেঘে বীজ বপন করে বৃষ্টি আনেন আমিরেরা! সেই হিসাবে গন্ডগোল হওয়াতেই কি বানভাসি মরুদেশ?
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুবাইয়ে মোট ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আমিরশাহির আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি সে দেশে দেড় বছরের গড় বৃষ্টিপাতের সমান।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
আচমকাই ভারী বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দুবাইয়ে। পরিস্থিতি এমন যে, পৃথিবীর অত্যাধুনিক এই রাজধানীতে জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
০২১৮
শহরের অধিকাংশ বড় রাস্তা, এমনকি বিমানবন্দর এখনও গোড়ালিসমান জলের তলায়। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত এই বিমানবন্দরে বহু বিমানের যাত্রাপথ বদলানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে প্রায় ২৫ মিনিটের জন্য থমকে গিয়েছে উড়ান চলাচলও।
০৩১৮
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মরুশহরে মোট ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আবহাওয়া দফতরের তরফে জানা গিয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি সে দেশে দেড় বছরের গড় বৃষ্টিপাতের সমান।
০৪১৮
১৯৭১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার আগে দুবাই এবং সংলগ্ন অঞ্চলের আবহাওয়া সংক্রান্ত যে পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছে, তাতে এক লপ্তে এত বিপুল পরিমাণ বৃষ্টির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
০৫১৮
শুধু কি আমিরশাহির রাজধানী দুবাই? মরুশহর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরের শহর আল আইনে রবি এবং সোমবার ২৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আমিরশাহির পূর্ব উপকূলের শহর ফুজাইরাতে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
০৬১৮
আচমকা এই ভারী বর্ষণের কারণ নিয়ে নানা রকম মত শোনা যাচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থানের নিরিখে আমিরশাহি আরব উপদ্বীপের একটি দেশ। শুষ্ক আবহাওয়ার এই দেশে ভারী বর্ষণ দূরস্থান, বৃষ্টিই প্রায় ডুমুরের ফুল। তবে শীতকালে এই দেশে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়।
০৭১৮
তবে এই বৃষ্টিপাত প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই নগন্য। আমির-ওমরাহদের শহর দুবাইয়ে চাষবাস হয়না ঠিকই, তবে দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে জল লাগে। আর তার নিরবচ্ছিন্ন জোগান অব্যাহত রাখতেই কৃত্রিম ভাবে বর্ষা নামায় তারা।
০৮১৮
দুবাইয়ের আকাশে মেঘ দেখা গেলেও, সেই মেঘ জলীয় বাষ্পের অভাবে বৃষ্টি নামাতে পারে না। মুশকিল আসান করতে রীতিমতো হেলিকপ্টার কিংবা অন্য আকাশযান ব্যবহার করে মেঘমুলুকে পাঠানো হয় সরকারি আধিকারিকদের।
০৯১৮
তারা মেঘের উপর ছড়িয়ে দেন সিলভার আয়োডাইডের মতো ছোট ছোট কণা, অনুকণা। এর ফলে সংলগ্ন এলাকার জলবায়ু এক জায়গায় ঘনীভূত হয়। মরুশহরে নেমে আসে বৃষ্টি।
১০১৮
দুবাইয়ের ভারী বর্ষণের পরেই নেটাগরিকেরা সমাজমাধ্যমে দাবি করতে শুরু করেন যে, কৃত্রিম বৃষ্টি নামাতে গিয়েই বন্যা ঘটিয়েছে দুবাই প্রশাসন। ব্লুমবার্গ-এর একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে এই নেটাগরিকদের দাবি, রবিবার এবং সোমবার কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোয় নিযুক্ত কিছু বিমান এবং হেলিকপ্টারকেও দেখা গিয়েছে।
১১১৮
তবে আবহবিদদের বড় অংশই সমাজমাধ্যমের ‘গালগল্পে’ কান না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ তাঁদের ব্যাখ্যা, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে বাতাসের সমস্ত জলীয় বাষ্পকে কাজে লাগানো হয়। তার পরেও এই প্রযুক্তি দিয়ে সারা বছরে সাকুল্যে ১০ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টি মেলে।
১২১৮
তা ছাড়া আবহাওয়া দফতরের তরফে গত সপ্তাহেই উপদ্বীপ এলাকায় ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। আবু ধাবিরর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যার অধ্যাপক দিয়ানা ফ্রান্সিস এই প্রসঙ্গে জানান, ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলে কখনওই কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয় না। কারণ গোটা প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ।
১৩১৮
আবহবিদদের সিংহভাগের মত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই দুবাই এবং সংলগ্ন এলাকায় খানিক অস্বাভাবিক ভাবেই এই ভারী বৃষ্টিপাত। বায়ুমণ্ডল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি উত্তপ্ত থাকলে, তা শুধু স্থলভাগ থেকে নয়, জলভাগ থেকেও বিপুল পরিমাণ জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে।
১৪১৮
প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ১৮৫০ সাল থেকে সামগ্রিক ভাবে গোটা পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে ১.১ ডিগ্রি শতাংশ। সেখানে গত ৬০ বছরে আমিরশাহির তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৫১৮
তা ছাড়া, দুবাই একেবারে পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত। জলরাশি থেকে বিপুল পরিমাণ জলীয় বাষ্প ঢুকে পড়াতেই মরুশহরে এই বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে। অল্প সময়ের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগই বানভাসি করেছে দুবাইকে। এখনও পর্যন্ত আমিরশাহিতে প্রাণ গিয়েছে এক জনের। সংলগ্ন ওমানে প্রাণ গিয়েছে ১০ জনের।
১৬১৮
আবহবিদেরা দাবি করছেন, এত বিস্তৃত জায়গা জুড়ে ঝড়বৃষ্টি কখনও কৃত্রিম ভাবে করানো যায় না। এমনকি বর্ষার মেঘ তৈরিতে উপাদানের হেরফের হলেও এমনটা সম্ভব নয়।
১৭১৮
জল থৈথৈ দুবাইকে ফের শুকনো করাও কঠিন। কারণ অত্যাধুনিক শহরে টাকাকড়ি, বাড়িগাড়ি সবই আছে, নেই যথেষ্ট সংখ্যক নর্দমা। বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বলে রীতিমতো ঘিঞ্জি এই শহরে নর্দমা সে ভাবে রাখা হয়নি। আবার শহরটার কোথাও সবুজের ছোঁয়া না থাকায় মাটি জল শুষে নেবে, তেমন পরিস্থিতিও নেই।
১৮১৮
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে দুবাই প্রশাসন। তারা এ বার নতুন পরিকাঠামো নির্মাণের যে নীল নকশা তৈরি করছে, তাতে ভূগর্ভস্থ জলাধার রাখা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। রুখাসুখা থর মরুভূমিতেও গত কয়েক বছরে গড় বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। মরুশহর দুবাইতেও যদি তেমনটা হয়, সেটা ভেবেই আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাইছে স্থানীয় প্রশাসন।