What lies beneath china's new controversial Map, Indians experts reflect their view dgtl
China's new controversial Map
মানচিত্রে লুকিয়ে কূটনৈতিক চাল? চিনের নতুন কৌশলে পুরনো গন্ধ পাচ্ছে ভারত, সঙ্গী আরও চার দেশ
দোষারোপ গায়ে মাখছে না চিন। তারা বরং এ বিষয়ে কিছুটা নির্বিকার। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন স্পষ্ট জানিয়েছেন, চিন সরকার প্রতি বছরই মানচিত্রে নতুন তথ্য সংযোজনের পর প্রকাশ করে। এ বারও তা-ই হয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
প্রতিবেশী হঠাৎ বাড়িতে ঢুকে ঘোষণা করলেন, আজ থেকে বাড়ির একটি ঘর তাঁর। খাট-বিছানা-আসবাব এনে জানিয়ে দিলেন, এখানেই আপাতত ডেরা বাঁধছেন তিনি। ভারত-সহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি পড়শি দেশের সঙ্গে ঠিক এই কাণ্ডটিই ঘটিয়েছে চিন।
০২২৪
বেমালুম একটি মানচিত্র প্রকাশ করে চিন দাবি করেছে, ভারতের ভূখণ্ডের বেশ কিছু অংশ আসলে তাদের।
০৩২৪
এই ‘কিছু অংশের’ মধ্যে একটা গোটা ভারতীয় রাজ্যও রয়েছে।
০৪২৪
উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ এবং লাদাখের কিছু অংশকে নিজেদের এলাকা বলে নতুন মানচিত্রে দাবি করেছে চিন।
০৫২৪
সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চিনের সমস্যা নতুন নয়। অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং লাদাখের আকসাই চিন বলে চিহ্নিত অংশ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই টানাপড়েন চলছে ভারত-চিনের মধ্যে।
০৬২৪
এর আগেও অরুণাচলের ১১টি এলাকাকে দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলে দাবি করেছিল চিন। তবে এই প্রথম ভারতের গোটা একটা রাজ্যকেই নিজেদের বলে দাবি করল তারা।
০৭২৪
চিনের ওই মানচিত্র প্রকাশ নিয়ে স্বভাবতই বিরক্ত এবং বিস্মিত ভারত। সপ্তাহখানেক আগেই ব্রিকস সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সঙ্গে কথা হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। দু’দেশের দুই নেতার মধ্যে বৈঠকে কোনও উত্তেজনার আঁচ মেলেনি।
০৮২৪
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমন্ত্রণে কিছু দিন পরেই দিল্লিতে আসার কথা চিনা প্রেসিডেন্টের। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এই বন্ধুত্বপূর্ণ আবহে হঠাৎ এমন কী হল যে পুরনো ক্ষতকে আবার খুঁচিয়ে তুলল চিন? ভারতই বা এত কিছুর পর চিনকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছে কেন?
০৯২৪
বিদেশ মন্ত্রকের তরফে অবশ্য এই মানচিত্র প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মন্তব্য করেন, “কেউ একটা আজগুবি দাবি করলেই অন্যের ভূখণ্ড তার হয়ে যায় না!”
১০২৪
সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একে চিনের ‘পুরনো বদভ্যাস’ বলেও বর্ণনা করেছেন জয়শঙ্কর। বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘চিন ১৯৫০ সাল থেকে এটা করে আসছে। কিন্তু তা বলে যা ভারতের, তা হঠাৎ চিনের হয়ে যেতে পারে না। ভারত নিজের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে জানে। এবং তারা রক্ষা করবেও।’’
১১২৪
ভারতের এই দাবিতে সুর মিলিয়েছে এশিয়ার আরও চারটি দেশ। তাদের দাবি, চিনের এই মানচিত্র কূটনীতির ভুক্তভোগী তারাও। নতুন মানচিত্রে তাদেরও এলাকায় ভাগ বসিয়েছে চিন।
১২২৪
এই চারটি দেশ হল ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স এবং তাইওয়ান। চিনের এই আগ্রাসনের বিরোধিতা করে এই চারটি দেশ জানিয়েছে, তারা এই দখলদারি বরদাস্ত করবে না।
১৩২৪
শুক্রবার ভিয়েতনাম সরকার একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের ভূখণ্ডে থাকা স্প্র্যাটলি ও পারাসেল দ্বীপের এলাকাগুলিকে নতুন মানচিত্রে নিজেদের বলে দাবি করেছে চিন। এমনকি, ভিয়েতনামের জলভাগের একাংশকেও ওই মানচিত্রে চিনের অন্তর্ভুক্ত বলে দেখানো হয়েছে।
১৪২৪
একই ধরনের অভিযোগ জানিয়েছে ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া এবং তাইওয়ান। তারা সাফ জানিয়েছে, দক্ষিণ চিন সাগরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে চিন। সেই লক্ষ্যেই এমন উস্কানিমূলক আচরণ করছে বেজিং।
১৫২৪
যদিও এই সব দোষারোপ গায়ে মাখছে না চিন। তারা বরং এ বিষয়ে কিছুটা নির্বিকার। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন দাবি করেছেন, চিন প্রতি বছরই মানচিত্রে নতুন তথ্য সংযোজনের পর প্রকাশ করে। এ বারও তা-ই হয়েছে।
১৬২৪
গত ২৮ অগস্ট চিনের সরকারি ওয়েবসাইট প্রকাশিত হয় দেশের ‘স্ট্যান্ডার্ড’ মানচিত্রের ২০২৩ সংস্করণ। তাতে ভারতের অরুণাচল এবং আকসাই চিন ছাড়াও তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চিন সাগরের ‘নাইন-ড্যাশ লাইন’-কেও নিজেদের মানচিত্রের অন্তর্গত বলে দেখায় চিন প্রশাসন।
১৭২৪
নতুন মানচিত্রের ছবি পোস্ট করে জানানো হয়, যে পদ্ধতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের ‘জাতীয় সীমানা’ চিত্রায়িত করে, সেই একই পদ্ধতিতে এই মানচিত্রটিও তৈরি হয়েছে।
১৮২৪
কেন হঠাৎ নতুন মানচিত্রের প্রয়োজন পড়ল? সে প্রশ্নের জবাব দিয়ে ওয়েনবিন বলেন, ‘‘যা হয়েছে, তা সার্বিক ভালর জন্যই। চিন সরকারের লক্ষ্য হল, দেশের প্রতিটি জনগণের কাছে ভাল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। নতুন মানচিত্র সেই কাজে সাহায্য করবে।’’
১৯২৪
একই সঙ্গে ওয়েনবিনের দাবি, ‘‘নতুন মানচিত্র অনুসারে যাঁরা চিনের জনগণ, তাঁদের চিনের নির্দিষ্ট নীতি মেনে চলতে হবে। বিষয়টিকে যুক্তি সহকারে দেখা হবে বলে আশা চিনের।’’
২০২৪
কিন্তু এক দিকে যখন দু’দেশের প্রধান একই টেবিলে আলোচনায় বসছেন, সেখানে সীমান্ত নিয়ে এই ধরনের বিপরীতমুখী ঘটনা ঘটে কী করে? তবে কি ভুল করে ওই মানচিত্র বানিয়েছে চিন? আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা কিন্তু সে কথা বলছেন না।
২১২৪
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুল নয়। চিন যা করছে তা আদতে সুপরিকল্পিত উস্কানি। এই ভাবেই ভারতকে তাতাতে চাইছে চিন। কূটনীতির ভাষায় এই ধরনের কৌশলকে বলা হয় ‘মানচিত্র আগ্রাসন’।
২২২৪
প্রায় ১৮টি দেশের সঙ্গে চিনের স্থল বা জলসীমা নিয়ে যে বিরোধ আছে, তাদের অনেকের সঙ্গেই চিন ইচ্ছাকৃত ভাবে বহু দিন ধরে এ জিনিস করে আসছে বলে দাবি দিল্লির জহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষজ্ঞের। ওই অস্ত্রই তারা প্রয়োগ করেছে ভারতের উপর।
২৩২৪
লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে সীমান্ত রক্ষা নিয়ে। তাদের দাবি, সীমান্তের প্রায় ২০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা চিনের দখলে চলে গিয়েছে।
২৪২৪
রাজনৈতিক নজরদারদের ধারণা, ভারতের সীমান্ত চিনের দখলে চলে যাওয়া নিয়ে যে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, সেটাকে আরও উস্কে দিতেই এই নতুন মানচিত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেজিং।